নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
শফিক বিরাট লজ্জার মধ্যে পরেছে।
তানিয়া চলে গেছে। সাড়ে পাঁচ বছর সংসার করার পর তানিয়া চলে গেছে। শফিক অফিস থেকে এসে দেখে বাসায় তার বউ নেই। সব জায়গায় খোজ খবর করে বউ এর কোনো সন্ধান পায়নি সে। কোথায় গেল তানিয়া? এমন না যে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। শফিক ঝগড়ার মানুষ না। তানিয়া রোজকার মতো সকালে নাস্তা বানিয়েছে। শফিক খেয়েছে। তানিয়া বলল, অফিস থেকে ফেরার পথে লবন আর আলু নিয়ে এসো। শফিক অফিস শেষ করে বাসায় ফেরার পথে মনে করে লবন আর আলু নিয়ে বাসায় ফিরেছে। এখন, রাত বারোটা বেজে গেছে। প্রতিদিন দুপুরে একবার তানিয়া ফোন দেয় কিন্তু আজ দেয়নি। অফিসের ব্যস্ততার কারনে শফিকও ফোন দিতে পারেনি। শফিক খালি বাসায় চুপ করে বসে আছে। তানিয়ার মোবাইল বন্ধ। তার খুব কান্না পাচ্ছে। একে একে পরিচিত সবাইকে ফোন করা হয়ে গেছে। শফিক কি থানায় যাবে? ঘরের জিনিসপত্র সব ঠিকঠাক আছে। আলমারিতে তানিয়ার সমস্ত জামা কাপড়, গহনা সবই আছে। শুধু তানিয়া নেই। একটা মানুষ কিভাবে এরকম নাই হয়ে যায়! এটা কিভাবে সম্ভব?
শফিক একটা মোটর সাইকেল কোম্পানীতে চাকরি করে।
তার সংসার বেশ ভালোই চলছিল। তানিয়ার সাথে তার চমৎকার বোঝাপড়া। তানিয়া প্রচন্ড ভালোবাসে শফিককে। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় তানিয়া শফিকের কপালে চুমু দিয়ে দিত। অফিস শেষে বাসায় ফিরতে দেরী হলে তানিয়া বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে। সারাদিনে ফোনে অনেকবার করে কথা বলতো। তারা প্রতিমাসে দুই দিন রেস্টুরেন্টে খেত। বিশেষ দিন গুলোতে শফিক তানিয়ার জন্য গিফট আর একটা ফুলের তোড়া অবশ্যই আনতো। বেতন পেয়ে সবার আগে তানিয়াকে হাত খরচের টাকা দিত। তানিয়া বাজারের লিস্টে যা যা লিখত সবই আনতো। শফিক বাজারে গেলেই সব সময় তানিয়ার প্রিয় মাছ গুলো আনতো। তানিয়া ফল পছন্দ করতো খুব। এজন্য শফিক নানান পদের ফল দিয়ে সব সময় ফ্রিজ ভরে রাখতো। শফিকের আত্মীয় স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশী সব সময় বলতো তানিয়া খুব ভালো মেয়ে। দারুন সাংসারিক। এরকম বউ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সেই সাংসারিক বউ আজ কোথায়? কাউকে কিচ্ছু না বলে উধাও হয়ে গেল? এরকম তো হবার কথা ছিল না।
সাত দিন পর শফিক একটা রেজিস্টারী করা চিঠি পায়।
আসলে চিঠি না, তালাক নামা। তানিয়া শফিককে তালাক দিয়েছে। তালাকের যুক্তিসঙ্গত কোনো কারন দেখায় নি তানিয়া। তালাকের চিঠি পেয়ে শফিকের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তানিয়া এমন কাজ কি করে করতে পারলো! সে বলেছে সারা জীবন সে শফিককে ভালোবাসবে। সুখে দুঃখে পাশে থাকবে। বিয়ের পর-পর শফিকের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তখনও শফিককে ছেড়ে তানিয়া যায়নি। বরং তানিয়া বলেছে, আমাদের অবস্থা বদলাবে। আমরা সুখী হবো। অনেক সুখী হবে। দুঃখের দিন আমাদের বেশী দিন থাকবে না। তবে তানিয়ার একটা কষ্ট ছিল। সে কোনো দিনও মা হতে পারবে না। তানিয়া শফিককে বলতো শফিক তুমি আরেকটা বিয়ে করো। বাচ্চাদের তুমি কত ভালোবাসো। অথচ আমি তোমাকে বাচ্চা দিতে পারবো না। শফিক বলেছে, আমার বাচ্চা লাগবে। শুধু তুমি আমার পাশে থাকো। আমি আর কিচ্ছু চাই না। দরকার নেই আমার বাচ্চা। গত বছর শফিক তানিয়াকে নিয়ে নেপাল থেকে ঘুরে এসেছে।
তানিয়া চলে গেছে, তিন মাস হলো।
ঘরে বাইরে, অফিসে সবাই জেনে গেছে। তানিয়া নেই। অনেকেই মিটি মিটি হাসে। কেউ কেউ করুনার ভাব দেখায়। নানান জন নানান কথা বার্তা বলে। শফিক মাথা নিচু করে তাদের কথা শুনে। পাড়ার দোকানদার পর্যন্ত শফিককে ডেকে বলে, শুনলাম ভাবী নাকি 'আপনারে ছাইড়া চইল্লা গেছে'। তার অফিসে কানাঘুসা চলছেই। একাউন্স ম্যানেজার বলল, শফিক ভাই আপনি নাকি ভাবীকে খুব মারতেন। গালাগালি করতেন খুব, এই জন্য নাকি ভাবী আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে? শফিকের আত্মীয় স্বজন সমানে নানান রসালো গল্প বানাচ্ছে। তারা বলছে, শফিকের যৌন সমস্যা আছে। কেউ বলছে, সব দোষ শফিকের। স্বামী ভালো হলে বউ যায় কি করে? শফিক কাউকে কিচ্ছু বলতে পারে না। নিরবে কাঁদে। আল্লাহর কাছে হাত তুলে বলে, হে আল্লাহ তুমি তো জানো- আমি তানিয়াকে কত ভালোবাসি। তানিয়াকে পাওয়ার পর আমি আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব সব ছেড়ে দিয়েছি। অফিস শেষে সোজা বাসায় চলে আসতাম। কখন তানিয়াকে দেখব। বিয়ের এত বছর পরও তানিয়াকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে থাকতাম।
শফিক তার শ্বশুরের সাথে দেখা করলো।
শ্বশুর মশাই অত্যাধিক ভালো মানুষ। নামাজি মানুষ। নামজ পড়তে পড়তে কপালে স্থায়ী দাগ বসে গেছে। উনি কখনও মিথ্যা বলেন না। উনি শফিককে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদলেন। শফিকের কাছে ক্ষমা চাইলেন। তানিয়ার ভাই বোনেরাও খুব কাদলো। শফিক তার বাসায় ফিরলো। শ্বশুর বলেছিল রাতের খাবার খেয়ে যেতে। শফিক খায়নি। তার খাওয়া, ঘুম সব নাই হয়ে গেছে। শফিক একটা সিগারেট ধরিয়ে বেলকনিতে এসে দাড়ালো। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে শফিক। তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। তানিয়ার কথা, হাসি সব কিছু বড্ড মনে পড়ছে।
ঠিক রাত বারোটায় তানিয়া ফোন করলো। শফিক ফোন ধরলো। তানিয়া বলল, শফিক তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার কোনো দোষ নেই। তুমি চমৎকার একজন মানুষ। খুব ভালো মানুষ। তোমাকে ছেড়ে এসে জীবনে সবচেয়ে বড় পাপ আমি করেছি। এই পাপের ক্ষমা আমি কোনো দিনও পাবো না, জানি। আল্লাহও আমাকে ক্ষমা করবেন না। যাই হোক, তুমি ভালো থেকো। আমি মিজানের কাছে চলে এসেছি। তোমাকে বলা হয়নি কখনও তোমাকে বিয়ের আগে মিজানের সাথে আমার প্রেম ছিল। প্রেমটা খুব গভীর ছিল। আমাদের সম্পর্ক অনেক দূর গড়িয়েছিল। মিজান বিদেশ চলে গিয়েছিল। ও দেশে ফিরে এসেছে। আমি মিজানের কাছে চলে এসেছি একেবারে। শফিক বলল, আমাকে কিছু বলার দরকার নেই। তুমি ভালো থেকো।
০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:০২
রাজীব নুর বলেছেন: হুম।
২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৫০
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: বাচ্চাদের তুমি কত ভালোবাসো। অথচ আমি তোমাকে বাচ্চা দিতে পারবো না। শফিক বলেছে, আমার বাচ্চা লাগবে। শুধু তুমি আমার পাশে থাকো।
এখানে শফিক বলেছে, আমার বাচ্চা লাগবে না। হবে।
সুখের সংসার থেকে হুট করে বউ পালালো ?
হুমায়ুনিয় ধাঁচ, তবে গল্প ভালই হইছে!!
০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৩২
চাঁদগাজী বলেছেন:
গল্প সব সময়ই গল্প; তবে, তানিয়া নিজের কপাল ভেংগেছে, মিজানের ভালোবাসা সে হারাবে
০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:০২
রাজীব নুর বলেছেন: মজান অবশ্যই তানিয়াকে ছেড়ে দিবে।
৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:২৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বউ চলে যাওয়া একটা বিরাট লজ্জাজনক ব্যাপার! লোকজন নানান কথা বলে। এজন্যই বিয়ের আগে খোঁজ নিতে হয় আগে প্রেমটেম ছিল কি না। অবশ্য বিয়ের পর যে প্রেম (পরকিয়া) হবে না এরও নিশ্চয়তা নেই।
০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: দু'দিকেই বিপদ। এর চেয়ে বিয়ে না করার ভালো।
৫| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৩৪
মোঃসালাহ্উদ্দিন বলেছেন: অনবদ্য।।শুভকামনা।।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৭:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৫২
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আমি একদিন তোমার এলাকার চেয়ারম্যান হবো।
আমার কাছে যখন সার্টিফিকেট নিতে আসবে সেখানে লিখে দিবো তুমি একটা ছলনাময়ী।