নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
"ক্ষুধা লইয়া যাহারা রাজনীতি করেন, তাহারা ক্ষুধার্ত হইতে চাহেন না। ক্ষুধার্তের মত পরিশ্রমও করিতে চাহেন না। ইহাই পরিহাস।"
-মাওলানা ভাসানী
আমাদের দেশে আজ নতুন প্রজন্মের সবাই বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে চে গুয়েভারা কে চেনে। তাঁর নাম-ছবিওলা টি-শার্ট পড়ে, তাঁর মত লালটুপি পরে ঘুরে বেড়ায়। অথচ তাদের নিজের দেশেই যে এমন একজন আছেন সে সম্পর্কে তারা পুরোই অজ্ঞ। আপনার কি মনে হয় না নতুন প্রজন্মের উচিৎ মাওলানা ভাসানীর বানী বুকে (হয়ত টি-শার্টেও) নিয়ে গড়ে তুলবে নতুন বিশ্ব ? মাওলানা ভাসানীকে নিয়ে তৈরী হয়েছে,হচ্ছে বহু বহু গান । বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পী যেমন লিখেছেন,গেয়েছেন তেমনি, বরং বলা যায় তার চেয়ে বেশী সাধারণ মানুষের মুখে মুখে তাঁকে নিয়ে গান রচিত হয়েছে । সে সবের অনেকগুলোই হারিয়ে গেছে সংগ্রহের অভাবে । তবে আজো কিছু গান বেঁচে আছে গ্রামবাংলার মানুষের অন্তরে,তাঁর অনুসারীদের মাঝে । তারই একটি - "মাথায় তালের আঁশের টুপি,লুঙ্গি সাধারণ/মোটা কাপড় পাঞ্জাবী তাঁর,প্রাণে জনগণ/ শৈশবে এতিম তিনি,পিতৃমাতৃহীন,/ প্রতিপালন করেন তাঁরে পীর নাসিরউদ্দিন/ তাই অনাথ-কৃষককুলের নেতা,ধনী লোকের নন ।"
একদিনের কথা...কি একটা দরকারে মাওলানা ভাসানীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল আইয়ুব খানের সাথে । আসরের নামাজ আদায় করে, সাথে তাঁর আরো কিছু অনুসারী নিয়ে তিনি পৌছুলেন প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে । যেতেই সেখানকার রিসিপশনিস্টরা এগিয়ে এলো । মাওলানা ভাসানী কিন্তু থমকে দাঁড়ালেন ......- প্রেসিডেন্ট কোথায় ? সব সময় সে আগায় আসে,আজ কেনো নাই ? - একটু বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ।
- প্রেসিডেন্ট একটু ব্যাস্ত আছেন,মিটিং করছেন । আপনি বসুন,তিনি কিছু সময় পর চলে আসবেন । - অফিসের কর্মকর্তা তাঁকে বোঝালো । কিন্তু মাওলানা ভাসানী তো মাওলানা ভাসানীই, এমনিই তো আর 'আপোষহীন' খেতাব পাননি ! তিনি তাদের কাছে জায়নামাজ চাইলেন । পাকিস্তান কার্যালয় , জায়নামাজ এলো । তিনি কার্যালয়ে জায়নামাজ পেতে নামাজ আদায় করা শুরু করলেন । কিছু পরেই আইয়ুব খান এলো । এসে দেখে মাওলানা ভাসানী নামাজে । বাধ্য হয়ে সে দাঁড়ায়ে রইল । নামাজ থেকে তো আর ডাক দেয়া যায় না । এদিকে মহাবিদ্রোহী নামাজ পড়ছেন তো পড়ছেনই......অনেকটা সময় পার হওয়ার পর , তিনি সালাম ফেরালেন । মুখে কিছু বললেন না, কিন্তু যা বোঝাতে চাইলেন আইয়ুব খানের তা বুঝতে বেগ পেতে হয়নি ।
পরে,মাওলানা ভাসানীর এক অনুসারী তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল , হুজুর,আসরের পর তো কোন নফল নামাজ নাই,আপনি পড়লেন যে ? জবাবে হুজুর বলেছিলেন ,' হ্যাঁ, নাই । কিন্ত সেই নামাজ যদি কোন জালেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটা অংশ হয় , তাহলে পরা যায় । '
"আর একদিন রসিক মুডে ছিলেন। নিজ থেকেই শোনালেন উত্তরবঙ্গের এক ন্যাপ-নেতার মেয়ের গল্প। সেই মেয়ে পরিবারের নিষেধ উপেক্ষা করে কীভাবে নিজে নিজে বিয়ে করে ফেলল তার রসালো বর্ণনা। মেয়ের বাবা চেষ্টা করছিলেন মওলানা সাহেবকে দিয়ে মেয়েকে নিরস্ত করতে। ‘আরে সে ম্যায়া যে টাট্টু, আমাকে পাত্তা দ্যায়? ভয়ানক টাট্টু ম্যায়া!’ বলে মুচকে মুচকে হাসতে লাগলেন। টেবিলে সবাই হেসে অস্থির। ‘টাট্টু’ শব্দের এমন রসালো প্রয়োগ আর শুনিনি।......
....এরপর মওলানা সাহেব নারীর ভূমিকা নিয়ে কিছু কথা বললেন, যা সকলের মনকেই ছুঁয়ে গেল। বললেন, তোমরা মেয়েরাই সভ্যতার দূত। যুগে যুগে দেশে দেশে তোমরাই আন্তর্জাতিকতার বাহক। তোমাদের স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে তোমরা পৃথিবীর যেখানেই যাও সেখানেই নীড় তৈরি কর, কোনো জাতপাত ভেদ, কোনো সাম্প্রদায়িকতা, কোনো জাতীয়তাবাদী সংকীর্ণতা তোমাদের স্পর্শ করে না।"-
বাংলাদেশের কিংবদন্তী রাজনৈতিক নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ।দেশের মানুষের কাছে 'মজলুম জননেতা' হিসাবে সমধিক পরিচিত।১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন।
জন্মঃ ১২ ডিসেম্বর, ১৮৮০, ধানগড়া, সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ। মৃত্যুঃ ১৭ নভেম্বর, ১৯৭৬, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তাঁর ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন।১৯৪০ সালে শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের সঙ্গে মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে মাওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।মুসলিম লীগ দলের সদস্য হয়েও সরকারের সমালোচনা করায় মুসলিম লীগের ক্ষমতাসীন সদস্যরা মওলানা ভাসানীর ওপর অখুশী হয় এবং তার নির্বাচনে ত্রুটি ছিল এই অজুহাত দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে এবং মওলানা ভাসানীকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে।
" আল্লাহ্র দুনিয়ায় সকল মানুষের সমান অধিকার । আল্লাহ্র নিয়ামত,পৃথিবীর ধন ভান্ডার, জগতের ঐশ্বর্য আল্লাহর সৃষ্টির জন্যই উৎসর্গিত । মানুষ রাজা হইয়াছে । মানুষ বিত্তশালী হইয়াছে । কিন্তু তাহা তো অপর মানুষকে বঞ্চিত করিয়া । মানুষে মানুষে এই যে কৃত্রিম অসাম্য তাহার জন্য দায়ী যে বিধান আর সমাজ ব্যবস্থা – তাহার উৎপাটন আল্লাহরই নির্দেশ”।
- মাওলানা ভাসানী
আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালের মধ্যভাগে পূর্ববঙ্গে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ১১ অক্টোবর আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় খাদ্য সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য পূর্ববঙ্গ মন্ত্রিসভার পদত্যাগ দাবী করা হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মওলানা ভাসানী ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেন। ভূখা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ১৯৪৯-এর ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবরণ করেন। ফজলুল হকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর ২৫শে মে ১৯৫৪ মাওলানা ভাসানী বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে যান এবং সেখানে বক্তব্য প্রদান করেন।
" সন্তানের মৃত্যুতে মাতাকে কাঁদিতে না দিলে সে বেদনা যেমন মায়ের মনে নিদারুন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, কোন জাতির স্বাভাবিক মনোভাবকে তেমনি শক্তির জোরে দাবাইয়া রাখিবার চেষ্টা করিলে তাহা না মরিয়া মনে আগ্নেয়গিরিরই সৃষ্টি করে । সে আগুন কোনদিন নিভে না । বরং শুধু বৃদ্ধিই পায় । পৃথিবীর কোন শক্তিই তাহাকে নিভাইতে পারে নাই । একদিন না একদিন তাহা প্রকাশ পাইয়াছে এবং পাইবেও । ইতিহাস মানুষের মনের সেই অগ্নিমূর্তিকে আখ্যা দিয়াছে বিপ্লব । "
- মাওলানা ভাসানী
১৯৬৬-তে শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থাপিত ছয় দফা কর্মসূচীর বিরোধিতা করেন। ১৯৬৭-র ২২ জুন কেন্দ্রীয় সরকার রেডিও এবং টেলিভিশন থেকে থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ জারি করলে এর প্রতিবাদ করেন।১৯৭১ এর মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন এবং ১৮ জানুয়ারি ১৯৭১ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের জন্য তার প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত যান এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ২৫ মার্চ রাতে মওলানা ভাসানী সন্তোষে তার গৃহে অবস্থান করছিলেন। তিনি পাকিস্তান বাহিনীর দৃষ্টি এড়িযে টাঙ্গাইল ছেড়ে তার পিতৃভূমি সিরাজগঞ্জে চলে যান। পাকিস্তান বাহিনী তার সন্তোষের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়।
১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল মাওলানা ভাসানী সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাছে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। ৩১ মে মাওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ দখলদার বাহিনীর সঙ্গে জীবনমরণ সংগ্রামে লিপ্ত। তারা মাতৃভূমি রক্ষার জন্য বদ্ধপরিকর। তারা এই সংগ্রামে জয়লাভ করবেই। ৭ জুন মওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চল আজ দশ লাখ বাঙালির রক্তে স্নাত এবং এই রক্তস্নানের মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতা আসবে।
" ইসলামী শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হইতেছে সুন্দর অর্থাৎ সংস্কৃতিবান মানুষ সৃষ্টি করা । আচারে, ব্যবহারে, শিক্ষায়, দীক্ষায় এক কথায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি কলুষতা ও কুসংস্কার পরিহার করিয়া চলে সেই হইল সুন্দর মানুষ । "
- মাওলানা ভাসানী
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই।
২| ২৯ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪২
বাংলার হাসান বলেছেন: মাওলানা ভাসানীই প্রথম বাঙ্গালী যিনি দেশের বাইরে বিশ্ব সংস্থার কোন সম্মেলনে বাংলায় বক্তৃতা করেন ১০০% সত্য।
ধন্যবাদ, সত্য ইতিহাস তুলে ধরার জন্য।
৩| ২৯ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮
শাহীন ভূইঁয়া বলেছেন: ব্রান্ডিং একটা ফ্রাক্টর ...চে কে নিয়ে যে প্রচার -সভা হয় বিশ্বজুড়ে ভাসানীকে নিয়ে বিন্দুমাত্র হয় না ....যে কারনে নতুন প্রজন্ম জানে না কে ভাসানী? কিন্তু চে কে সেটা আধা আধা হলেও ধারনা আছে ......হয়তো এক সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সমর্প্কে ও ভাবী প্রজন্মদের ভাসা ভাসা ধারনা থাকলে ও থাকতে পারে .....অবাক হওয়ার কিছুই নেই ....সাধুবাদ জানাই আপনার লেখার জন্যে
৪| ২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:৩০
রাজ হাসান বলেছেন: শাহীন ভূইঁয়া ভাই আমি সেটাইতো বলতে চাচ্ছি,মাওলানা ভাসানী যেনো কে???
তার সামনে অনেক বড় নেতা বসার টাইম পেত না অথচ তার কোনো নাম ডাক নাই,নতুন প্রজন্ম জানে না তার ইতিহাস,তবে এটা সত্য তার সঠিক ইতিহাস উঠে আসলে অনেকের ইতিহাস শুধু ইতিহাসই হয়ে থাকবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৯
েনহ।ল বলেছেন: মাউলানা ভাসানি বাংলার রাজনীতিতে একজন শুদ্ধতম নেতা