| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইফতেখার ভূইয়া
গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক
একজন মানুষকে ধরে নিয়ে একদল মানুষ মিথ্যে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করে মৃতদেহ-কে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে। পুরো বিষয়টি মাত্র ক'দিন আগেই ময়মনসিংহে ঘটলেও আমি এখনো অনেকটাই স্তব্ধ, বাকরূদ্ধ ও হতাশ। প্রশাসন এখনো দিপু হত্যার পরিষ্কার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারে নি তবে জানা যায় যে ঘটনার আগে দিপুর কর্মস্থলের ফ্লোর ইনচার্জ দিপুকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার পর তাকে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেয় (সূত্র)। এই তথাকথিত উত্তেজিত জনতা কারা সেটা খুঁজে বের করতে গিয়ে এখনো পর্যন্ত দশ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
দিপু চন্দ্র দাস বি.এ. পাশ ছিলেন তাই একই অফিসে বড় পদে চাকুরির জন্য ইন্টারভিউতে প্রথম হন। ঐ পদে চাকুরির জন্য অন্যান্য যারা আবেদন করেছিলেন তারাই মূলত শত্রুতা করে এমন কান্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়। এখান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার বোঝা যায় যে "ধর্ম অবমাননা" -র অভিযোগটি সত্য নয়। আর.এ.বি. বিষয়টি নিয়ে "ছায়া তদন্ত" করছে আর মূল তদন্তের দায়িত্ব ভালুকা থানার হাতে স্থানান্তরিত হয়েছে। দিপুর ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
এখনো পর্যন্ত পুরো ঘটনাটিতে আমি দিপুর সরাসরি আইনি কোন অপরাধ খুঁজে পাইনি। তদুপরি একজন জ্যান্ত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে কর্মস্থলের শত্রুতার জেরে ও মিথ্যে অপবাদে। কোন অপরাধ যদি দিপু করেও থাকে তবে তাকে থানায় হস্তান্তর করা যেত, তার বিরুদ্ধে মামলা করা যেত কিন্তু হত্যা করা কেন? এই ঘটনা ঘটিয়ে কার কি ব্যক্তিগত লাভ হলো আমি জানি না তবে এ দেশের কিছু মানুষের সাম্প্রদায়িক মনোভাব, নিচ মানসিকতা ও উগ্র ধর্মান্ধতার একটা উদাহরণ পাওয়া গেল। সেই সাথে একদল মানুষ ধর্মের ইস্যু তুলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে ইমেজকে আরো নেতিবাচক করে তুললো। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ দেশের ভবিষ্যত কোন ব্ল্যাক হোলের চেয়েও খারাপ হবে তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। দিপু-র ধর্ম কি ছিলো তার চেয়ে বড় বিষয় তিনি একজন বাংলাদেশী ছিলেন, এ দেশের আর দশজন মানুষের মতোই তিনিও একজন নাগরিক। এমন হত্যা কাম্য না হলেও এদেশে এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ অথচ পুরো বিষয়টি এখন কেবল ধর্ম সংক্রান্ত বলেই চালিয়ে দিচ্ছে একটা মহল। তারা এটা নিয়ে ঘটনার গভীরে না গিয়েই সারামর্ম টানবে এবং টানছে। তার ফলাফল দিল্লীতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে একদল ধর্মান্ধ উশৃঙ্খল ভারতীয়দের "গোলি মারো সালেকো" টাইপ হুমকি-ধামকি আর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অসংখ্য প্রোপাগান্ডা টাইপ ভিডিও।
দিপু হত্যার সাথে সাথে তার স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবে গেল, সেটা কেউ কেউ ভাবছেন কিনা জানি না তবে বিষয়গুলোতে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবার ভাবা ও এগিয়ে আসা উচিত। আমি দিপুর হত্যার বিষয়টির পাশাপাশি তার পরিবার নিয়ে আমি ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। আমার নিজেরও পরিবার রয়েছে, আমার হঠাৎ প্রস্থানে তাদের কি হতে পারে সেটা ভাবতে গেলেও আমি অস্বস্তিতে পড়ে যাই। কোন ব্যক্তির শূন্যস্থান পূরণ অসম্ভব তারপরেও, দিপু হত্যার বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি তার পরিবারের প্রতিও যেন প্রশাসন ও সাধারণ জনগণ এগিয়ে আসেন সেটাই আমার প্রত্যাশা। ধন্যবাদ।