নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
সে ঘুমাচ্ছে। আরাম করে ঘুমাচ্ছে। তার মন নেই, নেই বিবেক। আছে শুধু একটা লম্বা শরীর, সাথে আছে চোখ, জিভ। ঘুমানোর আগে ইচ্ছে মতোন খেয়েছে। কেউ তাকে খাবার সংগ্রহ করে দেয়নি। নিজের খাবার নিজকেই সংগ্রহ করতে হয়েছে। শীতের সময় তার ঘুম ভালো হয়। গরমে বড্ড কষ্ট। আর বর্ষাকালে তার ঘরে পানি ঢুকে যায়। তখন নতুন ঘরের সন্ধান করতে হয়। খুব ক্ষধা না পেলে তার ঘুম ভাঙ্গে না। তার ঘুমের জায়গাটা গভীর অন্ধকার। অন্ধকার ছাড়া সে ঘুমাতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা অন্ধকার তার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়। মাটির নিচের অন্ধকার এর তুলনা হয় না। তবে বর্ষাকালে মাটির নিচে মোটেও নিরাপদ নয়। আজকাল বাইরে বের হলেই সারাক্ষন ভয় কাজ করে। ক্ষুধার চেয়ে ভয়টাই বেশি।
ব্যাঙ আর ইঁদুর তার প্রিয় খাবার। একেবারে সহজলভ্য। ব্যাঙ যখন বাঁচার লক্ষ্যে জোরে লাফ দেয় তখন সে শূন্য থেকে ব্যাঙটাকে মুখের মধ্যে পুড়ে নেয়। মাটিতে লম্বা গর্ত করে ইঁদুর সেখানে তার পরিবার নিয়ে থাকে। ক্ষুধা পেলে সে হুট করে ইঁদুরের গর্তের ভেতর ঢুকে পড়ে। তারপর একটু একটু করে পেটে চালান করে পুরো পরিবারটিকে। মোটেও সুখকর কিছু না। আস্ত জিনিস গিলতে তার খুব কষ্ট হয়। বেশ বেগ পেতে হয়। যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। ইঁদুর আর ব্যাঙ যত'ই সর্তক থাকুক তার কাছে হার মানতেই হয়। লম্বা ঘুমের আগে খাবার সংগ্রহের জন্য সে বের হয়। অলৌকিক ক্ষমতা তার আছে। সে ঠিকই বুঝে কোনটা তার খাবার, কোনটা নয়। চাঁদের আলো আর আর শীতের বাতাস তাকে চিনিয়ে দেয় উত্তর দক্ষিন। যখন সূর্য হেলে পড়ে দক্ষিনে তখন তার শরীর ঠিকই বুঝে নেয়। বেশির ভাগ সময়ই তাকে আত্মগোপন করে থাকতে হয়। মানুষই তার সবচেয়ে বড় শত্রু। তার পরিবারের অন্য সদস্যদের এই মানুষরাই পিটিয়ে মেরেছে, পুড়িয়ে মেরেছে, এমনকি আস্ত ইট দিয়ে মাথা থেতলে পর্যন্ত দিয়েছে। একমাত্র তার পরিবারের মধ্যে সে'ই বেঁচে আছে। যদিও তার মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে প্রতিশোধ নিতে।
তার রাতের আহার শেষ। সে ঘরে ফিরছে। এমন সময় তার পথে আজিজ মাস্টার বাঁধা সৃষ্টি করলো। লোকটা এখনও তাকে দেখতে পায়নি। সে ইচ্ছা করলে একটুখানি বিষ আজিজ মাস্টারের গায়ে দিয়ে দিতে পারে। মুহূর্তের মধ্যে বুক দাপড়ে মরে যাবে। বিষের আঘাতে মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে যাবে। আজিজ মাস্টারের শালা তার ভাইটিকে পিটিয়ে মেরেছে স্কুল মাঠে। কিন্তু সে আজিজ মাস্টারকে ছোবল দিবে না। তার মনে আছে গতবার বর্ষায় সে আজিজ মাস্টারের বৈঠকখানার ঘরের চালায় আশ্রয় নিয়েছিল, কেউ তাকে বিরক্ত করেনি। বর্ষা শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে সে ধরা পরে গেল আজিজ মাস্টারের বউ লতার কাছে। ভয় পেয়ে সে ফণা তুলে প্রস্তুত হয়েছে শেষ লড়াই এর জন্য। লতা বড় ভালো মানূষ। তাকে মারেনি, কাউকে জানায়নি, একটুও আঘাত করেনি বরং চলে যেতে সময় দিয়েছিল। তার সব মনে আছে। তাই আজ সে আজিজ মাস্টারকে দেখে পথে ছেড়ে গাছের কোনায় সরে গেল।
আজিজ মাস্টার চলে যাবার পর সে গভীর মাটির তলদেশে তার ঘরে গেল। সমস্ত শরীর জুড়ে আলস্যভর করেছে। তার ঘরে ভয়াবহ অন্ধকার। কিছুই দেখা যায় না। অবশ্য দেখার দরকারও নেই। সে তার জিভ বের করলেই সব কিছু টের পেয়ে যায়। বিশেষ করে বিপদ। গলা থেকে পেটে নেমেছে ইঁদুর আর ব্যাঙ কিন্তু এখনও হজম হয়নি। তার এখন ঘরে থাকতে ইচ্ছা করছে। নিজেকে বড় একা লাগছে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার ঘর থেকে বের হলো। ততক্ষনে আকাশ ফরসা হতে শুরু করে দিয়েছে। সে এলোমেলো অনেকক্ষন ঘুরে বেড়ালো। তার কিছুই ভালো লাগছে না। শরীর অন্য কিছু চাইছে। মাটির পথ দিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দলবেঁধে স্কুলে যাচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের কি সুন্দর মসৃন পা। যদিও তার কোনো সৌন্দর্যবোধ নেই। আজিজ মাস্টারের মেয়ে রুপা তার সামনে দিয়েই মাত্র'ই খালি পায়ে হেটে গেল। আর একটু হলে তার নরম গায়ে পা বসিয়ে দিত। রুপা মেয়েটা একটা গেছো মেয়ে, ভাব্লো সে মনে মনে।
সাপটা বালাসুর গ্রাম পেরিয়ে একটা ঘাসজমির কাছে এসে থামল। এক রাখাল ছেলে কয়েকটা গরুকে ঘাস খাওয়ার জন্য মাঠে ছেড়ে দিয়েছে আর সে বসে আছে একটা পেয়ারা গাছের সবচেয়ে উঁচু ঢালে। এখানেই আজিজ মাস্টারের মেয়েটা মাঝে মাঝে আসে রাখাল ছেলেটার কাছে। দু'জনের বেশ ভাব। নানান গল্প করে তারা। এব্যাপারে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আজ তার খোলস ছাড়ার দিন। একটু একটু করে সে তার খোলস বের করছে। বড় যন্ত্রনা। বড় কষ্ট। প্রায় এক ঘন্টার চেষ্টায় সম্পূর্ণ খোলস বের করতে সে সক্ষম হলো। এখন সে গভীর কামার্ত অবস্থায় আছে। সে পাগলের মতো ছুটছে। শুধু ছুটছে। তার মনে কোনো প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই। শুধু আছে বীজবপনের অস্থিরতা। ফোস ফোস করে বারবার সে গরম শ্বাস ফেলছে। তার সমস্ত ঘ্রান শক্তি দিয়ে সে নারীসাপ খুঁজছে। এই মুহূর্তে নারী সাপকে আলিঙ্গন না করতে পারলে তার শান্তি নেই।
সূর্যটা যখন ঠিক মাথার উপর তখন'ই সে অকস্মাৎ তার দেখা পেয়ে গেল। গন্ধ শুকে শুকে একবারে তার কাছে চলে এলো। পূর্ব পরিচয় নেই। তবুও তারা মুখোমুখি হলো। চোখে চোখ। দু'জনেই মস্ত ফণা তুলে প্রস্তুত। দু'জন দু'জনকে ক্রমাগত ছোবল মেরে চলেছে। আর যেন বলছে তোমাকে চাই। বন্ধু তোমাকে চাই। ভাষাহীন, ভালোবাসাহীন তাদের এই আক্রমণ। দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে মাটিতে আছড়ে-আছড়ে পড়ছে। কিন্তু নেই কোনো ফিসফাস, চিৎকার। শুধু আজ প্রয়োজন দুজন দু'জনকে। এই রতিক্রিয়াতে উপভোগ্যের কিছু নেই দু'জনের। আছে শুধু প্রয়োজন। আছে শুধু বাধ্যতামূলক অলৌকিক নির্দেশ। দূর থেকে দাঁড়িয়ে রাখাল আর আজিজ মাস্টারের মেয়ে রুপা পুরো ঘটনাটা দেখল। রাখাল বলল- একেই বলে শঙ্খ।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম- মৃত্যু
২য়- রাত
৩য়- সাপ।
ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১
কামরুননাহার কলি বলেছেন: সাপ নিয়ে লেখাটি খুব ভালো লেগেছে ভাইয়া।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ বোন।
৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৮
আটলান্টিক বলেছেন: লাইক দিসি
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮
প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল। ধন্যবাদ
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনি একজন গুনী ব্লগার।
৫| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩১
উম্মে সায়মা বলেছেন: সাপ দেখলে আমার গা গুলিয়ে ওঠে
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাই সাপ।
৬| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমার স্কুল জীবনের একাংশ, ও কলেজের সময় গ্রামে কাটিয়েছি, সব ধরণের সাপ ছিল আশেপাশে; সাবধানে থাকতাম; তবে, কখনো ভয় পাইনি। সাপ ভয় পেয়ে আক্রমণ করে; ডিম পাড়লে ভয়ানক আক্রমনকারী হয়ে উঠে, কেহ যদি বাসার কাছে যায়।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৭| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:১৭
জাহিদ অনিক বলেছেন:
ওরে বাবা ! দারুণ লিখেছেন।
শেষটা তো লা জবাব।
সত্যিই একেই বলে শঙ্খ !
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ জাহিদ ভাই।
৮| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৩৪
রক বেনন বলেছেন: সাপ সংক্রান্ত ভয় মনে হয় আমাদের জিনে আছে। সাপ দেখলেই এক ধরনের ভয় আর সুড়সুড়ি কাজ করে। দারুন পোস্ট।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ বেনন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১
তারেক ফাহিম বলেছেন: শঙ্খ গল্প ভালো লাগল।
এদের সম্পর্কে আমার একটু বেশি কৌতুহল যদিও খুব বেশি ভয় পাই।
গত কয়েকদিন আগে নানুর বাড়ীতে এক মামাতো ভাই মারা গেলো তার জানাযা শেষ হয় রাত ১১ টায়। গ্রাম বলে ১০ টার পর সিএনজি বা রিক্সা পাওয়া যায় না, তাই পথ কমানোর জন্য ভিতরের রাস্তা দিয়ে আসছিলাম যদি রাস্তাটিতে অনেক আগে হাটছিলাম, গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে আসতে আমার মোবাইলের প্লাস লাইটের আলোতে দেখতে পা্ই রাস্তাা পার হচ্ছে, ভয়ে থমকে দাঁড়িয়ে থাকি প্রায় ০১ মিনিটের মত অামি তাকাই অাছি, পরবর্তী সে অাপনা-অাপনিই পেছনে চলে যায়, তারপর অামি অাসছি। অনেকটা ভয় পাইছি।