নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাবমান কালো চোখে আলো নাচে- ১০ (ধারাবাহিক)

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৮



ভয়াবহ এক দুঃস্বপ্ন দেখে অলকার ঘুম ভাঙ্গল। ঘুম ভাঙ্গার পর কি নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে সে বিশেষ কিছুই মনে করতে পারছে না। একটু একটু আবছা যা মনে পড়ছে তা হলো- অন্ধকার রাস্তা। অনেক গুলো কুচকুচে কালো সাপ। আর বুকে ভয় ধরা কেমন বিকট শব্দ। বিছানায় সে উঠে বসল। সাইট টেবিলে রাখা পানির বোতল থেকে পানি খেল। তারপর হাতে নিল রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার বই। আবার বিছানায় শুয়ে পড়লো। এপাশ-ওপাশ করছিল। ঘুম আসছিল না। ইদানিং তার এই সমস্যা হয়েছে- ঘুম আসে না। ঘুম নিয়ে আগে তার কোনো সমস্যাই ছিল না। অলকা কবিতার বই খুলে বসল। সে খুব মন দিয়ে রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা পড়ে। কেন সে নিজের লেখাপড়া বাদ দিয়ে আজকাল কবিতা পড়ছে সে জানে না। তবে তার পড়তে ভালোই লাগছে। তার ধারনা রবার্ট ফ্রস্ট হচ্ছে বিশ্বের এক নম্বর কবি। তার কবিতা গুলি এক একটা মহাকাব্য। ছোট্ট পরিসরে, কিছু সহজ সরল কথায় তিনি অনেক কিছু বলে ফেলতে পারেন। পৃথিবীর তাবৎ মানুষ যেদিকে হেঁটেছে সেদিকে তিনি কখনোই পা বাড়াননি, মাড়াননি পূর্ব-চিন্তানির্ভর অমৌলিক শিল্পপ্রয়াসীদের পথও। তাঁর পথ সবসময়ই স্বতন্ত্র ও পরিচ্ছন্ন। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে জীবনসংগ্রামের নেমে পড়েছিলেন ফ্রস্ট। নিরলস দিনমজুর খেটেছেন। জুতার দোকানের সামান্য বেতনের কর্মচারী থেকে শুরু করে কারখানার শ্রমিক, পত্রিকায় রিপোর্টিং এবং পশমের ববিন বোঝাই গাড়ি-ঠেলার কাজসহ বহুবিধ কায়িক শ্রমবিসর্জনের মাধ্যমে পরিবারে অর্থের যোগান দিয়েছেন। কাজের ফাঁকে চালিয়েছেন কাব্যচর্চা। হতাশায় ভেঙে পড়েনি কখনো। রবার্ট ফ্রস্টের জীবন ও সাহিত্যের সাথে বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনের বেশ কিছু অধ্যায়ের মিল খুঁজে পাওয়া যায়, পাওয়া যায় অমিলও। এই মুহূর্তে অলকা তার প্রিয় কবিতাটা পড়ছে-
The Road Not Taken
Two roads diverged in a yellow wood,
And sorry I could not travel both
And be one traveler, long I stood
And looked down one as far as I could
To where it bent in the undergrowth;

কবি মহাশয় দুইটি রাস্তাকে কল্পনা করেছেন। যে রাস্তাটি হলুদ বনের ভিতর দিয়ে গিয়েছে। একি সাথে আবার আফসোসও করেছেন– তিনি দুইটি পথ একসাথে ভ্রমণ করতে পারবেন না। কবি দাডিয়ে দেখেছেন, যে রাস্তাদুটো কতদূর নিচে গেছে নেমে গেছে। আসলে, কবিতায় রাস্তা বোঝালেও রূপক অর্থে এখানে, জীবনের লক্ষ্য বুঝিয়েছেন।মানব জীবনের দ্বিধা, দ্বন্দ্বের ভিতর দিয়ে যায়, একবার যেখান থেকে চলে যাওয়া হয় সেখানে আর ফিরে আসা অনেক সময় সম্ভব হয় না। আর জীবন চলার পথ অনেক। কিন্তু যে পথে মানুষ খুব কম হেটেছে, অথবা অল্প মানুষ হেটেছে এমন পথ পছন্দ করার মধ্যেই সমস্ত পার্থক্য বিদ্যমান। এটাই মানুষের মধ্যে পার্থক্য গড়ে তোলে।
আকাশ ফরসা হতে শুরু করেছে। অলকা ফস্ট সাহেবকে রেখে এক মগ কফি বানিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আমেরিকান বুড়ো বুড়িরা হাঁটতে বের হয়েছে। তের তলার ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে উত্তর এর দিকটা দেখতে বেশ লাগে। এখনও কর্ম ব্যস্ততা শুরু হয়নি। অলকার বন্ধু মেরি আসার কথা সকাল আট টায়। যে কোনো সময় মেরি এসে ডাকতে শুরু করবে। মেরি তাকে নিয়ে কোথায় যেন যাবে। মেরি মেয়েটাকে অলকার মাঝে মাঝে হিংসা করতে ইচ্ছা করে। মেয়েটা এই স্বাধীনচেতা দেশে আরও বেশি স্বাধীন। যখন যা মন চায় তাইই করছে। সপ্তাহে দুইদিন ডেট করছে রজার নামে একটি ছেলের সাথে। রজার বয়সে মেরির থেকে দুই বছরের ছোট। রজারের আগে মেরির সাথে জন নামে আরেকটা ছেলের সাথে দীর্ঘদিন সম্পর্ক ছিল। আমেরিকাতে ডেট মানেই শারীরিক সম্পর্ক। এই ব্যাপারটা ভাবতেই তার ভীষন লজ্জা হয়। সে ভেবে পায় না এটা কিভাবে সম্ভব? কোনো একটা রেস্টুরেন্টে দু’জন মিলে খাবে। তার পর ছেলে অথবা মেয়ের ফ্ল্যাটে সারারাত একসাথে থাকা। অলকা একবার মেরিকে প্রশ্ন করেছিল- নর-নারীর সাথে কি শুধু শারীরিক সম্পর্কই হয়, আত্মার সম্পর্ক হয় না? মেরি উত্তরে বলেছিল- শারীরিক সম্পর্কে যে সুখ আত্মার সম্পর্কে সে সুখ নেই। যতদিন শরীরের যৌবন থাকবে ততদিন যৌনতা উপভোগ করে যাওয়া উচিত। আত্মার সম্পর্ক হয় মা বাবা ভাই বোনদের সাথে- বেড পার্টনারের সাথে নয়।

যখন খুব অস্থির লাগে অলকার- তখন তার ইচ্ছা করে কোনো চলন্ত জাহাজে উঠে পড়তে। মাসের পর মাস জাহাজ সমুদ্রে ভাসবে। সে ভেসে বেড়াবে এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে। এক একটা বন্দর এর সকাল নিশ্চয় এক একরকম! তার ভাগ্যটাই মন্দ। জাহাজ তার এত ভালো লাগে কিন্তু সে কখনও জাহাজে উঠেনি। পাঁচ বছর আগে হলে সে জাহাজে করে আমেরিকা আসতে পারতো। উড়োজাহাজ আবিস্কার হওয়ার কারনে সে আমেরিকাতে জাহাজে করে আসা হলো না। প্লেনের চেয়ে জাহাজ অনেক বেশি আনন্দময়। প্লেনে মাত্র কয়েক ঘন্টা আর জাহাজে মাসের পর মাস। জাহাজ চলছে তো চলছেই। মধ্যরাত্রে যখন চাঁদের আলো সমুদ্রের গায়ে পড়ে তখনকার পরিবেশটা কত না সুন্দর হয়! কোনো কবি কি সেই পরিবেশেরে বর্ণনা দিতে পারবে? বারবার সে তার প্রাপ্ত আনন্দ গুলো থেকে বঞ্চিত হয়। এই জন্য তার মন সামান্য খারাপ হলো। একদিন হয়তো কেউ একজন তার অতি সামান্য একটা ইচ্ছাও হাসি মুখে পালন করবে।
গত সপ্তাহে বাবার চিঠি আসেনি। মনে হয়, দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। গত মাসে চিঠিতে বাবা লিখেছিলেন- এবার ভাষা নিয়ে বড় ধরনের একটা গন্ডগোল হবে। যে সপ্তাহে অলকা বাবার চিঠি পায় না, সে সপ্তাহে উইকএন্ড গুলো তার ভালো কাটে না। তার উইকএন্ড মানে মুভি দেখা, বাজার করা, কাপড় ধোয়া, রান্না করা এবং মহা কবি রবার্ট ফস্ট।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভালোই হচ্ছে, উপন্যাসের মতো লাগছে

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০৯

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আপনার লেখা টাচি। শৈশব নিয়ে লিখুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.