নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমুর বন্ধ দুয়ার

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫

এখন শ্রাবণ মাস চলছে। হিমু আশা করছিল আজকে অঝোরধারায় বৃষ্টি নামবে। সেই বৃষ্টির মধ্যে সে কদম ফুল হাতে শহীদ মিনারে যাবে হেঁটে হেঁটে। আজ এক বিশেষ দিন। এই বিশেষ দিনের জন্য হিমু প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে সেই ভোর পাঁচটা থেকে। প্রস্তুতি বলতে আহামরি কিছু না। ভোরবেলা উঠে ঠান্ডা পানি দিয়ে ২০ মিনিট ধরে একটা গোসল। তারপর পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবি, যেটা আগের রাতে নিজ হাতে ধুয়ে রেখেছিল, সেটা পরে অনেকক্ষণ চুপচাপ সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকা। সামনের হোটেলের পিচ্চি শামসু চা দিয়ে গেছে কতক্ষণ আগে। অন্যদিন হলে এই দিয়েই হিমু নাশতা সেরে নিত। কিন্তু আজ হিমু কিছুই খাবে না, আজ এক বিশেষ দিন।

এই বিশেষ দিনের জন্য হিমু তিন দিন ধরে অসীম আবেগ নিয়ে অপেক্ষা করছিল। রুপার সঙ্গে প্রথম পরিচয় থেকে পরিণয় যখন, তখনো এতটা আবেগ কাজ করেছিল কি না, সন্দেহ। এতটা আবেগ হিমুদের জন্য মহাপাপের সমান। কিন্তু আজ এক বিশেষ দিন।



২.

রুপার সঙ্গে তিন দিন ধরে কোনো যোগাযোগ হয়নি। রুপা পাশের রুমের ফজলুল সাহেবের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করে হিমুর সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করেছে, লাভ হয়নি। হিমু কথা বলেনি। কিন্তু অন্য সময়ের মতো রুপা রাগ করেনি। রুপাও নিশ্চয়ই আজকের এই বিশেষ দিনটার জন্য অধীর অপেক্ষায় আছে। এই বিশেষ দিনটা হিমু ও রুপার জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে।

সময় নিয়ে হিমুর কখনোই মাথাব্যথা ছিল না। বরং সময় নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সময়ের স্রোতে গা এলিয়ে দিয়েই এতটা কাল পার করে এসেছে। কিন্তু আজকে সময় নিয়ে হিমুকে ভাবতেই হচ্ছে। সে আগে থেকেই চিন্তা করে রেখেছে, সকাল ছয়টা বাজামাত্রই সে বাসা থেকে বের হবে। প্রথমে যাবে রমনা পার্কে, কদম ফুল সংগ্রহের জন্য। গুনে গুনে পাঁচটা কদম ফুল নেবে সে। তারপর যাবে মায়াবতী মীরা আর মনজুরের বাসায়। ওদের দুটো কদম ফুল দেবে। ওরা আজকে একদমই অবাক হবে না এই সাত সকালে কদম ফুল পেয়ে। আজকের এই বিশেষ দিনটা তো ওদের জন্যও বিশেষ দিন। শহীদ মিনারে যাওয়ার আগে নবনীর বাসায়ও একবার যেতে হবে একটা কদম ফুল পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

ফজলুল সাহেবের কাছ থেকে হিমু তার টেবিল ঘড়িটা নিয়ে এসেছে আগের রাতেই। ঘড়িতে সকাল ছয়টা বাজামাত্রই হিমু মেস থেকে বের হয়ে পড়ল। এই খটখটে রোদের মধ্যে তাকে হেঁটে যেতে হবে অনেকটা পথ।



৩.

কলবেল টেপা মাত্রই দরজা খুলে দিল মীরা। হিমুকে দেখে সে একটুও অবাক হয়নি। পেছনে মনজুর এসে দাঁড়াল। ঢোলাঢালা একটা পাঞ্জাবি পরে আছে সে। আজকের এই বিশেষ দিনের জন্য যে তাদের এই প্রস্তুতি, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। গেটের বাইরে থেকেই মীরাদের হাতে দুটো কদম ফুল তুলে দিল হিমু। মনজুর আর মীরার চোখের কোণে কি এক বিন্দু অশ্রু জমে উঠল?

মীরাদের বাসা থেকে হিমু গেল নবনীর বাড়িতে। গরমের মধ্যে পিচঢালা পথে খালি পায়ে এতটা পথ হাঁটতে বেশ কষ্ট হয়েছে হিমুর।

নবনীর বাড়ি থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলল হিমু শহীদ মিনারের উদ্দেশে। শহীদ মিনারে যখন হিমু পৌঁছাল, তখন ঘড়িতে বাজে ঠিক দশটা। পথিমধ্যে বকশিবাজারের কাছে তার দেখা হয়েছিল সেই রিকশাওয়ালার সঙ্গে, যাকে একবার পাঁচ শ টাকার নোট দিয়ে দিয়েছিল হিমু। হিমু তাকে না চিনতে পারলেও রিকশাওয়ালা তাকে ঠিকই চিনেছে। ‘আরে হিমু ভাইজান না? এই রৈদ্দের মধ্যে হাইটা কই যাইতে আছেন? ওঠেন! আমার রিকশাতে ওঠেন! ঢাকা শহরের এক কোনা থেইকা আরেক কোনা যেইহানে যাইতে চান, আপনারে পৌঁছায়া দিমুনে!’ শূন্য

দৃষ্টিতে একবার শুধু হিমু তাকে দেখল, কোনো জবাব দিল না। না আজকে সে রিকশা নেবে না। আজকে সে শুধুই হাঁটবে। আজ এক

বিশেষ দিন!

শহীদ মিনারে শত সহস্র মানুষের ভিড়। এই মুহূর্তগুলোর অপেক্ষাতেই হিমুর গত তিনটা রাত কেটেছে। ভীষণ ভারী পায়ে আস্তে আস্তে ভিড় ঠেলে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের

দিকে হেঁটে চলেছে হিমু। বুকের ভেতর যেন প্রমত্ত সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাত হচ্ছে। এমন অনুভূতি হিমুর কখনোই হয়নি বাবা মারা যাওয়ার পর।

ভিড় ঠেলে একসময় হিমুরা পৌঁছে গেল গগন-শিরীষগাছের নিচে কালো বেদীর ওপর রাখা কফিনটার সামনে। কফিন জড়িয়ে কাঁদছে কফিনে বন্দী মানুষটার স্বজনেরা। কফিনবন্দী মানুষটার কলমের আঁচড়েই হিমুর পাঞ্জাবি হলুদ হয়েছিল, গায়ের রং রোদপোড়া হয়েছিল, রুপা হয়েছিল অপূর্ব রূপবতী, স্বর্গের অপ্সরা, মীরা হয়েছিল মায়াবতী।



৪.

হিমু কফিনের ওপর দুটো কদম ফুল রাখল গভীর ভালোবাসার সঙ্গে। একটা ফুল নিজের পক্ষ থেকে, আরেকটা রুপার পক্ষ থেকে। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, এত ভারী বুক সত্ত্বেও হিমুর চোখে কোনো পানি নেই। কারণ হিমুরা কাঁদে না, হিমুদের কাঁদতে নেই।

শহীদ মিনার থেকে মেসে ফেরার পথে শহরের নানা অলিগলিতে হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হিমুর পা। মেসে ফিরতে ফিরতে হিমুর রাত দশটার মতো বেজে গেল। আজ বাইরে নক্ষত্রের রাত। চাঁদের আলোরও যেন কোনো কমতি নেই। দুঃখের বিষয়, ঠিক তিন দিন আগেই ছিল অমাবস্যা, যখন সেই মানুষটি কফিনে ঢুকে পড়েছিল। যে মানুষটি হিমুকে জোছনা চিনিয়েছে, জোছনায় স্নান করা শিখিয়েছে, সেই হলো জোছনাবঞ্চিত তার জীবনের শেষ দিনটিতে!



( সংগহ )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.