নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডায়েরী হারিয়ে ফেলি।

ৎৎৎঘূৎৎ

হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা,অল্পবিদ্যা, কুশিক্ষা এবং ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দৃষ্টিকোণ না থাকলে প্রকৃত বাঙ্গালি হওয়া যায় না।

ৎৎৎঘূৎৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অবাস্তব কাহিনী

০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ২:০৮





এটি একটি অবাস্তব কাহিনী। আমি খুবই নিশ্চিত যে এমন কাহিনী পৃথিবীর কোথাও ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও ঘটবেনা বলে আমি বিশ্বাস করি। গল্পের হিরো কখনো বিয়ে করতে না চাওয়া অজ পাড়াগাঁয়ের কৃষিসম্প্রসারণ অফিসের চাকুরিজীবী । তার নিজের এলাকায় তার কৌমার্য ব্রত নিয়ে সবাই খুব হাসাহাসি করে এবং আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবীরা তাগাদা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়েননি। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনি কেন বিয়ে করছেন না তার উত্তরে তিনি বলেন যখন চাকরি ছিল না তখন তো কেউ বলেনি। তিনি আরো বলেন তার স্বপ্ন ছিল একজন রাজকুমারী ঘোড়ায় টগবগ টগবগ করে তাকে বিয়ে করতে আসবেন। এমনটা যেহেতু ঘটেনি তাই তিনি বিয়ে করতে আগ্রহী নন। মূলত তার কিছু নারী বিদ্বেষ রয়েছে। তার ভাষ্যমতে ফেমিনিজমের এই যুগে একজন প্রতিষ্ঠিত নারী কেন একজন অসফল কিংবা অপেক্ষাকৃত সাধারণ চাকুরে পুরুষকে বিয়ে করছেন না এটা কি তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দৃষ্টিকোণ নয়? এইসব শুনে শুনে সবাই ক্লান্ত হয়ে এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। লক্ষ্য বিমুখ এই লোকটি কোনোমতে একটি চাকরি জুটিয়ে বই কিনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে একজন কলেজছাত্রের মত জীবন যাপন করছেন। যার পকেটে অতিমাত্রায় না থাকুক পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা থাকে। কিন্তু এই কাহিনি একটি মোচড় দিয়ে ঘুরে যায় এবং হিরোর এই স্বাধীন জীবনে একটু ব্যতিক্রম ঘটে। বলা যেতে পারে হিরোর আদর্শগত জায়গায় হানা দিয়ে তাকে নিরুপায় করে তার বিয়ে সম্পাদিত হয়ে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই হিরোর বাসায় আর তার একা থাকা হয়না। আজীবন বিয়ে করবে না বলে পণ করা একজন সাধারন ব্যাক্তির অবাস্তব একটি কাহিনী আমরা দেখতে চলেছি। এখনকার পরের বিবরণ না পড়তে চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ রইল।

অনেকদিন পর রাতুলের এলাকার ছোট ভাই, বলা যেতে পারে আদরের অনুজ নিপুন তার সাথে দেখা করতে আসলো। নিপুণকে দেখে বলল,

---- কতদিন পর আসলি। ভুলেই গেছিস।
----কি করব? আসলে আপনি তো সেই সিদ্ব নুডুলস খাওয়ান। ভালো লাগে?
---- চল বাইরে খাওয়াই?
---- বাইরে জাঙ্কফুড আমার ভালো লাগেনা। এই নেন সিগারেট।
---- ছেড়ে দিয়েছি। জীবনে যখন কেউ বা কিছু আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে তাদের ছাড়া আমার চলবে না আমি তখনই ছেড়ে দিয়েছি।
---- তাহলে আমিও খাব না। একটা কথা ছিল।
----আপনিতো বিয়ে করবেন না বলছেন । কিন্তু আপনি তো সাহায্য করেন। তাই না?
---- কত লাগবে বল পারলে দিবো। অতোটাতো দিতে পারবো না। যা আছে তাই দিয়ে দিবো।
---- এবারের সাহায্য টা একটু অন্যরকম।
---- কেমন? বল শুনি।
---- আমার বন্ধু অবন্তী । মামার কাছে থাকে। ওরা ওকে বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছে। ও খুব ব্রিলিয়ান্ট জানেন। কিন্তু ওর বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। তারা ওকে কোনভাবে বিদেশে থাকে এমন একজনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে বিয়ে দেয়ার তোড়জোড় করছে। কিন্তু ও পড়তে চায়। ওকে আপনার সাহায্য করতে হবে।
----কিভাবে? বিয়ে ভাঙতে হবে?
---- না। আপনাকে ওকে বিয়ে করতে হবে।
---- মানে?
---- আমার কথাটা মন দিয়ে শুনুন।
---- তুই করছিস না কেন?
---- কি যে বলেন? ও আমার বন্ধু। আর আমার চাকরি আছে? আমরা তো পড়ছি। তারপরও না-হয় করা যেত। কিন্তু ওর সাথে আমার সম্পর্কটা এমন নয়। জানেন সে শুধু আমার সাথে কথা বলে। দাড়ান আপনাকে ছবি দেখাই।
---- নানা লাগবেনা। তুই কিছু খেয়ে এসেছিস?
---- আমার কথাটা একটু শুনুন। এটা একটা কন্ট্রাক্টচুয়াল ম্যারেজ এর মত হবে। আপনি একা থাকেন। ও ভালো রান্না করতে পারে। ঘরটা গুছিয়ে রাখতে পারবে। বিনিময় আপনি শুধু থাকতে দেবেন।
---- তোর মাথা ঠিক আছে? তুই শুনছিস তুই কি বলছিস?
---- রাতুল ভাই। আমি আপনার অনেক বড় ভক্ত। আপনাকে আমি অনেক চিনি জানি। আপনি বিয়ে করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঠিক আছে। কিন্তু সাহায্য করবেন না বলে তো বলেননি। ও আসবাবপত্রের মতো এক জায়গায় পড়ে থাকবে। খুব অল্প কথা বলে। আপনি বুঝতেই পারবেন না ও আছে কি নেই। ও কিছুই জীবনে পায়নি জানেন। শুধু পড়তে চায়।
---- তোকে যতটুকু চিনি, তুই কি ওর প্রেমে পড়েছিস? না হয় এমন সিরিয়াস তো কখনো তোকে দেখি নি।
---- আমি ওকে ভালোবাসি। কিন্তু এই ভালোবাসাটা একটু আলাদা। ও ক্যাম্পাসে কয়েকটি লাইনের কথা বলে, কিভাবে যেন যা বলে আমার সাথেই বলে। খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে। এতোটুকু টিউশনি করে এসেছে। খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছে। বুঝতেই পারছেন এই যুগে মা-বাবা মরা একটি মেয়ে কে ধরে রাখতে চাইবে? পার করতে পারলেই হলো। প্লিজ রাতুল ভাই, ধরে নেন কেয়ারটেকার হিসেবে একজন থাকলো।
---- তুই খুব আপত্তিকর কথা বলছিস।
---- একটু দেখুন চিন্তা করে ভাই। আমি ওর যেকোনো মূল্যে ভালো চাই। আপনি ছাড়া আমি ওকে কারো কাছে দিতে পারছিনা।
---- বাগাড়ম্বর থাকবেনা। আমি ওকে কতটুকু দিতে পারব জানিনা। চাকরি পেলে চলে যাবে তো?
---- আপনি বললে যাবে। সেভ হার।
---- ওকে বলেছিস এসব?
---- আমি বললে ও আগুনে ঝাঁপ দেবে।
---- ঠিক আছে। অনুষ্ঠান কিছুই হবে না। বুঝতে পারছিস? আর আমি ওকে কিছুই দিতে পারব না। আমার বেতন তো জানিস।
---- ও শুধু আপনার সাথে থাকবে। বাকিটা ও টিউশনি করে ম্যানেজ করে নেবে। আমি জানতাম ফেলবেন না। কথাটা রাখবেন।
---- কি ঝামেলায় ফেলে দিলি আমাকে। সব বলে নিস। চাকরি পেলে বিবাহের ইতি ওকে?
---- ঠিক আছে। ওর ছবি দেখবেন?
---- নাহ!!

বিয়ের দুবছর পর। রাতুল অবন্তী এবং নিপুন খেতে বসলো। আজ কেন যেন সবাই খুব খুশী। রাতুল ব্যাপারটা ধরতে পারছে না কিন্তু তারও কিছুটা খুশি লাগছে। ওদের দু'জনের মধ্যে চাপা খুশিটা রাতুল কিছুটা বুঝতে পেরেছে। কোন কারণে দুজন বেজায় খুশি। তার নিজেরও ভালো লাগছে।

---- মাটনটা একটু দে।
---- এত খাস না। তোর ওজন দেখার মত। শার্টের বোতামগুলো খুব পরিশ্রম করছে শার্টটা ধরে রাখতে।
---- খাক। আরেকটা দিন। খাবারটা খুব ভালো হয়েছে।
---- দেখলে তো। তোমার হাজব্যান্ড বলছে দিতে।
---- এত খাস না তোর ব্লাড প্রেসারের প্রবলেম।
---- আরে দে তো। সেলিব্রেট করব না? একটু তো খাবোই।
---- কিসের সেলিব্রেশন আমি জানতে পারি?
---- রাতুল ভাই, আপনি একই ঘরে থেকে জানতে পারলেন না। ওর সরকারি হাইস্কুলে হয়েছে। কাল জয়েনিং।
---- ওয়াও! আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।
---- নিজের এলাকার স্কুলে, ভাবতে পারেন?
---- নিঃসন্দেহে খুশির খবর। জানলে মিষ্টি নিয়ে আসতাম।
---- মিষ্টি আমি এনেছি। আমার কিন্তু একটু জ্বলবে রাতুল ভাই। ওর কপালটা দেখেন। টপ করল, চাকরিও পেল আর আমি খাসির মাংস খাচ্ছি।
---- তুইও একটু মনোযোগ দে। তোর ও হবে।
---- না রাতুল ভাই, আমার ধৈর্য নেই। বাবার বিজনেসে বসবো।
---- ঘটনা কি?
---- শায়লাকে আর সময় দেয়া যাবে না। না হয় অন্যখানে বিয়ে হয়ে যাবে।
---- হা হা হা।

অবন্তী মুচকি হেসে এটা-ওটা এগিয়ে দিচ্ছিল। আর তার মতোই চুপচাপ নির্বিকার। রাতুল এবং নিপুন খেয়ে উঠে বাইরে হাটতে বেরুলো। রাতুল অনেক অস্বস্তির সাথে কথাটা উঠালো।
---- এখন কি হবে?
---- কি হবে?
---- মানে অবন্তী তো চাকরি পেল।
---- ও কি আপনাকে জ্বালিয়েছে?
---- আরে না। লজ্জাকর হলেও স্বীকার করি। আমি ওকে কোনো হেল্প ই করিনি। আমিতো খামখেয়ালি মানুষ। ও বাজার করেছে, রান্না করেছে। মাঝে মাঝে টাকাও চায়নি।
এই বছরগুলোতে আমি কিছুই করিনি। আমি আমার মতই চলেছি। এখন একটু খারাপই লাগছে। তার জন্য কিছুই করিনি। মানে এখন ও কি চায় তোকে বলেছে?
---- চলতে দিন না। কি সমস্যা?
---- আমি অভ্যস্ত হয়ে পড়লে পরে কিভাবে থাকবো?
---- একসাথে থাকেন। ও কি সুন্দরী নয়?
---- কি যা তা বকছিস? চোখ ফেরানো যায় না। কিন্তু না এমন কথা ছিল না। ওর নিজেরও কিছু লক্ষ্য থাকতে পারে।
---- আমি এই ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি না। আপনাদের ব্যাপার আপনারা বুঝুন।
---- মানে?
---- আপনি একটা ফাউল রাতুল ভাই।
---- আরে,তুই হঠাৎ রেগে গেলি কেন?
---- যান বাসায় যান। বাসায় গিয়ে সর্ট আউট করেন। আর আপনাকে দাওয়াত দিয়ে যাবো।
---- ও তাহলে শীঘ্রই করছিস?
---- বাসায় যান।
আদরের প্রিয় অনুজের ধমক খেয়ে রাতুল বাসায় ফিরে আসলো। অনেক সাহস সঞ্চয় করে অবন্তীর সাথে কথা বলবে ভেবে ডাকলো। দুজন ডাইনিংয়ের দু পাশে বসা। রাতুলই শুরু করলো
---- কংগ্রাচুলেশনস
---- থ্যাঙ্ক ইউ।
---- আমি আপনাকে কিছুই দেইনি। বলেছিলাম আপনি রান্নাটা করবেন। আমি বাজারটা করব। কয়েকদিন পর বাজারও পারলাম না। সব আপনার উপর এসে পড়ল। এত কিছুর পর টপ রেজাল্ট করে চাকরি ম্যানেজ করে ফেললেন। অবিশ্বাস্য। আমাদের ইয়ে মানে,,,
---- আমার আপনার প্রতি কোন অভিযোগ নেই। আপনার কারনে আমি এতোটুকু আসতে পেরেছি। তিন মাস পর থেকে আপনাকে কিছুই করতে হবে না।
---- ইয়ে মানে,,,,আমি কিছুই করিনি। একটা কথা,,,,,
---- বলুন
---- ডোন্ট স্যাটল ফর লেস। যত ইচ্ছা খুশি থাকুন। বিসিএসটা ট্রাই করে দেখবেন?
---- আপনি কি চাচ্ছেন আমি চলে যাই? মানে ওরকমই কথা ছিল যেহেতু।
---- না মানে,,,, ইফ ইউ আর কমফর্টেবল। বিসিএস টা এখানে থেকে ট্রাই করুন।
---- থ্যাঙ্ক ইউ।
এ ছিলো দু'বছরের মধ্যে রাতুল অবন্তীর সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে বলা কথোপকথন। এভাবে কিছুদিন কেটে যেতে লাগলো। রাতুল অফিস থেকে এসে নিজের মতো করে খেয়েদেয়ে নিজের রুমে গিয়ে বইয়ে মুখ গুঁজে থাকত। অপরদিকে স্কুল এবং স্কুল শেষে সংসার সহ পরীক্ষার প্রিপারেশন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তো অবন্তী। অনেকদিন পর নিপুন তার স্ত্রী সহ বেড়াতে আসলো। এই একটি মাত্র ব্যক্তি কে দেখলে অবন্তীর মুখে খই ফুটতে থাকে। কারণ তার আত্মীয় বলতে একমাত্র মামা বিয়ের পর খবর নেয়ার চেষ্টাই করেনি। নিপুণকে রান্নাকরে খাওয়াতে পারলে তার খুব আনন্দ হয়। খেতে খেতে নিপুন বলল,
---- খারুস টা কোথায়?
---- ঠিক করে কথা বল।
---- স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা? বাহ, তা তুমি যে আছো সে জানে? বলতে পারবে?
---- আলভোলা টাইপ মানুষ ছেড়ে দে।
---- আর ইউ হ্যাপি?
---- কেন থাকবনা। আমি এখানে যা পেয়েছি তাতো আমার জীবনে ঘটে নি আগে।
---- কি চিন্তা করলি?
---- সামনে পরীক্ষা। ওটাতে ফোকাস করব। তারপর তিনি যা চান।
---- তুই কি ওকে পছন্দ করিস?
---- তোর বেবির ডেট কবে?
---- দুমাস পর।
---- শায়লাকে কি সুন্দর লাগছে। মা মা লাগছে।
---- তুই এখানে থাকিস না। রাতুল ভাই একটা পাগল মানুষ। ক্যাডারে হয়ে গেলে এসব শেষ করে ঘর সংসার করবি। তুই যে ওর সংসার চালাচ্ছিস বুঝতে পারছে?
---- ওকে জ্বালাস না। খালি বই কিনে বুঝছিস? ওদিন কিনেছে চাণক্যের অর্থশাস্ত্র। অথচ যে লোকটার কোন টাকার প্রতি মোহ নেই। ও আমাকে মাঝেমাঝে বাজারের টাকাও দিতে ভুলে যেত বুঝছিস। প্রথমতো টিউশনির টাকা দিয়ে চালাতাম মাঝে মাঝে। ভাগ্যিস লাইব্রেরী ছিল। বইই কিনতে পারতাম না। আসলে ওর কাছে যতটুকু ছিল এর বেশী কিভাবে দিবে। এখন তো জব, আর সমস্যা নেই।থাকুক ও তার মত। চলেই তো যাবো। এ মানুষটার যে কি হবে?
---- স্বার্থপর মানুষ। দেখ ইচ্ছে করেই দিত না। ভাবতো থাকতে দিয়েছে এই আর কম কি।
---- খাওয়া শেষ করে ভাগ।
---- হুহ! প্রেমে হাবুডুবু। তার খবরই নাই। তুই যে শায়লার দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলি তাতেই যা বুঝার বুঝেছি। শায়লাও বলেছে কিসের অপেক্ষা।
---- ও কোন কিছুই ভুল করেনি। ওকে আমরাই ফাসিয়ে দিচ্ছি। থাক। আমি একটা জিনিস কিনেছি তোদের জন্য নিয়ে যাস।
---- আই এম সরি বন্ধু।
---- তুই ছাড়া কে আছে আমার বলতো। কাদিস না। আরে বোকা তুই এখনো ছিচকাদুনে রয়ে গেলি।
সামনে পরীক্ষা আমার। যা ভাগ।


এর অনেকদিন পর এক সকালবেলা রাতুল ঘুম থেকে উঠে তার বিছানার পাশে এক রমণী কে দেখতে পায়। রমণী এক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে। সে ভাবে এটি হয়তো তার স্বপ্নের একটি অংশ হয়ে থাকতে পারে। ধাতস্থ হয়ে বুঝতে পারে অবন্তীর তার বিছানার পাশে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে গত রাত ঘুমাতে পারেনি। কিছু সময় পর ধাতস্থ হয়ে সে অবন্তী কে বলল,
---- আপনি একটু বাইরে যাবেন? আমি কাপড় চোপড় পড়ে নেই? আমি ইয়েতে আছি....
---- আমি বাইরে যাব না।
---- আপনার কি হয়েছে, হঠাৎ আপনি আমার রুমে?
---- কেন আসতে কি সমস্যা?
---- আপনি রেগে আছেন কেন?
---- আমি সহজে রাগি না।
---- আপনি একটু বাইরে যান আমি আসছি।
---- আমি বাইরে যাব না।
---- বলেন তো কি হয়েছে? এমন দেখাচ্ছে কেন?
---- আমার রেজাল্ট দিয়েছে। পররাষ্ট্র এসেছে। প্রশাসন আসেনি।
---- অসুবিধা নেই। আবার দেয়া যাবে। এবারে আসেনি পরেরবার আসবে। হতাশ হবার কিছু নেই।
---- আমি আর পরীক্ষা দেবো না। আমার জীবনে সকল পরীক্ষা দেয়া শেষ। ভেবেছিলাম জীবনে অনেক বড় হবো। কিন্তু আমি ক্ষুদ্রই রয়ে গেলাম।
---- পরেরবার দিলে আসবে। বলছি তো।
---- বললাম তো, যা আসছে তাতেই চলবে। আরো বেশি কিছু পেলেও আমি ক্ষুদ্রই এ থাকব।
---- সবটা বুঝতে পারছি না। কি হয়েছে?
---- আমি দেখতে সুন্দরী নই। কিন্তু আমি অনেক কেয়ারিং। আপনি আমাকে দেখছেন না। এখনো ভ্রু কুচকে আছেন। আমার দিকে চেয়ে আছেন কিন্তু আমাকে দেখছেন না।
---- আপনি জানেনই না আপনার সৌন্দর্যের ব্যাপারে। বের হন না যে কোথাও। মাথা উচু করে হাটুন, বুঝতে পারবেন। কিন্তু আপনার রেজাল্টে আপনি খুশি?
---- হ্যাঁ। আমার আর কিছুর দরকার নেই। ও হ্যাঁ দরকার আছে একটা জিনিস। আপনাকে ভীষণ দরকার। কিন্তু আপনার আমাকে দরকার নেই।
---- দেখে মনে হচ্ছে আপনার সারারাত ঘুম হয়নি। আমরা ঘুমানোর পর কথা বলি।
---- না এখন বলেন। চলে যেতে হবে?
---- শেষ একটা কাজ করতে হবে। পারবেন না?
---- বলেন
---- আপনাকে ৬ মাস ওখানে জব করতে হবে। তারপরেও যদি মনে হয় আপনি আমার সাথে থাকবেন তাহলে আমি মেনে নেব।

এ কথা বলার পর অবন্তী উঠে নিজের রুমে চলে গেল। যাওয়ার সময় তার দিকে মুচকি হেসে চলে গেল। হাসিতে তীব্র জেদ ঘৃণা ক্ষোভ অবজ্ঞা ছিল। অন্তত রাতুল সেটা বুঝতে পেরেছিল। ও ঘটনার অনেকদিন পর রাতুল একটি স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠলো। একটি সাদা ঘোড়া খুব দ্রুত ছুটে আসছে। তার উপরে সাদা শাড়ি পরা এক রুপসী নারী। ঘোড়ার খুরের আওয়াজ সামনে আসতেই রুপসীকে দেখতে পেল রাতুল। ঘুম থেকে উঠে এসবের মাথামুণ্ডু রাতুল কিছুই বুঝতে পারলো না। সেদিন বিকেল বেলা আকাশ কাপিয়ে ঝড় বৃষ্টি শুরু হল। কফি মেশিন থেকে কফি নিয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল রাতুল। দেখল এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে একজন সাদা শাড়িতে ভিজে লেপ্টে থাকা প্রতিকৃতি তারা বাসার দিকে আসছে। পুরো ঘটনা, সকালবেলা দেখা স্বপ্ন, সব মিলিয়ে তারমধ্যে ঘোরের তৈরি হলো। একটু পর দরজা দিয়ে প্রতিকৃতি ঢুকলো। রাতুল বললো,

---- জানো আজকে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছিলাম ভোরে। তার সাথে তোমার এই হেটে আসার কি মিল!! আচ্ছা বাদ দাও। এ শাড়িতে এমনভাবে ভিজে আছো যে শরীরের কিছুই ঢাকা পড়ছেনা। চেঞ্জ করে এসে আমাকে আজ চিকেন নুডুলস করে খাওয়াবা?

অবন্তী ওভাবেই রাতুলের দিকে তাকিয়ে রইলো। খুব দ্রুত চেঞ্জ করে এই পাগলটার জন্য নুডুলস রাধতে বসতে হবে। কেন? মনের কোণে হাতড়ে উত্তর পায় না সে। একটা যুতসই মনে হলো। এমন নারীবিদ্বেষী খামখেয়ালি নির্মম লোকটা প্রথমবার তাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছে।


মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ৩:৫২

স্মৃতিভুক বলেছেন: গল্প পড়ে ভালো লেগেছে। সত্যি ঘটনা বলেই তো মনে হলো। আর না হলেই বা কি! মাঝে মাঝে ভাবতে খুব ভালো লাগে বাস্তবে এখনো এমন চরিত্রের মানুষ আছেন, যাদের জন্যই এরকম দু'একটা গল্পের জন্ম হয়।

মানুষ এখন এত বেশি কৃত্রিম, দেখিয়ে বেড়ানোর প্রবণতা এতো বেশি, চিন্তা-ভাবনা এত বেশি অগভীর …. যে এদের লেখা পড়লে কিংবা সংস্পর্শে আসলেই ক্লান্ত লাগে। আবার যখনি এরকম দু'একটা চরিত্রের সাথে পরিচিত হই - মানসিকভাবে স্বস্তি পাই এই ভেবে যে, সবাই এখনো (আমার মতন) অন্তঃসারশূন্য হয়ে যায়নি।

আপনার গল্পের রাতুল এবং অবন্তীর প্রতি শুভকামনা থাকলো।

নোট: শব্দটা "লজ্জাস্কর" নয় - লজ্জাকর।

০৩ রা মে, ২০২৩ ভোর ৬:২০

ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আপনার নিজেকে অন্তঃসারশূন্য কেন মনে হয়? গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ঠিক করে নিয়েছি।

২| ০৩ রা মে, ২০২৩ সকাল ৮:১৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: ৎৎৎঘূৎৎ,




চমৎকার হয়েছে গল্প। প্লটে অভিনবত্ব থাকলেও অবাস্তব মনে হয়নি মোটেও।
দুটো মানব মানবী, যতো অনীহা নিয়েই কাছাকাছি থাকুক না কেন প্রেমের রসায়ন ঠিকই কাজ করে যায় গোপনে গোপনে।

০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৭

ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আমার কাছে সবসময় মনে হয়েছে আগে আসে অভ্যাস। তারপর বাকীটা। অশেষ কৃতজ্ঞতা।

৩| ০৩ রা মে, ২০২৩ সকাল ১০:৪৮

রানার ব্লগ বলেছেন: গল্প ভালো ছিলো কিন্তু মাক=ঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম । কে কি কাঁকে বলছে বুজতে সমস্যা হয়েছে ।

০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৮

ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: পাঠক নির্ভর লেখক। খেই হারিয়ে ফেললে তো মুশকিল। ভালো থাকবেন সবসময়।

৪| ০৩ রা মে, ২০২৩ বিকাল ৩:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ তার অভিজ্ঞতার বাইরে লিখতে পারে না। হ্যাঁ জানি কল্পনা করে কিছুটা লেখা যায়। তুবে সেটার সীমাবদ্ধতা আছে।

আপনার লেখা কাহিনীটা অবাস্তব বলা যেতে পারে না।

০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৩

ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আমার অমন কোন অভিজ্ঞতাই নেই। কারণ আমি বিয়ে রাতুলের মতই ভয় পাই। কাহিনি টি অবাস্তব। বাস্তবে একজন ক্যাডার কখনোই অপেক্ষাকৃত দুর্বল চাকুরিজীবীর সাথে থাকতে চাইবে না। হলফ করে বলতে পারি বাংলাদেশের কোথাও নেই। ভালো থাকবেন। পেলে বলবেন।

৫| ০৩ রা মে, ২০২৩ বিকাল ৩:১১

মিরোরডডল বলেছেন:


একটু অন্যরকম গল্পটা ভালো লেগেছে।
ব্যতিক্রম বলেই মনে হয়েছে কেনো না! এমনটাতো হতেই পারে।
রাতুল আর অবন্তীর মাঝে একটা সুন্দর আন্ডারস্ট্যান্ডিং দেখতে পেয়েছি।
পুরো লেখাটায় কোন অতিরঞ্জিত আবেগ নেই, ঠিক যতটুকু প্রকাশ দরকার ততটুকুই ছিলো।
পরিমিত পরিশীলিত একটা লেখা।


০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৭

ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ এমন অসাধারণ মন্তব্যের জন্য। আমার লেখার এমন প্রশংসা সচারাচর দেখা যায় না। এটি একটি অবাস্তব কাহিনি। কোথাও ঘটে থাকলে আমার চেয়ে খুশী হবে না কেউ। ভালো থাকুন সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.