নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

এপিটাপ

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০১



আজ পঁচিশ দিন ধরে আমি বাসা থেকে পলাতক। কারণ আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। আব্বা এ কথা শুনে বললেন- হারামজাদা কাম কাজ করো না, বিয়ে করবে? বউকে খাওয়াবি কি? বদের বদ। আমি বললাম, রিজিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ'ই একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।
মা বললেন- তুই ভাদাইম্মা এবং অলস। তোকে কোনো মেয়ে বিয়ে করবে না। এযুগের মেয়েরা বোকা না যে কোনো নির্বোধকে বিয়ে করবে। আমি মাকে একটু লজ্জা মিশানো হাসি হেসে বললাম- মা, মেয়ে আমি ঠিক করে ফেলেছি। ইডেন কলেজ থেকে মাস্টার্স করেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। দেখতে শুনতে ভালো। নানান ধরনের খাবার রান্না করতে জানে। রান্না খুব স্বাদ হয়। এই কথা শুনে মা আমার দিকে 'হা' করে তাকিয়ে আছেন। আব্বা বলল- তুমি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাও। আমি তোমার মুখ দেখতে চাই না। আহাম্মক কোথাকার। আমি এক বস্ত্রে এবং খালি পকেটে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। কই যাবো? কি করবো কিছুই জানি না।

কোরআন-হাদীস পড়ে জানতে পারলাম- আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেছেন, "লাক্বাদ কা-না ফী রাসুলুল্লাহি উসওয়াতুন হা'সানা" -"তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনই হলো সর্বোত্তম আদর্শ"। সুতরাং বিয়ের অনুষ্ঠানে সেটুকুই কেবল আবশ্যক যা রাসুলুল্লাহ সাঃ করেছেন বা করতে বলেছেন। এর বাইরে কিছু পালন না করলে কেউ যদি অখুশী হয় তাহলে আমরা কেবল বলতে পারি, "দুঃখিত, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ঠ"। নবী (সঃ) বিয়েকে তাঁর সুন্নত বলে উল্লেখ করেছেন। বিয়ে যেমন সওয়াবের কাজ তেমনি অযোগ্য অসামর্থ ব্যক্তির জন্য বিয়ের অনুমোদন ইসলামে নেই। কারণ বিয়ে কোন ছেলেখেলা নয়। এটি খুবই দায়িত্বপূর্ণ পবিত্র ইবাদতও বটে।

আরও যা জানলাম- বিয়েতে রয়েছে বরকত। পবিত্র কুরআনে সুরা নূরে আল্লাহর অনুগ্রহে দারিদ্র দূর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না করতে উল্লেখ আছে। তিরমিযী শরীফের হাদিসে আছে ‘‘তিনটি বিষয়ে দেরী নয়-
১.সময় হলে নামাজে,
২.লাশ এসে গেলে জানাযায়,
৩ সমমানের পাত্র পেলে বিয়েতে।

বিয়ের শুরু হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) হতে। একজন সুপুরুষ ও সৎকর্মশীল নারী দেখে বিয়ের বন্ধন হওয়া উচিত। বরের আর্থিক স্বচ্ছলতা বিবেচনা করে মোহরানা ধার্য্য করা চাই। নবী (সঃ) বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম’’। স্ত্রীদের বলা হয়েছে, ‘‘আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করতে যদি বলতাম তবে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে সেজদা করতে বলতাম’। সুতরাং স্বামী স্ত্রী উভয়েই একটি সংসার সুখের করতে দায়িত্ব নিতে হবে।

পথে পথে ঘুরে ঘুরে নানান চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম- এবং হাদীস অনুযায়ী এখন আমার বিয়ে করা উচিত না। কিন্ত নুসরাত কে যদি এখন বিয়ে না করি- তাহলে তার পরিবার তাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবে। এটা ভাবতেই বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। নুসরাত কে ফোন করে বললাম- তুমি কোনো চিন্তা করো না। অস্থির হবার দরকার নেই। আমি সব ব্যবস্থা করছি। আমার উপর আস্থা রাখো। (মিথ্যা আশ্বাস দিলাম) নুসরাত বলল- বিয়ে পরে করো, এখন বাসায় এসে আমাকে আংটি পরিয়ে যাও। বাসার পরিস্থিতি শান্ত থাকবে তাহলে। বোকা মেয়েটা বুঝে না- একটা আংটি কেনার টাকাও এখন আমার কাছে নেই।

পঁচিশ দিন পর বাসায় গেলাম। বাসার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ছোট বোন বলল- ভাইয়া কি পাগলামী শুরু করছে? আমি বললাম ভাত দে, অনেক ক্ষুধা লাগছে। বোন বলল- আগে সেলুনে যাও, তোমাকে দেখে তো মফিজ পাগলার মতন লাগছে। আমি মনে মনে ভাবছি মফিজ পাগলাটাকে!

মধ্যরাত্রে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসলো। সাথে তীব্র মাথা ব্যাথা। কাউকে যে ডাকব সেই শক্তিটুকুও শরীরে নেই। ফযরের আজানের পর জ্ঞান হারালাম। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার নিজেকে আবিস্কার করলাম হাসপাতালে। আমার পাশে সব প্রিয় মানুষেরা কিন্তু নুসরাত নেই। তাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। মেয়েটা আমাকে এই অবস্থায় দেখলে খুব কষ্ট পাবে। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম- আমার খুব কঠিন কোনো অসুখ হয়েছে। কি অসুখ? আমি কি মরে যাবো? মাথা ব্যাথা শুরু হলেই তখন চোখে কিছু দেখতে পাই না। মনে হয়, মাথার ভেতর কে যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে।

আমি হাসপাতালে যাওয়ার তিন দিন পর নুসরাত আমাকে দেখতে এলো। আমার খুব অবনতি হয়েছে। এখন সারাক্ষনই চোখে ঝাপসা দেখি- প্রতিদিন মাথা থেকে থোকা থোকা চুল পরছে। গায়ের রঙ হঠাত করে খুব কালো হয়ে গেছে। নুসরাত আমার বুকের মাথা রেখে অনেকক্ষন কাঁদল। যাওয়ার আগে সে- শক্ত করে আমার হাত ধরে বলল- আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার কিচ্ছু হবে না। আল্লাহ এত নিষ্ঠুর হতে পারবেন না। আমি মনে মনে বললাম- আল্লাহ অনেক নিষ্ঠুর, আল্লাহ অনেক নিষ্ঠুর। গভীর রাতে আমার অবস্থা খুব খারাপ হলো। নার্স ডাক্তার'রা ছোটাছুটি শুরু করলো। আমাকে পরপর দু'টা ইনজেকশন দিল ডাক্তার। আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

আমি এখন এক ধরনের ঘোরের মধ্যে আছি। সব কিছুই স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে। বাস্তব-অবাস্তব মিশে একাকার হয়ে গেছে। চোখ বন্ধ করলেও দেখি, খোলা রাখলেও দেখি। কোনটা স্বপ্ন কোনটা সত্যি বুঝতে পারছি না। অন্য রকম একটা জগতে প্রবেশ করেছি। সে জগতে সময় বলে কিছু নেই, দিন-রাত বলে কিছু নেই। একটু পরপর এসে কে যেন এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে আমার কপালে হাত রাখছে হাতটা খুব ঠান্ডা। তার হাত ভর্তি চুড়ি। চুড়ির ঝনঝন শব্দটা ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে- এই হাত ধরে ঢাকা শহরের অনেক পথ হেঁটেছি। এখনও হাঁটছি, অন্ধকার একটা পথে। একা একা। ঠান্ডা হাতের স্পর্শ এবং চুড়ির ঝনঝন শব্দ শুনতে পাচ্ছি না। আমার খুব ভয় ভয় করছে। অন্ধকার এবং অজানা পথটা একাএকা কিভাবে পাড়ি দিব। আমার চোখ থেকে দু'ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: লেখাটায় কিছুটা হুমায়ুন আহাম্মেদের ছায়া পাচ্ছি। +

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১০

মলাসইলমুইনা বলেছেন: আরে মাত্রই না বান্দরবান সংক্রান্ত আলোচলা হলো | আমিতো মনে হয় এটাও বললাম -বান্দরবান/শুভ ভ্রমণ | এর মধ্যেই আবার ....| জয় জয়ন্তীর, আনন্দ উল্লাসের কাব্য হোক |

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯

তারেক ফাহিম বলেছেন: ভালো লাগলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.