নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাওয়া না পাওয়া

২৩ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৩

আগামীকাল আমার ফাঁসি। হাতে এখনও বেশ কিছু সময় আছে। জেলার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, কিছু খেতে ইচ্ছা করে কিনা? আমি বললাম, যদি পারেন আমাকে কিছু সাদা কাগজ আর একটা কলম ব্যবস্থা করে দেন। হাতে কাগজ আর কলম পেয়েই আমি লিখতে শুরু করলাম। আমি চাই, সবাই জানুক আমি কেন আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছি। যদিও আমার কাছের মানুষদের ধারনা রুবিনা'কে আমি হত্যা করিনি। কিন্তু আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করেই রুবিনা হত্যা করেছি। দিনের পর দিন ভেবেছি, কি করে রুবিনা'কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়। সারারাত রুবিনা'র পাশে শুয়ে রুবিনা'কে হত্যার পরিকল্পনা করেছি। বোকা মেয়েটা কিছুই বুঝতে পারেনি। অবশ্যই বুঝতে পারার কথাও না, আমি নিখুঁত অভিনয় করে গেছি রুবিনা'র সাথে দিনের পর দিন।

দীর্ঘদিন প্রেম করে রুবিকে বিয়ে করেছি। সপ্তাহে দুইদিন আমাদের দেখা হতো। আমরা রিকশা'য় করে খুব ঘুড়ে বেড়াতাম। ঢাকা শহরের এমন কোনো রাস্তা নেই, আমরা রিকশা করে যাইনি। মাঝে মাঝে রিকশা দাঁড় করিয়ে- রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা- বিস্কুট খেতাম। মাসে একবার আমরা বড় রেস্টুরেন্টে খেতাম। মেয়েটা রেস্টুরেন্টে খেতে খুব পছন্দ করতো। আমাকে প্রায়ই বলতো- তুমি ভাল একটা চাকরী পেলে আমরা মাসে তিনদিন বাইরে খাবো। এবং খাওয়া শেষে অবশ্যই আমাকে আইসক্রীম খাওয়াতে হবে। রুবি'র সব কথাই আমি নিরবে হাসি মুখে মেনে নিতাম। ভাল একটা চাকরী পাওয়ার আগেই আমি রুবিনা'কে বিয়ে করে ফেলি। যদিও আমি রুবিনা কে বলেছিলাম দুই বছর অপেক্ষা করো, হাতে কিছু টাকা জমুক- তারপর ধুমধাম করে বিয়ে করবো কিন্তু রুবি আমার কথা মানল না। বিয়ের জন্য অস্থির হয়ে পড়ল।

বিয়ের পর পড়লাম মহা ঝামেলায়। ছোট্র একটা চাকরী করে যা বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। নুন আনতে পান্তা ফুরায় এই রকম অবস্থা। মনে হলো যেন, টাকার অভাবে আমাদের মধ্যে ভালোবাসা অনেকখানি কমে গেল। রুবি'র চাহিদা বিয়ের আগে যেমন ছিল, বিয়ের পর যেন অনেক বেড়ে গেল। এটা লাগবে, ওটা লাগবে। আমি রুবি'র বেশির ভাগ চাহিদা'ই পূরন করতে পারি না। রুবি থাকে গাল ফুলিয়ে। যদিও বিয়ের আগে রুবি'কে হাজার বার করে বলেছি, আমি ছোট চাকরী করি, অল্প কিছু টাকা বেতন পাই। এই টাকা দিয়ে প্রেম করা যায়, সংসার করা যাবে না। কিন্তু রুবি বলত, কোনো অসুবিধা নেই- আমি ম্যানেজ করে নিব। তবে একদিন তোমার অনেক টাকা হবে। সেদিন আমাদের লাল গাড়ি থাকবে একটা। বছরে একবার দেশের বাইরে বেড়াতে যাব। রুবিকে বিয়ে করার সাত দিন পর আমার মনে হলো- কেন বিয়ে করলাম? প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দুইবার উপলব্দি করি- জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছি রুবিকে বিয়ে করে।

রুবি আমাকে খুব ভালোবাসে। আদর যত্নের কোনো ত্রুটি করে না। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কপালে ছোট করে একটা চুমু দিয়ে দেয়। দুপুরে ফোন দিয়ে খোজ নেয়, আমি খেয়েছি কিনা। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পর চা নাস্তা বানিয়ে দেয়। রুবির হাতের মোগলাই আর ডিম চপ টা অস্থির। ঘর-দুয়ার সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে। আমার সমস্ত জামা কাপড় আয়রন করে দেয়। এত কিছুর পরও রুবি'কে কেন যেন আমার নির্বোধ মনে হয়। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে গলা টিপে মেরে ফেলি। আমার কিচ্ছু ভাল লাগে না। সংসারের অভাবটা সারাক্ষন আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। অফিস থেকে ফেরার পর যখন রুবি আমাকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরে- তখন ইচ্ছা করে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই। আমার চিন্তা সকাল হলেই আটা লাগবে, ডিম লাগবে, ডাল লাগবে, মাছ লাগবে- তরকারী লাগবে। প্রতিদিন একই রকম চিন্তা আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। রাতে ঘুমাতেও পারি না। রুবি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু আমার ঘুম আসে না।

একদিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে রমনা পার্কে গিয়ে অনেকক্ষন ভাবলাম। অনেক ভেবে-ভেবে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম। রুবিকে আমি খুন করবো। তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই তেল, চাল, ডাল এর চিন্তা করতে হবে না। ছোট একটা চাকরী নিয়েই- জীবনটা পার করে দিতে পারব। যখন যা খুশি তাই করতে পারব। রাত ১১টায় বাসায় ফিরলেও কঠিন কথা বলার কেউ থাকবে। সারারাত জেগে বই পড়লেও- কোনো সমস্যা নেই। মধ্যরাত্রে মোবাইলে ফোন এলেও কেউ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাবে না। আসলে একা মানুষের কোনো ঝামেলা নেই। এক থেকে দুই হলেই ঝামেলা বাড়তে থাকে। ঝামেলা আমার ভাল লাগে না। আমি চাই শান্তি এবং আনন্দময় জীবন। বিয়ের আগে তো জীবনটা অনেক আনন্দময়ই ছিল। রুবির কথা শুনে, রুবিকে বিয়ে করে আমার জীবনের সব শেষ হয়ে গেল। রুবিকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর নিজেকে খুব হালকা লাগছে। লাঠি ভাঙবে কিন্তু সাপ মরবে না। অর্থাৎ রুবিকে খুন করবো কিন্তু পুলিশ আমাকে ধরবে না।

কিছু টাকার ব্যবস্থা করে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে রুবিকে নিয়ে গেলাম বান্দরবান। রুবির পছন্দ সমুদ্র কিন্তু পাহাড় দেখে বাচ্চা মেয়েদের মত খুশি। সমুদ্রে নিয়ে গেলে আমার প্লান এলোমেলো হয়ে যেত। রুবিকে নিয়ে নীলগিরি পাহাড়ে উঠলাম। অফ সিজন বলে একদম নীরব। আশে পাশে কোনো লোকজন নেই। আজ রুবি খুব সুন্দর করে সেজেছে। নীল রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। শাড়িতে ছোট ছোট ফুল আঁকা। দুই হাত ভরতি কাঁচের চুড়ি। পাহাড়ের উপর অনেক বাতাস। রুবির শাড়ির আঁচল পতাকার মতন উড়ছে। বাতাসে চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের সন্ধ্যা গুলো খুব দ্রুত এসে পরে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, সন্ধ্যা হওয়ার আগেই রুবিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব। পাহাড়ের গভীরতা দেখে রুবি শক্ত করে আমার হাত ধরল, কাঁধে মাথা রাখল। আমি ছোট্র করে রুবি'র কপালে একটা চুমু খেলাম। তারপর রুবি কিছু বুঝার আগেই ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ফেলে দিলাম। মনে হলো রুবি যেন একটা চিৎকার দিল। ঘরে ফেরা পাখিদের চিৎকার আর রুবির চিৎকার মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।

কেউ কিছু জানলো না, কেউ কিছু টের পেল না। আমি বান্দরবান থানায় জিডি করলাম। আমার বউ মিসিং। ঢাকা এসে রুবির বাবা-মাকে বললাম। আমার বাবা-মাকে সব জানালাম। জিডির কপি সবাইকে দেখালাম। সবাই আমাকে শান্ত্বনা দিলেন অনেক। আমি মন খারাপের ভাব নিয়ে থাকলাম কিছু দিন। রুবির বাবা-মা বলল, তুমি চিন্তা করো না, কোনো বান্ধবীর বাসায় লুকিয়ে আছে। কলেজে পড়ার সময় এই রকম বেশ কয়েকবার করেছে। দেখতে দেখতে ছয় মাস পার হয়ে গেল। আমি দুই একদিন পর-পর রুবির বাবা-মাকে ফোন দিয়ে কান্দাকাটি করি। তারা আমাকে অনেক শান্ত্বনা দেন। আমার বাবা-মা আত্মীয় স্বজন আমাকে শ্বান্ত্বনা দেন। নানান জন নানান রকম কথা বললেন। কেউ বলল, গুম করা হয়েছে। কেউ বলল, এই দেশে একবার কেউ হারিয়ে গেলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না, একজন তো বলল, দেখেন- কারো হাত ধরে বিদেশ চলে গেছে কিনা। তাদের সবার কথা শুনে আমার খুব হাসি পায়। কিন্তু হাসতে পারি না, মন খারাপের ভাব ধরে থাকি।

এক বছর পর আমার প্রিয় বন্ধু ফোটোসাংবাদিক রাজীব নূর খান এক চায়ের আড্ডায় আমাকে বলল- তোমার স্ত্রী কোথাও হারিয়ে যায়নি। তুমি নিজে তোমার স্ত্রীকে খুন করেছো। রুবি ভাবী বা তোমাকে আমি খুব ভাল করেই চিনি। যদিও আমার হাতে কোনো প্রমাণ নেই। বন্ধু রাজীব নূর কিভাবে এই কথা বলল- আমি জানি। আমি তার কাছে আর কিছু জানতে চাইও নি। বন্ধুর কথা শুনে প্রথম অনুভব করলাম- আমি ভুল করেছি। মহা ভুল করেছি। চরম নির্বোধের মত কাজ করেছি। শাস্তি আমার অবশ্যই পাওয়া উচিত। রুবির স্বচ্ছ-পবিত্র ভালোবাসাকে আমি অবহেলা করেছি। আমি একজন বিবেকবান এবং আধুনিক মানুষ হয়ে এই কাজ কিভাবে করলাম? নিজের প্রতি নিজেরই খুব ঘৃণা হলো। তারপর আমি আরেকটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর নিজেকে খুব হালকা লাগল।

চায়ের আড্ডা থেকে আমি বাসায় না ফিরে সোজা রমনা থানায় চলে যাই। এবং নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করি। আলাদত আমার ফাঁসির আদেশ করেন। আমি ভেবেছিলাম, যেহেতু নিজে ইচ্ছা করে ধরা দিয়ে- তাই ফাঁসি হবে না। জজ সাহেব বললেন, সুস্থ মাথায় আমি আমার স্ত্রীকে খুন করেছি- কাজেই আমার কোনো মাফ নেই। যদিও মাফ আমি চাইনি। রুবিকে খুন করার পর এক দন্ড শান্তি পাইনি। সারাক্ষন মনে হয় রুবি আমার আশে পাশেই আছে। লুকিয়ে লুকিয়ে রাগী চোখে আমাকে দেখছে। রুবির কঠিন চোখে তাকানোর সাহস আমার নেই। এর চেয়ে অনেক সহজ মনে হয় ফাঁসির দড়ি।

আরও কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও পারলাম না। কাগজ শেষ। বন্ধু রাজীবকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথাটাই লেখা হলো না। একটা আফসোস থেকে গেল! জেলার সাহেবের হাতে চিঠিটা দিয়ে বললাম, আমার বন্ধু রাজীব এর হাতে চিঠিটা দিয়ে দিবেন। ঠিক তখনই মনে হলো- কিছুক্ষনের মধ্যে আকাশ ফরসা হতে শুরু করবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:২৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন তো!!!

কি অবলীলায় কি সহজেই তরতর করে গল্পটা শেষ হয়ে গেল!!!

অসাধারন!

২| ২৩ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০৮

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
দারুণ একটা গল্প, ঝরঝরে, একটানে পড়ে গেলাম।

শুরুতে তলস্তয়ের "কেন আমার স্ত্রীকে খুন করি"
উপন্যাসের কথা মনে পড়ছিল,

যাহোক অনেক ভালোলাগা আর শুভকামনা রইল। ++

৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:০৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: থ্রিলার টাইপ গল্প| একটা ম্যাসেজও আছে| যাই হোক গল্পের বুননটা সুন্দর| কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়েছে যেন আরেকটু স্পেস দরকার| যাই হোক সুন্দর

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:০৭

নীল জোসনা বলেছেন: ভালই তো....।
শুভ কামনা রইলো...।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.