নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলো-আঁধারি

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৪৭



যখন ভোর হয় খালের বাম পাশের মাঠের গাছপালার ফাঁকে কত যে তুলকালাম কান্ড ঘটে যায় রোজ- তা কেউ লক্ষ্যই করে না। আকাশ থেকে আলো এসে চারপাশটা ভরে দেয়, ঠিক সেই সময় অদ্ভুত কিছু মেঘের খন্ড ভাসতে ভাসতে এসে যেন বিক্রমপুরের কামারগাও গ্রামে এসে জমা হয়। গাছপালার পাতার ফাঁক দিয়ে অলৌকিক একটা আলো এসে পরে পুরোনো প্রাচীন এই জনপদে। অলৌকিক আলোটা তীরের ধুনকের মতো এসে লাগে প্রতিটা কোনায় কোনায়। প্রতিদিনই এমনটা ঘটে, ঘটে যায়। কেউ তা খেয়ালই করে না। এত সময় কই লোকের? সবাই ব্যস্ত, বড্ড বেশী ব্যস্ত। বাস রাস্তার দোকানপাট এক এক করে সব খুলে যায়।

বালাসুর গ্রামের রফিক মাস্টারের ছেলে তার দোকান খুলে মাইকে হিন্দি গান বাজায়। স্কুল ঘরের পাশেই এক জ্যোতিষী টিয়া পাখি বসে থাকে বহুকাল ধরে। সে যা বলে তাত'ই নাকি হয়! বাস থামছে- লোকজন নামছে, উঠছে, আবার বাস চলে যাচ্ছে ধুলো উড়িয়ে। লোকজন তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার থেকে কিছু কেনাকাটা করছে। এসময় তার খুব খিদে পায়। ইচ্ছে করে দু'টা লাঠি বিস্কুট চায়ে ডুবিয়ে নরম করে চেটেপুটে খেতে। বুড়ো বয়সে জিবটা ভালও মন্দ খাবারের স্বাদ নিতে ব্যকুল হয়ে থাকে।

মানুষের বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারা যায় না।
ইহুদিরা কোরআন রিসার্চ করে যে কত কিছু আবিস্কার করে ফেলেছে! এই যে জগা'দা তার দোকানে কি দারুন নিমকি বানায়। একদম মচমচে, বেশ কয়েকটা কালিজিরার দানাও সাথে থাকে, জিবে পড়লে ভাল'ই লাগে- কি যে স্বাদ! আল্লাহ'ই জানে কি কি দিয়ে যেন বানায়। সে একটা নিমকি হাতে নিয়ে বসে থাকে, যদিও ইচ্ছে করছে তিন কামড়ে শেষ করে দিতে- কামড় দিলেই তো শেষ, হাতে নিয়ে বসে থাকার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ আছে। এই আনন্দ সবাই উপভোগ করতে পারে না, তিনি পারেন। তিনি ধীরে ধীরে এক কামড় বসান নিমকিতে আর এক চুমুক চা। অনেকক্ষন চা আর নিমকি জিব দিয়ে নাড়াচাড়া করে সবটুকু স্বাদ নিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। কি যে ভালও লাগে! তার ইচ্ছা করে এক সবায় ডজন খানিক নিমকি খেয়ে ফেলতে। ইচ্ছা করলেই তো আর খাওয়া যায় না। একটা নিমকি আর এক কাপ চা দশ টাকা। খাওয়া শেষ হয়ে গেলেও অনেকক্ষন পর্যন্ত চা আর নিমকির স্বাদটা মুখে লেগে থাকে। চুপ করে বসে তা উপভোগ করতে হয়। জীবনের আসল উদ্দ্যেশ'ই হলো উপভোগ করা। যতটা পারো উপভোগ করে নাও। মরার পর কি হবে, না হবে তার কিছু ঠিক আছে! তাই যতদিন বেঁচে আছো, উপভোগ করে নাও।

আজকাল তার মাথাটা ঠিক মতোন কাজ করে না।
শুধু ভুলভাল হয়ে যায়। অবশ্য বাড়ি-ঘর, বউ, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয় স্বজন সবার কথা ভুলে গিয়ে অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করাটাও খুব খারাপ ব্যাপার নয়। বালাসুর বাজারটা তার কাছে বেশ লাগে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাইকে গান বাজে, চারিদিকে তুমুল বেচাকেনা হচ্চে, বাস আসছে, যাচ্ছে। চায়ের দোকানে লোকজন বসে চা খেতে খেতে সুখ দুঃখের কথা কইছে। এই বাজারে জগা'র চায়ের দোকানে বসে চারদিকের নানান রকম ঘটনা দেখতে দেখতে সময় বেশ ভালোই কেটে যায়।

পাঠ গুদাম ঘরের সামনে আখ বোঝাই একটা ছোট্র ট্রাকের চাকা কাঁদা মাটিতে ডেবে আছে। পাঁচ ছোকরা মিলে চাকাটা উদ্বারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই রকম নানান দৃশ সে দেখে আর মুগ্ধ হয়। বুদ্ধি দিয়ে মানুষ কত কি বানিয়েছে! প্লেন, মোবাইল, বিশাল নদীর ওপর ব্রীজ। এইসব বসে বসে সে ভাবে আর আপন মনেই একাএকা হাসে। তার বড় ছেলের বউ সুরমা সেদিন তার শাশুড়িকে বলছিল, বাবার মাথার দোষ হয়েছে, একা একা কথা বলে, হাসে। উঠোনে বসে কথা স্পষ্ট শুনেছে সে। সুরমা হয়তো ভুল বলেনি, তা কিছুটা মাথার সমস্যা হলেও হতে পারে। অবশ্য শেষ বয়সে এসে অনেক কিছু চুপ করে সহ্য করে এতে হয়। এটাই অলিখিত নিয়ম।

জগা'র চায়ের দোকানে রোজ কত মানুষ আসে চা আর নিমকি খেতে। খাওয়া শেষে গোলাপ বিড়ি ধরায়। তিনি নিজেও এই বিড়ি রোজ খেতেন। আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার আশায় ডাক্তার আর বউ এর পরামর্শে বিড়ি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। এই গোলাপ বিড়ির গন্ধটা তার খুব ভালও লাগে। মিষ্টি তিতকুটে গন্ধটা মন জুড়িয়ে দেয়। দিনমজুর আর চাষা'রা বিড়ি ধরিয়ে কত রকম গল্প যে করে- শুনতে তার বেশ ভাল'ই লাগে। এক কোনায় বসে তিনি সব খুব মন দিয়ে শুনেন। দেখেন আর ভাবেন।

এক চাষির মুখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামটা শুনে বেশ অবাক হয়েছিলন তিনি। এতক্ষনে আখ বোঝাই ট্রাকের চাকাটা কাঁদা মাটি থেকে তোলা হয়েছে। বেশ বেগ পেত হলো ছোকরাদের। দেখতে দেখতে অনেক বেলা হয়ে গেল। এখন বাড়ি ফেরা দরকার। সব মানূষেরই ফিরতে হয়। এই ফেরা বিষয়টাকে তাকে খুব ভাবায়।

মোবারক মিয়া দশটি টাকা দিয়ে জগা'র দোকান থেকে উঠে হাঁটা শুরু করলেন। তার খুব পেচ্ছাবের বেগ হয়েছে। সময় মতো পেচ্ছাব করতে না পারলে ভালও লাগে না। তাই তিনি আশেপাশে তাকিয়ে তেতুল গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ছেড়ে দিলেন। তার পেচ্ছাব কি সুন্দর সাপের মতো একে-বেকে যাচ্ছে। তিনি বিপুল আনন্দ পেলেন, এই প্রাকৃতিক কর্ম সময় মতো সারতে পারলে বেশ আরাম লাগে। এই আনন্দ অন্য কেউ পায় কিনা কে জানে! ব্যাপারটা যাচাই করার জন্য সে তার বউকে প্রশ্ন করেছিল- সময় মতো মুতে কেমন আনন্দ পাও গো? তার বউ সবজি কুটছিল, প্রথমে কথাটা ভাল করে বুঝতে পারেনি। তারপর বুঝতে পেরে খুব রেগে গিয়ে বলেছিল- এটা কেমন কথা? তোমার মাথা তো দেখছি পুরোই গেছে। ছিঃ

মোবারক মিয়ার আজকাল অনেক কিছু জানতে ইচ্ছা করে কিন্তু কাউকে প্রশ্ন করতে সাহস পায় না। মানূষ বড্ড রেগে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তেজ বাড়তে শুরু করেছে। রোদটা ধনুকের মতোন গায়ে লাগছে। স্কুল মাঠটা পার হওয়ার সময় তার খুব ভয় ভয় করতে লাগলো। আজ স্কুল বন্ধ। মাঠটা কেমন শুনসান। দু'চারটে গরু অলস ভঙ্গিতে বসে আছে শুধু। মনে হচ্ছে তার কানের কাছে কোনো অশরীরী আত্মা ফিসফিস করছে। তার কাঁধের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। এই নিঃশ্বাসটা কার সে চিনতে পেরেছে। বত্রিশ বছর আগের একটা ঘটনা চোখের সামনে যেন মোবারক মিয়া দেখতে পেল।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৫৯

সরলপাঠ বলেছেন: খুঊব ভাল লেগেছে - সুন্দর পর্যবেক্ষণ।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৫৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: গল্প পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।জীবনের কিছু সরল স্বীকারাক্তি আছে যা গল্পের মান বাড়িয়ে দিয়েছে।কোথাও কোন অতিরঞ্জন নাই,ছোট্ট একটি ঘটনা কিন্তু সুন্দর ।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধনবাদ। ভালো থাকুন।

৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৫৪

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: খুব সুন্দর লেখেছেন রাজীব দা-------------------

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভালোবাসা জানবেন।

৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৫

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: অসাধারণ হয়েছে রাজীব স্যার, সাধারণ ঘটনা খুব সুন্দর উপস্থাপন করেছেন।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫০

কল্পদ্রুম বলেছেন: ভালো লাগলো।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.