নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রমিজ মিয়ার বর্তমান অবস্থা

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৩



একা থাকা মানেই দুঃখী থাকা নয়।
আমি নিজেই একা থাকি। বর্তমানে আমার কেই নেই। পুরান ঢাকার এক চিপা গলিতে থাকি। মেসে থাকি। অতি নিম্মমানের পরিবেশ। অবশ্য সস্তায় থাকা খাওয়া হয়ে যাচ্ছে। আমি একা কিন্তু আমি দুঃখী নই। বই পড়ছি, যা মন চায় লিখছি। যেখানে ইচ্ছে চলে যাচ্ছি। মসজিদে মিলাদ হলে দৌড়ে চলে যাই। মিলাদ পড়ি। মিলাদ শেষে একটা বক্স ধরিয়ে দেয়। বাক্সে মিষ্টি থাকে, নিমকি থাকে, লাড্ডু থাকে আমি মজা করে খাই। বড় ভালো লাগে।

আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
আমার একটা ছেলে ছিলো। সে তার মায়ের কাছে থাকে। একজন বেকারের সাথে কেউ থাকতে চায় না। আমার স্ত্রী অভাব সহ্য করতে পারেনি। সে আমাকে সময় দিয়েছিল, কিন্তু আমি চাকরি যোগাড় করতে পারিনি। স্ত্রী চলে গিয়ে ভালোই হয়েছে। এখন আমি স্বাধীন। কোথাও কোনো বাধা নেই। তবে মাঝে মাঝে ছেলেটার জন্য কষ্ট হয়। চোখ ভিজে যায়। এতদিনে নিশ্চয়ই ছেলেটা অনেক বড় হয়েছে, স্কুলে ভরতি হয়েছে। বাবা ছাড়া ছেলেটা কি আনন্দ নিয়ে বড় হতে পারছে? আমি আজন্ম একজন ব্যর্থ মানুষ। বাবা মায়ের ব্যর্থ সন্তান। অথচ জ্ঞান প্রতিভা আমার কিছু কম নেই।

আমার ভাই বোন সকলেই ছিলো।
তারাও আমার সাথে সম্পর্ক রাখেনি। খবর পেয়েছি, গতমাসে ছোট ভাই একটা গাড়ি কিনেছে। বাবা মারা গেলো করোনায়। তারপর মা মারা গেলো। এরপর থেকেই মূলত আমি একা। থাকার জায়গা নেই, খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। কি দু:সময়ই না পার করেছি। শেষে এই পুরান ঢাকার এই মেসে জায়গা পেয়েছি। আমার মেস মেম্বার গুলো ভালো। ওরা দরিদ্র কিন্তু ওদের মন বড়। গত সাত মাস আমি কোনো টাকা দিতে পারিনি, অথচ ওরা আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়নি। ওরা সবাই মিলেমিশে আমার টাকা ভাগ করে দিয়ে দিয়েছে। সুমন ভাই তো প্রতিদিন আমাকে দশ টা করে সিগারেট কিনে দেয়।

আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাই পর করে দিয়েছে।
এই সমাজে টাকা না থাকলে কোনো দাম নেই। পরিবারের সদস্যরাও দাম দেয় না। একবার মেজো বোনের বাসায় গেলাম। বোনের দুটা জমজ বাচ্চা আছে। ওদের দেখতে। বোন আমাকে খেতো দিলো। ফেরার পথে ইনিয়ে বিনিয়ে বলল, আমি যেন তার বাসায় আর না যাই। সেদিন খুব অপমান বোধ করেছিলাম। চোখ ভিজে উঠেছিলো যখন মেসে ফেরার পর বোন ফোন দিয়ে জানতে চাইলো, তার বরের হাত ঘড়িটা আমি ভুলে নিয়ে গেছি কিনা। মা অসুস্থ ছিলো, এই ছোট বোনকে গোছল করিয়ে দিয়েছি, নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি। ঘুম পারিয়ে দিয়েছি। প্রতিদিন কলেজ থেকে বাসায় নিয়ে এসেছি। কত না আদর স্নেহ ভাবাবাসা দিয়েছি।

ইদের দিনের ঘটনা টা বলি, মেসে আমি একা।
মেসের অন্য সদস্যরা সবাই গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। ঘরে খাবার নেই। পকেটে টাকা নেই। অথচ ইচ্ছে করছে, ভালো মন্দ কিছু খাই। কারো সাথে মন ভরে আড্ডা দেই। একটু ভালো সময় কাটাই। বড় ভাইয়ের বাসায় গেলাম। ভাবী আমাকে ফ্রিজের বাসী খাবার ওভেনে গরম করে দিলেন। ফেরার পথে বড় ভাইয়ের পুরোনো দুটা শার্ট প্যান্ট দিলেন এবং অবাক করে কিছু ভাংতি টাকা আমার হাতে গুজে দিলেন। টাকা গুনে দেখলাম, সব মিলিয়ে ৮৭ টাকা। সেদিন ৮৭ টা আমি এক ভিক্ষুক কে দিয়ে দিলাম। মিরপুর থেকে আমার পুরান ঢাকার মেসে হেটে হেটে ফিরলাম। বাসে করে আসার টাকা ছিলো। কিন্তু এত কষ্ট হচ্ছিলো যে হেটে হেটে ফিরলাম।

চাকরি নেই, হাতে অনেক সময়।
আমার সময় কাটে না। সব কিছু মিলিয়ে অবশ্যই আমি একজন দু:খী মানুষ। দুখ কষ্ট পেতে পেতে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন কোনো কিছুই আমার গায়ে লাগে না। রাস্তার দেয়ালে পত্রিকা লাগানো থাকে, আমি আগ্রহ নিয়ে পড়ি। বাবু বাজার ব্রীজে দাড়িয়ে মানুষ দেখি। কত রকমের মানুষ! লঞ্চ দেখি, নৌকা দেখি। বড় ভালো লাগে। রাত দশটায় মেসে ফিরি। রান্না করি। ওরা সবাই আগ্রহ নিয়ে খায় অথচ রান্নার কিছুই জানি না। সুমন ভাইয়ের ল্যাপটপ আছে। সেই ল্যাপটপে মুভি দেখি। সপ্তাহে একদিন মেসের সবাই অনেক দেরী করে ঘুমাতে যায়। আমরা মুভি দেখি, মুড়ি মাখা খাই। কার্ড খেলি। ভালোই লাগে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


দেখুন, মুফতি সাহেব কি সুন্দর আলোচনা করেছেন। উনার আলোচনা থেকে শিক্ষা নিন।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.