নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোয়েন্দা গল্প বলা যতে পারে

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৪



ঘটনাটি নোয়াখালী'র মাইজদীর হাউজিং এলাকায়।

কলোনীর সমস্ত মানুষ পচা গন্ধ পাচ্ছে আজ দুই দিন হয়ে গেল। বিকট পচা গন্ধ কোথা থেকে আসছে তা তারা আবিস্কার করতে পারল না। শেষে পুলিশ ডাকা হলো। পুলিশ বিল্ডিংটির চারপাশ ঘুরে সিদ্ধান্ত নিল- সেপটিক ট্যাংকি থেকে এই পচা গন্ধ আসছে। থানার পুলিশ তিন জন মেথর দিয়ে সেপটিক ট্যাংকির স্লাব সরাতেই দেখা গেল একটি মানূষের হাতের তিনটি টুকরো। সবাই প্রচন্ড অবাক! সারা করলোনির মানুষ টুকরো হাতের অংশ গুলো দেখার জন্য জরো হয়েছে।

আপনাদের জানিয়ে রাখি, এই কলোনীতে সব ধরনের মানুষ থাকে। চাকরিজীবি পরিবার থাকে, ব্যবসায়ী পরিবার থাকে, মসজিদের ইমাম থাকে, তিনটি হিন্দু পরিবার থাকে। সব মিলিয়ে পুরো বিল্ডিংটিতে প্রায় একশো মানূষ থাকে। পুলিশ এসে খোজ নিয়ে জানলো- যে বিল্ডিং এর ড্রেনে মানূষের হাতের তিনটি টূকরো পাওয়া গেছে- কিন্তু ঐ বিল্ডিং এর কেউ মিসিং নেই। তাহলে এই হাতের টুকরো গুলো কার? বাইরের কাউকে এখানে নিয়ে এসে হত্যা করা হয়েছে? সিকিউরিটি কে জিজ্ঞেস করে কিছুই জানা গেল না।

হাতের টুকরো গুলো ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হলো। আর এদিকে পুলিশ তার রুটিন মাফিক কিছু খোঁজ খবর করলো কিন্তু কিছুই সুরাহা পেল না। তাহলে ড্রেনে শুধু হাতের অংশ পাওয়া গেল, শরীরের বাকি অংশ গুলো কোথায়? পুলিশের মাথা পুরাই নষ্ট। তিনদিন পর ফরেনসিক বিভাগ থেকে রিপোর্ট এলো। রিপোর্ট থেকে জানা গেল- এটা একটা মেয়ের হাত। যার বয়স আনুমানিক ১৮ থেকে ২০ এর মধ্যে। মসজিদের ইমাম এসে পুলিশকে হাতজোর করে বললেন, এই খুনের যেন অবশ্যই একটা কিনারা হয়। ইমাম সাহেবের সাথে আশে পাশের এলাকার সবাই একমত।

এর মধ্যে একদিন নোয়াখালী মাইজী থানায় এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে এসে বলল- তার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়ের বয়স ১৮। সে ঐ কলোনির তিনটা ফ্ল্যাটে কাজ করতো। মেয়েটির নাম রোজিনা। রোজিনার মা থাকতো ফেনী শহরে। দশ দিন আগে রোজীনার সাথে তার মার মোবাইলে কথা হয়। রোজিনা তার মাকে জানায়- একজন তাকে ভালোবাসে। এবং সে তাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে। সে খুব ভালো মানুষ। যদিও বয়স খুব বেশি। রোজিনার মা থানায় থাকতে থাকতেই খবর আসে- মাইজদী বাজারের কাছে একটা ডোবায় পলিথিনের মধ্যে মানূষের টুকরো টুকরো কিছু অংশ পাওয়া গেছে। পরে আবার সেই কাটা অংশ গুলো ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হলো এবং জানা গেল ড্রেনে যে অংশ গুলো পাওয়া গিয়েছে আর বাকি অংশ গুলো একই মানূষের। অর্থাৎ রোজিনার। এবং আংটি, কানের দুল ও জামার কিছু অংশ দেখে রোজিনার মাও স্বীকার করলেন এগুলো তার মেয়ের। রোজিনার মা এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে হাসপাতালে ভর্তি হলেন।

এরপর শুরু হলো পুলিশের ব্যাপক অভিযান। পুলিশ নানান গোয়েন্দাগিরি করে জানতে পারল- রোজিনা যখন কাজ করতে ঐ ফ্ল্যাট গুলোতে যেত, তখন রাস্তায় এক বখাটে রোজিনাকে বিরক্ত করতো। রোজিনাকে বিয়ের কথা বলতো। সেই বখাটেকে ধরা হলো। খুব উত্তমমাধ্যম দেয়া হলো। বখাটে স্বীকার করলো সব। সে রোজিনাকে চলার পথে বিরক্ত করতো। কিন্তু খুন সে করেনি। রোজিনা ঐ কলোনির যে তিনটি ফ্ল্যাটে কাজ করতো- পুলিশ সে তিন ফ্ল্যাটে হানা দিল কিন্তু তেমন কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। একসময় হাজার হাজার কেস এর ভিড়ে রোজিনার মামলাটার কথা প্রায় সবাই ভুলে যেতে শুরু করলো। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ৭০% নানান রকম মামলা এখনও ঝুলে আছে।

এই ঘটনায় আমি কিভাবে ঢুকলাম সেটা আগে বলে নিই। এই কলোনিতে থাকে একটা ছেলে আবার আমার পরিচিত। ছেলেটার নাম আবীর। আবীর যখন রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে লেখা পড়া করতো, তখন ওদের হোস্টেলে রোজ একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটতো। সেই অদ্ভুত ব্যাপারটার সমাধান কেউ করতে পারেনি। আমি মুহূর্তের মধ্যে সেই সমস্যার সমাধান করে দেই। (সেই সমস্যা ও সমাধানটা কি অন্য কোনো লেখায় বলব।) পুলিশ যখন এই মামলার কোনো কুল-কিনারা করতে পারেনি- তখন আবীর আমাকে খুব অনুরোধ করে এই কেসটার একটা সমাধান করতে বলল। আমি গেলাম নোয়াখালী। আমার পিস্তল নেই, দূরবীন নেই- আমার আছে লজিক। এই লজিক দিয়েই আমি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র তিন দিনে আমি রোজিনার খুনীকে ধরতে পারলাম। এই কেসের সমাধান করতে গিয়ে আমার মনে পড়লো- একদিন রাত দশটা আমার বাসায় এসে হাজির আমার এক কাজিন। তার বক্তব্য এখনই তার সাথে যেতে হবে ঝিগাতলা। সমস্যা হলো- সেই বাসায় সব গহনা আর নগদ টাকা চুরী হয়ে গেছে। গেলাম সেই বাসায়। সব কিছু খুব মনোযোগ দিয়ে দেখলাম। চোর বারান্দার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকেছে। আলমারী খুলে সব নিয়ে গেছে। কিন্তু দুইটা নেকলেস নেয়নি। চোর দুইটা নেকলেস নিবে না কেন? এখানেই আমার খটকা লাগলো।

চুরী হয়ে যাওয়া পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সাথে কথা বললাম। এবং আমি আবিস্কার করলাম- বাইরে থেকে চোর এসে চুরী করেনি। চুরী করেছে ঘরের লোক। এই পরিবারের একটি ছেলে নেশায় আসক্ত। সে বাবা মার কাছে টাকা চেয়েছে, তার বাবা মা টাকা দেয়নি। তাই সে বাধ্য হয়ে চুরী করেছে। এই চোর তার মাকে খুব ভালোবাসে তাই সে তার মার খুব পছন্দের দুইটা নেকলেস রেখে গেছে। এবং সে চুরীর ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য- একটা হেসকো ব্লেড দিয়ে বারান্দার রেলিং এর কয়েকটা রড কেটে রেখেছে। আমি সেই ছেলের ঘর থেকে হেসকো ব্লেডও পেয়েছি। (এই ঘটনা নিয়েও আমি একটা গল্প লিখব।)

যাই হোক মূল গল্পে আসি। ঐ কলোনিতে একজন ইমাম থাকতেন। একদম সুফী চেহারা। নূরানী চেহারা। যে কিনা পুলিশের কাছে খুব অনুরোধ করে ছিল- রোজিনার খুনীকে যেন ধরা হয়। ইমাম সাহেবের বয়স ৫০। অবিবাহিত। সে-ই রোজিনাকে খুন করে। রোজিনা তার ঘরেও কাজ করতো। হাউজিং এলাকায় এই ইমামের খুব সুনাম আছে। তাকে সবাই ভালোবাসে। এলাকার সবাই তাকে খুব মান্য করে। ইমাম সাহেবের সাথে আমার বিশ মিনিট কথা হয়। আমি সরাসরি বললাম চাচা মেয়েটাকে আপনি খুন করেছেন। এই কথা বলার সাথে সাথে এলাকার মানুষ আমার খুব ক্ষেপে উঠলো। এখন আমাকে মারবে। নোয়াখালীর মানুষ খুব বেশি ধার্মিক হয়। পরে এই ইমাম নিজের মুখে সব স্বীকার করে নেয়। আসুন তার মুখেই সব শুনি-

মেয়েটা আমার ঘরে কাজ করেতো। কাজ করার সময় রোজিনার ওড়না সরে যেত। নিজের অজান্তেই আমার চোখ পড়তো রোজিনার উপর। প্রতিদিন এমন হতো। আমি নিজেকে বুঝাতাম। আমি একজন ইমাম। দৃষ্টি সংযত রাখাতে হবে। যখন আমার উপর শয়তান আছড় করতো। আমি বুঝতে পারতাম। সাথে সাথে আমি কুরআন মাজিদ নিয়ে বসতাম। আল্লাহকে খুব ডাকতাম। কিন্তু নিজেকে কন্টোল করতে পারিনি। মসজিদের ইমাম আমি কিন্তু আমি তো মানুষ। আমার তো শরীর আছে- চাহিদা আছে। তরুন বয়সে কন্টোল করতে পেরেছি। কিন্তু এই বুড়ো বয়সে পারলাম না। একদিন আমি রোজিনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তখন রোজিনা আমার হাতে পায়ে ধরলো। আমি রোজিনাকে বিয়ের কথা বললাম। তখন রোজিনা রাজী হলো। আমরা নিয়মিত মিলিত হতাম। একদিন শুনি রোজিনার পেটে বাচ্চা এসেছে। আর রোজিনা আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। যদি বিয়ে না করি তাহলে সে কলোনির সবাইকে আমার কৃতকর্মের কথা বলে দিবে বলে আমাকে ভয় দেখায়। মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হলো। নামাজ পড়লাম, কোরআন পড়লাম। হাদিস পড়লাম কিন্তু কিছুতেই মন শান্ত হয় না। আল্লাহর কাছে হাত তুলে খুব কান্নাকাটি করলাম। শেষে সিদ্ধান্তটি নিয়েই ফেললাম।

রোজিনাও খুব অস্থির হয়ে গেছে। তাকে শান্ত করার জন্য বললাম আগামী শুক্রবার তাকে বিয়ে করবো। সে তো মহাখুশি। হারামজাদীকে বললাম এবরোশন কর কিন্তু রাজী হলো না। বৃহস্পতিবার যোহর নামাজ শেষে বাসায় ফিরে এসে আমি রোজিনাকে খুন করি। বলতে লজ্জা লাগছে তবুও বলি- খুন করার আগে একবার সহবাস করি। খুন করার পর মনে হলো, এই লাশ নিয়ে আমি কি করবো? পড়ে গেলাম মহা বিপদে। শেষে অনেক বুদ্ধি করে লাশটি টুকরো টুকরো করলাম। কিছু ফেলে দিলাম কমোডে। কিছু ফেলে দিলাম পলিথিনে করে মাইজী বাজারের সামনের ডোবায়। এই কাজটি করতে আমাকে প্রচন্ড বেগ পেতে হয়েছে।

ইমাম সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি হয়তো আমার ঘরের কালো পলিথিন আর টয়লেটের কোনায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখে সন্দেহ করেছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন এত সতর্ক ছিলাম। তারপরও কিছু না কিছু চিহ্ন থেকেই যায়। পুলিশ তো হার মেনেই দিয়েছিল, হুট করে আপনি কোথা থেকে এসে আমাকে ধরিয়ে দিলেন। অবশ্যই এজন্য আমি মোটেও অসুখী নই। দোষ করেছি, শাস্তি আমার কাম্য। তবে আমি আমার সমস্ত জমিজমা এবং টাকা হাফিজিয়া মাদ্রাসায় দিয়ে গেলাম।

পরিশিষ্টঃ কোর্টে রায় চলা কালীন ইমাম সাহেব পাগল হয়ে যান। এবং রায়ের দিন তিনি মারা যান।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:২১

প্রামানিক বলেছেন: গল্পের শুরু এবং শেষ দেখে মনে হলো বাস্তব ঘটনা। ধন্যবাদ

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ সবার আগে এবং প্রথম মন্তব্য করার জন্য।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


পার্ট টাইম ডিটেকটিভ?

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: অনেকটা এই রকমই।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩২

বেয়াদপ কাক বলেছেন: বাস্তব ঘটনা মনে হচ্ছে। আপনার পর্যবেক্ষন ক্ষমতাও বেশ তীক্ষ্ণ

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৩

বনসাই বলেছেন: ঘটনাটি সত্য তবে বাংলাদেশের নয়। এটা ভারতের; সনি চ্যানেলে ক্রাইম পেট্রোল প্রোগ্রামে দেখানো হয়েছিল।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
তবে এই রকম ঘটনা আমাদের দেশেও ঘটে ।
ঘটে না?

৫| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৯

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: তারমানে এটা গল্প, সত্য ঘটনা নয়।

৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৩

মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: আপনার ঝামেলা দূর হয়েছে?

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি বুদ্ধিমান লোক আমার পোষ্ট গুলো একটূ মন দিয়ে খেয়াল করলেই সব বুঝতে পারবেন।

৭| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: টিভিতে দেখে লিখতে পারাও একটি ভাল গুণ ।

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৮| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৯

নোয়াখাইল্ল্যা বলেছেন: ব্যাপক চিন্তিত!!! আমার এলাকা আমি জানলাম না???

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: আরে আপনিই তো আমাকে ডেকে নিয়ে গেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.