নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাবমান কালো চোখে আলো নাচে- ৯

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫১

এক বিদেশি জাহাজ মধুমতি নদীতে একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছে। সেই ডুবে যাওয়া জাহাজ দেখার জন্য শশীভূষন ছুটে চলেছে- মধুমতি নদীতে। জাহাজ এর নাম স্টিব অস্টিন। শশীভূষন মধুমতি'র জাহাজটির সামনে যেতেই- এক পুলিশ অফিসার বলল- না, জাহাজের কাছে যাওয়া যাবে না। নো, নেভার।
নৌকার মাঝি বলল- আপনাকে আগেই বলেছিলাম- ওই জাহাজের সামনে যাওয়া নিষেধ আছে। পুলিশটি সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে। শশীভূষন মাঝিকে সাহস দিয়ে চলে এলেন একদম জাহাজের সামনে। লাফ দিয়ে জাহাজে উঠে পড়লেন। ঠিক তখন পুলিশ অফিসারটি নরম গলায় শশীভূষনকে বললেন, এসেই যখন পড়েছেন, আমার সাথে চারটে ডাল ভাত খান, খুব খুশি হবো। মেন্যু অতি সামান্য। ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে করলা ভাজি, আর ডাল। হঠাত শশীভূষনের মনে হলো- পুলিশ অফিসারটি চাচ্ছে- সে যেন এই ডুবে যাওয়া জাহাজটির সাথে তলিয়ে যায়।
শশীভূষন ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলেন- পুলিশ অফিসারটি তার পূর্ব পরিচিত। অফিসারটি তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলছে- ধরুন, আমার হাত ধরুন, নয়তো আপনি ডুবে যাবেন। সময় খুব কম। শশীভূষন এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে পুলিশ অফিসারের চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। ঠিক তখন কে যেন তার কানে ফিসফিস করে বলল- ''প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য, ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা''।

ঘুম ভেঙ্গে গেল শশীভূষনের। সারা শরীর ঘামে ভেজা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন ভোর চারটা। আমেরিকাতে এখন মনে হয় বিকেল। অলকা মনে হয় ভার্সিটি থেকে ফিরেছে। শশীভূষন ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালেন, আকাশ ফরসা হতে শুরু করেছে। ভোরের আকাশ দেখা- দারুন একটা ব্যাপার। সকালের আলো না ফুটতেই তিনি হাঁটতে বের হলেন।
এই শহরে তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। থ্রি কমরেডস- এর মতন বন্ধু শশীভূষনের একজনও নেই। নেই বলা ঠিক না, একজন ছিল- ওমর আলী। তিনি পূর্ব থেকে পশ্চিমে এলেন আর ওমর আলী পশ্চিম থেকে পূর্বে এলেন।এই ভোরে একা একা হাঁটতে তার ভালোই লাগছে। আজ তার ঘরে ফিরতে ইচ্ছা করছে না। কোথাও বসে খুব আড্ডা দিতে ইচ্ছা করছে।
পুরো শহরটাকে একটা সবুজ ঘাসে ভরা মাঠ মনে করে- তিনি শুধু এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায় হাঁটতেই থাকলেন। নানান রকম চিন্তা-ভাবনা করতে করতে- তার চায়ের পিপাসা পেয়ে গেল। এখনও কোনো চায়ের দোকান খোলেনি।

গতকাল রাতে শশীভূষন তার ডায়েরীতে লিখেছেন- কেন প্রতি বছর খরা বা বন্যা হয়?
দরিদ্র দেশের মানুষ জানেই না কিভাবে নদীকে ব্যবহার করতে হয়। পানি তো সম্পদ। কিন্তু এই সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারে না। আগামী শতাব্দীর মাঝামাঝি মানুষের অস্তিত্বে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে। মানুষের হাতে খুব বেশি সময় নেই। তবু মানুষ গাছ লাগাচ্ছে না। বরং বন জঙ্গল উজার করছে। পৃথিবীর সঙ্গে মানুষের এক নিবিড় সম্পর্ক। কিন্তু লোভী মানুষ পৃথিবীর কাছ থেকে শুধু লুটপাট আর তছনছ করেছে। তৈরি করেছে শুধু জটিলতা। পৃথিবীর সব দেশের মানুষ সবাই এক হয়ে যদি পৃথিবীর কথা ভাবতো- পৃথিবী ছোট্র একটা গ্রহ, তার অফুরন্ত সম্পদ নেই। যা আছে, যতটুকু আছে তার যত্ন নেওয়া দরকার।
এক দেশের প্রতি আরেক দেশের যেন উদাসীনতা না থাকে। আমেরিকায় ভূমিকম্প হলে চীন যেন চুপ করে না থাকে। ইথিওপিয়ায় দুর্ভিক্ষ হলে তার ক্ষুধা যেন স্পর্শ করে অস্টেলিয়াকে। মধ্যপ্রাচ্যে মহামারী হলে তা যেন উদ্বিগ্ন করে সুইজারল্যান্ডকে। পৃথিবীর ক্ষমতায় থাকা মানুষ গুলো যদি এক টেবিলে বসে সিদ্বান্ত নিতো আমরা আর যুদ্ধ করব না। পারমানবিক বোমা বানাবো না। নতুন নতুন অস্ত্র বানাবো না। যেসব অস্ত্র আছে, সেগুলো আটলান্টিক মহাসাগরে ফেলে দিব।


এই গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রানী মানুষ। আবার এই গ্রহের সবচেয়ে দুষ্টলোকও মানুষ। একবার অন্ততপক্ষে মানুষের ভাবা উচিত- সে কেন পৃথিবীতে এসেছে? সে কেন আরেকজনের শান্তি নষ্ট করবে? এই পৃথিবীতে একজন মানুষ কেন আসে? শুধু লেখা পড়া করে চাকরি করার জন্য? বিয়ে করে বাচ্চা উৎপাদন করার জন্য? যে নৌকা চালায়, সে কি সারা জীবন শুধু নৌকা’ই চালাবে? তারপর মরে যাবে? যে সরকারি অফিসে দশটা পাঁচটা কাজ করে, সারা জীবন এই কাজ করেই মরে যাবে? অথবা যে ব্যবসা করে, সারা জীবন ব্যবসা করেই, অনেক টাকা কামিয়ে মরে যাবে? এ জন্যই তারা পৃথিবীতে এসেছে? কোথায় যেন পড়েছিলাম- যারা শুধু মাত্র চাকরির জন্য লেখা পড়া করে তারা দেশের মেরুদন্ড টাই নড়বড়ে করে দেয়। আমরা এই পৃথিবীতে এসেছে- আমাদের অনেক দায়-দায়িত্ব আছে। আমরা পৃথিবীর কাছে ঋণী। এই ঋণ শোধ করার জন্য আমাদের সবার কিছু না কিছু করা উচিত। সবাই যদি একটু একটু করে কিছু করি- তাহলে এই পৃথিবী ঝকমক করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক আকাশ আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। আপনার যদি টাকা পয়সা না থাকে, অন্ততপক্ষে একটা গাছ লাগান রাস্তার পাশে। যত্ন দিয়ে গাছটা বড় করতে সহায়তা করুন। একসময় এই গাছ আপনাকে অনাবিল আনন্দ দিবে-শান্তি দিবে।

আমি জানি আমাদের সমাজে 'বদ' লোক দিয়ে ভরা। একজন আরেকজনের যে বেশি 'বদ'। বিরাট বদ। এই বদ লোক গুলোকে ভালো করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের'ই। তারা কেন এবং কিভাবে বদ হলো একবার ভেবে দেখুন। সবচেয়ে বড় আশার কথা হলো- আমাদের দেশের বেশীর ভাগ লোকই ভালো। বিশ্বাস করুন একজন সহজ সরল ভালো মানুষ। তারা একে অন্যের বিপদে এগিয়ে যায়। এই যে কিছু দিন আগে পানি বন্ধি মানূষের জন্য তারা যে যা পেরেছে ত্রান নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। তাদের সাধ্যমত করতে চেষ্টা করেছে। কারো রক্তের প্রয়োজন হলে- গভীর রাতে ছুটে যায় হাসপাতালে। তবে বেশ কিছু বদ লোকের কাজ কর্মে আমি প্রচন্ড হতাশ।
সারাদিন চাকরি আর ব্যবসা। টাকা-টাকা করলে হবে? যদি পৃথিবীই না টিকে থাকে তাহলে টাকা দিয়ে কি হবে? আপনার একর-একর জায়গা জমি দিয়ে কি হবে? ভেবে ভেবে বের করুন কারা পৃথিবীর ক্ষতি করছে। পৃথিবী ক্ষয় করছে। তাদেরকে বাঁধা দিতে হবে। বুঝাতে হবে। আমরা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের এমন এক পর্যায়ে আছি যা আরেকটু বেশি হলে সেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিপদ। এই নিয়ে কাউকে কোনোদিন ভাবতে দেখলাম না। অথচ তার জ্ঞান বুদ্ধি আছে। যদি মানুষ সাবধান না হয়- তাহলে ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস সব শেষ করে দিবে একদিন। সেই সময় খুব কাছেই। মনে রাখতে হবে- মানুষের কোনো গন্তব্য নেই, শুধু গতি আছে। সে কোথায় চলেছে তা সে নিজেই জানে না। এক সময় আকাশে অনেক চিল দেখা যেত। দোকান থেকে খাবার আনার সময় প্রায়'ই ছোঁ মেরে নিয়ে যেত। আজকাল আর দেখা যায় না। তার মানে চিল বসতে পারে এমন সব গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। পাখি কমেছে। জীবজন্তু কমেছে। সামনে আমাদের ভয়াবহ দুঃসময়।
যদি এমন হতো, ভেবে দেখুন- পৃথিবীতে কোনো দুষ্টলোক নেই। কোনো অস্ত্র নেই। সবাই সবাইকে ভালোবাসে। হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই, লোভ নেই। একজনের সমস্যায় অন্যজন ঝাঁপিয়ে পড়ছে তাকে সাহায্য করার জন্য। দেশে কোনো খাদ্যাভাব নেই। কৃষক ফসল ফলাচ্ছে। মানুষ গাছ লাগিয়ে লাগিয়ে পুরো পৃথিবীটা সবুজ বানিয়ে ফেলেছে। নদী ভর্তি মাছ। জেলেরা ঝাল ফেললেই মাছ আর মাছ। দেশে কোনো চোর নেই, ছিনতাইকারী নেই। কেউ ঘুষ খায় না। দুর্নীতিবাজ লোকরা সবাই সৎ হয়ে গেছে।
এই দেশে কিছু লোকের এত পরিমান টাকা আছে যে, তারা ইচ্ছা করলে দশটা গ্রামের রাস্তা পাকা করে দিতে পারে। প্রাইমারী স্কুল গুলো বিল্ডিং করে দিতে পারে। কাল্ভাট করে দিতে পারে। আর্সেনিক মুক্ত পানির ব্যবস্থা করে দিতে পারে। তাদের টাকা আছে কিন্তু তারা কেন এই কাজ গুলো করে না? মৃত্যুর পর তো তারা টাকা কবরে নিয়ে যাবে না। এই জন্য'ই বলেছি সবার আগে পৃথিবীকে ভালোবাসতে হবে। পৃথিবীর মানুষকে ভালোবাসতে হবে। একটা বিশ্ব সম্মেলন করে সারা পৃথিবীর সব মানুষ মিলে এই পৃথিবী নামক গ্রহটাকে সুন্দর করে সাজানো সম্ভব।

পৃথিবী আপনাকে ততটুকুই দিবে, আপনি পৃথিবীকে যতটুকু দিবেন। ভেরি সিম্পল ইকুয়েশন। কাজেই, ডু সামথিং ব্যাটার, ডু সামথিং ডিফারেন্ট।

শশীভূষন বাজারের কাছে এসে একটা চায়ের দোকান খোলা পেলেন। চায়ের দোকানে বসলেন। বয়স হওয়ার কারনে তিনি আর আগের মতো হাঁটতে পারেন না। অনেক লোক চায়ের জন্য বসে আছে। কেতলিতে চায়ের পানি গরম হচ্ছে। ধুতি পরা এক শিক্ষিক লোক শশীভূষনকে দেখে নমস্কার দিলেন। কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর হঠাত করে বলতে শুরু করলেন- শেখ মুজিব নামে এক যুবক রাজনীতি শুরু করেছে। সে অনেক দূর যাবেন এই আমি বলে রাখলাম। তার সাথে আরও আছেন খোন্দকার মোশতাক আহমদ এবং এ.কে রফিকুল হোসেন।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৯

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: যদি এমন হতো, ভেবে দেখুন- পৃথিবীতে কোনো দুষ্টলোক নেই। কোনো অস্ত্র নেই। সবাই সবাইকে ভালোবাসে। হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই, লোভ নেই। একজনের সমস্যায় অন্যজন ঝাঁপিয়ে পড়ছে তাকে সাহায্য করার জন্য। দেশে কোনো খাদ্যাভাব নেই। কৃষক ফসল ফলাচ্ছে। মানুষ গাছ লাগিয়ে লাগিয়ে পুরো পৃথিবীটা সবুজ বানিয়ে ফেলেছে। নদী ভর্তি মাছ। জেলেরা ঝাল ফেললেই মাছ আর মাছ। দেশে কোনো চোর নেই, ছিনতাইকারী নেই। কেউ ঘুষ খায় না। দুর্নীতিবাজ লোকরা সবাই সৎ হয়ে গেছে। -- তাহলে আপনাকে বন্যের/প্রাগৈতিহাসিক এর কাছাকাছি যেতে হবে।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: শাহাদাৎ ভাই খুব অসম্ভব নয়।
সম্ভব।

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৩

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আপনি কল্প বিলাসী মানুষ। কল্পণা করতে ভালোবাসেন। তাই হয়ত এমনটা ভাবছেন।
বাস্তবতা অনেক কঠিন।







০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: আসলে এরকম সম্ভব না। আমিও বুঝি। কিন্তু এই রকম ভাবতে আমার খুব ভালো লাগে। মনের মধ্যে শান্তি শান্তি ভাব লাগে।

৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৫

মিরোরডডল বলেছেন: apnar lekhar majhe shopno ache
your dream is beautiful!

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

প্রখর কল্পনাবল..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.