নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
দীর্ঘদিন কেউ আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকায়নি।
আমি দাঁড়িয়ে আছি মহাখালী। চারিদিকে বিকট শব্দে হর্ন বাজছে। গাড়ি, বাস, সিএনজি ও বাইক এদের চলাচল দেখলে মনে হয়- তাদের খুব তাড়াহুড়া। ঢাকা শহরের একটা ব্যস্ত এলাকা মহাখালি। এখানে ট্রাফিক সিগনালের কেউ ধারধারে না। পুলিশ হাত দিয়ে গাড়ি থামায়। আবার হাতের ইশারায় গাড়ি চলাচল করতে বলে। আজ কড়া রোদ উঠেছে। আমি অনেকখানি ঘেমে গেছি। আমার কোথাও যাওয়ার নেই। মানুষের ব্যস্ততা দেখছি। একমেয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলো- এক কিশোর তার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে দৌড় দিয়েছে। মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সেই কিশোর কে কেউ ধরার চেষ্টা করলো না। অবশ্য মুহুর্তের মধ্যে সেই কিশোর ভ্যানিশ হয়ে গেলো। সবাই ব্যস্ত কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নেই। চলন্ত বাসের জানালা দিয়ে একছেলে বমি করছে। ভালো করে খেয়াল করলে অনেক কিছু দেখা যায়। সিগনালে বাস থামলেই এক হুজুর বাসে উঠে মসজিদ নির্মানের জন্য টাকা চাইছেন। আরেক হুজুর চাইছেন মাদ্রাসায় এতিম ছেলে মেয়েদের জন্য। হকাররা বাসে উঠে আচার, আমড়া, পেয়ারা ইত্যাদি বিক্রি করছে।
আমি অনেক লেখকদের জীবনী পড়েছি।
বেশির ভাগ লেখক ছোটবেলা- ঝালমুড়িওলা, সনপাপড়ি বিক্রেতা, আচার বিক্রেতা, আইসক্রীম বিক্রেতা অথবা বেলুন বিক্রেতা হতে চেয়েছিলেন। কেউ কেউ হতে চেয়েছিলেন নাবিক। সাগরে করে সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াবেন। লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ইচ্ছা ছিলো তিনি হকার হবেন। বাসে বাসে কলম, পেন্সিল, সেপটিপিন বিক্রি করবেন। হুমায়ূন আহমেদের ইচ্ছা ছিলো- ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াবেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় চেয়েছিলেন প্রফেসর হবেন। বিখ্যাত লেখক টলস্টয় হতে চেয়েছিলেন ডাক্তার। যাইহোক, এই মুহুর্তে আমার হতে ইচ্ছা করছে ট্রাফিক পুলিশ। একটা দামী গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করতে- দেখি লাইসেন্সটা? ইনসিওরেন্সের কাগজপত্র আছে? ফিটনেস সার্টিফিকেট? এক্সহোস্ট দিয়ে তো সমানে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। নামুন গাড়ি থেকে। আমার আর গাড়ি থামানো হলো না। একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি গত পাঁচ বছর এমন সুন্দর কেউ আমার দিকে তাকায়নি। মেয়েটা কেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে? তার ঘটনা কি?
মেয়েটা বলল, তুমি রাস্তার মাঝখানে রোদের মধ্যে কি করছো?
তুমি তো গাড়ি চাপা পড়ে মরবে। আমি মেয়েটাকে চিনতে পারছি না। কিন্তু মেয়েটা আমার দিকে দারুন আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলো। তাকানোর মধ্যে একটা মায়া মায়া ভাব ছিলো। ভালোবাসা ছিলো। আন্তরিকতা ছিলো। আমি মুগ্ধ হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা সুন্দর। উগ্র সুন্দর নয়। সহজ সরল সুন্দর। চোখে মুখে এক ধরনের সহজ সরল স্বচ্ছতা আছে। একদম জীবনানন্দের কবিতার মতো সুন্দর মেয়েটা। এরকম মেয়ে দেখলে আমি নীলার কথা ভুলে যাই।
মেয়েটা বলল, আমাকে চিনতে পারোনি?
হ্যাঁ চিনেছি। আপনার নাম জুই।
আমার নাম জুই নয়। আমার নাম হেনা।
স্যরি চিনতে পারছি না।
থাক চিনতে হবে না। আমি বিদায় নিচ্ছি। যদি আমাকে চিনতে পারো, তাহলে আগামীকাল সন্ধ্যায় বাসায় এসো।
মেয়েটা চলে গেলো। না আমি মেয়েটাকে একেবারেই চিনতে পারিনি। মেয়েটা নিশ্চয়ই কিছুটা মন খারাপ করেছে। যদি মেয়েটাকে চিনতে পারতাম, তাহলে হয়তো এখন আমরা কোনো রেস্টুরেন্টে বসে কোক খেতে খেতে গল্প করতাম। আমার মাথা ঘুরছে। মাথা ঘুরাটা স্বাভাবিক। কারন সব কিছুই ঘুরছে। গ্রহ, নক্ষত্র, সূর্য, চাঁদ, মানুষ।
রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে চা খেলাম।
অতি কুৎসিত সেই চা। তার উপর আবার কাপটা নোংরা। এমনকি কাপের এক কোনা ভাঙ্গা। ভাঙ্গা কাঁপে চা খেয়ে হায়াত কমে। একমাত্র নীলাদের বাসায় চা খেয়ে আরাম পাওয়া যায়। চমৎকার চা। চায়ের চেয়েও বেশি সুন্দর চায়ের কাপ। নীলা কি যত্ন করেই না চা বানায়। নীলা কোনো দিনই আমাকে শুধু চা দেয়নি। নিজের হাতে বানানো সমুচা, সিঙ্গারা দেয়। নীলার সিঙ্গাড়াতে আলু থাকে না। থাকে গরুর কলিজা। সমুচাতে থাকে সমুদ্রের কোনো মাছ অথবা চিকেন। নীলার মতো যত্ন আমাকে আর কেউ করে না। আমার মনে আছে, একদিন রাত সাড়ে এগারোটায় নীলাদের বাসায় গিয়েছিলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। সেই রাতে নীলা আমাকে না খাইয়ে ফিরতে দেয়নি। তাড়াহুড়া করে ডিম বাজি করে দিলো। ডাল ভর্তা আর ইলিশ মাছ ভেজে দিলো। ফ্রিজে ভাত ছিলো। তবু নতুন করে আবার ভাত রান্না করে গরম ভাত দিলো। অতি তুচ্ছ বিষয় থেকেও ভালোবাসা টের পাওয়া যায়। একবার আমার মা আব্বাকে ভাঙ্গা কাঁপে চা দিয়েছিলো। আব্বা ভীষন রেগে গিয়েছিলো। তারপর আব্বা রাগ করে দুইদিন বাসায় আসেনি।
আমাদের সাথে সুমনা নামে একটা মেয়ে পড়তো।
মেধাবী ছাত্রী। দরিদ্র ঘরের মেয়ে। পোশাকআষাকে ঝলমল ভাব ছিলো না। মেয়েটাকে কখনও সাজতে দেখিনি। কারো সাথে কথা বলতো না। ক্লাশ শেষ হলেই বাসায় চলে যেতো। মাঝে মাঝে শুধু লাইব্রেরীতে যেতো। তার মা অসুস্থ। বাসায় ছোট ভাই বোন আছে। তাই সে দ্রুত বাসায় যেতো। তাকে রান্না করতে হবে। ছোট ভাইদের লেখাপড়া করানো, নিজের লেখাপড়া। রান্না, সংসার সামলানো। সব একহাতে করতো। একদিন মেয়েটার বিয়ে হলো। শ্বশুর বাড়ির লোকজন ভালো ছিলো না। স্বামী, শ্বশুর- শাশুড়ি সবাই তাকে যন্ত্রনা দিতো। একসময় সে বাধ্য হয়ে তার স্বামীকে ডির্ভোস দেয়। এখন একটা হোস্টেলে থাকে। চাকরি করছে একটা বড় প্রতিষ্ঠানে। এই সুমনার সাথে কিভাবে যেন আমার ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সুমনার বাবা মায়ের সংসারে ভালো ছিলো না। স্বামীর সংসারে ভালো ছিলো না। এখন সে একা। চাকরি করছে। ভালো আছে। শুধু মাত্র এই মেয়েটা আমাকে দেখলে আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকায়। বলে, মালদ্বীপ থেকে ঘুরে আসি। সব খরচ আমার।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:২৫
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক মেয়ের সমাহার
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: হাজার বছর পর আমার কোনো পোষ্টে এলেন।
৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:০৮
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
মেয়েরা ঠিক মুগ্ধ হয়ে তাকাতে পারে।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: গভীর রাতে আকাশের দিকে তাকালে সব সময়ই নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হয়। শুধু আমার না অনেকের'ই হয়তো এমন মনে হয়।
৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:১৭
এম ডি মুসা বলেছেন: কিছু বলার নাই
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: অভদ্র লোকদের এই এক সুবিধা, ভদ্রলোকেরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে না। তারা নিজেরাই সহ্য করে যায়।
৫| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৩১
জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার লেখা! হুমায়ুন আহমেদ কে অনুকরণ কিম্বা অনুসরণ স্বার্থক!
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: এটাই তো চেয়েছিলাম।
৬| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:১৫
রানার ব্লগ বলেছেন: আপনি আপনার নিজের অনুভূতির ভেতর বারবার হুমায়ুন আহমেদ কে টেনে আনেন কেনো?! হিমুর কোন না কোন ডায়লগ ঢুকে যায়।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: এটা তো আমি ইচ্ছা করে করি। সচেতন ভাবে করি।
৭| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৪০
সোনাগাজী বলেছেন:
মালদ্বীপ ডুবে যাবে।
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: ডুবে যাওয়ার আগেই একবার ঘুরে আসবো নাকি?
৮| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:৩৫
মৌন পাঠক বলেছেন: এমনতর সুমনার অপেক্ষায়
হাজার ও সুমনা চলে যায়
হাজারে সুমনা থমকে দাড়ায়
তবু জীবন হয়নাকো সুমনাময়
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: বাহ!!
৯| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৫:০৩
কামাল১৮ বলেছেন: এখানে কোন ট্রাফিক পুলিশ দেখিনাই এবং কাউকে ট্রাফিক আইন ভাংতে দেখিনাই।কোন সমস্যা হলে অনেক পুলিশের গাড়ী চলে আসে কয়েক মিনিটে।
আমি নবীর জীবনী ছাড়া আর কোন জীবনী পড়েছি বলে মনে পরছে না।তবে স্ট্যালিনের মোটা একটা জীবনী গ্রন্থ আমার কাছে আছে ।এখান থেকে ওখান থেকে দুই চার পাতা পড়েছি।
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি একটা উন্নত দেশে থাকেন। একটা সভ্য দেশে। আমি থাকি ইতরের দেশে।
১০| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:২৩
এম ডি মুসা বলেছেন: অভ্দ্র মনে হয় আমাকে
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই না।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৩
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: সুন্দর লেখেছেন রাজীব দা
মায়া দোয়া মমতা সবই মিলে
ভাল লেগেছে---------