নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
একটা পত্রিকা অফিসে সবচেয়ে কষ্টের কাজ করেন বিজ্ঞাপনের লোক গুলো।
পত্রিকা অফিসে সবচেয়ে কষ্টের কাজ বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা। একটা নিউজ করা বা একটা ফিচার লেখা অনেক সহজ। কিন্তু একটা বিজ্ঞাপন আনা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। যে লোকটি একটা ফিচার লেখেন বা একটা রিপোর্ট লিখেন তাকে যদি বলা হয় একটা বিজ্ঞাপন আনেন- সে পারবে না। অথচ বিজ্ঞাপনের উপরেই সংবাদ পত্র গুলো চলে। ইলেকট্রনিক্স, প্রিন্ট বা অনলাইন নিউ পোর্টাল সবার একই অবস্থা। একদিনে দশটা-বিশটা নিউজ বা ফিচার লেখা সম্ভব। কিন্তু তিন মাসে তিনটা বিজ্ঞাপন আনা সম্ভব নয়। পত্রিকার জগতে 'প্রথম আলো'র কথা আলাদা। তারা রাজা। এখানে দেখা যায়- নামী প্রতিষ্ঠান প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য রীতি মত যুদ্ধ করে। কিন্তু অন্য সব পত্রিকার কঠিন খরা।
আমি নিজের চোখে দেখেছি বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করার জন্য লোক গুলো কি পরিমান পরিশ্রম করেন। লোকাল বাসে করে এক অফিস থেকে আরেক অফিসে ছুটেন। (খুব কম লোকেরই হোন্ডা আছে। সব পত্রিকা অফিস থেকেও কর্মচারীদের হোন্ডা দেয় না)। বিজ্ঞাপনের লোক গুলো কোথাও সমাদর পান না, বেশির ভাগ জায়গাতেই তাদের জন্য থাকে অপমান আর অবহেলা। অথচ ছোট বড় সব কোম্পানীতেই (পি আর ডি- পাবলিক রিলেশন ডিভিশন) সেকশন থাকে। অফিসও তাদের সাথে খুব একটা ভালো ব্যবহার করে না। আর যারা এসি ঘরে বসে নেট ঘেটে বা টিভি দেখে নিউজ লেখেন বা ফিচার লেখেন তারা নিজেদের বড় সাংবাদিক দাবী করেন। বেতনও বেশি পান। তাদেরকে আমার বলতে ইচ্ছা করে- তুমি যত বড় চান্দুই হও পারলে একটা বিজ্ঞাপন এনে দেখাও। তোমাদের ছয় মাস সময় দিলেও তোমরা তিনটা বিজ্ঞাপন আনতে পারবে না।
অনলাইন হোক, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া হোক আর প্রিন্ট মিডিয়াই হোক। সব জাগায় বিজ্ঞাপনের একই চিত্র। এদিকে বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপনের রেট একদম কমিয়ে দিয়েছে। যে বিজ্ঞাপনের আগে জন্য ৫০ হাজার টাকা দিত, এখন দেয় ১০ হাজার। এত চ্যানেল, এত পত্রিকা... !! সংবাদ পত্র গুলোতে নিউজ এর মান খুব খারাপ। নিম্ম মানের লেখা। অনলাইনওয়ালারা একজন আরেকজনেরটা কপি করে নিউজ করে। আর বাকি নিউজ গুলো সংগ্রহ করে টিভির সংবাদ থেকে। আসলে বাংলাদেশে অজস্র মিডিয়া আছে। হাতে গোনা কয়েকজনের অবস্থা ভালো। বাকি সবার অবস্থা খারাপ। যেমন প্রথম আলো পত্রিকার বিজ্ঞাপনের অভাব নেই। তাদের টাকারও অভাব নেই। তারাই মনে হয় বেতন সবচেয়ে বেশি দেয়। এছাড়া সব পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মারাত্মক অভাব। এক কথায় বলা যায় করুন অবস্থা। অবশ্য ইদানিং পত্রিকাওয়ালারা বিজ্ঞাপনের জন্য প্রতিদিন নিত্য নতুন বুদ্ধি বের করছে। তাতে আহামরি সাকসেস হয় না। তবে দু চার পয়সা লাভ হয়। শুধু যে সমস্ত পত্রিকার মালিক ধনী তারা বিজ্ঞাপন না থাকলেও অন্ততপক্ষে মাস শেষে বেতনটা পান। কিন্তু যে সমস্ত পত্রিকার মালিক ধনী নয়- তাদের চেয়ে থাকতে হয় বিজ্ঞাপনের দিকে। এমনও দেখেছি মাসের পর মাস চলে যায় বেতন দেয়া হয় না। বেতন চাইলেই বলা হয়- বিজ্ঞাপন নিয়ে এসো। আমার ধারনা সমকাল পত্রিকা ভয়ানক লসে আছে। কিন্তু কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন পান- কারন মালিকের অনেক টাকা আছে বলে। কালের কন্ঠ বা বাংলাদেশ প্রতিদিন বা নিউজ২৪ এর মালিকের টাকার অভাব নেই- তারা বেতন পান।
এবার, অন্য আলাপে আসি, একজন সাংবাদিক কি নিজের ইচ্ছায় নিউজ লিখতে পারেন? না পারেন না। সম্পাদকের ইচ্ছায় তাকে লিখতে হয়। সম্পাদক আবার বিবেচনা করেন- সরকার বা বিরোধীদলকে রাগানো যাবে না। ধরুন 'এবিসি' কোম্পানী দুর্নীতি করেছে কিন্তু তার ব্যাপারে লেখা হবে না। কারন এবিসি কোম্পানী বছরে ৩ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এই রকম নানান ঘোরপ্যাচ আছে। আমার নিজের চোখে দেখা একটা ঘটনা বলি- এক রিয়েল এস্টেট কোম্পানী এতিমখানা ও মাদ্রাসার জায়গা দখল করে বিশাল এক এপার্টমেন্ট বানিয়েছে। এতিমখানা ও মাদ্রসার লোকজন অনেক দেনদরবার করলো। এতিমখানার শিশুদের নিয়ে মানব বন্ধন করলো, থানা পুলিশ করলো, প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করলো। কোনো লাভ হলো না। তখন আমি একটা দৈনিক পত্রিকায় কাজ করি। আমার পত্রিকায়ও কিছু লেখা হলো না- আমি জানতে চাইলাম কেন লেখা হলো না? আমাকে বলা হলো- চুপ করে বসে থাকো। ঐ কোম্পানী আমাদের পত্রিকায় প্রচুর টাকার বিজ্ঞাপন দেয়। ওদের বিরুদ্ধে লিখলে ওরা আমাদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিবে।
আমি পত্রিকা অফিসে অনেকদিন কাজ করেছি। পত্রিকা অফিসের সুবিধা অসুবিধা সব কিছুই জানি-বুঝি। আমার যদি অনেক অনেক টাকা থাকতো আমি একটা পত্রিকা অথবা অনলাইন নিউজ পোর্বেটাল বের করতাম। তবে অবশ্যই কারো পক্ষ পাতিত্ব করতাম না। বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতাম। সাপ মারতাম কিন্তু লাঠি ভাংতো না। সরকার বান্ধব পত্রিকা না। জনগন বান্ধব পত্রিকা। আর পত্রিকা বের করতাম ধান্ধাবাজি করার জন্য না। সত্যিকারভাবে দেশের মঙ্গল এর জন্য কাজ করতাম। আসলে অনেক প্রতিভা নিয়েই জন্মেছিলাম কিন্তু টাকার অভাবে কিচ্ছু করতে পারলাম না। অথচ সময় হু হু করে চলে যাচ্ছে। প্রতিটা পত্রিকা কোনো না কোনো দলের লোকের। নিরপেক্ষ কোনো পত্রিকা নেই। একটা নিরপেক্ষ পত্রিকা আর একটা নিরপেক্ষ টিচি চ্যানেলে আমাদের খুব দরকার।
অনেক সাংবাদিক আছে, আসলে এদেরকে সাংবাদিক না বলে সরাসরি চাটুকার বা দালাল বলা উচিত। এদের জিবহা সব সময় কুকুরের মতো বের হয়ে থাকে, চুক চুক শব্দ করে এবং এরা জেনে শুনে নিজের সত্তা বিসর্জন দিয়ে দুষ্টলোকদের সাথে মিশবে, তাদের হয়ে দালালি করবে। আমি নিজের চোখে অসংখ্য সাংবাদিককে দেখেছি- কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে খাওয়ার জন্য এবং গিফট এর জন্য ঝগড়া করবে, কাড়াকাড়ি করবে। কেউ কেউ টক শোতে গিয়ে গোলামি করবে। টকশোতে যাওয়ার জন্যও চামচাগিরি করে। প্রতিনিধি সাংবাদিকরা আরও বেশি ভয়াবহ হয়। কথায় বলে না ছোট মরিচের ঝাল বেশি। সবচেয়ে বড় সন্ত্রাস হলো প্রতিনিধি সাংবাদিকরা। তারা বিশ টাকা পঞ্চাশ টাকাও ধান্ধা করে। সবাই এই কাজ করে না। তবে বেশীর ভাগ প্রতিনিধিই এই কাজ করে। টাকার জন্য তাদের জিব সব সময় বের হয়ে থাকে। আমার কথা হলো- তোদের আসল টার্গেট যদি টাকা'ই হয় তাহলে এই পেশায় এলি ক্যান? ব্যবসা করতি। মসজিদের ইমামতি করতি। দান সদকা পেতি।
আমার মনে হয় বর্তমানে বাংলাদেশে একজনও সৎ সাহসী দক্ষ পরিশ্রমী লোভহীন পক্ষপাতহীন সাংবাদিক নেই। সবাই কোনো না কোনো দলে বিভক্ত। কোনো সাংবাদিক দেশের কথা ভাবে না, দেশের মানূষের কথা ভাবে না। তারা শুধু বুঝে ধান্ধা। আরেক দল আছে- টাকা দাও প্রেস ক্লাবের সদস্য হও। আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা হলেও সমস্যা নেই। টাকা দিলেই সদস্য হওয়া যাবে। প্রেসক্লাবের সদস্য হয়ে ধান্ধাবাজিতে লেগে যাও। ধান্ধাবাজি করার যোগ্যতা তোমার আছে কিন্তু একটা ভালো রিপোর্ট করার যোগ্যতা তোমার নেই। এখন তো সাংবাদিকদের সংগঠনের অভাব নেই। দেশের উন্নয়নে এই সংগঠন গুলো কি কাজ করে? এই ধরনের ফালতু সংগঠন সব বন্ধ করে দেয়া উচিত। সংগঠন করলে কি ধান্ধা করতে সুবিধা হয়? মোটা অংকের ধান্ধা করা যায়?
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: কঠিন সত্য বিশ্লেষণ করেছেন।
বাবুগিরি করা যায় কিন্তু যারা বেগার খাটে তারা যানে কত কষ্ট হয়।
আমি কিছুদিন মিডিয়াতে কাজ করেছিলাম। অবস্থা খারাপ। লাটরা চোখ টাটায় কিন্তু যারা পাতে ভাত দেয় তাদের খবর কেউ নেয় না। লন্ডন এদের অবস্থা খারাপ। হালুয়া এক্কেবারে টাইট!
বিজ্ঞাপন যারা আরে ওরা আসলে একটু বেশি সরল। তাদেরকে গরল হতে হবে।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: কঠিন অবস্থা।
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২১
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি কি বিজ্ঞাপন সংগ্রহের সাথে যুক্ত?
বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা দলের প্রতি অন্ধ হওয়াতে কেহ তাদের সাংবাদিক হিসেবে সন্মান করে না।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: না। আমি ছবি তুলি।
তবে কিছু দিন এই কাজও করেছি।
৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৫৯
দপ্তরবিহীন মন্ত্রী বলেছেন: বাংলাদেশের মত এত বেশী পত্রিকা চীনেও নেই। এখানে মতের অমিল হলেই কয়েকজন মিলে পত্রিকা বের করে। তারপর কিছুদিন পর বেতন দিতে না পেরে মারামারি, আন্দোলন, বন্ধ হয়ে যায়। মালিকের কথা মত চলতে হয়। আর আপনিও জানেন নামসর্বস্ব পত্রিকাগুলো আসলে কাগজের ব্যবসা করে। একটা মানুষ কেন টাকা দিয়ে কপি পেস্ট পত্রিকা কিনবে? এদের অন্য ব্যবসা আছে। সকালের খবরও বন্ধ হয়ে গিয়েছে মনে হয়। আমাদের দেশে চাহিদার চেয়ে বেশী পত্রিকা, চ্যানেল, ব্যাংক হয়ে গিয়েছে। এসব আর বাড়ানো ঠিক হবে না।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: সঠিক বলেছেন।
৫| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৭
শহিদুল ইসলাম মৃধা বলেছেন: আমার মনের কথা গুলিই বলেছেন ভাই। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সত্য কথা গুলোই সব সময় লাখো মানূষের মনের কথা হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:২৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন - ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে - কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে।
যতদিন ভবে, না হবে না হবে, - তোমার অবস্থা আমার সম।
ঈষৎ হাসিবে, শুনে না শুনিবে - বুঝে না বুঝিবে, যাতনা মম।
বিজ্ঞাপন প্রতিনিধির দুঃখ গাঁথা কেউ বুঝিবেনা একমাত্র বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি ছাড়া।
প্রথমে রিপোটিং করার সাথে সাথে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করাও ছিলো অলিখিত নিয়ম।
পিআরও দের সাথে দেখা করা ছিলো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যদিও তারা বলতেন
শিক্ষিত যুবকদের পেট্রোনাইজ করা তাদের মহান দ্বায়িত্ব। কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা বসে
থেকেও তাদের সাক্ষাত পেতাম না। তবে বিপরীত লিংগের বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিরা তুলনামূলকভাবে
সহজে বিজ্ঞাপন আদায় করে নিতেন। চোখের সামনে এমন বৈষম্য দেখ রক্ত ক্ষরণ হতো ভিতরে
যা কেউ দেখতে পেতোনা। রাজীব ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিদের কষ্টের
কথা তুলে ধরার জন্য।