নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিঠা পানি

পুকুরপাড়

সহজ কথা

পুকুরপাড় › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাহাজ্জুদের নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা সম্পূর্ণ মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ

০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৪৮



আজকাল কোন কোন স্থানে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়তে দেখা যায়। বিশেষ করে রমাদ্বান শরীফ মাসে বেশী দেখা যায়। অথচ আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া অনুযায়ী তাহাজ্জুদ নামায ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ। চাই রমাদ্বান শরীফ মাসে হোক অথবা গায়রে রমাদ্বান শরীফ মাসে হোক, এর উপর মুসলমানদের ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।



যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত বিতর নামায ও নফল নামায জামায়াতে পড়ো না কেননা ঘোষণা দিয়ে নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী এবং এটার উপর মুসলমানদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” (আলজাওহারাতুন নাইয়্যারাহ,পৃষ্ঠা-১২৮)



কেউ কেউ বলে থাকে উপরোক্ত ইবারতে এবং আরো অনেক ইবারতে রমাদ্বান শরীফ মাস ছাড়া নফল নামায জামায়াতে পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই কেউ যদি তাহাজ্জুদ নামায রমাদ্বান শরীফ মাসে জামায়াতে পড়ে, তবে মাকরূহ হবে কেন?



এর জবাব হলো, যারা এ কথা বলে থাকে, তারা উপরোক্ত কিতাবের ইবারতের ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম হননি। কারণ রমাদ্বান শরীফ মাসে যে নফল নামায জামায়াতে পড়া জায়িয বলা হয়েছে, তা হলো তারাবীহ নামায।



এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “যে সকল ইবারতে রমাদ্বান শরীফ মাসে নফল নামায মাকরূহ নয় বলে উল্লেখ আছে, উক্ত নফল নামাযের দ্বারা তারাবীহ নামাযকেই বুঝানো হয়েছে।” (আহসানুল ফতওয়া, ৩য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৭৪)



উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়, “এ কারণেই হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ নামায ব্যতীত অন্য কোন নফল নামায জামায়াতে আদায় করেননি। বরং রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায নাজায়িয হওয়ার উপরই সকলেই একমত।”



এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, তারাবীহ নামায তো নফল নয় ? এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে, সকল নামাযই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। (১) ফরয নামায (২) নফল নামায। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কোন ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা,সুন্নতে যায়িদা,মুস্তাহাব নামায ছিল না। ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজতিহাদ করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নফল নামাযগুলো তাক্বীদ অনুযায়ী আমাদের জন্য কোনটা ওয়াজিব যেমনঃ বিতর ও দুই ঈদের নামায, কোনটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা যেমনঃ তারাবীহ, ফযরের পূর্বের, যোহরের পূর্বের ও পরের, মাগরিবের ও ইশার পরের সুন্নত নামাযসমূহ। কোনটা সুন্নতে যায়িদা যেমনঃ আছরের পূর্বের এবং ইশার পূর্বের চার রাকায়াত সুন্নত নামায। কোনটা মুস্তাহাব যেমনঃ আওয়াবীন, চাশত, শবে বরাত, শবে ক্বদর ইত্যাদি ভাগে ভাগ করেছেন। তাই একমাত্র ফরয নামায ব্যতীত সকল নামাযগুলোই মূলতঃ নফল নামাযের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু আহকামের দিক দিয়ে কোনট ওয়াজিব, মুয়াক্কাদা, যায়িদা, মুস্তাহাবের অন্তর্ভূক্ত।



স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তারাবীহ নামাযকে নফল বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি রমাদ্বান শরীফ-এর রোযাকে ফরয করেছেন এবং ক্বিয়ামুল লাইলকে (অর্থাৎ তারাবীহ নামাযকে) নফল (সুন্নতে মুয়াক্কাদা) করেছেন।” (বায়হাক্বী শরীফ)



উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, রমাদ্বান শরীফ মাসে যে নফল নামায জামায়াতে পড়ার আদেশ রয়েছে, তা হলো তারাবীহ নামায। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত যে, ক্বিয়ামুল লাইল অর্থ তারাবীহ নামায। যারা ক্বিয়ামুল লাইলকে তাহাজ্জুদ নামায বলে থাকেন, তাদের কথা শুদ্ধ নয়। কেননা কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত মুহাদ্দিছীনদের অধিকাংশই “ক্বিয়ামুল লাইল” দ্বারা তারাবীহকে বুঝিয়েছেন।” (হেদায়া, ফতহুল ক্বাদির, মাবছূত, বাদায়ে, আহসানুল ফতওয়া)



সুতরাং রমাদ্বান শরীফ মাসে যে নফল নামায জামায়াতে পড়া জায়িয বলা হয়, তাহলো তারাবীহ নামায। সুতরাং আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্বায়ায়ে ক্বিফায়া, বিতর নামায রমাদ্বান শরীফ মাসে জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব, রমাদ্বান শরীফ-এর বাইরে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তানযীহী এবং সালাতুল কুসূফ (সূর্য গ্রহণ) সালাতুল ইস্তেস্কা (বৃষ্টির) নামায রমাদ্বান শরীফ মাসে হোক অথবা গায়রে রমাদ্বান শরীফ-এ হোক জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে যায়িদা।



উল্লেখিত নফল নামাযগুলো জামায়াতে আদায় জায়িয ও শরীয়ত সম্মত বরং সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং তাহাজ্জুদ নামায, চাশত, আওয়াবীন, শবে ক্বদর ও শবে বরাত ইত্যাদি সকল নফল নামাযসমূহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ছেন বলে কোন প্রমাণ কেউ পেশ করতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, হযরত শায়খুল কাসেম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা যদি নফল নামায জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ হতো, তবে অবশ্যই যারা রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে থাকে, তারা ফযীলত অর্জনের লক্ষ্যে একত্রিত হয়ে জামায়াতে আদায় করতেন। অথচ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমউনারা তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়েছেন বলে দেখা যায় না।” (মাবছূত সারাখসী,মাছাবাতা বিছ সুন্নাহ)



সুতরাং তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ।



অনেকে মনে করেন যে, রমাদ্বান শরীফ মাসে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করে অনেক ফযীলত হাছিল করা যাবে, মূলতঃ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করলে ফযীলত তো পাওয়া যাবেই না বরং সে গুনাহগার হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেভাবে ইবাদত করার জন্য বলেছেন, তার বিপরীত করে কিভাবে ফযীলতের আশা করা যায়? যেমন কেউ যদি মুসাফির অবস্থায় কছর নামায দু’রাকায়াতের পরিবর্তে বেশী ফযীলত পাওয়ার জন্য চার রাকায়াত আদায় করে, তবে সে কি ফযীলত অর্জন করতে পারবে? কখনো নয় বরং তার কবীরা গুণাহ হবে এবং তার উক্ত নামায দোহরানো ওয়াজিব হবে। কেননা সে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুমের খিলাফ কাজ করলো। তেমনিভাবে তাজাজ্জুদ তথা নফল নামায যেখানে হানাফী মাযহাব মুতাবিক ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ সেখানে এরূপ একটি বিদায়াত কাজ করে আমরা কি করে ফযীলতের আশা করতে পারি? অথচ এরূপ বিদায়াত সম্পর্কেই হাদীছ শরীফ-এ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “প্রত্যেক বিদায়াতই গুমরাহী এবং প্রত্যেক গুমরাই জাহান্নামী।”(মিশকাত শরীফ)



এখন কেউ কেউ বলতে পারেন, অতীতে বা বর্তমানে অনেক পীর ছাহেব, মুফতী ছাহেব, মুফাচ্ছির ছাহেব, মুহাদ্দিছ ছাহেব, মাওলানা ছাহেব, হাফিয ছাহেব, ক্বারী ছাহেব, ওয়ায়েজ, ইসলামী চিন্তাবিদ, ইসলামী রাজনৈতিক নেতা, আলেম, জালেম, সূফী, দরবেশ প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ তাহাজ্জুদের নামায জামায়াতে পড়েছেন বা পড়তে বলেছেন, পড়েন বা পড়তে বলেন, তাদের সম্পর্কে ফায়সালা কি? মূলতঃ এর জবাবে সংক্ষেপে এতটুকু বললেই চলে যে, ইসলামী শরীয়ত কোন ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোককে দলীল বা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে না, যতক্ষণ পর্যন্তনা সে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোক কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের উপর কায়েম না থাকবে। অর্থাৎ যে কেউ ইসলামের খিদমত করলেই যে সে ইসলামের আদর্শ বা দলীল বলে গণ্য হবে, তা নয়। যেখানে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া অসংখ্য, অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদীল্লার ভিত্তিতে মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ প্রমাণিত। সেখানে বিনা দলীলে এটাকে জায়িয বলা গুমরাহী ছাড়া কিছুই নয়। সুতরাং মোটকথা হলো হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মুতাবিক তারাবীহ, এস্তেস্কা, কুসূফ এর নামায জামায়াতে পড়া জায়িয। আর তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদায়াতে সাইয়্যিয়াহ, যদি ইমাম ব্যতীত চারজন মুক্তাদী হয়, ঘোষণা দিয়ে পড়ুক আর বিনা ঘোষণায় পড়ুক।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:১৬

৭১বাংলা বলেছেন: ভাইজান ভাবছেন অনেক জেনে ফেলেছেন, আপনার কিতাব এর নাম কয়জন শুনেছে কিন্তু বোখারী ও মুসলিম শরীফ এর কথা সবাই শুনেছে । সেখানে ভাল করে পড়ে দেখেন আল্লার রাসুল কিভাবে পড়েছেন, দ্বিতীয় খন্ডেই পাবেন । দুর্বল হাদিস দ্বারা হানাফিরা মানুষ কে ধোকা দেয়, তাদের এই ভন্ডামী আর বেশী দিন করতে পারবে না । মানুষ এখন অনেক বুঝতে শিখেছে.....।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.