নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্য জগত

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১৯



শাহেদ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে।
নিজেই এক কাপ চা বানিয়ে বেলকনিতে বসেছে। তার স্ত্রী নীলা এখনও গভীর ঘুমে। বেলকনি থেকেও দেখা যাচ্ছে নীলা ডান পাশ ফিরে, ডান গালে, ডান হাত রেখে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। তাদের নতুন বিয়ে হয়েছে। এখনও ছয় মাস পার হয় নি। শাহেদের এটা দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম বিয়ে করেছিলো রেহানাকে। রেহানা চমৎকার হাসি খুশি একটা মেয়ে ছিলো। রোজ অফিস থেকে ফেরার পথে শাহেদ কিছু না কিছু নিয়ে আসতো রেহানার জন্য। কোনো দিন দশ টাকার বাদাম, কোনদিন দুইটা ভাপা পিঠা, অথবা কোনো দিন পপকন। অতি সামান্য জিনিসে রেহানা খুব খুশি হতো। তার চোখমুখ আনন্দে ঝলমল করতো। পপকন খেতে খেতে বলতো, আজ আমার পপকন খেতে ইচ্ছা করছিলো। তুমি ঠিকই পপকন নিয়ে আসছো। আশ্চর্য! এই তুমি কিভাবে আমার মনের কথা বুঝ!

বাচ্চা হতে গিয়ে রেহানা মারা গেল।
ফুটফুটে একটা মেয়ে হলো। জন্মের সাত ঘন্টা পর মেয়েটাও মরে গেল। রেহানা মারা যাওয়ার সময়ও শাহেদ রেহানার হাত শক্ত করে ধরে ছিলো। রেহানা বলেছিলো সারাকে দেখো। রেহানা তাদের বাচ্চার নাম রেখেছিলো সারা। সারা মারা গেল শাহেদের লোকে। শাহেদের কিছু করার নেই। তার মুখে শুধু আল্লাহর নাম আর চোখে জল। নিজের চোখে স্ত্রী কন্যার মৃত্যু দেখলো। সুন্দর সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেল। আল্লাহ কি সুখ পেলেন একটা সংসারকে তছনস করে দিয়ে? কি লাভ হলো তার? শাহেদের বুঝে আসে না। প্রভু কি তাকে একটু করুনা করতে পারলেন না? এক বছর পর শাহেদের ছোট চাচা শাহেদকে অনেক বুঝিয়ে-সুজিয়ে নীলার সাথে বিয়ের জন্য রাজী করালেন। নীলারও আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের এক বছর পর নীলার স্বামী সুমন মারা যায়। সুস্থ মানুষ। হঠাত তীব্র জ্বর হয়। তিন দিনের জ্বরে নীলার স্বামী সুমন মারা গেলেন। বড় অদ্ভুত মানুষের জীবন। তুচ্ছ একটা ঘটনা ঘটে পুরো জীবন বদলে যায়। সুমনের জন্য আজও নীলার বুকে হাহাকার আছে।

শাহেদ আর নীলা নতুন সংসার বেশ গুছিয়ে নিয়েছে।
সংসার গুছানোর কিছু নেই। রেহানার শাড়ি দিয়ে আলমারি ভরা। এই শাড়ি গুলো নীলা বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়ে। একআধদিন শাহেদ চমকে যায় এটা কে নীলা না রেহানা! গত রাতের ঘটনা। নীলা ঘুমিয়ে পড়েছে। শাহেদ বই পড়ছে। শাহেদ অনেক রাত পর্যন্ত বই পড়ে। এটা তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আজ শাহেদ পড়ছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'বিষবৃক্ষ'। বইটি শাহেদের খুব প্রিয়। উপন্যাসের নায়িকা বিধবা কুন্দনন্দিনী। 'বিষবৃক্ষ' রেখে শাহেদ যায় বেলকনিতে। সে একটা সিগারেট খাবে। শাহেদ ঘরে সিগারেট খায় না। সিগারেটের গন্ধ নীলা একদম সহ্য করতে পারে না। রেহানাও সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারতো না। বেলকনিতে গিয়ে শাহেদ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না। বেলকনিতে রেহানা বসে আছে। তার কোলে সারা। এটা কি করে সম্ভব! রেহানা আর সারা দু'জনেই মারা গেছে। শাহেদ নিজ হাতে তাদের কবর দিয়েছে।

সকালে শাহেদ অফিসে চলে গেল।
গতরাতের ঘটনা সে নীলাকে কিছুই বলল না। শাহেদ ভাবলো নীলা সারাদিন বাসায় একা একা থাকে। বললে হয়তো ভয় পাবে। নীলা চুলায় রান্না বসিয়েছে। আজ সে কৈ মাছ রান্না করবে মটরশুটি আর নতুন আলু দিয়ে। রান্না শেষ করে নীলা গোসল করবে। বিকেলে যাবে নিউ মার্কেট। ঘরের দরকারী কিছু জিনিস পত্র কেনাকাটা করতে হবে। শাহেদ অফিস শেষ করে নিউ মার্কেট চলে আসবে। ছাদে শাড়ি শুকাতে গিয়ে ঘটলো বিপত্তি। ছাদের কোনায় কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। সাদা পাঞ্জাবি পড়া। মাথার লম্বা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। নীলা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখল- সুমন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সুমন তো মারা গেছে! নীলা সমস্ত শরীর শক্ত হয়ে গেল। সে কি দেখছে! এটা কি করে সম্ভব? সুমন মারা গেছে। তাকে কবর দেওয়া হয়েছে গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে। নীলা কোনো রকমে তার ঘরে ফিরে এলো। ভয়ে সে কাঁপছে।

শাহেদ চুপ করে থাকে। নীলাও চুপ করে থাকে।
কেউ কাউকে কিছু বলে না। যেন কিছুই হয় নি। ইদানিং প্রায়ই শাহেদ রেহানা আর সারাকে দেখে। রেহানা সারাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। রেহানা শাহেদের দিকে তাকায় না। নীলা দেখে সুমনকে। সুমন নীলার দিকে তাকায় না। আপন মনে থাকে। যতই প্রিয় মানুষ হোক, তীব্র ভয় তাদের সারাক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখে। মৃত মানুষ বাস্তব জীবনে দেখা কোনো আনন্দময় ঘটনা না। তারা কেউ কাউকে কিছু বলে না। তারা আপন মনে থাকে। তাদের অস্তিত্ব শুধু টের পায় শাহেদ আর নীলা। একদিন নীলা বলল, চলো আমরা এ বাসাটা ছেড়ে দেই। শাহেদ বলল, আমিও এই কথাটাই ভাবছিলাম। এ বাসাটা ভালো লাগে না। ঘর গুলি ছোট ছোট। বেলকনিটা দিয়েও আলো বাতাস আসে না। যেই কথা সেই কাজ। তারা নতুন বাসায় উঠলো।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪৬

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: বাসা চেঞ্জ করে তারা সঠিক কাজই করেছে।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১১

রাজীব নুর বলেছেন: বাসা চেঞ্জ করলে কি হবে?

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫০

রানার ব্লগ বলেছেন: ঘোর টা আর একটু চালাতেন ভালই জমে গেছিলো ।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১১

রাজীব নুর বলেছেন: এটা তো সূচনা।

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: খুব সুন্দর লেখা আপনার
এমন ছোট গল্প লিখুন আরও প্লিজ
তারপর বই হবে একদিন ইনশাআল্লাহ

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১২

রাজীব নুর বলেছেন: আমার দু'টা বই অনেক দিন আগেই বের হয়েছে।

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪৫

নিভৃতা বলেছেন: তারপর কী হলো জানতে চাই। শুরুটা দারুণ হয়েছে।

বিষবৃক্ষ পড়ার ইচ্ছা অনেকদিনের। আজও সুযোগ করে উঠতে পারিনি। দূর্গেশনন্দিনী অর্ধেক পড়ে আর শেষ করতে পারলাম না। কত বই যে পড়ার বাকি রয়ে গেছে। কোনদিন সময় হবে কিনা কে জানে। :(

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: না না বই পড়তে হবেই।
বই পড়ার বিকল্প কিছু নাই।
কমপক্ষে প্রতিদিন ১৫/২০ পাতা হলেও পড়বেন।

৫| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ।

৬| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপন । ভালো থাকুন। বেশ ভালো লাগলো ।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:১০

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আলি ভাই।

৭| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭

নিভৃতা বলেছেন: হুম। পড়তে হবে। কোন বিকল্প নাই।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:১১

রাজীব নুর বলেছেন: আমি প্রতিদিন পড়ি।
এমন অভ্যাস হয়ে গেছে না পড়লে ঘুম আসে না।

৮| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২৮

ইসিয়াক বলেছেন: সুন্দর।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: কি সুন্দর?

৯| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনার লেখার হাত ভালো।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: কি যে বলেন !!!!!!!! লজ্জা লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.