নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাস্তায় পাওয়া ডায়েরী থেকে- ২৫

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৫

আমি বড় হয়েছি । অনেক বড় হয়েছি । এখন আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি । দেখে দেখে শিখেছি আরও অনেক বেশী । চুপ করে বসে থেকে চার-পাশ খুব মন দিয়ে দেখি । মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনের ভেতর টা দেখে ফেলি । কখনও আনন্দিত হই কখনও হই ব্যাথিত । আমি রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে বসে চা খাই- অন্যদের কথা মন দিয়ে শুনি । তাদের মনের কথা, মুখের কথা মুহূর্তেই বুঝে ফেলি । নিজের অজানা এক আবিস্কারের আনন্দে অভিভূত হই । চায়ের কাপ হাতে নিয়েই রাস্তার ওপারে দোতলার ব্যালকনি'তে তাকাই । একটি মেয়ে তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুছছে। চট করে আমি মেয়েটার মনের কথা বুঝে ফেলি । মেয়েটা বিকেলে তার প্রিয় মানুষের সাথে দেখা করতে যাবে । সে ভাবছে আজ গাঢ সবুজ একটা শাড়ি পড়ে যাবে ।হাত ভরতি থাকবে সবুজ কাঁচের চুড়ি, কপালে একটা বড় সবুজ টিপ । আজ সে হয়তো তার প্রিয় মানুষের সাথে অনেক বড় একটা সাহসের কাজ করবে । এটা নিয়েই মেয়েটি অনেক চিন্তিত । চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে আমি রাস্তায় নামি ।



দুপুরবেলা সব কিছু কেমন যেন থম থম করে । মাত্র শীত শেষ হলো । গাছের সব পাতা ঝড়ে পড়ছে । গাছ গুলোকে দেখলে এতিম মনে হয়। ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে আমার অনেক ভালো লাগে । রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কত কিছু ভাবি । আজ আমার হিমির বাসায় দুপুরে খাওয়ার কথা । যাবো কিনা বুঝতে পারছি না । আমি জানি হিমি আমাকে ক্রমাগত মোবাইলে ফোন দিয়ে যাচ্ছে । তাই সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইলে রিং টোন অফ করে রেখেছি । এটা আমার অনেক পুরাতন একটা অভ্যাস । হিমি আমার এই অভ্যাসের সাথে পরিচিত । ইদানিং নিজের সাথে নিজে অনেক যুদ্ধ করে নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এনেছি । কিছু ভালো পরিবর্তন, কিছু খারাপ পরিবর্তন । সময় মতো দু'টাই কাজে লাগে ।হঠাৎ এক রিকশাওয়ালা এসে পায়ের উপর রিকশা উঠিয়ে দিল । অনেক ব্যাথা পেলাম পায়ে। রিকশাওয়ালা চিকৎ্কার করে বলল- রাস্তার মধ্যে দিয়ে হাটছেন কেন ? আমি মনে মনে বললাম- ফুটপাত দিয়ে হাঁটার জায়গা কোথায়? দোকানের জিনিস পত্র ফুটপাতে সাজিয়ে রেখেছে ।



আমি রাস্তায় হেটেই চলেছি । অনেক ক্ষুধা লেগেছে ।চা বিস্কুটের ক্ষুধা না । ধব ধবে সাদা ভাতের ক্ষুধা । হোটেলের ভাত নয় । বাসায় রান্না করা ভাত, তরকারী ডাল আর ডিম ভর্তা । রাস্তার পাশে এক লোক ভ্যানে করে বড়ই বিক্রি করছে । বড় বড় বড়ই । কোনো কিছু না ভেবেই এক কেজি বড়ই কিনে নিলাম । তারপর হিমির বাসায় গেলাম । হিমি আমাকে দেখেই বলল- তোমাকে তো দাঁড় কাকের মতন লাগছে ।হিমিকে একবার বলেছিলাম- চোখে কাজল দিলে তোমাকে অনেক সুন্দর দেখায়, তারপর থেকে হিমির চোখ কখনও কাজল ছাড়া দেখিনি । আরও আছে কাচের চুড়ি, টিপ । বোকা ! আমি বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসে দাঁড় কাক থেকে কাক হলাম । হিমি টেবিলে খাবার দিল- সাদা ভাত, বাধাকপি বাজি, ডাল আর ডিম ভাজা । ডিম বাজিতে এক গাদা পেয়াজ দিয়েছে । দশ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষ করলাম । তারপর সুফিয়া বুয়া এসে চা দিয়ে গেল । চায়ে সর ভাসছে । সর ভাসা চা খেলাম । হিমির মুখের দিকে আমি কখনও তাকাই না । আজ তাকালাম- বুঝতে পারলাম হিমি খুব চাচ্ছে- সারাটা বিকাল হিমির সাথে থাকি ।



সন্ধ্যায় গেলাম শাহবাগ ।আন্দোলনটা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না । প্রতিদিন একটু একটু করে আন্দোলনের চেহারা বদলে যাচ্ছে । শেষ মেষ আন্দোলনের মধ্যে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে । ব্লগার'রা আন্দোন শুরু করেছে, ভালো কথা কিন্তু প্রতিটা ব্লগ কোনো না কোন দলের ।আসমান ব্লগ অমুক দলের, সামসু ব্লগ অমুক দলের ।সুন্দর রাজনীতি এবং সুন্দর মানুষের অভাবে দেশের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে । আমরা সাধারণ মানুষ জন সব দেখছি- সব বুঝতে পারছি । কিন্তু আমরা চিৎকার করলেও কেউ শুনে না কেউ বুঝে না কেউ দেখে না । মন খারাপ নিয়ে একা একাই শাহবাগ ঘুরে বেড়ালাম । বই মেলায় ঢুকলাম না । পরিচিত মানুষের ধারে কাছেও গেলাম না । ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে ঘুরলাম একটা ছবিও তুললাম না । বারডেম হাসপাতালের সামনে গিয়ে দুই বার চা-সিগারে্ট খেলাম । অনেক কিছুই করতে ইচ্ছা করছে- কিন্তু কিছুই করতে পারছি না । কিছু না করতে পারার অনেক কষ্ট । তীব্র কষ্ট নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরলাম । হিমি বলেছিল- রাতা ৯ টার মধ্যে বাসায় ফিরতে । ১২ টা বেজে গেল ।



রাত একটা । বাসার সবাই গভীর ঘুমে । আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালাম ।একটা সিগারেট যত দ্রুত শেষ হয় তার চেষে দ্রুত সময় শেষ হয় । দুঃখ কষ্ট হতাশা'র শেষ নেই । দুঃখ কষ্ট হতাশা আমাকে কুড়ে কুড়ে খায় । ভাবি-সব কিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবো। পর মুহূর্তেই মনে হয় - তাহলে হিমির কি হবে ? আমার শত্রুরা তো হাতে হালি দিয়ে হাসবে । সে সুযোগ তাদের অবশ্যই দিতে পারি না । ঘুরে দাড়াবার মতন সময় এখনও আমার হাতে আছে । নিজেকে বলি-বোকা, ছেলে এত অস্থির হলে চলে, অপেক্ষা করো- সব হবে । পারবে তুমি । এক আকাশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘরে ঢুকে টিভি অন করলাম । খবর শুনব । খবর শুনে মেজাজ আরও বেশী বিগড়ে যায় । টক শো শুনে গা রি রি করে । চ্যানেল ঘুরে ঘুরে চলে যাই ডিসকোভারি'তে । এটাই ভালো । সাপের অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে । বিশাল একটা জঙ্গলে দুইজন লোক সাপের সন্ধ্যানে বের হয়েছে । তারা অনেক খোজাখুজি করে বিশাল একটা সাপ ধরে ফেলল।ইয়া মোটা, কুচকুচে কালো । একজন সাপের গলা টিপে ধরে বিষ বের করে নিল। আরা একজন কয়েকটা ছবি তুলে নিল ।



রাত তিনটা । ঘর অন্ধকার করে আমি বিছানায় । সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম । আর কি আশ্চর্য সাথে সাথে একটা স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম । স্বপ্নটা এই রকম- গভীর রাত। আমি গ্রামের রাস্তায় একটা কার্লভাটের উপর বসে আসি ।চারিদিকে ফকফকা জোছনা । আমার হাতে সিগারেট, ম্যাচের জন্য সিগারেটি ধরাতে পারছি না । ঠিক এই সময় একটি মেয়ে দৌড়ে আমার দিকে আসছে- মেয়েটির শাড়ি এলোমেলো, চুল এলোমেলো । মেয়েটির পেছনে আরও তিনটি লোক । বুঝতে পারলাম মেয়েটিকে তিনজন লোক তাড়া করেছে । মেয়েটি আমার কাছে এসে বলল- আমাকে বাঁচান । মেয়েটির কথা শুনে আমার খুব রাগ লাগল- ম্যাচের জন্য আমি সিগারেট ধরাতে পারছি না। এই সময় লোক তিনটি আমার সামনে এসে মেয়েটিকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল । মেয়েটি ব্যাকুল হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে- আমাকে বাঁচান । আমি লোক গুলোর দিকে তাকিয়ে বললাম- ভাই আপনাদের কাছে ম্যাচ হবে ? তারা কেউ আমার কথার জবাব দিল না । আমি লোক গুলোর সামনে গিয়ে বললাম- আপনারা থামুন। কথা আছে ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩২

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: মেয়েটির এলোমেলো শাড়ির মত আমার মাথাটাও এলোমেলো হয়ে গেল আপনার লেখার শেষ অংশটুকু পড়ে। দারুণ লিখেছেন।।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫৩

রবিন উত্তর কাট্টলী বলেছেন: দারুণ লিখেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.