নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
গ্রামের এক স্কুলে ক্লাশ চলছে।
শিক্ষক স্কুলে নতুন জয়েন করেছেন। ছাত্ররা খুব চ্যাঁচামেচি করছিলো। শিক্ষক বললেন, চ্যাঁচামেচি বন্ধ করো। তোমরা একটা রচনা লিখো তোমাদের গ্রাম নিয়ে। ছেলেরা লিখতে শুরু করলো গ্রাম নিয়ে। তখন এক ছাত্র বলল, আমি গ্রাম নিয়ে লিখব না। আসুন আপনি আর আমি মিলে একটা উপন্যাস লিখি। উপন্যাসের নাম 'চঞ্চলা'। শিক্ষক বললেন, ফাজলামো ছাড়ো। সেই ছাত্র পুরো গ্রামের সবাইকে জানিয়ে দিলো- আমি আর শিক্ষক মিলে একটা উপন্যাস লিখব। এদিকে শিক্ষক গল্প উপন্যাস লিখতে জানেন না। গ্রামের লোকজন শিক্ষককে দেখলেই জানতে চায়- আপনাদের উপন্যাস কবে বের হচ্ছে? রাগে দুঃখে শিক্ষক একটা গল্প লিখে ফেললেন। গল্পের নাম 'উপেক্ষিতা'। গল্পটি সকলের পছন্দ হয়ে গেলো।
সময়টা তখন ১৮৯৪ সাল।
ভারতবর্ষে চলছে ব্রিটিশদের শাসন। পশ্চিম বঙ্গে জন্ম নিলেন একজন লেখক। লেখকের নাম- 'বিভূতিভুষণ বন্ধোপাধ্যায়। 'পথের পাচালী'র মতো উপন্যাস লিখে তিনি জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলেন। দেশ বিদেশের সাতটা ভাষায় এই উপন্যাস প্রকাশিত হলো। এই লেখকের আরেকটা উপন্যাস আছে 'ইছামতী'। আমার খুবই প্রিয়। সকলের 'ইছামতী' বইটি পড়া উচিৎ। ১৯৫১ সালে 'ইছামতী' উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। এই সমাজ শুধু যোগ্য ও দক্ষ মানুষদের মনে রাখে। যেমন বিভূতিভূষনের আরো চারজন ভাইবোন ছিলো। তাদের কেউ চিনে না। জানে না। অথচ বাংলা সাহিত্যে বিভূতি কে ছাড়া একদম অসহায়। বিভূতি যখন অষ্টম শ্রেনীতে পড়েন তখন তার পিতা মারা যান।
১৯১৯ সালে বিভূতি গৌরী নামে এক কিশোরীকে বিয়ে করেন।
ভাগ্য খারাপ। বিয়ের এক বছর পর গৌরী কালা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আচমকা তীব্র অপ্রত্যাশিত আঘাতে বিভূতি জীবন কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়। একাএকা কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। এই সময় তার সাথে দেখা হয়- এক বাউলের। বাউল বললেন, তুমি হাতে কলম তুলে নাও। লিখো। যত লিখবে, তোমার জ্বালা যন্ত্রনা তত কমতে থাকবে। বিভূতি লিখতে শুরু করলেন। জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলেন। প্রথম স্ত্রী গৌরীর মৃত্যুর ২১ বছর পর বিভূতি আবার বিয়ে করলেন। পাত্রীর নাম- রমা দেবী। রমা দেবী বিভূতির লেখার দারুন ভক্ত ছিলেন। নিয়মিত চিঠি লিখতেন লেখককে। রমা দেবীই লেখককে প্রথম বিয়ের কথা বলেন। রমা দেবীকে বিয়ের করার সাত বছর পর তাদের প্রথম সন্তান দুনিয়াতে এলো। সন্তানের নাম রাখলেন- তারাদাস। ডাক নাম বাবলু।
বিভূতি তার বাড়ির নাম রাখেন গৌরীকুঞ্জ। গৌরী তার প্রথম স্ত্রী।
বলা হয়ে থাকে 'পথের পাঁচালী' বিভূতিভূষণের শ্রেষ্ঠ রচনা। এই লেখকের প্রতিটা লেখায় গাছপালা, নদী, পোকামাকড়, দারিদ্র, আশা, স্বপ্ন, মধ্যবিত্তদের জীবন, গ্রামের পরিবেশ বনর্না থাকে অতি নিখুঁত ভাবে। এই লেখক ৫৬ বৎসর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন। বিভূতিভূষন কখনও সাহিত্যিক হতে চান নি। বিএ পাশ করে স্কুলে চাকরী পেয়ে যান। তিনি চাকরীতে মন দিলেন। ভাগলপুরে বিশাল এক জঙ্গল ছিলো। এই জঙ্গল দেখে বিভূতিভূষনের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। লিখে ফেললেন আরেক বিখ্যাত উপন্যাস 'আরণ্যক'। এটি ছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চতুর্থ উপন্যাস। 'আরণ্যক' উপন্যাসে লেখক লিখেছেন- প্রকৃতি তার নিজের ভক্তদের যা দেন তা অতি অমূল্য দান। অনেকদিন প্রকৃতির সেবা না করিলে কিন্তু সে দান মেলে না। আর কি ঈর্যার স্বভাব প্রকৃতিরানীর— প্রকৃতিকে যখন চাহিব, তখন প্রকৃতিকে লইয়াই থাকিতে হইবে, অন্য কোনো দিকে মন দিয়াছি যদি অভিমানিনী কিছুতেই তার অবগুন্ঠন খুলিবেন না।
'তালনবমী' নামে বিভূতির একটা ছোট গল্প আছে।
অসাধারন এক গল্প। এই গল্প পড়ে আমার মতো মানুষের চোখে পর্যন্ত পানি চলে এসেছিলো। টানা ২১ বছর বিভূতি লেখালেখি করেন। এই ২১ বছরে লেখক ৫০ টি বই লিখেন। এই ৫০ বইই বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। ছোটবেলা থেকেই বিভূতি মেধাবী ছিলেন। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। গোছল করতে যেতেন 'ইছামতী' নদীতে। বিভূতির মতো কোনো লেখক আজ আর নেই। এযুগের লেখকরা বই লিখেন। নিজেই নিজের বইয়ের গুণগান করেন ফেসবুকে। আদতে তাদের লেখা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে না। পাঠককে ভাবায় না, কাঁদায় না। কিন্তু এই সমস্ত লেখকরা নির্লজের মতো নিজেকে শুধু প্রচার করতে ব্যস্ত। নিজেকে প্রচার করতে গিয়ে নানান রকম ছাগলামি করে চলেছে। যা অতি হাস্যকর। সেই সাথে বিরক্তিকর।
তথ্যসুত্রঃ
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্ধানে- রুশতী সেন।
আমাদের বিভূতিভূষণ- রমা বন্ধোপাধ্যায়।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: কয়েক বছর আগে কলকাতার এক পরিচালক ' তালনবমী' কাহিনী নিয়ে একটা সিনেমা তৈরি করেছেন। চমৎকার হয়েছে।
দেখেছেন?
২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯
মৌন পাঠক বলেছেন: পথের পাচালীর পথিক।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: একজন গ্রেট সাহিত্যিক।
৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫
কামাল১৮ বলেছেন: গ্রাম এবং গ্রামের মানুষকে নিয়ে লেখা তার গল্প উপন্যাস এক কথায় অসাধারণ।এটা সম্ভব হয়েছে তার তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষন ক্ষমতা ও সরল জীবন যাপন।আজীবন গ্রামেই বসবাস করেছেন।শহুরে জীবনের জটিলতা তার লেখায় পাওয়া যায় না।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে বিভূতি কখনও আফ্রিকা যাননি। অথচ তার 'চাঁদের পাহাড়' আফ্রিকার ঘটনা নিয়ে লেখা। এডভেঞ্চার কাহিনী।
চাঁদের পাহাড় নিয়ে সিনেমা হয়েছে। সিনেমাটা ভাল হয়নি।
৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৪
সোনাগাজী বলেছেন:
পথের পাচালী সাধারণ মানুষের জীবনের কথা।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: পথের পাচালী বই পড়েছেন? না সিনেমা দেখেছেন?
৫| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৫৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ওনার মৃত্যু নিয়ে একটা অদ্ভুত ঘটনা আছে। সেটা লিখলে ভালো হত।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি লিখুন না।
আমি জানি না। জানলে লিখতাম।
৬| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:২৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- লেখাটি খুবই ভালো হয়েছে। পোস্টে + রইলো।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে কোনোদিন দেখলাম না বিভূতিভূষনের কোনো বই নিয়ে রিভিউ লিখতে।
৭| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বিভূতিভূষণের মৃত্যুও হয়েছিল খুব রহস্যজনকভাবে যা ব্যাখ্যার অতীত। তিনি একদিন রাতে জঙ্গলের পথে গ্রামে ফিরছিলেন। বেশ নির্জন পথ, কিছুদূর যাবার পর একটি লাশের বহর দেখতে পান। কিছু মানুষ একটি লাশ বহন করে নিচ্ছে তার শেষকৃত্যের কাজে। গ্রামের মানুষ একে অপরকে চিনে থাকে তাই সাধারণত কারো মৃত্যু হলে গ্রামের সবাই জেনে থাকে। তাই বিভূতিভূষণ সেই যাত্রীদের জিজ্ঞেস করল কার লাশ নিচ্ছে ! কে মারা গেল!। যাত্রীরা লাশ নামিয়ে তাকে দেখার জন্য বলল। এরপর তিনি যা দেখলেন, যা একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দৃশ্য হতে পারে। যা একজন সুস্থ্য মানুষেরর হৃদপিন্ড হিম করে দিতে যথেষ্ট। বিভূতিভূষণ তার নিজের লাশ দেখতে পেলেন[তার ভাষ্যমতে]। এরপর তিনি জ্ঞান হারান এবং পরে নিজেকে বাড়িতে প্রবল জ্বরের ঘোরে আবিষ্কার করেন। এই জ্বর তিনদিন স্থায়ী ছিল, তিনদিন পর তার সমস্ত শরীর হিমশীতল হয়ে আসে। অর্থাৎ এই ব্যাখ্যাতীত ঘটনার তিনদিন পর তিনি সেই ঘটনারই অংশ হয়ে যান।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: বানোয়াট গল্প।
এরকম কিছুই হয়নি।
মৃত্যুর আগে উনি উনার (বারাকপুর) শহরের বাসায় ছিলেন। উনি গ্রামে চিলেন না।
আর আপনি যেটা বললেন এটা বিভূতিভুশন এর লেখা একটা ছোট গল্প। বইয়ের নাম তারানাথ তান্ত্রিক।
৮| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৪০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: হতে পারে। আমি এক জায়গায় পড়েছি।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: যাইহোক, সঠিক তথ্য নিশ্চয়ই এখন পেয়েছেন।
৯| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:৫৬
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: পড়লাম, ভালো লাগলো।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান।
ভাল থাকুন।
১০| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:০৯
সোনাগাজী বলেছেন:
সিনেমা দেখেছি
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: হুম।
'আদর্শ হিন্দু হোটেল' নামে এই লেখকের একটা উপন্যাস আছে। অতি চমৎকার উপন্যাস। কলকাতার এক পরিচালক এই উপন্যাস নিয়ে একটা সিনেমা বানিয়েছেন। সেটা দেখুন। ভাল লাগবে। ইউটিউবে পেয়ে যাবেন।
১১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:৩৭
অগ্নিবেশ বলেছেন: উনি আমাদের বিদ্যালয়েরই প্রাক্তন।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: গ্রেট।
১২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৩৩
বাকপ্রবাস বলেছেন: ভাল লাগল, সাথে সাড়ে চুয়াত্তর এর কমেন্ট টাও বেশ প্রাসঙ্গিক ছিল
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
১৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:২২
জগতারন বলেছেন:
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ঝগড়া গল্প পড়ে বাস্তবতার এক নিরেট উদাহরে আমি শিহরিত হয়য়ে উঠেছিলেম।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: একজন গ্রেট লেখক।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩১
অক্পটে বলেছেন: এই মহান গুনীর আলোচনা খুব ভাল লাগল। 'তালনবমী' টা আমিও পড়েছি। এক কথায় অসাধারণ!