নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তি যুদ্ধের গল্প ও আমার মা বাবা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:২৯



১। আমি আব্বাকে প্রায়ই আক্ষেপ করে বলি- তুমি কেন মুক্তিযুদ্ধ করলে না? যুদ্ধ করলে কত সুবিধা পেতাম। স্কুল কলেজে সুবিধা পেতাম। ভালো চাকরি পেতে সুবিধা পেতাম। তুমি সরকার থেকে সুবিধা পেতে। মাসে মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতে। তেল, ডাল, চাল পেতে। আর কত কি! আমার পরিচিত একজনকে দেখি- প্রতিমাসে আট লিটারের তেলের গ্যালন পায়। কি কি সব ভাতা পায়, আরও কি কি যেন সুবিধা পায়। কিন্তু শোনা যায় অই লোক মুক্তিযুদ্ধ'ই করেনি। কিন্তু তার সার্টিফিকেট আছে। কিছুদিন আগের কথা, সে তার নিজ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা বাছাই এর কাজে গিয়ে- অনেক টাকা ইনকাম করেছে। গ্রাম থেকে ফিরেই তার ছেলেকে আই ফোন কিনে দিয়েছে।

একদিন আমি গ্রামে গিয়েছি। আব্বার এক বন্ধু কথায় কথায় বললেন, তোমার বাবা তো যুদ্ধ করেছেন। এই কথা শুনে আমি তো অবাক!! ঢাকা ফিরে আব্বাকে বললাম- তুমি মুক্তিযুদ্ধ করেছো কোনো দিন তো আমাদের কিছু বল নাই(?)! তারপর আব্বা বললেন, সরাসরি পিস্তল কাঁধে নিয়ে আমি যুদ্ধ করি নাই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নানান ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছি। তাদের গোলা বারুদ পৌঁছে দিয়েছি, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছি, রান্না করে খাইয়েছি। কিছু পাওয়ার আশায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করিনি। দেশকে ভালোবেসেই করেছি। সেদিন আমার খুব গর্ব হয়েছিল।

২। ২৫ শে মার্চ রাতে আচমকা রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমন করা হলো। আমাদের বাসা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের কাছে। সমস্ত এলাকা ধোয়ায় আচ্ছন্ন। একটু পর-পর গুলি আর বোমার শব্দ। প্রতিটা বাড়ির বাতি বন্ধ। তখন আমার মায়ের বয়স দশ বছর। সারারাত নানা-নানী আমার মাকে নিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকলেন। নানী অন্ধকারে রাতের খাবার খেতে গিয়ে আলু ভরতা করার সময় পেঁয়াজ মরিচের সাথে একটা তেলাপোকাও খেয়ে ফেললেন। খাওয়া শেষে দাঁতের ফাকে তেলাপোকার পা আবিস্কার করলেন। খাটের নিচেই ডিনার শেষ করলেন। ডিনার শেষে মা ঘুমিয়ে পড়লেন। আহা কি ভয়াবহ রাত!! আমি জানি প্রতিটা বাঙ্গালীর এরকম বহু সৃতি আছে।

৩। ৭ই মার্চ। রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিব ভাষণ দিবেন। তখন আমার জন্ম হয়নি। কিন্তু অদৃশ্য ভাবে আমি সেই মহান ভাষনের সময় উপস্থিত ছিলাম। আমার নানা মাকে নিয়ে গেলেন রেসকোর্স ময়দানে। লক্ষ লক্ষ মানুষ। মা নানাকে বললেন, আমি শেখ মুজিবকে দেখব। নানা মাকে কাধে উপর উঁচু করে ধরলেন। ঠিক এই সময় বিক্রমপুর থেকে মোয়াজ্জেম হোসেনের বড় ছেলে, মো মেহের হোসেন খান (আমার বাপ) শেখ সাহেবের ভাষন শোনার জন্য রেসকোর্স ময়দানে এসে হাজির। তখন তার বয়স পনের বছর। কি আশ্চর্য কেউ কাউকে চিনে না, জানে না! এমন কি রেসকোর্সের ময়দানে তাদের সাথে দেখাও হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক বছর পর তাদের বিয়ে হয়।
টিভিতে ৭ই মার্চের ভাষন দেখালেই বাবা মা দু'জনেই চিৎকার করে গর্ব করে বলেন- এই ভাষনে আমি ছিলাম। ছেলে মেয়ের উপর বাবা মায়ের ছায়া পড়ে। তাই আমার মনে হয়- আমিও ছিলাম ৭ই মার্চের ভাষনে। এই ভাষন শুনলে বুকটা শিরশির করে উঠে। জয় বাংলা।

৪। আমার খালু খুবই শান্ত মানূষ। সহজ সরল মানষ। তিনি ফলের ব্যবসা করতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেন নি। গোলা বারুদ, রক্ত এইসব খুব ভয় পেতেন। তিনিই কিনা একদিন এক রাজাকারকে মেরে কলিজা বের করে হাতে নিয়ে সারা গ্রাম দৌড়ে ছিলেন।
তখন আমি ক্লাশ নাইনে পড়ি। খালু হাসপাতালে ভরতি। আমি তাকে দেখতে গেলাম। আমি বললাম খালুজান। সবাই বলে আপনি নাকি একটা রাজাকারকে মেরে কলিজা বের করে হাতে নিয়ে সারা গ্রাম দৌড়ে বেড়িয়েছেন। এটা কিভাবে সম্ভব? আপনি তো ভীতু মানূষ, শান্ত মানূষ। এটা কিভাবে সম্ভব?
খালুজান বললেন, এই রাজাকার চোখের সামনে সাধারন মানূষকে এত এত অত্যাচার করেছে। মেয়েদের উলঙ্গ করে নাচিয়েছে। মানূষের টাকা পয়সা, অলংকার জোর করে কেড়ে নিয়েছে। কত কষ্ট দিয়ে মানূষ মেরেছে। দিনের পর দিন এইসব দেখে-দেখে আর প্রচন্ড ঘৃণায় আমার এক আকাশ রাগ হয়েছিল, জিদ হয়েছিল। হঠাত এক পৃথিবী সাহস আমার বুকে ভর করেছিল। ১৬ ডিসেম্বরের কয়েকদিন আগে রাজাকারকে খুন করি। বুক থেকে কলিজা বের করে আনি। আমার একটুও খারাপ লাগেনি। কষ্ট হয়নি। বরং কাজটা করে অনেক আনন্দ পেয়েছি।

৫। যুদ্ধের সময় আমি যদি থাকতাম, তাহলে আমি কি যুদ্ধ করতাম?
অবশ্যই যুদ্ধ করতাম। কারন আমি আমার দেশকে অসম্ভব ভালোবাসি।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


মুক্তিযোদ্ধারা জাতির জন্য ভলনটিয়ার সৈনিক ছিলেন; উনারা আজীবন জাতির জন্য ভলনটিয়ার হিসেবেই থাকার কথা ছিল; সেই সুযোগটা তাজুদ্দিন সাহেব নষ্ট করেছিলেন; বর্তমানে মজুক্তিযোদ্ধারা ভাতা না নিয়ে বেঁচে থাকতে পারলে ভালো হতো।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছি- গায়ে ব্যাচ লাগায়। তখন তারা বলে আমি মুক্তিযোদ্ধা আমি লাইনের দাড়াতে পারব না। পুলিশ যেমন গায়ে ইউনিফর্ম থাকলে লাফালাফিটা বেশি করে। ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে না।

২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



লেখক বলেছেন, " অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছি- গায়ে ব্যাচ লাগায়। "

-ঐগুলো অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা নন, ঐগুলো আওয়ামী কিংবা বিএনপি'র কারখানায় তৈরি লিলিপুটিয়ান।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: রাইট।

৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪৯

আটলান্টিক বলেছেন: পোষ্টে প্লাস দিসি রাজীব ভাই।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: এটা আপনার মহানুভবতা।

৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:০৬

রুরু বলেছেন: খুব ভালো লাগলো ভাই।

৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:০১

তার ছিড়া আমি বলেছেন: ভাল, খুবই ভাল লেখেছেন। ধন্যবাদ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:২২

কামরুননাহার কলি বলেছেন: পয়েন্ট ২ এটা আমার কাছে খুবই কষ্টদায়ক ইতিহাস ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: কষ্টের ইতিহাস থেকেই শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

৭| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:২৫

ধ্রুবক আলো বলেছেন: খুব ভালো লাগলো আত্মকথা। সকল মুক্তিযুদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
যুদ্ধের সময় আমি যদি থাকতাম তাহলে আমিও যুদ্ধ করতাম ।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৮| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭

অর্ক বলেছেন: লেখাটি বেশ ভালো লাগলো। যুদ্ধের পক্ষে সকলেই (গুটিকয় ছাড়া) ছিল। আপনার বাবার তো এক অর্থে মুক্তিযোদ্ধাই। দেশপ্রেমে ভাস্বর লেখাটি।
তালিকার কি করলেন ভাই!
তালিকা!
সেই ডিসেম্বরেরর শুরুতে বললেন শীঘ্রইই তালিকা প্রকাশ করবো।
আজ জানুয়ারির মাঝামাঝি!
কোথায় তালিকা!

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: তালিকার কথা মনে আছে।
এক বড় ভাই বললেন- তালিকা করার দরকার নাই। বিপদে পড়বা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.