নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক যে ছিল রাজা-রানী

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১৩

চীন দেশে এক বণিক। প্রচুর ধন সম্পদের মালিক, রাজ প্রাসাদের মত এক বাড়ি তার আর চারপাশে নানা রঙের ফুলের বাগান। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা থাকে সমস্ত প্রাসাদ। বণিকের তিনটি ছেলে এবং তিনটি মেয়ে। দারুন আদর করেন তার ছেলে মেয়েদের। ওরা ছিল বণিকের হৃদয়ের টুকরা, নয়নের মণি। এদের মধ্যে ছোট মেয়েটি ছিল পরীর ন্যায় অপরূপ-পরমা সুন্দরী। সে তার বাবাকেও প্রচন্ড রকম ভালবাসে। বাবাকে ছাড়া যেন একদন্ডও থাকতে পারে না। সুখ শান্তি আর ধন সম্পদে এই বণিকের পরিবারে অভাব বলে যেন কিছুই আর নেই। কিন্তু মানুষের সুখতো আর চিরস্থায়ী নয় তাই বণিকের জীবনেও এই সুখ আর দীর্ঘস্থায়ী হলো না। একের পর এক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে সওদাগরী জাহাজ ডুবে যায় না হয় দস্যুদের কবলে পড়ে লুট হয়ে যায় আবার বড় বড় সব গুদামে আগুন লেগে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় এই ধনাঢ্য বণিক। তার অবস্থা এমনই খারাপ হয়ে যায় যে অবশেষে তার সখের প্রাসাদটিও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। অবশেষে নিঃশ্ব হয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে চলে যায় দূর গ্রামে।



এবার বণিকের জীবনে শুরু হয় কঠিন এক সময়। ক্ষেতে খামারে কাজ করে, হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যা কিছু আয় হয় তাই দিয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে এক পেট আধাপেট খেয়ে কোনো মতে তাদের দিন কেটে যাচ্ছিল।



এইভাবে বেশ কিছুদিন পর হঠাত্ একদিন খবর এলো যে লুট হয়ে যাওয়া একটি জাহাজ উদ্ধার হয়েছে। বণিকতো মহাখুশী। সেখানে যাবার জন্য বণিক তৈরী হচ্ছে আর মেয়েদের ডেকে বলছে তোমাদের কার কি লাগবে। এই কথা শুনে বড় মেয়ে দুটিতো জারপরনাই খুশী। এক বিশাল ফর্দ লিখে দিল বাবার হাতে। বাবা দেখল শিল্কের শাড়ি, হীরের মালা, সোনার গয়না আরও কতসব দামী দামী সামগ্রী নিয়ে আসার কথা লিখেছে তার বড় দুই মেয়ে। এরপর বণিক তার আদরের ছোট মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলো-



বাবা: মামনি আমি বন্দরে যাচ্ছি। কতদিন হলো তোমাদেরকে কোনো কিছু কিনে দিতে পারিনাই। বলো মা তোমার কি চাই। তোমার জন্য কি আনবো?



মেয়ে: বাবা, আমার জন্য তোমাকে কিছুই আনতে হবে না। তুমি ভালোয় ভালোয় ফিরে আসলেই আমি খুশী হবো। আচ্ছা বাবা, তুমি যখন বলছ তাহলে তুমি আমার জন্য একটি লাল গোলাপ ফুল নিয়ে এসো।

বাবা: শুধু লাল গোলাপ ফুল! আচ্ছা মা তোমার জন্য তাই আনা হবে।



এই কথা বলে বণিক চলে যায় বন্দরে। সেখানে গিয়ে দেখল সবচেয়ে ছোট একটি জাহাজ উদ্ধার হয়েছে আর এতে তেমন কোনো মালপত্রও নাই যা দিয়ে আবার বাণিজ্য শুরুকরা যায়। তবুও অবশিষ্ঠ মালপত্র যা ছিল বিক্রি করে যা পাওয়া গেল তাতেই খুশী আর খুশী মনে ঘোড়া ছুটিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো। কেননা অনেক দিন সে ছেলে মেয়েদেরকে দেখে নি।



কিন্তু এবার দেখা গেলো আরেক বিপত্তি। ঘোড়া ছুটিয়ে বনের মধ্যে সে পথ হারিয়ে ফেলে। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার, কোথাও কোনো দিশা নেই যা দেখে বন থেকে বের হতে পারে। হঠাত্ করেই আবার ঝুম ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। কি করবে ভেবে না পেয়ে অন্তত আশ্রয় নিতে পারা যায় এরকম একটি জায়গা খুঁজে বেরাতে লাগলো। অবশেষে দূরে কোথাও যেন একটি আলোর বিন্দুর মত কিছু একটা দেখল আর তখনই ঘোড়া ছুটিয়ে সেদিকে চলে গেল।



লি: ও মা! কি সুন্দর একটি বাড়ি। ঝলমলে আলো চারিদিকে। আর বাহারি নক্সা আঁকা সূরম্য দরজায় লেখা রয়েছে- পথিক, তোমায় স্বাগতম। বণিক কিন্তু তখনও ঘোড়ার পিঠে, কিন্তু দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে গেল। বাহ! বাহ! কি সুন্দর বাড়ি। কিন্তু কোথাও লোকজন নাই, কাউকেও দেখা যাচ্ছে না। ঝরনার পানি, ঝিরিঝিরি বাতাস, সবকিছুই পরিপাটি করে সাজানো। বণিক ধীরে ধীরে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। সেখানে একটি সুবিশাল ঘর রঙিন ঝলমলে কাপড়, ঝাড়বাতি, সিংহাসনের মত মনিমুক্তা খচিত চেয়ার টেবিল। কিন্তু লোকজন কোথায়? ভয়ে ভয়ে একবার একটুখানি গলা খাকারিও দিল, কিন্তু সারা শব্দ নেই। ওমা! ওদিকে কি? ও যে দেখি খাবার টেবিলে সাজানো কত সুস্বাদু খাবার। এবার বণিকের মনে পড়লো সে খুব ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত। হিম-শীতল পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে এসে দেখে সেখানে মাত্র একটিই চেয়ার রয়েছে। ওমনি টপ করে বসে পড়ল আর হুমহুম করে খেয়ে নিল মজাদার যত খাবার আছে সব। ক্লান্ত শরীরে খাওয়া দাওয়ার পর শরীর যেন আর চলে না, চোখ জুড়ে রাজ্যের ঘুম নেমে আসলো। পাশের ঘরের সোনার পালঙ্কে যেই না শরীরটা এলিয়ে মাত্রই ঘুমের রাজ্যে চলে যায় বণিক।



পরদিন সকালে উঠে চাঙা দেহ মন ফুরফুরে মেজাজ- বণিক তখন ভাবল এবার তাহলে যাওয়া যাক। এই কথা ভেবে ঘোড়া পিঠে চড়ে বসবে এমন সময় বাড়ির সামনের সুন্দর ফুলের বাগান দেখে তার ছোট কন্যার আবদারের কথা মনে পড়ল আর চটকরে একটি লাল গোলাপ তুলে নিল।



বণিক: ও কি! ভয়ংকর শব্দ কোথা থেকে আসছে? সমস্ত মাটি কাঁপছে, বাড়িঘর ঠোঙ্গার মত দুলছে। কেনো এমন হচ্ছে। হায় হায় কি উপায় এখন?



এমন সময় বণিক টের পেল পিছন থেকে তার কাঁধে কয়েক মন ওজনের হাতের থাবা। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখল বিশাল দেহের কুতসিত, কাদাকার চেহারা, দেখতে জানোয়ার মনে হলেও মানুষ মানুষ মনে হয় এমন আজব চেহারার একটি জানোয়ার, মুখ থেকে যেনো আগুনের হুলকী বের হচ্ছে- হুংকার দিয়ে বলছে-



জানোয়ার: ওরে বেয়াদব, তুই আমার বাগানের ফুল চুরি করেছিস।

বণিক: না! না! আমি ফুল চুরি করিনি।আমার ছোট্ট মেয়ে একটি ফুল চেয়েছিল তাই ওর জন্য একটি ফুল তুলে ছিলাম। দয়া করে আমায় ক্ষমা করুন।

জানোয়ার: তোর কোনো কথাই আমি শুনছি না। এই বনের ফল, ফুল, পাখি কিছু চুরি করার একটিই সাজা মৃত্যুদন্ড।

বণিক: বিশ্বাস করুন, আমার ছোট মেয়ে, লক্ষী মেয়ে, কখনো কিছুই চায় না বাবার কাছে। এবার সে একটিমাত্র জিনিষ চেয়েছে, তাও আবার সামান্য একটি লাল গোলাপ। তাই আমি ফুলটি তুলে ছিলাম। আমায় মাফ করে দাও, আমায় ক্ষমা কর। দয়াকরে ফুলটি নিয়ে আমার মেয়ের কাছে যেতে দাও।

জানোয়ার: ঠিক আছে তোকে ছেড়ে দিতে পারি তবে একটি শর্ত আছে

বণিক: কি শর্ত বলুন, আপনি যাই বলবেন তাই করবো, বলুন কি শর্ত আছে?

জানোয়ার: তোর ঘুমানোর বিছানার পাশে দুটি কাপড়ের পুটলি আছে, ওই পুটলি দুটি আর লাল গোলাপ নিয়ে তুই বাড়িতে যা। আর বাড়িতে গিয়ে তোর ছোট মেয়েকে নিয়ে এখানে আবার চলে আসবি। মেয়ে রেখে দিয়ে তবে তোকে একাই বাড়ি ফিরে যেতে হবে। যদি তোর মেয়ে না আসে তবে তুই আসবি।

বণিক: জী আচ্ছা, আপনার শর্তে আমি রাজি। আমি শিগ্রই আমার ছোট মেয়েকে নিয়ে চলে আসবো।



এই বলে বণিক দ্রুত ঘোড়ায় চড়ে বাড়ি চলে যায়। কাপড়ের পুটলিতে হীর, সোনার গহনা পেয়ে বড় মেয়ে দুটিতো খুব খুশী। তারা বাবার মুখের দিকে একবার তাকিয়েও দেখলনা যে বাবা কত মন খারাপ করে আছে, চোখের কোনে তার পানি জমে আছে। ছোট মেয়ে ফুল হাতে নিল ঠিক কিন্তু বাবার দুঃশ্চিন্তাও তার চোখ এড়ায় নি।



মেয়ে: বাবা তোমার কি হয়েছে? তুমি কাঁদছ কেনো। বল বাবা তোমার এই মুখ দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, বল বাবা।

বাবা: কিছু হয়নি মা। তোরা কয় ভাই বোন একত্রে মিলে মিশে থাক, আমি কিছু দিনের জন্য আবার একটু বাইরে যাব।

মেয়ে: না বাবা একথা বললে তো হবে না। আমি বুঝতে পারছি তুমি কিছু লুকাচ্ছো, বল বাবা কি হয়েছে?



অবশেষে বাবা সব কিছু খুলে বলে। শুনে ছোট মেয়েটির একটু মন খারাপ হলেও সে সিদ্ধান্ত নিল যে সে ঐ জানোয়ারের রাজপ্রাসাদে যাবে। তার একটাই কথা যে জানোয়ারটা তাকে যেতে বলেছে, তাই সে-ই যাবে। অবশেষে বাবা তার ছোট মেয়েটিকে নিয়ে রওনা হয়। কয়েকদিন গভীর বনে চলার পর অতপর তারা গিয়ে পৌছালো সেই জানোয়ারের প্রাসাদে। আগের মতোই সুন সান নিরবতা, কোথাও কেউ নেই। যথারীতি তারা খাবার ঘরে গিয়ে একা একাই খাবার দাবার শেষ করে যেই না পাশের শোবার ঘরে গেল ওমনি এক বিকট শব্দ করে অন্যপাশের একটি দরজা খুলে গেল। আর কুতসিত্ কদাকার জানোয়ারটা থপ থপ করে পা ফেলে ঘরে প্রবেশ করলো। জানোয়ারটিকে দেখে তো ছোট মেয়েটি ভয়ে গুটিয়ে যাবার দশা। জানোয়ারটি তার দিকেই এগিয়ে গেল, আর মেয়েটি তো ভয়ে থরথর–সে আরেক দিকে মুখ লুকিয়ে রইল।



জানোয়ার: তুমি এসেছ, এতে আমি সত্যি আনন্দিত, কিন্তু একটি প্রশ্নের উত্তর দাও, তুমি কি সেচ্ছায় এসেছো নাকি তোমাকে জোর করে আনা হয়েছে।

মেয়ে: আ.. আ..মি সেচ্ছায় এ..এ সেছি।

জানোয়ার: আমি আরো খুশী হলাম। এই যে আমি আপনাকে বলছি, আপনি এবার যেতে পারেন। আপনার কাজ শেষ। মেয়েটি এখন এখানেই থাকবে। আপনি বাড়ি ফিরে যান।

মেয়ে: বাবা! না, বাবা, না বাবা, আমাকে একা রেখে যেওনা বাবা, আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও, আমি বাড়ি যাবো, বাবা, বাবা।

বাবা: আয় মা শেষবার তোকে একটু কোলে জড়িয়ে রাখি। ভালো থাকিস মা। আমাকে ক্ষমা করে দিস। তোকে এখানে একা রেখে যাচ্ছি বলে।



এই কথা বলে বাবা কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিল মেয়ের কাছ থেকে। আর মেয়েটিও বাবার কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে সে বিস্মিত হয়ে দেখে যে ঘরে সে শুয়েছিল সেই ঘরের বিশাল খিলানযুক্ত দরজায় স্বর্ণখচিত নাম লেখা রয়েছে "রাণী মহল"। এটা দেখে চমকে ওঠে এই ভেবে যে, বাবা তো তাকে আদর করে 'রাণী মা' বলেই ডাকে। সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো ঘরটিতে সর্বত্রই ফুলের সুবাতাস। ছবির মত করে যেন সাজানো সবকিছু। দেখেই মন ভরে যায়। রাণী মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে দেখছে আর হঠাত্ তার হুশ হয় যে সে তার নিজের বাসায় নেই। কেউ নেই তার পাশে। পাশে খাবার ঘরে টেবিলে সাজানো বাহারি খাবার আর টেবিলের মাঝে নক্সা আঁকা চীনের প্রাচীনতম ফুলের টবে সাজানো রয়েছে লাল গোলাপ ফুল। তবে যথারীতি একটি মাত্র চেয়ার। রাণী কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে না যে এই কদাকার কুতসিত জানোয়ারটা তাকে কেন এত খাতির করছে। যেই মুহুর্তে রাণী খাবার খেতে বসল অমনি জানোয়ারটি তার পাশে এসে দাঁড়াল আর নরম স্বরে কত রকম মজার গল্প বলতে থাকল। আর রাণী মুগ্ধ হয়ে গল্প শুনতে থাকে। এই ভাবে দিন যায় রাত যায় আর সেই জানোয়ারটি প্রতিদিন খাবার টেবিলে রাণীকে গল্প শুনিয়ে যায়। রাণীও তন্ময় হয়ে শোনে সেই গল্প। কিন্তু একদিন সেই জানোয়ারটি তাকে বলে বসলো-



জানোয়ার: আচ্ছা রাণী আমি কি দেখতে খুব কুতসিত।



রাণী: হ্যাঁ, না মানে অনেকটাই কুতসিত।



জানোয়ার: (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে, কিছুক্ষণ চুপ থেকে) রাণী, তুমি কি আমায় বিয়ে করতে পার না?



রাণী: না! কখনোই পারি না।



জানোয়ারটি হতাশ হয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেল চলে যায়। দিন চলে যায় এভাবে। রাণীর মনে পড়ে তার বাড়ির কথা। এখানে এত কিছু থাকতেও কেউ নেই, মনের কথা খুলে বলার মানুষ নেই, বাবা নেই, ভাই নেই, বোন নেই। এই সব ভেবে রাণী কান্না জুড়ে দেয়। রাণীর কান্না শুনে দ্রুত ছুটে আসে জানোয়ারটি।



রাণী: আমি বাড়ি যেতে চাই। কিছুদিন বাড়িতে সবার সাথে থেকে তারপর ফিরে আসবো। আমাকে বাড়ি যেতে দাও।

জানোয়ার: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) হ্যাঁ যাও! তবে ফিরে আসতে ভুলো না। তুমি ফিরে না আসলে আমি ভীষণ কষ্ট পাবো।

রাণী: না, না, আমি মাত্র সাতদিন থাকবো। সাতদিন পরেই ফিরে আসবো।

জানোয়ার: আমি তোমার ফিরে আসার অপেক্ষাতে রইলাম। এই আংটিটা সাথে রাখো। যখন তোমার এখানে আসার কথা মনে হবে, তখন এই আংটিটা মাথার পাশে রেখে ঘুমিও, তাহলেই ঘুম থেকে উঠে দেখবে তুমি এখানে চলে এসেছ।



রাণী বাড়ি ফিরে যায়, সবাইতো মহাখুশী। বাবা তার ছোট মেয়েকে দেখে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারে না। বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে দু'জনে। এভাবে মহা আনন্দে তাদের দিন কেটে যায়। আর রাণীও ভুলে যায় যে সে ফিরে আসার কথা দিয়ে এসেছে। একদিন রাণী খেতে বসে চোখের সামনে ছবি দেখতে পায় যে, সেই জানোয়ারটি মলিন মুখ, চোখ তার গর্তে ঢুকে গেছে, শরীরটাও শুকিয়ে গেছে অনেক, সারাদিন কি যেন ভাবছে। রাণীর তখন সব মনে পড়ল আর তখন বাবাকে জানালো সে আবার ফিরে যাবে সেই বনে। কেননা সে তাকে কথা দিয়ে এসেছে। বাবাতো কিছুতেই যেতে দিবে না। কিন্তু রাণী তার কথা রাখতে গিয়ে সেইদিন রাতে আংটি মাথার কাছে রেখে শুয়ে পড়ল আর পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখে সে চলে এসেছে বনে ভিতরের সেই রাজপ্রাসাদে। তাড়াহুড়ো করে ছুটে যায় জানোয়ারটির কাছে কিন্তু ভিতর বাইরে কোথাও তাকে খুঁজে পায় না। রাণী অস্থির হয়ে ওঠে, খুঁজে না পেয়ে তার চোখ গড়িয়ে পানিও চলে আসে। হঠাত্ সে রাণী দেখতে পায় লাল গোলাপের বাগানে একটি গোলাপ গাছের নিচে পড়ে আছে জানোয়ারটি। চোখ তার বন্ধ, ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিচ্ছে, মলিন, শরীর শুকিয়ে গেছে। এই অবস্থা দেখে রাণী আঁতকে উঠল! আর মাথার পাশে বসে কেঁদে কেঁদে ডাকতে লাগলো। রাণীর চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি বেরিয়ে পড়ল জানোয়ারটির মুখে। আর তাতেই জানোয়ারটি চোখ খুলে দেখল-



জানোয়ার: তুমি এসেছো, যাক এবার তা হলে শান্তিতে মরতে পারবো।

রাণী: না, না তুমি মরবে কেনো, আমি তো ফিরে এসেছি।

জানোয়ার: আমার বেঁচে থেকেই বা লাভ কি?

রাণী: না না আর অমন কথা বলো না, এখন থেকে তোমার সাথেই থাকবো। আমি তোমাকে বিয়ে করবো, সত্যি বলছি, তুমি সুস্থ হও, তারপর আমরা বিয়ে করবো। আমি জানি তোমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এসো আমার বুকে এসো, দেখবে তোমার খুব ভাল লাগবে।



রাণী জানোয়ারটিকে বুকে জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে সমস্ত প্রাসাদ লাল-নীল হাজারো রঙের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো, চারিদিকে বাদ্য বাজনা বেজে উঠলো। রাণীতো অবাক! একী কাণ্ড, কিছু বুঝতে না বুঝতে হঠাত্ তার হাত ধরে তাকে কে যেন টান দিল। দেখে অপরূপ সুদর্শন এক যুবক তার হাত ধরে রয়েছে।



রাণী: কে তুমি, কেনো তুমি আমার হাত ধরে আছ?

রাজা: আমিই তোমার সেই কুতসিত জানোয়ার,

রাণী: কী বলছো, এত অপরূপ সুদর্শন হলে কি করে, আর তোমার নাম ই বা কি।



রাজা: আমার নাম রাজা, আমি এই রাজ্যের রাজা। কিন্তু এক দুষ্ট জাদুকরের চক্রান্তে পড়ে, তার অভিশাপে আমার এই দশা হয়েছিল। কথা ছিল যেদিন কোনো নারী আমাকে ভালবেসে বিয়ে করতে রাজি হবে সেদিনই কেবল আমি আমার আগে চেহারা ফিরে পাবো। তুমিই আমাকে ফিরিয়ে দিলে আমার আগের জীবন। আমি তোমাকে সারা জীবন ভর ভালবাসবো। কথা দাও কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না?



রাণী: কথা দিলাম, আর কখনো দূরে চলে যাব না। তবে এসো আমার হাতে তোমার হাত রাখো।

অতঃপর মহাধুম ধামে তাদের বিয়ে হলো আর সুখে শান্তিতে রাজ্য শাসন করতে থাকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩২

এস. এম কামরুল হাসান পলাশ বলেছেন: সুন্দর গল্প +++++++

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৭

রাফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেছেন: অনেক ভাল লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.