নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৮১

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৩

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "প্রথম আলো" উপন্যাসের এক পাতায় রবীন্দ্রনাথ তার বৌদি নতুন বউঠান কাদম্বিরি'র শোক ভূলতে তাঁর স্ত্রী মৃনালিনী'র কাছে এলেন এবং তাদের প্রথম মিলনটির ঘটনা এভাবেই বর্নিত -



" . . . . . দ্রুত বিছানার কাছে চলে এল রবি। এ ঘরে একটি মৃদু গ্যাসের বাতি সারারাত জ্বলে। স্বচ্ছ মশারি দিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটা পাশ বালিশ জড়িয়ে এক পাশে ফিরে ঘুমিয়ে আছে মৃণালিনী, গোলাপি ডুরে শাড়ি পরা, খানিকটা চুল এসে পড়েছে মুখের ওপর, তার ফাঁক দিয়ে ঝিকমিক করছে কানের হীরের দুল।



মশারি তুলে ভেতরে ঢুকল রবি, অন্যদিন যাতে মৃনালিনীর ঘুম না ভাঙ্গে তাই সে সন্তর্পণে অনেকটা দুরত্ব রেখে শোয়, আজ সে পাশে আঙুল দিয়ে সরিয়ে দিল ওর মুখের চুল। সেই সামান্য স্পর্শেই চোখ মেলে তাকাল মৃনালিনী, চমকে উঠল না, উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রইল। রবি তার ঠোটে আঙুল বুলিয়ে দিল, তারপর তার নাক ও চোখের পাশে পাশে আঙুল দিয়ে যেন আঁকতে লাগল ছবি। মৃনালিনী তার আঙুলটা এক সময় চেপে ধরতেই রবি তাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করতে লাগল।



ছায়া থেকে শরীর অনেক বেশি আপন হতে পারে। শরীর অনেক কিছু ভুলিয়ে দেয়, এমনকি শোকও ভুলিয়ে দেয়।"



বিদুষী মারাঠি রূপসী তরুণী আন্না তড়খড়।(আন্না পান্ডুরং তড়খড় জন্ম: ১৮৫৬—মৃত্যু: ১৮৯১) উঠতি কবির উত্তরকৈশোর ও প্রথম যৌবনের সন্ধিক্ষণে দেখা সুঠাম সুপুরুষ রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভালোবাসা তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনটির শেষ পর্যন্তই হূদয়ে পোষণ করে গেছেন আন্না।সম্ভবত আন্না-ট্যাগোরের প্রণয়-সম্পর্কের বিচিত্র এই বিরল ধারার কারণেই লাখ লাখ পৃষ্ঠার রবীন্দ্রচর্চার পরিসরেও আন্না পান্ডুরং তড়খড়ের কোনো জায়গা হয় না। ফলে কাদম্বরী, রানু আর ওকাম্পোকে নিয়ে ক্রমবর্ধিষ্ণু কোলাহলের তলে অশ্রুতির পরম্পরায় আন্না-প্রসঙ্গটি আজ প্রায় সম্পূর্ণ বিস্মৃত।



রবীন্দ্রনাথ ১৮৭৮ সালের আগস্টে মেজদা আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মস্থল আহমেদাবাদ ত্যাগ করে বোম্বাইতে তাঁর বন্ধু ডা. আত্মারাম পান্ডুরংয়ের পরিবারে আশ্রয় গ্রহণ করেন—প্রধানত স্পোকেন ইংলিশে সড়গড় ও ইংরেজদের আদবকায়দায় ধাতস্থ হওয়ার উদ্দেশ্যে।গুজরাটের ‘প্রার্থনা সমাজ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আত্মারাম।আর তাঁর বিলাতফেরত কন্যা আন্না অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন নবীন রবীন্দ্রনাথকে ইংরেজিয়ানায় প্রশিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে।রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:‘কবির কাছ থেকে একটা ডাকনাম চাইলেন, দিলেম যুগিয়ে—সেটা ভালো লাগল তাঁর কানে। ইচ্ছে করেছিলেন সেই নামটি আমার কবিতার ছন্দে জড়িয়ে দিতে। বেঁধে দিলুম সেটাকে কাব্যের গাঁথুনিতে; শুনলেন সেটা ভোরবেলাকার ভৈরবী সুরে; বললেন, “কবি, তোমার গান শুনলে আমি বোধ হয় আমার মরণদিনের থেকেও প্রাণ পেয়ে জেগে উঠতে পারি।”



১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি অতুলপ্রসাদ সেন ও দিলীপকুমার রায়ের সঙ্গে আলাপে রবীন্দ্রনাথ এই তরুণীর কথা স্মরণ করেছেন:‘তখন আমার বয়স বছর ষোলো। আমাকে ইংরেজি কথা বলা শেখানোর জন্যে পাঠানো হ’ল বম্বেতে একটি মারাঠি পরিবারে।...সে-পরিবারের নায়িকা একটি মারাঠি ষোড়শী। যেমন শিক্ষিতা, তেমনি চালাক-চতুর, তেমনি মিশুক।...তার স্তাবক-সংখ্যা নিতান্ত কম ছিল না—বিশেষ আরো এই জন্যে যে ঐ বয়সেই সে একবার বিলেত চক্র দিয়ে এসেছিল। সেসময়ে মেয়েদের বিলেত-যাওয়া আজকের মতন পাড়া-বেড়ানো গোছের ছিল না, মনে রেখো।



‘আমার সঙ্গে সে প্রায়ই যেচে মিশতে আসত। কত ছুতো ক’রেই সে ঘুরত আমার আনাচে কানাচে।—আমাকে বিমর্ষ দেখলে দিত সান্ত্বনা, প্রফুল্ল দেখলে পিছন থেকে ধরত চোখ টিপে।‘একথা আমি মানব যে আমি বেশ টের পেতাম যে ঘটবার মতন একটা কিছু ঘটছে, কিন্তু হায় রে, সে-হওয়াটাকে উস্কে দেওয়ার দিকে আমার না ছিল কোনোরকম তৎপরতা, না কোনো প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব। ‘একদিন সন্ধ্যাবেলা...সে আচম্্কা এসে হাজির আমার ঘরে। চাঁদনি রাত। চার দিকে সে যে কী অপরূপ আলো হাওয়া!...কিন্তু আমি তখন কেবলই ভাবছি বাড়ির কথা। ভালো লাগছে না কিছুই। মন কেমন করছে বাংলাদেশের জন্যে, আমাদের বাড়ির জন্যে, কলকাতার গঙ্গার জন্যে। হোমসিকেনস যাকে বলে।



সে ব’লে বসল: “আহা, কী এত ভাবো আকাশপাতাল!”‘তার ধরনধারণ জানা সত্ত্বেও আমার একটু যেন কেমন কেমন লাগল। কারণ সে প্রশ্নটি করতে না করতে একেবারে আমার নেয়ারের খাটির উপরেই এসে বসল।‘কিন্তু কী করি—যা হোক হুঁ হাঁ ক’রে কাজ সেরে দিই। সে কথাবার্তায় বোধহয় জুৎ পাচ্ছিল না, হঠাৎ বলল :“আচ্ছা আমার হাত ধ’রে টানো তো—টাগ্্-অফ্্-ওয়ারে দেখি কে জেতে?” ‘আমি সত্যিই ধরতে পারি নি, কেন হঠাৎ তার এতরকম খেলা থাকতে টাগ্্-অফ্্-ওয়ারের কথাই মনে প’ড়ে গেল। এমন কি আমি এ শক্তি পরীক্ষায় সম্মত হ’তে না হ’তে সে হঠাৎ শ্লথভাবে হার মানা সত্ত্বেও আমার না হ’ল পুলক-রোমাঞ্চ না খুলল রসজ্ঞ দৃষ্টিশক্তি। এতে সে নিশ্চয়ই আমার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিশেষ রকম সন্দিহান হ’য়ে পড়েছিল।



‘শেষে একদিন বলল তেমনি আচম্্কা: “জানো কোনো মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে যদি তার দস্তানা কেউ চুরি করতে পারে তবে তার অধিকার জন্মায় মেয়েটিকে চুমো খাওয়ার?” ‘ব’লে খানিক বাদে আমার আরাম কেদারায় নেতিয়ে পড়ল নিদ্রাবেশে। ঘুম ভাঙতেই সেই চাইল পাশে তার দস্তানার দিকে। একটিও কেউ চুরি করে নি।’ বউঠাকরুন কাদম্বরী দেবী রবীন্দ্রনাথের সুপুরি-কাটা হাতের গুণ ছাড়া অন্য-কিছুরই প্রশংসা করতেন না, ‘এমন-কি চেহারারও খুঁত ধরে বিধাতার উপর রাগ ধরিয়ে দিতেন।’ কিন্তু এই তরুণীর মুখেই তিনি প্রথম শুনেছিলেন তাঁর চেহারার প্রশংসা। আন্না তাঁকে বলেছিলেন, ‘একটা কথা আমার রাখতেই হবে, তুমি কোনো দিন দাড়ি রেখো না, তোমার মুখের সীমানা যেন কিছুতেই ঢাকা না পড়ে।’



১১ নভেম্বর ১৮৭৯ তারিখে বরোদা কলেজের উপাধ্যক্ষ হ্যারন্ড লিট্লেডলের সঙ্গে আন্না-র বিবাহ হয়। ১৮৮০ সালে আন্না বরোদার রানির গৃহশিক্ষক রূপে নিযুক্ত হন। আন্না-র দুটি কন্যা জন্মগ্রহণ করে। আন্না-র মৃত্যু হয় ৫ জুলাই ১৮৯১ তারিখে এডিনবরা শহরে।বিবাহিত জীবনেও তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভোলেননি। সেই কিশোর-কবির প্রদত্ত আদরের ডাক নাম ‘নলিনী’ স্বাক্ষরেই তিনি প্রবন্ধাদি প্রকাশ করতেন— তাঁর অপেক্ষাকৃত পরিণত মনেও সেই ‘আপন-মানুষের দূত’ গভীর স্বাক্ষর এঁকে দিয়েছিলেন, এ তারই প্রমাণ। এ-প্রসঙ্গে এই তথ্যটিও উল্লেখযোগ্য যে, তাঁর এক ভ্রাতুষ্পুত্রের নাম রাখা হয়েছিল ‘রবীন্দ্রনাথ’।এই পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘকাল পরেও রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ ছিল। আন্না-র কনিষ্ঠা ভগিনী মানক-কে ২৯ জানুয়ারি ১৯১৪ তারিখে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:

It is nice of you to write to me as you have done. Youৎ voice belongs to that little world of familiar faces in a city of strangers where I took my shelter when I was seventeen and where you were just emerging from your nebulous stage of indistinctness....The other day when I accepted an invitation to come to Bombay I hoped to see you and talk to you of the old days spent under your father’s roof.

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৪

লেজ কাটা শেয়াল বলেছেন: তুমি কোনো দিন দাড়ি রেখো না ?

১৮ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: হে হে

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমি আন্না র কথা জানতাম না :-*


অনেক ধন্যবাদ

১৮ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: পড়ুন। যত পড়বেন তত জানবেন।

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১১

অতুল মিত্র বলেছেন:
৮১ পর্ব ! আমি মাত্র ২-৪ টা পড়েছি !
প্রত্যেক পর্বের সাথে আগের পর্বের লিঙ্ক কি দেওয়া যায় ?

১৮ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: লিংক দেওয়া হয় নাই আলসেমি করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.