নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এখানে নতুন,সবার সহযোগিতা চাই

ভালোবাসা দিয়ে,ভালোবাসা পেতে চাই

পুলক20

আমি নিজেকে খুব সাধারণ মনে করি।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পছন্দ করি।আমি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি,স্বপ্ন দেখি একদিন আসবে যেদিন আর কোনো শিশু রাস্তায় ভিক্ষা করবে না।

পুলক20 › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোখ দুটো আর বাঁধা মানে না....

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৪৩

“দোস্তওওও ঘটনা ঘটায়া ফালাইছি।”

“কি করছস?কার বিয়া?তোর না তোর বউর??”

“আরে ব্যাটা কি কস!আমার আর আমার বউর বিয়া কি আলাদা নাকি?”

“তাইলে ক কি হইছে”

“দোস্ত বাইক কিনসি”

“কি কইলি! আর ইউ সিরিয়াস?”

“আরে হ। ইয়মাহা এফজে রেড।”

“কত নিল রে?”

“২৪০০০০।সব মিলায়ে ৬০ এর মত পড়বে।”

“আরে শালা। তুই তাইলে কামটা কইরাই ফালাইলি!”

“আরে তুই ও কেন। বাসায় প্রেশার দে,হয়ে যাবে।আব্বারা তো না করবোই।খাওয়া ছেড়ে দিবি হয়ে যাবে।”

“হ দোস্ত। দেখি আব্বারে কমু।”



কথা হচ্ছিল আরিফ আর ইমন এর মধ্যে। দুজন সদ্য কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল। সামনে অনেকটা পথ,অনেক স্বপ্ন।বাইকের প্রতি দুজনের ই নেশা সেই ক্লাস এইট থেকে।ইমন আজ বাইক কিনল।ইমনের বাবা অনেক বড়লোক।ঢাকায় দুটা বাড়ি,সবার জন্য আলাদা গাড়ি,সবই আছে।উঁচুতলার মানুষ হলেও তাদের ভেতরে কোনো অহংকার নেই।খুব সাধারণ তারা।ইমন আজ বাইক কিনল আর কেনা মাত্রই আরিফের সাথে শেয়ার করতে চলে এল।কথা শেষ করে বাইক চালিয়ে ইমন চলে গেল।আরিফ ভাবল মনে মনে “এবার একটা বাইক না হলেই না।”





সারাদিন অফিস করে আমজাদ সাহেব বাসায় এলেন।ফ্রেশ হয়ে টিভি দেখতে বসলেন।এমন সময় আরিফ আসল।

“আব্বু কথা ছিল তোমার সাথে”

“বল বাবা কি কথা?”

“আব্বু আমার একটা বাইক লাগবে।”

“বাইক দিয়ে কি করবা?”

“বাইক চালাব।ভার্সিটিতে যাব।”

“বাইক কিনবা ভালো কথা।তেল কিনবা কি দিয়ে?তেল কেনার টাকা আছে তোমার? আমি তো বাবা খাল কেটে কুমির আনতে পারব না।কোনো পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাও নাই,গিয়া ভর্তি হইছ প্রাইভেটে।তোমার সেমিষ্টার ফি দিতে দিতে আমার টাকা শেষ।এখন আবার বাইক!!ওইসব বাদ দিয়ে পড়ালেখা কর মন দিয়ে।যেদিন নিজের যোগ্যতা হবে সেদিন বাইক কিনবা।”

শেষের কথাগুলো আরিফের মনে খুব লাগলো।বাবা তার যোগ্যতার কথা বললেন!!মনে মনে সে প্রতিজ্ঞা করে ফেলল, “আমি বাইক কিনেই ছাড়ব।”



আরিফের বাবা সামান্য চাকরী করেন।মাস শেষে যা মাইনে পান তা দিয়ে বাসা ভাড়া,দুই ছেলের পড়ার খরচ আর সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়।সেখানে বাইক কেনা তার জন্য অসাধ্য ব্যাপার।আরিফকে আজ আমজাদ সাহেব অনেক কথা বলেছেন ঠিকই কিন্তু কথাগুলো তার বলার কোনো ইচ্ছাই ছিল না।বারান্দায় এসে তিনি মনে ভাবছেন, “ছেলে টা কি খুব বেশি কিছু চেয়েছিল,একটা বাইক ই তো।কতই বা দাম ওটার।১ লাখ,২লাখ!কিন্তু এত টাকা আমি কোথায় পাবো?”আমজাদ সাহেবের নিজেকে খুব অসহায় মনে হল,খুব অসহায়।আকাশে কোনো মেঘ ছিল না,বৃষ্টি তো হওয়ার কথা না,তবু তার জামার বুকের কাছটা ভেজা।বয়স হয়ে গেছে,চোখ দুটো আর বাঁধা মানে না।





টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরছে আরিফ।হঠাৎ বাইকের শব্দ।পেছনে তাকিয়ে দেখে ইমন আসছে।

“কি রে আরিফ বাইক নিবি কবে?”

“এই তো দোস্ত আর কয়েকট দিন”

সাই করে ইমন চলে গেল।বাবার কাছে ঝাড়ি খাবার পরে আরিফ অনেক কষ্ট করে তিন চারটা টিউশনি জোগাড় করে।ছেলে হিসেবে আরিফ খুবই ভালো,পড়ালেখায় ও ভালো।তাই ভালই মাইনে পায়।মাস শেষে পনের হাজারের মত পায়।এই টাকাটা সে খরচ করে না পুরোটা জমায়।জমিয়ে প্রায় ষাট হাজার টাকা করে ফেলেছে।মনে মনে খুব খুশি সে।আর কয়েকটা দিন গেলেই সে বাবা কে দেখিয়ে দিবে।





ঢাকা শহরের জ্যাম নিয়ে আরিফ অনেক বিরক্ত। ১ ঘন্টার রাস্তা সে পাকা আড়াই ঘন্টা লাগিয়ে অবশেষে বাংলামোটর আসল।বাংলা মোটর এসেই তার অনেক ভাল লাগতে শুরু করল।আর কয়েকদিন পরেই সে এখান থেকে নিজের বাইক কিনবে।

বাংলামোটরে ঘন্টাখানেক ঘোরাঘুরি করে আরিফ বাসায় যাচ্ছে।বিজয় স্মরণীতে জ্যামে বসে আছে।হঠাৎ একটা পথশিশু এসে ডাকাডাকি শুরু করল।



“ভাই,ও ভাই একটা ফুল নেন না”



এমনিতেই জ্যামে মহাবিরক্ত আরিফ।এ সময়টা কারো সাথে কথা বলবে এমন কেউই নেই ওর।দিল ফুলওলাকে একটা ঝাড়ি।



“ওই যা এইখান থেকে।ফুল লাগবে না”

"ফুল লাগবোনা ভালো কথা ওমনে কন ক্যা?ভালোভাবে কইতে পারেন না?”

আরিফ ভাবলো,ঠিকই তো,ওমনভাবে বলা উচিৎ হয়নি।তাই সে আবার বলল,



“আমার ফুল দেবার মতো কেউ নেই,ফুল লাগবে না।”



মেয়েটা গজ গজ করতে করতে বললো “আইছে,ফুল দেওনের মতো কেউ নাই! ক্যান বাপ মা নাই?বাপ মার জন্য ভালোবাসা নাই আরেকজনের জন্য ভালোবাসা উতলাইয়া পড়ে”



মেয়েটার কথা শুনে আরিফ হতভম্ব হয়ে গেল।কতই বা বয়স মেয়েটার?আট বা দশ হবে।এইটুকু একটা মেয়ে ও কে এভাবে বলে গেল! ও তো কখনো এভাবে ভেবে দেখেনি।কথাগুলো ওর মনে গেঁথে রইল।



জানালার পাশেদাঁড়িয়ে আছে আরিফ।ছোটবেলার কথা ভাবছে।আজ ছেলেবেলার কথাগুলো খুব মনে পড়ছে।একদিন রাতেবেলা আরিফের মনে হল,সে রুটির সাথে নসিলা লাগিয়ে খাবে।তার বাবা বাসায় আসলেন রাতে দশটার দিকে।সে সাথে সাথে বাবাকে গিয়ে বললো, “বাবা আমি নসিলা খাবো”।আমজাদ সাহেব সেই রাতেবেলা অনেকটা পথ হেঁটে তাকে নসিলা এনে দিয়েছিলেন।আমজাদ সাহেব মাছের কোলের অংশটা খেতে পছন্দ করেন কিন্তু আরিফ মাছের কাঁটা বেছে খেতে পারে না।তাই তিনি কোলের মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।এগুলো কি শুধুই ছোটবেলায় হতো? এইতো সেদিন ও আরিফ যখন কোনো পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেল না তখন তার বাবা নিজে থেকেই তাকে প্রাইভেটে পড়তে বলেছিল।সেদিন তো বাবা না করেনি।সেই বাবাকেই আরিফ ভুল বুঝলো!!আরিফের খুব কান্না পেল আজ।এক নিমেষেই সে বাইকের কথা ভুলে গেল।





আজ ২৬ ফেব্রুয়ারী।আরিফের বাবা-মার চব্বিশতম বিবাহ বার্ষিকী।বিজয় স্মরণী গিয়ে আরিফ অনেক কষ্ট করে সেই মেয়েটি কে খুঁজে বের করল।



“কিরে কেমন আছিস?”



“আমগো আর থাকন।আপনে এনে কি করেন?”



“ফুল কিনতে আসছি।তোর কাছে যত ফুল আছে সব কিনব”



“এতো ফুল দিয়ে আপনে কি করবেন?আপনের তো কেউ নাই”



“আমার বাবা-মা কে দিব।তোর সব ফুল দে আর এইনে তোর জন্য এক হাজার টাকা”



“ও আল্লা এত টাকা দিয়া আমি করব”



“তোর বাবা-মাকে নিয়ে ভাল কিছু খাবি”



মেয়েটা কিছুখন আরিফের দিকে তাকিয়ে থেকে দৌড় দিয়ে চলে গেল।



আরিফ বাবার জন্য একটা টাচ্ ফোন কিনল দশ হাজার টাকা দিয়ে।আরিফের বাবার অনেকদিনের সখ ছিল একটা মাল্টিমিডিয়া ফোন কিনবেন।কিন্তু টাকার জন্য কেনা হয়নি।আরিফ মনে ভাবলো,বাবা এটা পেলে নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবে।মার জন্য আরিফ ফুল কিনল,শাড়ি কিনল,জায়নামাজ কিনল।অবশেষে আরিফ ভালো কিছু খাবার কিনে বাড়ির দিকে রওনা দিল।আজ প্রায় বিশ হাজার টাকার শপিং করল আরিফ।সবই নিজের পরিশ্রমের টাকা।





বাসার কাছাকাছি এসে আরিফ কিসের যেন শব্দ পেল।কিছুখন যাবার পর বুঝতে পারল ওটা বাইকের শব্দ।পেছনে ফিরে দেখে ইমন আসছে।

“কিরে আরিফ তোর বাইক কই?”



“বুঝলি ইমন ভাইবা দেখলাম বাইক দিয়া কি হবে?একবারে গাড়ি কিনব নিজে ইনকাম করে।সামনে আমি আর আমার সে আর পেছনে বাবা-মা।তারপর সারা শহর ঘুরবো”



ইমন জোড়ে জোড়ে হাসল আর বললো, “আরে বেকুব বাইকে চড়ার মজা বুঝলি না”।বলেই চলে গেল।



আরিফ ও হাসতে হাসতে বললো,“তুই ও বুঝলি না,বাবা-মা কে নিজের পরিশ্রমের টাকায় উপহার দেবার মজা বুঝলি না”





অন্য দিনের মতো আমজাদ সাহেব অফিস করে বাসায় ফিরলেন।বাসায় ঢুকে দেখেন সব চুপচাপ।মনে মনে ভয় পেতে লাগলেন, “কারো কিছু হলো না তো!”হঠাৎ চিৎকার……



“হ্যাপি অ্যানিভার্সারী আব্বু”



আমজাদ সাহেব অবাক হয়ে গেলেন।তার সামনে অনেক সুন্দর একটা কেক,সেখানে চব্বিশটা মোমবাতি জ্বলছে।আরিফের মা এসে আমজাদ সাহেবকে নতুন ফোনটা দিলেন।দেখলেন আরিফের মা নতুন শাড়ি পড়ে আছে।আমজাদ সাহেব আরও অবাক হলেন।খেয়াল করে দেখলেন তার শার্টের বুকে পানি।ভাবলেন,বাইরে তো বৃষ্টি ছিল না,পানি এল কোথা থেকে?? নিজে নিজেই বললেন,



“নাহ্ অনেক বয়স হয়ে গেছে,চোখদুটো আর বাঁধা মানে না”।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৩

বোকামানুষ বলেছেন: ভাল লাগলো
পোষ্টে ++++
আসলেই আমরা অন্যদের নিয়ে কত বাড়াবাড়ি করি
প্রেমিক-প্রেমিকা কে উপহার দিতে না পারলে বিশেষ দিনে তাদের সাথে সময় কাটাতে কত কিছু করি
কিন্তু নিজের বাবা-মার কথা কয়জনের মনে থাকে

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:১২

পুলক20 বলেছেন: মতামত পেয়ে ভালো লাগল।ধন্যবাদ

২| ০২ রা মে, ২০১৩ রাত ৮:২৩

বটবৃক্ষ~ বলেছেন: মেয়েটা গজ গজ করতে করতে বললো “আইছে,ফুল দেওনের মতো কেউ নাই! ক্যান বাপ মা নাই?বাপ মার জন্য ভালোবাসা নাই আরেকজনের জন্য ভালোবাসা উতলাইয়া পড়ে”

আরিফ ও হাসতে হাসতে বললো,“তুই ও বুঝলি না,বাবা-মা কে নিজের পরিশ্রমের টাকায় উপহার দেবার মজা বুঝলি না”

খুব বেশি চমতকার লিখেছেন!! বেশ সুন্দর মেসেজ দিয়েছেন গল্পে....+++++

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১১

পুলক20 বলেছেন: ধন্যবাদ ব্রাদার :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.