নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিশেহারা

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৬



রাজীব নূর অসুস্থ!
কবিরাজি, অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি কোনও চিকিৎসাই বাকি রাখছে না হিমি। কিছুতেই রাজীব নূরের জ্ঞান ফিরছে না। তার বুকের ভেতরে ক্ষতস্থানটি দুষিত হয়ে গেছে, আর সেই জন্যই তার শরীর সর্বক্ষন জ্বরতপ্ত। মাঝে মাঝে তো সে বিড়বিড় করে কিছু বলে, তা প্রলাপের মতো অসংলগ্ন, ভালো করে শোনাও যায় না। বিচিত্র এই মানুষের শরীর কোন ঔষুধে যে কার কী রকম প্রতিক্রিয়া হবে, আজও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এত ঔষুধেও কেন রাজীব নূরের জ্বর প্রশমিত হচ্ছে না, তা বুঝতেই পারছেন না চিকিৎসকরা। এর চেয়েও গুরুতর রোগীরা এই একই ঔষুধে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ডাক্তার-কবিরাজ যখন আসে, তাদের সঙ্গে থাকে হিমি। কয়েকদিন ধরে পঞ্চগড় থেকে আসা নামকরা এক কবিরাজ একটি নতুন প্রস্তাব দিতে শুরু করেছেন। তিনি অলৌকিকত্বে বিশ্বাসী। তার মতে, কোনও কোনও যোগী, ঋষি, মহাপুরুষদের এমন ক্ষমতা থাকে যে, তারা ইচ্ছা করলে কোনও মৃত ব্যক্তিরও প্রান ফিরিয়ে দিতে পারেন। এরকম একজন সাধু আছেন তেতুলিয়ায়, তার নাম-'দিল এ হরকসী'।

হিমি দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায়।
রাজীব নূর দিনদিন যে রকম শুকিয়ে যাচ্ছে, তাতে যে কোনও সময় হঠাৎ প্রানবায়ু নিবে যেতে পারে। নিজে থেকে তো সে খেতেই পারে না, জোর করেও তাকে প্রায় কিছুই খাওয়ানো যায় না। সে অচেতনের মতন পড়ে থাকে, কোনও ক্রমে তার মুখ খুলে চিনির পানি ও অতি তরল ফলের রস খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়, কিছুটা ভেতরে যায় কি যায় না, আবার বেরিয়ে আসে। এখন কোনও অলৌকিক সংঘটন ছাড়া তাকে বাঁচাবার বোধহয় আর কোনও উপায় নেই। এর মধ্যে একদিন হিমির মনে হলো- এই মানুষটাকে বাঁচিয়ে তুলতে হবেই।অনেক দুঃখ কষ্ট পার হয়ে, অনেক সাধনার পর আমি দেবতার মতন মানুষটিকে পেয়েছি। আমি অনেক ভালোবাসা দিব, খুব ভালোবাসা, আরও… আরও অনেক অনেক ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার টান এড়িয়ে ও যাবে কোথায়? আমার ভালোবাসার কাছে মৃত্যুও হার মানবে। হিমি, হু হু করে কাঁদতে লাগল।

রাতের বেলা হিমি রাজীব নূরের পাশেই শুয়ে থাকে।
ঘুম তার প্রায় আসেই না। গভীর রাতে সব কিছু নিঝুম হয়ে আসে। হিমি কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করে রাজীব নূরের নিশ্বাসের শব্দ।হিমি খুব ভয় পায়। রাজীব নূরের মুখের দিকে চেয়ে দেখে, বুকের ওপর হাত রেখে ওঠা-পড়া ঠিক আছে কিনা বুঝে নেয়। রাজীব নূর হিমির অস্তিত্ব টের পায় না, হিমি তাকে স্পর্শ করলেও সে টের পায় না। রাজীব নূর চেতনাহীন। হিমিকে সে ডেকে পাঠায়নি। যদি তার চেতনা ফিরে আসে, সেকি উন্মুক্ত মনে হিমিকে গ্রহন করতে পারবে? সজ্ঞানে আসার পরই যদি সে বলে, ফাযিল, তুই এখানে কেন এসেছিস? হিমিকে দেখে খুশি হওয়ার বদলে যদি বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে তো ওর আরও ক্ষতি হতে পারে। এক হিসেবে এই রাত্রি গুলিই হিমির সবচেয়ে সুখের সময়। হিমি তার কপালে জলপটি দেয়। কপালের উত্তাপে সেই জলপটি শুকিয়ে গেলে আবার কাপড়ের ফালিটা ভিজিয়ে নিতে হয়। সেই রকম জ্বরের সময় রাজীব নূর বিড়বিড় করে কিছু বলতে শুরু করে। হিমি ব্যাকুলভাবে সেই কথা গুলি শোনার চেষ্টা করে, রাজীব নূরের মুখের কাছে কান নিয়ে যায়, তবুও বোঝা যায় না কিছুই। একটা নাম শুধু অস্পষ্ট শোনা যায়, হিমি! যেন ওই নামের মানুষটাকে সে কিছু জানাবার চেষ্টা করছে। হিমির সমস্ত অন্তরাত্মা তৃষিত হয়ে থাকে রাজীব নূরের মুখে একবার তার নামটি শোনার জন্য। রাজীব নূরের মনের গ্রহনে কি হিমি কোথাও নেই আর?

রাজীব নূরের একটাও মুখের রেখা কুঞ্চিত নয়, যেন তার ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই, ব্যথা নেই, মানুষের সংসারে কোনো কিছুতেই তার কিছু আসে যায় না। আর কতখানি ভালোবাসা দিলে রাজীব নূর মৃত্যুঞ্জয় হতে পারবে, কী করে দিতে হয় সেই ভালোবাসা? সে রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়েছে, সারারাত ঘরের কোনে একটি মোমবাতি জ্বলে, সেই ক্ষীন আলোতে সে বই পড়ার চেষ্টা করে, কিছুক্ষন অন্তর অন্তর সে উঠে এসে রাজীব নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফিসফিস করে বলে চলে যেও না! চলে যেও না!

হিমি আসার পাঁচদিন পর, রাতে রাজীব নূর একবার পাশ ফিরে বলল, উফ্! ঈশ্বর! তারপর দু'বার বলল,পানি পানি!
হিমির সারা শরীর কেঁপে উঠল। এ যে পরিস্কার কন্ঠস্বর! এ পর্যন্ত সে একবারও পানি চায়নি। তবে কি জ্ঞান ফিরে এসেছে?
প্রচন্ড আনন্দ হলে বটে। তবু হিমি ভাবল, সে কি নিজে পানি দিবে, না অন্য কাউকে ডাকবে?
ভোরের দিকে আর একটু বেশি জ্ঞান ফিরল রাজীব নূরের। সে আবার পানি চাইলো। এবার পানি পান করতে করতে চোখ মেলে বলল, তুমি কে?
হিমি, রাজীব নূরের একটা হাত তুলে নিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরল। সে ঘরের কোনে জ্বেলে রাখা মোমবাতিটা নিভতে দেবে না। কিছুতেই না। ঈশ্বর জানেন, হিমি নিজের সবটুকু আয়ু দিয়েও এই মানুষটাকে বাঁচিয়ে তুলতে চায়।
রাজীব নূরের শয্যার পাশে পাষানমূর্তির মতন স্থির হয়ে বসে আছে হিমি, সাদা নীল পাড়, নীল শাড়ি পরা। মাথার চুল খোলা, পরপর রাত্রি জাগরনে চোখ দু'টি মলিন। মনে হয় যেন অনন্তকাল সে সেখানেই বসে থাকবে।
রাজীব নূর হিমিকে আঁকড়ে ধরে, সজ্ঞানে প্রথম কথাটি বলল- হিমি, আমাকে বাঁচাও। হিমির মলিন চোখ জলে ভরে গেল। এই প্রথম খুব দুর্বল বোধ করল সে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫১

বিজন রয় বলেছেন: এই গল্প দিয়ে কি বোঝাতে চাইলেন?

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: কিছুই বুঝাতে চাই নি।
অনেক আগের লেখা। হাতের কাছে পেলাম পোষ্ট করলাম।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: রাজীব নুর,





বাহ... দারুন প্রেমের গল্প হয়েছে।
সাধুর সঞ্জীবনী ছাড়াই হিমির সাধনেই এযাত্রা রাজীব নুর টেসে যাওয়া থেকে বেঁচে গেলো!

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০০

বিদ্যুৎ বলেছেন: চালিয়ে যান। খুব চমৎকার।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী দোয়া করবেন।

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪০

ইমরান নিলয় বলেছেন: লেখার প্যাটার্নটা ভালো হইছে।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া।

৫| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:২৮

ইসিয়াক বলেছেন: একটু পানি খাবো....।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০০

রাজীব নুর বলেছেন: খান। বেশি করে খান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.