নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য ঘাটাঘাটি করছি।

সিয়াম রায়হান নাফিস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য ঘাটাঘাটি করছি

সিয়াম রায়হান নাফিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজয় দিবস, ফকিন্নির জাত ও তার স্বাধীনতা !!

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:৫৯

ছোটবেলা থেকেই বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া আমার বাসায় অনেকটা ঈদের নামাজের মত ছিল। সকাল বেলায় শীতের মধ্যে বাবা তুলে দিতেন। গোসল করিয়ে, পাঞ্জাবী পরিয়ে বের হতেন ভোর থাকতে থাকতে। সকাল সকাল আমরা দুই জন গিয়ে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে আসতাম। দিনে দিনে বড় হয়েছি বাবার সাথে দূরত্ব টা হয়ত বেড়েছে। কিন্তু বিজয় দিবস বাদ যায় নি খুব একটা। এখন বাবা তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যান আর গত দু বছর আমি জাহাঙ্গীরনগর ছাত্র ইউনিয়ন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ এর পক্ষ হতে যাই।

এই বেশ ৫ থেকে ৬ বছর ধরে দেখছি বিজয় দিবসে বা যে কোন দিবসেই ফুল দিতে যাওয়াটা পুরোটাই একটি নোংরা নাটকে রূপ নিয়েছে। এবং সেই নাটক খুবই জঘন্য ভাবে মঞ্চায়ন হচ্ছে বিগত অনেক বছর ধরেই। সব কিছুই একটা শো অফ। ৯৫% মানুষ সেখানে কেন যায় তা আমার কাছে বোধগম্য না। বেশিরভাগ ব্যানারই যায় তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, শোডাউনের জন্য, কিছু যায় তাদের মিডিয়া এক্সপোজার বাড়ানোর ধান্ধায় আর হালের #স্মৃতিসৌধ_সেলফি তোলার পাঁয়তারাকারীরা তো আসেই। সেই বিরক্তি জমে এখন পাথর হয়ে যাওয়ার অবস্থা আর কি। শুধু বিজয় দিবসের দিন গুলিতে ফুলের লাইনে একটু চেগিয়ে উঠে এই আর কি।

তো যাই হোক এবারও সকাল সকাল ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি সংসদ স্মৃতিসৌধে হাজির হলো। ফুল দেওয়ার লাইনেও দাঁড়িয়ে পড়লাম। তো লাইন ধীরে ধীরে আগাচ্ছে (দেশে প্রচুর দেশপ্রেম তো, আজকে সব একসাথে উতলায়ে উঠসে)। আমাদের সামনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও তাদের গণ ও সহযোগী সংগঠন গুলো দাঁড়িয়ে। আমাদের জাহাঙ্গীরনগরের ফ্রন্টের এক আপু শ্রমিক দের একটি সংগঠনের ব্যানারে স্লোগান দিয়ে চলেছেন।
আমাদের ঠিক পেছনে একটি প্রখ্যাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানার। ব্যানারের সাথে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু শিক্ষক, তাদের ঠিক পেছনে তাদের গুণধর শিক্ষার্থীরা। খুবই সুন্দর করে পাঞ্জাবী লাগিয়ে, শাড়ি পড়ে তারা এসেছেন বিজয় দিবসে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে। দেখে যে কেউ ভাববে এরা খাস বাঙালি। কিন্তু খেয়াল করে শুনলে বোঝা গেল প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে কিছু একটা বলছেন তাদের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে। শিক্ষার্থীরাও ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে কিছু উত্তর দিচ্ছে এবং হাসা হাসি করছে। কানে আসলো তারা আমাদের সামনে সেই শ্রমিকদের ব্যানারকে লক্ষ্য করে হাসাহাসি করছে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই আপু যিনি ঐ ব্যানারে স্লোগান দিচ্ছেন তাকে নিয়ে ঠাট্টা মষ্করা করছেন। শুনে মেজাজ টা গরম হয়ে গেল।
তাদের মধ্যেই এক শিক্ষক বক্তব্য দিলেন হাসতে হাসতে যার সারমর্ম অনেকটা এরকম যে " দেখেছেন এদের চিনে রাখেন। এরা বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিবিদ্গণ। দেখেন কেমন চাষা গুলোর সাথে হাউ কাউ করছে। কোন ক্লাস নাই, স্ট্যান্ডার্ড নাই। এই পোলাপানগুলোর জন্যেই ফক্কিনি গুলো আজকাল মাথা চাড়া দিয়ে উঠসে। যত্তসব। এই গরীবের বাচ্চা গুলোরে ঢুকতে দেয় কেন বুঝি না।" ইত্যাদি ইত্যাদি
তাদের শিক্ষার্থীরাও হাসতে হাসতে উত্তর দেয় " হ্যা স্যার দেখেন কাপড় চোপড় এর কী অবস্থা। হা হা হা হি হি। যেমন নেতাদের। হা হা হি হি হো হো। এরা আবার বিজয় দিবস পালন করে।"
পুরো ১৫ মিনিট সেই স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক আলাপ শুনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। সেই আপু স্লোগান দিয়েই চলেছেন। হঠাত মনে হলে আমরা যে স্বপ্ন দেখছি সে তো এক মিথ। এবং আমরা বিলুপ্ত। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের আলাপ দিচ্ছে যে এই ফকির মিসকিনদের স্মৃতিসৌধে ঢুকতে দেওয়া উচিত না।
যে গরীব ঘরের সন্তানটি ৭১ এ যুদ্ধে নিজের প্রাণটা দিয়ে আসলো সে কি কক্ষনও ভেবেছিল সে ই এই বিজয় আনলো। কিন্তু সেই বিজয় দিবসে তাকে স্মৃতিসৌধে ঢুকতে আপত্তি জানাচ্ছে তার রক্তে অর্জিত একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শিক্ষাপীঠের শিক্ষক ও ছাত্র। এই কথা শুনলে সে নিজেই নিজের বুকে স্টেন গান চালিয়ে বসত। তার স্ত্রী সন্তানরা আজ হাসির পাত্র?? আমরা এই বাংলাদেশই চেয়েছিলাম বোধ হয়। তা না হলে আমরা কেন এত অল্প? আমরা কেন এত ক্ষুদ্র, এত দুর্বল ??
নিম্ন শ্রেনীর মানুষ উচ্চবিত্তের কাছে হাসির পাত্র ও মধ্যবিত্তের বিরক্তির কারণ।
কি লাভ হলো এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের? আমরা যে হেরেই গিয়েছি, হেরেই যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আমরা যে তাদের হাসির খোঁড়াক, তাদের জন্য সার্কাস। সারাটি দিন মেজাজ খারাপ গেল। তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন এই শিক্ষা দেওয়া হয়? কিভাবে গরীব মানুষ কে দমিয়ে আরো ধন সম্পদ হাসিল করা যায়?
কি লাভ হলো আমার বাপের আমাকে ৭ই মার্চের ভাষণ আর কনসার্ট ফর বাংলাদেশ দেখিয়ে? আমার মা ই বা কেন আমাকে যুদ্ধের গল্প শোনালো আর মুক্তিযুদ্ধের বই বা কেন কিনে দিল? এসব যে বড়ই ব্যাকডেটেড। স্বাধীনতা তো একটা কৌতুক।

আমাকেও আমার পরিচিত অনেক মানুষ কথায় কথায় জিজ্ঞেস করে আমি সবকিছুর সাথে কেন রাজনীতি মেশাই। খুব চেষ্টা করি না মেশানোর কিন্তু পেরে উঠি না। একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। সদ্য অনার্স শেষ করা বাবার ২২০০ টাকার বেতনে গাজীপুরের এক ঘর, এক বারান্দার ছোট্ট এক বাসায় আমার মা বাবার লাল নীল সংসার। এর বছর খানেক এর মধ্যে আমি এসে হাজির। এক বছরের মধ্যে বাবার অ্যাক্সিডেন্ট। প্রায় আড়াই বছরের পঙ্গুত্ব। তার পর আরো কিছু বছর ক্র্যাচ দিয়ে হাটা চলা। প্রচন্ড অভাব ও কষ্টে আমার বড় হওয়া। আমি সব কিছুতেই রাজনীতি মেশাই। সব কিছুই ঘুরে ফিরে সেই নিম্ন বিত্ত ও নিম্ন মধ্য বিত্ত মানুষ গুলোর কথা ভাবায়, কাঁদায়। আমিও তাদের একজন। তাদের এই অবস্থার জন্য আমরা দায়ী। ত্রিশ লক্ষ শহীদ এর জন্য আত্মত্যাগ করেনি। আমার পরিবারের অবস্থা হয়ত ভালো হয়েছে কিন্তু এই রকম লক্ষ লক্ষ পরিবারে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও চুলো জ্বলছে না। শীত বস্ত্রের অভাবে তাদের ঘরের বাচ্চা গুলো কষ্ট পাচ্ছে। শিক্ষার অভাবে তারা তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে পারছে না। এই শকুন গুলোর জন্য দারিদ্রের চাকায় বরং আরো পিষ্ঠ হচ্ছে।
হ্যা আমরা জানি বিপ্লব একটি স্বপ্ন। হয়ত বিপ্লব আসবেও না। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয় নি। সবার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে যেন এই শকুন গুলো আমাদের লাশের উপর বসে, আমাদের ই মাংস চিবিয়ে অট্ট হাসি না হাসতে পারে।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৫৬

স্বপ্নীল পরান বলেছেন: আবার যুদ্ধ হবে, হবেই……………

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:০৯

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয় নি। সবার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।

আসলেই যুন্ধ শেষ হয়নি।

৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩৪

অাব্দুল মান্নান বলেছেন: সত্যিই সত্য

৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৪৫

যোগী বলেছেন: তাদের মধ্যেই এক শিক্ষক বক্তব্য দিলেন হাসতে হাসতে যার সারমর্ম অনেকটা এরকম যে " দেখেছেন এদের চিনে রাখেন। এরা বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিবিদ্গণ। দেখেন কেমন চাষা গুলোর সাথে হাউ কাউ করছে। কোন ক্লাস নাই, স্ট্যান্ডার্ড নাই। এই পোলাপানগুলোর জন্যেই ফক্কিনি গুলো আজকাল মাথা চাড়া দিয়ে উঠসে। যত্তসব। এই গরীবের বাচ্চা গুলোরে ঢুকতে দেয় কেন বুঝি না।" ইত্যাদি ইত্যাদি
তাদের শিক্ষার্থীরাও হাসতে হাসতে উত্তর দেয় " হ্যা স্যার দেখেন কাপড় চোপড় এর কী অবস্থা। হা হা হা হি হি। যেমন নেতাদের। হা হা হি হি হো হো। এরা আবার বিজয় দিবস পালন করে।"



আমি মনে করি এই কথাগুলো পুরাই আপনার বানানো?

৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:১৮

গোধুলী রঙ বলেছেন: আমারো মনে হয় কোন পাবলিক গ্যাদারিং এ এইভাবে কোন শিক্ষক তার ছাত্রদের তালিম দেবার সাহস রাখেন না। আর একটা ব্যাপার হলো, প্রাইভেটে সব বড়লোকের পোলাপাইন পড়েনা। মনে হচ্ছে আপনি পাবলিক-প্রাইভেট ইউনি ক্যাচালটা উস্কে দিতে চাচ্ছেন।

৬| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৪

ওয়েস্ট উইন্ড বলেছেন: স্মৃতিসৌধে আসমান পর্যন্ত ফুল দিলেও কোন লাভ হবে না :-/

৭| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০৩

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
স্মৃতিসৌধে মানুষ ঢল, তীব্র ফুল এলার্জি
"বিজয় দিবসের দিন গুলিতে ফুলের লাইনে একটু চেগিয়ে উঠে ..। ৯৫% মানুষ সেখানে কেন যায় তা আমার কাছে বোধগম্য না"।

আপনি এসব কি বলছেন? আপনি যতই পরিচয়ের ফিরিস্তি দেন, আপনি একজন ছাগু!
এসব ভাষা সুধুমাত্র ধর্মান্ধ ছাগুরাই করে থাকে।

৮| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৬

সিয়াম রায়হান নাফিস বলেছেন: Yes I am a chaagu I guess. I don't need a character certificate :) And yes I didn't get to record their conversation. And didn't quote them. The whole thing was the summary of the conversation that happened behind me. And if the idea what I tried to pull out here wasn't sufficient enough to enter some of our thick skulls, then I am deeply and terribly sorry :)

৯| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:১৭

ডাইরেক্ট টু দ্যা হার্ট বলেছেন: আমরা আপনার পরিচয়ে নিশ্চিত হয়েছি।

মসজিদে সবাই যেতে পারে যায়,এর মধ্যে যারা ইমানদার ফরহেজগার নয় তাদের জন্য সঠিক মানুষদের কথা ভুলে যাবো কেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.