নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ছবিঃ কালের কন্ঠ।
কয়েকদিন আগে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই।
অস্টেলিয়া প্রবাসী ছেলেমেয়ের বিয়ে। তাঁরা বিয়ে করার জন্যই দেশে এসেছে। সুরভি বিয়েতে যায়নি। সে তার বান্ধবীদের সাথে বের হয়েছে। কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে। বিরাট আয়োজন। একপাশে গান বাজনার আয়োজন। সেন্টারে কমপক্ষে ৫ শ' মানুষ হবে। সবাই গল্প করছে। ছবি তুলছে। অকারনে হাসছে। কেউ কেউ মন দিয়ে গান শুনছেন। খাবার দিবে রাত সাড়ে ন'টায়। এখনও আধা ঘন্টা দেরী আছে। আমি হাতে কফি নিয়ে চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছি। মেয়ে গুলো খুব সুন্দর করে সেজেছে। মনে হচ্ছে তাঁরা বেহেশতের হুর। মুগ্ধ হয়ে তাদের দিকে না তাকানোটাই অন্যায়। হঠাত একটা মেয়েকে দেখলাম। দেখে বুকের মধ্যে একটা গভীর ধাক্কা খেলাম। মেয়েটাকে আমি চিনি। খুব ভালো করেই চিনি। মেয়েটার নাম সাদিয়া।
সাদিয়ার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিলো বিশ বছর আগে!
সাদিয়াকে দারুন সুন্দর দেখাচ্ছে! অথচ সে খুব সাজেনি। সাজ বলতে চোখে কাগল আর কপালে একটা টিপ। মুখটা কেমন বিষন্ন-বিষন্ন! তবে শাড়িটা পড়েছে খুব সুন্দর করে। পুরো হল জুড়ে অসংখ্য নারী পুরুষ। অথচ আমি তাকিয়ে আছি সাদিয়ার দিকে! সাদিয়া কি আমাকে চিনতে পারেনি? যেহেতু আমি তাকে চিনেছি, তাহলে সে আমাকে চিনবে না কেন? সে আমাকে নিজের হাতে চা বানিয়ে দিয়েছে। ভোর বেলা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছে। আম গাছে উঠে, আম পেরে খাইয়েছে। পুকুর ঘাটে বসে কত গল্প করেছি। কত সৃতি আমাদের! আমার জীবনে আমি প্রথম যে মেয়েটার হাত ধরি তার নাম সাদিয়া। যে মেয়েটাকে দেখে ভালো লাগতো তার নাম সাদিয়া। আমার বন্ধু মিজান সাদিয়াকে নিয়ে দুই শ' কবিতা লিখেছে। আমি কিচ্ছু ভুলিনি। সব আমার মনে আছে।
তখন আমার বয়স উনিশ।
অথচ চোখে মুখে একটা কিশোর ভাব। দাঁড়ি ভালো করে গজায়নি। কলেজে পড়ি। কলেজে আমার বন্ধু ছিলো- মিজান। মিজান গ্রাম থেকে এসেছে। মিজানের বাড়ি ফরিদপুর। রসুলপুর গ্রাম। কলেজে ম্যাগাজিনেড় লেখার জন্য লেখা সংগ্রহ করার দায়িত্ব পড়লো আমার উপর। মিজান একটা দীর্ঘ কবিতা লিখেছে। সেই কবিতা ৭০ লাইন। আমি মিজানকে বললাম, সুন্দর কবিতা লিখেছো। কিন্তু এই কবিতা ছাপাতে ২/৩ পাতা লেগে যাবে। তুমি কবিতাটি আর একটু ছোট করে দাও। মিজান বলল, আমার কবিতা ছাপানোর দরকার নেই। আমার কবিতা আমাকে ফেরত দিয়ে দাও। মিজানের কবিতার প্রথম দুই লাইন এরকম ছিলো- ''মলিন করো না সুন্দর মুখখানি, আমার ভীষণ অস্থির লাগে!/ বিশ্বাস আর অবিশ্বাস দূরে সরিয়ে, আসো দুজন বাঁচি আনন্দ নিয়ে''। যাই হোক, মিজানের সাথে আমার গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। সামনে কলেজ বন্ধ। লম্বা ছুটি। পুজো এবং ঈদ এর একসাথে ছুটি। মিজান বলল, তুই আমার সাথে আমাদের গ্রামে চল। ঈদের আগে চলে যাবি।
আমি মিজানের সাথে গেলাম ফরিদপুর।
ফেরী পার হওয়ার পর পড়লাম বিরাট বিপদে। হঠাত আকাশ কালো হতে শুরু করলো। অথচ কিছুক্ষন আগেও রোদ ছিলো। আমাদের কপাল খারাপ! হঠাত শুরু হলো ঝড়। বিরাট ঝড়! আমাদের চোখের সামনে পটপট দু' তিনটা গাছ ভেঙ্গে পড়লো। একটা গরু মাঠে ঘাস খাচ্ছিলো, সে উড়ে গিয়ে পড়লো পুকুরের ঘাটলার সামনে। আমি আর মিজান দুজন দুজনকে ধরে রেখেছি শক্ত করে। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ঝড় কমছেই না। ভয়াবহ অবস্থা! আমার আর মিজানের ব্যাগ ঝড়ে দূরে কোথাও উড়ে গেলো। টানা বিশ মিনিট ঝড় হলো। চারপাশ লন্ডভন্ড অবস্থা! ঝড়ের পর শুরু হলো বৃষ্টি! এরকম বৃষ্টি জীবনে দেখি নাই। ঝড় বৃষ্টি পার হয়ে একসময় মিজানের বাড়িতে এসে পৌঁছলাম। মিজানের বাবা মা দৌড়ে এলেন। আমাকে আর মিজানকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এরকম ঝড়ের মধ্যে যে আমরা বেঁচে আছি, এটাই বিস্ময়কর! আশেপাশের বাড়ির মানুষজন আমাদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন!
রাতে আমি আর মিজান গভীর ঘুম দিলাম।
মিজান আমার আগেই ঘুম থেকে উঠে গেছে। সকালে দেখি এক মেয়ে আমার জন্য চা নিয়ে এসেছে। মেয়েটা সহজ সরল সুন্দর। এলোমেলো করে শাড়ি পরা। মেয়েটা বলল, চা নিন। এই মেয়ের নাম সাদিয়া। ভেবেছিলাম মিজানের গ্রামের বাড়িতে দু দিন থাকবো। অথচ থেকে গেলাম টানা দশ দিন। সাদিয়া না থাকলে দুই দিনের বেশি থাকতাম না। সাদিয়া মিজানের কেমন যেন আত্মীয় হয়। সাদিয়ারা ঢাকায় থাকে। বেড়াতে এসেছে। মিজান সাদিয়াকে কখনও দেখেনি। মিথ্যা বলব না, মেয়েটাকে আমার খুব ভালো লেগে যায়। আমার ধারনা সাদিয়াও আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু ঝামেলা পাকালো বন্ধু মিজান। মিজান একদিন একটা কাগজ আমার হাতে দিলো। দেখলাম কাগজে কবিতা লেখা। মিজান সাদিয়াকে নিয়ে কবিতা লিখেছে। গভীর ভালোবসার কবিতা। ভীষন দুঃখ লাগলো। কষ্ট হলো। বন্ধুর কথা ভেবে সাদিয়ার সাথে সম্পর্ক হালকা করে ফেললাম। মিজান খুবই ভালো একটা ছেলে। আমি মিজানকে কষ্ট দিতে পারবো না। ঢাকা ফিরে এলাম এবং সাদিয়ার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখলাম না।
বিশ বছর পর সাদিয়ার সাথে দেখা।
সাদিয়া আমার সাথে কোনো কথা বলে নি। তাই আমিও নিজ থেকে সাদিয়ার সাথে কোনো কথা বলিনি। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আমি বাসায় ফিরবো। নতুন স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। তখন সাদিয়া আমাকে একটা কাগজে তার মোবাইল নম্বর লিখে আমায় দিলো। দুইদিন পর আমি সাদিয়াকে ফোন দেই। জানতে পারি- মিজানের সাথে তার বিয়ে হয়নি। মিজান সড়ক দূর্ঘনায় মারা যায়। সাদিয়ার স্বামী বিদেশ থাকে। বিদেশে সে আরেকটা বিয়ে করেছে। বিদেশ থেকেই সাদিয়াকে সে তালাক দিয়েছে। সাদিয়া এখন তার মামা মামীর সাথে থাকে মোহাম্মদপুর। সে একটা মেয়েকে দত্তক নিয়েছে। মেয়েটার এখন দশ বছর বয়স। সাদিয়া একটা কলেজে পড়ায়। এই হলো সাদিয়ার বর্তমান অবস্থা। মিজান সাদিয়াকে নিয়ে লেখা দুই শ' কবিতা থেকে একশ'' কবিতা বাছাই করে একটা কবিতার বই প্রকাশ করে। বইটা সে আমাকে উতসর্গ করে। বইটার নাম 'প্রজাপতি'।
১০ ই জুন, ২০২২ রাত ১:০১
রাজীব নুর বলেছেন: আমি আপনার চেয়ে চার পাঁচ বছরের ছোট হবো।
আমার লেখা অগোছালো। আপনি সুন্দর লিখেন। আপনার লাইন সোজা। আমার লাইন বেকা ত্যাড়া।
২| ১০ ই জুন, ২০২২ রাত ১:০২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এটা কি গল্প না বাস্তব ঘটনা?
এখন আপনার বয়স কত?
কয়েক দিন আগে বলেছিলেন
আপনার বয়স এখন ৩৫! সঠিক?
স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো।
১০ ই জুন, ২০২২ রাত ১:০৯
রাজীব নুর বলেছেন: না গল্প নয়।
আমার বয়স বেশি না। এখনও আমি হাফ প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াই। থুঁতনিতে ৫/৭ টা দাঁড়ি সাদা হয়ে গেছে।
৩| ১০ ই জুন, ২০২২ রাত ১:০৫
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বইটির প্রচ্ছদের ছবি দেখতে ইচ্ছে করছে।
সাথে দুই একটি কবিতাও দিয়েন।
১০ ই জুন, ২০২২ রাত ১:১০
রাজীব নুর বলেছেন: আমি আগামী সপ্তাহে সাদিয়ার বাসায় যাবো। বইটি তার কাছে থাকার কথা।
৪| ১০ ই জুন, ২০২২ রাত ১:৫১
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
উনিশ বছরে আপননি মিজানকে কস্ট দেননি,মিজানের মৃত্যুতে সাদিয়ার কস্ট জেনে পোস্ট দেন।
১০ ই জুন, ২০২২ সকাল ১১:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: সেসব অনেক কথা। তাই কিছু বলতে চাই না।
৫| ১০ ই জুন, ২০২২ রাত ২:১৮
গরল বলেছেন: এরকম আর কত জনকে আপনার ভালো লেগেছিল সেই সময় বা তার পরে? ১৯ বছর বয়সে তো আমি যে মেয়েকে দেখতাম তাকেই ভালো লাগতো।
১০ ই জুন, ২০২২ সকাল ১১:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: সেই সময় টা সুন্দর ছিলো। পবিত্র ছিলো। যুগটাও ভালো ছিলো।
৬| ১০ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:৪২
শেরজা তপন বলেছেন: গল্প না সত্যিই সত্যি?
১০ ই জুন, ২০২২ সকাল ১১:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: ধরে নিন গল্প। অথবা সত্যি ।
দুটাই তো সমান।
৭| ১০ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১:০৫
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: একবার বসে আমরা চা খাচ্ছিলাম; একজন এসে আমাদের মধ্যের একজনকে জিজ্ঞাসা করলো যে কি খাস? সে উত্তর দিলো রুটি। আবার প্রশ্ন আসলো কি দিয়ে খাস? উত্তর দিলো 'ছা দিয়া' খাই। কিন্তু এটা ক্রমে আমাদের মধ্যে 'সাদিয়া খাই' হয়ে গেলো। কেউ কাউকে কি করছিস জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসতো 'সাদিয়া খাই'।
১০ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:০০
রাজীব নুর বলেছেন: ফানি।
৮| ১০ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:২৪
কেমিক্যাল বাবু বলেছেন: গল্প গুলো মনে হয় এমনি হয়, গল্পের শেষে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল!
গল্পটা অনেক সুন্দর হয়েছে।
১০ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:০১
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৯| ১০ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৫২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সাদিয়ার সাথে প্রথম দেখা ১৯ বছর
বয়সে, পরের বার দেখা ২০ বছর পর
তার মানে আপনার বয়স এখন ৩৯!
তা হলে ৩৫ বলেন কেনো?
দাড়ি অনেকের বাতাসেও পাকে,
ব্যাপার না। সাদিয়ার জন্য সমবেদনা
রইলো।
১০ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:০২
রাজীব নুর বলেছেন: বয়স হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে এটা ভাবতে কষ্ট হয়।
১০| ১০ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:১৩
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ছবিতে মেয়েটি বেশ সুন্দর।
১০ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: পিঠ দেখেই বলে দিলেন!!!
১১| ১০ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:৩৭
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: আপনি বিশ্বপ্রেমিক♥️
১১ ই জুন, ২০২২ রাত ১২:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: না ঠিক তা না।
১২| ১১ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:৩৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
লেখক বলেছেন: পিঠ দেখেই বলে দিলেন!!!
গোফরান ভাই পাক্কা জহুরী!
পিঠ দেখেই বলে দিতে পারেন
কোনটা হীরে আর কোনটা কাঁচ!
১১ ই জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা---
বুদ্ধিমান লোক।
১৩| ১২ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:৩৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: মিজান তার কবিতার বই এর নামটি সুন্দর দিয়েছিলেন।
১২ ই জুন, ২০২২ দুপুর ২:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: মিজান কে হারিয়ে আমি একজন ভালো বন্ধু হারিয়েছি।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুন, ২০২২ রাত ১২:৫৫
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
পোস্ট পরে বুঝতে পারলাম আপনি আমার চেয়ে ২ বছরের ছোট।
তবে, ব্লগার হিসেবে আপনি আমার চেয়ে অনেক পরিণত।