নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৭



প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক
তৃতীয় পর্বের লিঙ্ক
চতুর্থ পর্ব

মাইকেল মধুসূদন লন্ডন গিয়েও শান্তি পেলেন না।
তিনি লন্ডন গিয়েছেন ব্যারিস্টারি পড়তে। যাওয়ার আগে তার বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব যার কাছে দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই লোক সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিয়েছেন। অথচ কথা ছিলো- প্রতিমাসে সে মাইকেল কে লন্ডনে চার শ' টাকা পাঠাবেন এবং কলকাতায় থাকা তার স্ত্রীকে প্রতিমাসে দেড় শ'' করে টাকা দিবেন। মাইকেল লন্ডনে উন্নত জীবনযাপন করতে গিয়ে বিরাট বিপদে পড়ে গেলেন। আজন্ম বিলাসিতা করা মানুষ তিনি। লন্ডনে গিয়ে অবস্থা এমন হয়েছে যে তার লেখাপড়াই প্রায় বন্ধ। উপায় না দেখে মাইকেলে বন্ধুদের কাছে চিঠি লিখে সাহায্য চাইলেন। কোনো বন্ধু সেই চিঠির জবাব দিলো না। এদিকে কলকাতায় থাকা মাইকেলের স্ত্রী বারবার চিঠি দিচ্ছে সংসারে অভাব। বাচ্চারা না খেয়ে আছে। মাইকেল হয়ে গেলেন পাগলের মতো।

শেষমেশ কোনো উপায় না দেখে মাইকেল-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে একটা চিঠি দিয়ে জানালো তার টাকার প্রয়োজন। নইলে তার ব্যারিস্টারি পাশ করা হবে না। বিদ্যাসাগর চিঠি হাতে পেয়েই সাথে সাথে ধারধেনা করে মাইকেল কে টাকা পাঠিয়ে দিলেন। বললেন, অবশ্যই ব্যারিস্টারি পাশ করতে হবে। টাকা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। বিদ্যাসাগর বেঁচে আছেন। মাইকেল ব্যারিস্টারি পড়ায় মন দিলেন। ঠিক এমন সময় কলকাতা থেকে তার স্ত্রী কোনো রকমে জাহাজের ভাড়া ব্যবস্থা করে দুই সন্তান নিয়ে লন্ডন এসে হাজির হলেন। বাসা ভাড়া, চারজন মানুষের খাওয়া, ব্যারিস্টারি পড়ার খরচ। চিন্তায় চিন্তায় মাইকেল প্রায় কাঁত। আবার মদ খাওয়ার পরিমান বাড়িয়ে দিলেন। যদিও বিদ্যাসাগর তাকে অনুরোধ করেছিলেন মদ খাওয়া বন্ধ করো। দামী জিনিসপত্র যা ছিলো সবই বিক্রি করা হয়ে গেছে। এখন আর বিক্রি করার মতোন কিছু অবশিষ্ঠ নেই। অন্যদিকে বিদ্যাসাগর মাইকেল কে নিয়মিত টাকা পাঠিয়েছেন। ব্যারিস্টারি পাশ করতেই হবে।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামে এক ছোকরা-
'দুর্গেশনন্দিনী' নামে একটা বই লিখে ফেললেন। শিক্ষিত মহলে সেই বই নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনার ঝড় চলতে থাকলো। একদল বলল, এটাই বাংলা সাহিত্যের সার্থক উপন্যাস। এরকম আর কেউ লিখতে পারেননি। 'দুর্গেশনন্দিনী'তে আছে ভালোবাসা, আছে রাজনীতি, কূটনীতি। আর আছে একটুখানি কমেডি। হাজার হাজার কপি বিক্রি হয়ে গেলো- 'দুর্গেশনন্দিনী'। এরপর বঙ্কিমচন্দ্র লিখলেন 'কপালকুন্ডলা' নামে এক উপন্যাস। লোকজন কপালকুন্ডলা পড়ে অনেক খুশি। সবাই বলাবলি করছে এরকম উপন্যাস আর কেউ লিখতে পারেনি বাংলায়। বঙ্কিমচন্দ্র যাদু জানেন। তার লেখা পড়লে মোহবিষ্ঠ হিয়ে যেতে হয়। মাইকেলের লেখার চেয়েও বঙ্কিমচন্দ্র অনেক বেশী ভালো লিখেন। কপালকুন্ডলা উপন্যাসের দুটা লাইন এই রকমঃ ''তুমি অধম- তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন''? ''পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?'' লোকজন মাইকেলকে ভুলে গেলো। বঙ্কিমচন্দ্র কে নিয়ে নাচানাচি শুরু করলো।

মাইকেল লন্ডন থেকে প্যারিস গেলেন।
প্যারিসে লন্ডের চেয়ে খরচ কম। প্যারিস গিয়ে মাইকেল অনুভব করলেন, অনেকদিন দূরদেশে পড়ে আছি। এবার নিজ দেশে যাওয়া দরকার। স্ত্রী পুত্র, কন্যা রেখে মাইকেল কলকাতায় ফিরলেন। একমাত্র সম্বল ব্যারিস্টারী ডিগ্রী। কলকাতার সবচেয়ে দামী হোটেলে উঠলেন। কারন তার বাড়ি, জমি দখল হয়ে গেছে। পুরনো বন্ধুদের খুঁজে খুঁজে মাইকেল তাদের সাথে দেখা করলেন। সেই সাথে চলতে থাকলো ওকালতি। এবং ধীরে ধীরে আবার মদের প্রতি আসক্তি বাড়িয়ে তুললেন। পরিচিত লোকদের মামলা লড়তে থাকলেন একদম ফ্রি। যদি কেউ টাকা নিতে খুব অনুরোধ করে তাহলে মাইকেল বলেন কয়েক বোতল মদ কিনে দিয়ে যাও। টানা দুই বছর মাইকেল হোটেলে পার করে দিলেন। এবং ওকালতি বন্ধ করে দিলেন। তিনি বাংলায় ফিরেছেন অথচ তিনি বাংলায় লিখতে পারছেন না। লিখতে না পারার কষ্ট ভীষন কষ্ট। রাগে দুঃখে মাইকেল ওকালতি বন্ধ করে দিলেন।

প্যারিস থেকে মাইকেলের স্ত্রী ফিরে এলেন।
কারন, মাইকেল তাদের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আবার দেখা দিলো মাইকেলের জীবনে অভাব। এদিকে মাইকেল কলম হাতে নিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু কিছুই লিখতে পারেন না। তার হাতে লেখা আসে না। না লিখতে পারার দুঃখে মাইকেল প্রচুর মদ খেতে থাকলেন। সারারাত কাগজ কলম নিয়ে বসে থাকেন কিন্তু কিচ্ছু লিখতে পারেন না। দুঃখে কষ্টে মাইকেল সারারাত মদ খেতে থাকেন। অজ্ঞান হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত মদ খেয়ে যান। সংসারে অভাব। দেখতে দেখতে মাইকেল অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অন্যদিকে মাইকেলের স্ত্রীও ভীষণ অসুস্থ। চিকিৎসার খরচের টাকাও নেই মাইকেলের কাছে। কয়েকজন বন্ধু সামান্য কিছু টাকা দিয়েছে, সেই টাকা অতি সামান্য টাকা। সেই টাকা দিয়ে মাইকেল মদ খেয়েছে। টাকার অভাবে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মাইকেল মারা গেলেন।

(শেষ পর্ব সমাপ্ত।)

তথ্যসুত্রঃ
১। তৎকালীন বঙ্গ সমাজ- শিবনাথ শাস্ত্রী
২। কলিকাতার কথা- প্রমথনাথ মল্লিক
৩। বিদ্যাসাগর ও বাঙ্গালী সমাজ- বিনয় ঘোষ
৪। পিতাপুত্র- অক্ষয়চন্দ্র সরকার।
৫। কলিকাতা দর্পন- রাধানাথ মিত্র
৬। মাইকেল মধুসুদনের পত্রাবলি- সুশীল রায়
৭। মধুসৃতি- নগেন্দ্রনাথ।

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৩৩

সোনাগাজী বলেছেন:



কবি এ্যালকোহোলিজমে ভুগেছিলেন।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: নেশা না করলে কবির জীবন অন্যরকম হতো।
তার নেশা ছিলো দুই রকমেরঃ
এক, ইংরেজদের সাথে পাল্লা দিয়ে সাহিত্য রচনা করতে চেয়েছিলেন। ওদের সমতুল্য হতে চেয়েছিলেন।
দুই, তার জীবনের স্থায়ী লক্ষ্য সব সময় একরকম ছিলো না।

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫৬

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: কবি কষ্টে দুঃখিত হলাম। জাতীয় কবির শেষ জীবনও সুবিধা জনক ছিল না। তথাপি কবিরা কবিতা লেখেন। কেউ পড়ে কি পড়ে না সে বিষয়ে কবিদের কোন পরোয়া নেই।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: কবি নজরুল শেষ জীবনে বরং ভাল ছিলো। সেই সময় শেখ মুজিব তার জন্য অনেক করেছেন।

৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫৭

শেরজা তপন বলেছেন: অতি সরলভাবে লিখেছেন।

বহুভাষাবিদ সু-পণ্ডিত সৈয়দ মুজতবা আলীও প্রচুর মদ্যপান করতেন;
তবুও শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে পানীয়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অবশ্যম্ভাবী’ এই ভণ্ডামিকে তিনি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মদ্যপান করলে ভাল লেখা বেরয় এ কথা আমি বিশ্বাস করিনে।
মেঘনাদ কাব্য রচনার সময় মাইকেল ক্লান্তি দুর করার জন্য অল্প খেতেন, শেষের দিকে যখন মাত্রা বেড়ে গেল, তখন দু-চারপাতা লেখার পরেই বেএক্তেয়ার হয়ে ঢলে পড়তেন-তার গ্রন্থাবলী সেইসব অসমাপ্ত লেখায় ভর্তি। এবং এর চেয়েও বড় কথা আমি মাইকেল নই। একখানা মেঘনাদ লিখুন; তারপর না হয় মদ খেয়ে লিভার পচান কেউ আপত্তি করবেনা।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০২

রাজীব নুর বলেছেন: আমি সরল মানুষ। সহজ সরল জীবনযাপন করি।

মজতুবা আলী অতি সামান্যই মদ পান করতেন। তবু বিশেষ বিশেষ দিনে। কিন্তু মাইকেল প্রতিদিন মদ খেতেন। সকাল, দুপুর এবং সারারাত।
ভাল লেখার জন্য মাইকেল মদ খেতেন না। মাইকেল ছাত্র জীবন থেকেই মদ খেতেন।

৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:২৩

কামাল১৮ বলেছেন: সব কিছুই প্রায় ভাসা ভাসা।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: এই ধারাবাহিকটি খুব এলোমেলো ও অগোছালো হয়েছে। এর কারন আমার কন্যা। সে আমাকে লেখার সময় বিরক্ত করে। করেই যায়।
অবশ্য সব পর্ব গুলো একসাথে পড়লে ততোটা ভাসা ভাসা লাগবে না।

৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৫০

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


মাইকেল মগজ খাটিয়ে মেঘনাদবধ লিখেছেন,সনেট লিখেছেন; মদ ছাড়তে পারেনি।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: মাইকেলের বাপ যদি ছোটবেলা থেকেই মাইকেল কে মাইরের উপর রাখতেন, তাহলে মাইকেল এমন ছন্নছাড়া হতে পারতেন না। মাইকেলের মা বাবা মাইকেল কে খু বেশি আদর ভালোবাসা দিয়েছেন এবং বিলাসিতায় ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। এই কারনে মাইকেল এলোমেলো জীবনযাপন করেছেন।

৬| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৫২

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


মাইকেল মগজ খাটিয়ে মেঘনাদবধ লিখেছেন,সনেট লিখেছেন; মদ ছাড়তে পারেনি।

৭| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:৪৮

জগতারন বলেছেন:
কামাল১৮ বলেছেন:
সব কিছুই প্রায় ভাসা ভাসা।

সহমত !


কোন ব্যাক্তির বিষয় লিখতে আরও ধারাবাহিক বর্ননা বিষদভাবে লিখলে ভালো হয়।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: সহমত।

৮| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৩:২৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অত্যাধিক ভোগ-বিলাসিতার কারণেই মধুসূদন শেষকালে এভাবে মরেছেন।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: রাইট।

৯| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:১৫

রানার ব্লগ বলেছেন: যারা জিনিয়াস তাদের জীবন কখনোই সুখের হয় না কারন জিনিয়াসদের বোঝার মতো মানুষ তার আশেপাশে থাকে না।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:২১

রাজীব নুর বলেছেন: ইয়েস। ইউ রাইট।

১০| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৫:১০

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: তিনি Captive Lady লিখেছেন, বঙ্গ ভাণ্ডারে বিবিধ রতন লিখেছেন, আরো লিখেছেন মহাকাব্য। আর কত!

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:২১

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ। রাইট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.