নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
আজ বৃহস্পতিবার।
বৃহস্পতিবার দিনটি শফিক কখনই ভালো যায় না। এই ব্যাপারটা শুধু নীলা জানে। নীলা জেনে গেছে গুল্লু কপালে টিপ এবং চোখে কাজল অনেক পছন্দ করে তাই নীলা শফিকের সাথে দেখা করতে গেলেই কপালে টিপ এবং চোখে মোটা করে কাজল দিবেই। নীলা আর শফিকের বয়স প্রায় কাছাকাছি । শফিক রেস্টুরেন্টে বসে চা খাওয়ার চেয়ে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খেতে পছন্দ করে। শফিকের একটা গোপন ইচ্ছা হলো- সে নীলাকে সাথে নিয়ে ঢাকা শহরের সব রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খাবে। নীলা যদি চা ছাড়া অন্য কিছু খায় খাবে ক্ষতি নেই। শফিকের বাবা ছেলেকে প্রায়ই বলেন, দিন দিন তুমি কালো হয়ে যাচ্ছো কেন? রোদে রোদে কম ঘুরবে। শফিক বাধ্য ছেলের মতন বলেছে, জ্বী আচ্ছা। শফিকের যখন পনের বছর তখন শফিক তার বাবার একটা ডায়েরী হাতে পায়। বাবার হাতের লেখা অনেক সুন্দর। সে তার ছেলেকে অত্যাধিক পছন্দ করেন। শফিক এত বড় হয়ে গেছে- তবু বাবা হাত ধরে রাস্তা পার করে দেন।
সকাল দশটায়। চারিদিকে ঝলমলে রোদ।
শফিক দাঁড়িয়ে আছে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে। নীলা আসবে। শফিক আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানতে থাকে তখন নীলার ফোন আসে- হ্যালো, তুমি এসে পড়ছো? রাস্তায় জ্যাম আমার আসতে আরো আধা ঘন্টা দেরী হবে। স্যরি বলে নীলা ফোন রেখে দেয়। শফিকের মাঝে মাঝে হিমুর মতন হতে ইচ্ছা করে। সে হিমুর মতন হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে থাকবে। নীলাকে নিয়ে জোছনা দেখতে শালবনে যাবে। নীলাকে ফোন করে বলবে, তুমি খিচুরী আর গরুর মাংস এবং ইলিশ মাছ ভাজো। আমি রাতে খেতে আসবো। খাওয়া শেষে তোমাকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাবো। নীলা তাড়াহুড়া করে রান্না শেষ করে নীল একটা শাড়ি পড়বে, অনেক সময় নিয়ে চোখে কাজল দিবে। কপালে একটা ছোট্র টিপ পড়বে তারপর ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে শফিকের জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু শফিক আসবে না এবং মোবাইলটাও বন্ধ করে রাখবে। নীলার চোখ দিয়ে দু'টা জল গড়িয়ে পড়বে।
রাত দুইটা। নীলার চোখে ঘুম নেই।
শফিক নীলাকে ফোন করে বলল- একটা গান শোনাও তো। তোমার গান শুনতে শুনতে ঘুমাই।
নীলা বলল, আচ্ছা, অনেকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না কেন বলতো?
শফিক বলল, এখন শীতকাল তাই বৃষ্টি হচ্ছে না। বৃষ্টি দিয়ে তুমি কি করবে?
নীলা বলল, বৃষ্টির দিনে তোমাকে নিয়ে রিকশায় করে ঘুরব আর বৃষ্টিতে ভিজব।
শফিক বলল- সেদিন কি তুমি শাড়ি পড়বে?
জ্বী জনাব শাড়ি পড়ব, চোখে কাজল দিবো, কপালে টিপও পড়বো এবং আপনার যদি খুব ইচ্ছা করে তাহলে আপনি আমাকে একটা চুমুও দিতে পারেন।
শফিক বলল, কই গান তো গাইলে না।
নীলা গান গাইতে শুরু করলো- 'যদি আমার কোনও পালাবার জায়গা না থাকে – দিন, রাত্রি, অন্ধকারে/ তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে।'
শফিক গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। যদি জেগে থাকত তাহলে বুঝতে পারত একটি মেয়ে গান গাইছে কিন্তু তার চোখ জলে ভরা। জলে ভরা চোখ নিয়ে নীলা গাইছে- 'যদি তলিয়ে যাই স্মৃতিতে/ যদি ক্ষয়ে যাই জলে/ যদি থেমে যাই চলাতে/ তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে।
রাতে নীলা না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়।
আর শফিক ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত সব টুকরো টুকরো স্বপ্ন দেখে। একটা স্বপ্ন এই রকম। শফিককে একটা অন্ধকার ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। খুব পানির পিপাসা পায় কিন্তু ঘরে পানি নেই। শফিক পানি পানি করে চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কেউ পানি নিয়ে আসে না। হঠাৎ অন্ধকার থেকে একটি মেয়ে এসে বলে- এই নিন পানি খান। শফিক অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকায়। মেয়েটির মুখ শাড়ির আঁচলে ঢাকা। কিন্তু পায়ে রূপার নূপূর। নূপূরের শব্দে শফিকের ঘুম ভেঙ্গে গেল। তারপর শফিক সারা রাত ব্যালকনিতে বসে ছিল। ফযরের আযানের পর রাস্তায় বের হলো- চা খেতে। শফিক জানে এত ভোরবেলা কোথায় চায়ের দোকান খোলা থাকে। মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শফিক পত্রিকা কিনল- পত্রিকায় পাতা উল্টিয়ে তার তোলা ছবি দেখল। শফিক অনেক পরিশ্রম করে পুরান ঢাকার মুসলিম মাদ্রাসার ছবি তুলেছিল। কর্ণফর্ড নামে একটা কোম্পানী মুসলিম মাদ্রাসার জায়গা দখল করে বিশাল এপাটমেন্ট বানিয়েছে।
সন্ধ্যাবেলা শফিক গেল নীলার কাছে।
যদিও ভর সন্ধ্যায় প্রিয় মানুষদের কাছে যেতে নেই। নীলা অপ্রত্যাশিত এক আকাশ আনন্দ পেল। নীলার ইচ্ছা করছে শফিককে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদতে। মানুষের মনের গোপন ইচ্ছা গুলো কখনই পূরণ হয় না। নীলা বলল, হাত মুখ ধুয়ে আসো- গরুর মাংস ভূনা রান্না করা আছে, গরম গরম পরোটা ভেজে দিচ্ছি- চটপট খেয়ে নাও। শফিক লক্ষ্মী ছেলের মতন খেতে বসল। নীলা তার সামনে বসে আছে। শফিক এত আরাম করে খাচ্ছে- দেখে খুশিতে নীলার চোখ ভিজে উঠল। ভর সন্ধ্যায় চোখের পানি প্রিয় মানুষকে দেখাতে হয় না বলে নীলা শাড়ির আঁচল দিয়ে গোপনে চোখের পানি মুছে নিল। শফিক বলল- নীলা, তুমি গরুর মাংসের ভর্তা বানাতে পারো? নীলা বলল, না পারি না। শফিক বলল- প্রথমে মাংসের টুকরো গুলো তাওয়ায় লবণ মেখে সেঁকে নিতে হয় আধঘন্টা। তারপর তাওয়া গরম হলে মাংস বিছিয়ে ঢেকে দিতে হয়। মাংসের পানি বের হয়ে শুকিয়ে একটু পোড়া পোড়া গন্ধ বের হবে। গরম মাংসকে পাটায় ভালোভাবে থেঁথলে নিবে। যাতে গুঁড়ো গুড়ো আঁশ হয় কাঁচামরিচ চুলায় ঢেলে পেঁয়াজ ও আদা কুচি একটু থেথলে নিতে হবে। তারপর- সব একসঙ্গে মেখে একটি বাটিতে ভালোভাবে চেপে চেপে রেখে দুই/তিন ঘন্টা ফ্রিজেও রাখতে পারো যাতে নষ্ট না হয়। সরিষার তেল দিয়ে খুব ভালোভাবে মাখাতে হবে। মাখাটা আটা মাখার মতো হলে তখন ভর্তা রেডী হবে ।
শফিক নীলার বাসা থেকে বের হলো রাত ১১ টায়।
শীতকাল বলে রাস্তাঘাট ফাঁকা ফাঁকা। একটা রিকশাও নেই। শফিক রাস্তায় হাটা শুরু করলো- যেদিন নীলার সাথে দেখা হয়, সেদিন শফিক একাএকা অনেকক্ষন রাস্তায় এক আকাশ আনন্দ নিয়ে হেঁটে বেড়ায়। শফিক নীলার কথা ভাবতে ভাবতে রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাটছিল- হঠাৎ একদল বখাটে এসে শফিককে দা-বটি ছুরি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলল।
নীলা সকালে ফযরের নামাজ পড়ে পত্রিকা হাতে নিয়ে শফিকের মৃত্যুর খবর জানতে পারে। তখন আকাশে এক ঝাঁক পাখি দূরে কোথাও উড়ে যাচ্ছিল।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০০
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০১
চাঁদগাজী বলেছেন:
এখানেই শফিক শেষ?
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০২
রাজীব নুর বলেছেন: কখন কি হয় বলা যায় না।
৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:২৩
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এই ভাবে শেষ করা ঠিক হয় নাই।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০২
রাজীব নুর বলেছেন: আমার খুব রাগ হলে আমি এই রকমই করি। মেরে দেই।
৪| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:১০
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: কোনো কিছুই শেষ হয় না।আবার নতুন করে শুরু হয়।
৫| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৪
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: চমৎকার লাগল রাজীব দা
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৬| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫৪
ইসিয়াক বলেছেন: শফিক আবার ফিরবে তো?
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই ফিরবে।
এক সফিক মরলে অসুবিধা নাই। আরো সফিক আছে।
৭| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫৬
মুরাদ বেগ বলেছেন: হুমায়ুন স্যারের স্বাদটা পেলাম, রেসিপিটাও স্যারের মতো দিছেন।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:০১
রাজীব নুর বলেছেন: এই কাজ আমি ইচ্ছা করেই করি। খুব সচেতন ভাবে। এজন্য আমার একটুও লজ্জা করে না।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:৩৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: শতভাগ সত্য মানুষের গোপন ইচ্ছাগুলি কখনো পূরণ হয় না। মৃত্যু নামক সত্যটাই দুঃখজনক