![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
আমার বয়স ৮২ বছর। ডায়বেটিস অতি সামান্য আছে।
প্রেসার বেশির ভাগ সময়ই ঠিকঠাক থাকে। চোখে দেখতে পাই। কিয়বই পড়তে কষ্ট হয়। সারাদিন বাসায় থাকি থাকি। স্ত্রী মারা গেছে বহু বছর আগে। ছেলেমেয়ে আছে কিন্তু তারা আমার সাথে থাকে না। তবে নিয়মিত খোজ খবর নিচ্ছে। বুড়ো বয়সে একা থাকা ভীষণ কষ্টের। মন চায় কারো সাথে কথা বলি। রাতে ঘুম আসে না। একা-একা ছটফট করি। স্ত্রী দরকার বুড়ো বয়সে সবচেয়ে বেশি। ভাষা আন্দোলনের সময় আমার বয়স ছিলো ৭/৮ বছর। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি আমার কিছু কিছু মনে আছে। ঘটনা চক্রে সেই সময় আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনেই ছিলাম। আমাদের গ্রামের আত্মীয় ঢাকা মেডিকেল ভরতি ছিলো। বাবার সাথে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে ছাত্রদের মিছিলে আটকা পড়ে যাই। এদিকে পুলিশ ধাওয়া করেছে, গুলিও করছে। বাবা আমাকে কোলে করে নিয়ে দৌড়ে পালান। আব্বার কলকাতায় ব্যবসা ছিলো। দেশ ভাগের কারণে কলকাতার ব্যবস্থা হারিয়ে গিয়েছিল।
শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের আমি উপস্থিত ছিলাম।
তখন আমি যুবক। আমাদের বাড়ির কাছেই পল্টন ময়দান ছিলো। পল্টন ময়দানে প্রতিদিন বিকেলে ফুটবল খেলতাম। স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে ফুটবল খেলতাম। ফুটবল আমার প্রিয় খেলা ছিলো। যৌবনে আমি সহজ সরল ছিলাম। স্বাস্থ্য ভালো ছিলো। কোনো বাজে অভ্যাস আমার ছিলো না। আমি দেখতে উত্তম কুমারের মতো সুদর্শন ছিলাম। আমার বাপ চাচা ফুপু সবাই দেখতে সুন্দর। লাইফে কোনোদিন আমি বেলাইনে চলিনি বলে আজও আমি ভালো আছি। সুস্থ আছি। এখনো আমি একা একা হেটে বেড়াই। বেঙ্গল গ্যালারিতে আর্ট এক্সজিবিশন দেখি। ভোরবেলা রমনা পার্কে হাটি। আমার বন্ধু বান্ধব কেউই বেচে নেই। নানান অসুখ বিসুখে ভূগে তারা মারা গেছে। একজন বেচে আছে। জসিম। সে থাকে আমেরিকায়। মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। জসিম রিটায়ার্ড করেছে ২৩ বছর আগে। থাকে আমেরিকা।
আমেরিকাতে বয়স্ক লোকদের বলে, সিনিয়র সিটিজেন।
ঢাকায় বলে মুরুব্বি। এখনো পথে ঘাটে অনেকেই বলে মুরুব্বি। বয়স এবং ব্যাক্তিত্বের কারণে অনেকেই সম্মান করে। তবে এযুগের জেন জিরা সম্মানের ধারধারে না। তারা সিগারেট ধরিয়ে মুখের উপর ধোয়া ছেড়ে দেয়। বেয়াদবি করে। আমার ইচ্ছে করে চাবকে এদের পিঠের ছাল তুলে দেই। যাইহোক, শেখ মুজিবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি বিয়ে করি। শেখ মুজিবের মৃত্যুর খবর শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছি। একজন খাটি নেতা ছিলেন শেখ মুজিব। বড় ভালো লোক ছিলেন। একবার আমরা কয়েকজন শেখ মুজিবের ধানমন্ডির বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি আমার পিঠে হাত রেখে বলেছিলেন, দেশকে ভালোবাসবা।দেশের জন্য কাজ কররা। তবেই আমরা বিশ্বাস দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবো। আমি কর্ম জীবনে সৎ ও পরিশ্রমী ছিলাম। অন্যায়ের সাথে আপোষ করি নাই।
আমার বিয়ের গল্পটা বলি, তখন মেজর জিয়া ক্ষমতায়।
যুদ্ধের পর যে সমস্ত রাজাকাররা পালিয়ে গিয়েছিল জিয়া তাদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনছেন। বড় বড় পদে বসাচ্ছেন। খাল কাটছেন। জাতীয় ফুল ফল মসজিদ নির্ধারণ করছেন। সৌদির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। এসব দেখে আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকেরা বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। তখন বন্ধু জসিম বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে ফরিদপুর যাচ্ছে। সাথে আমিও গেলাম। অনেক দূরের পথ। রিকশা, বাস, নৌকা তারপর অনেকখানি পথ পায়ে হেটে। কার্তিকপুর ঘাটে নেমে টানা দেড় ঘন্টা হাটা। মাটির পথ। গ্রাম বাংলা সুন্দর। আমার পছন্দ। দাদার সাথে গ্রামে থেকেছি অনেকটা সময়। দাদা আমাকে গ্রাম চিনিয়েছেন। চাষবাস শিখিয়েছেন। প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। পদ্মা নদীতে আমি সাতার শিখেছি।
আমাদের দুপুরে খেতে দেওয়া হলো।
চমৎকার রান্না। মাটির চুলায় রান্না। এত সুন্দর রান্না, আমি মুগ্ধ! ইচ্ছে হলো বাকিটা জীবন এ গ্রামেই থেকে যাই। বিকেলে কনে আমাদের সকলকে চা দিলো। জসিমের বাবা মেয়েকে প্রশ্ন করলো কোরান কত বার খতম দিয়েছো? মেয়ে চুপ। তখন মেয়ের চাচা বলল, কোরআন পড়তে পারে না। তবে শিখবে। ছেলের বাবা রেগে গিয়ে বলল, যে মেয়ে কোরান পড়তে পারে না, সেই মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে হইবে না। বিয়ে ভেঙে গেলো। জসিম বলল, বাবা মেয়েটা ভালো। আমার পছন্দ হয়েছে। জসিমের বাবা চিৎকার দিয়ে বলল, আর একটা কথা বললে, হারামজাদা তোকে আমি দুই টুকরা করবো। মেয়ের বাবা মা খুব অনুরোধ করলো। বলল, এক মাসের মধ্যে কোরআন শিখিয়ে দিবো। আপনি নরম মনে আমাদের কথা মেনে নিন। আল্লাহর দোহাই লাগে। কিন্তু জসিমের বাবা ঢাকা ফিরে এলো।
শুধু কোরআন না পড়তে জানার জন্য বিয়েটা ভেঙে গেলো।
মেয়েটা দেখতে সুন্দর ছিল। দেখতে একদম দেবী স্বরসতীর মতোন। মেয়েটার নাম ছিলো সেতারা। সেই সেতারাকে পরে আমি বিয়ে করি। এবং সেই বিয়েতে আমার বন্ধু জসিম উপস্থিত ছিল। সেতারা দারুণ বুদ্ধিমতী মেয়ে। এবং বাংলা সাহিত্য এবং বিশ্ব সাহিত্য তার সব পড়া। তলস্তয়, শেক্সপীয়ার, ম্যাক্সিম গোর্কি থেকে শুরু করে আমাদের রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতি-ভূষণ সব তার পড়া। সেই সময় বঙ্গবানী পত্রিকায় সেতারার নিয়মিত লেখা ছাপা হতো। যাইহোক, সেতারাকে পেয়ে আমার জীবন বদলে গেলো। আমি তখন সব সময় বলতাম, লাইফ ইজ বিউটিফুল। একে একে জন্ম নিলো আমার ছেলে মেয়েরা। আমাদের ঘরে একটা লাইব্রেরি ছিলো। সেতারা সেই লাইব্রেরির বইয়ের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে ছিলো।
৫২ থেকে আজ অবদি অনেক কিছুর সাক্ষী আমি।
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। একদম সরাসরি যুদ্ধ করেছি। কানের পাশ দিয়ে গুলি গিয়েছে। যুদ্ধের সময় অনেক মা বোনকে বর্ডার পার করে দিয়েছি। যুদ্ধের সময় মেহেরপুর গিয়ে তাজউদ্দীনের সাথে বেশ কয়েকবার দেখা করেছি। আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে, কৃষক, শ্রমিক আর ছাত্ররা। যুদ্ধ করেছি কোনো প্রমাণপত্র নেই আমার। আজকাল কাউকে বলি না, যে আমি যুদ্ধ করেছি। বললেই দেখি তাদের চোখে মুখে অবিশ্বাস। কেউ কেউ প্রমাণ চায়। কত নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি? কোথা থেকে ট্রেনিং নিয়েছি? কার আন্ডারে যুদ্ধ করেছি? অনেক রকম প্রশ্ন তাদের। তাই আমি চুপ থাকি। কারো সাথে আলোচনায় যাই না। অথচ কত লোক যুদ্ধের সময় কলকাতা গিয়ে মোজমাস্তি করেছে, আর এখন বিরাট মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে। জামাত শিবির ৭১ এ ঠক প্রতারক ছিলো আজও তাই আছে।
২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৫
কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:
চমৎকার জীবনী। দেশবিরোধী মৌলবাদী শক্তি ক্ষমতায়; ডিরেক্ট লিখলে সমস্যা, তাই জীবনীর মাধ্যমে খেয়ে দিই। পাকি জামাত-শিবির ট্রেনিং প্রাপ্ত জল্লাদের হাতে ২৪ এ উনার নাতিকে কিছু একটা করে শেষ করলে বোধ হয় ভালো হয়তো?
৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পাক সার জমিন বাদ।
৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩১
কামাল১৮ বলেছেন: কানাডায় আমি একজন সিনিয়র সিটিজেন।আমার বয়স৮০+ অনেক সুজোগ সুবিধা পাই।যেটা পেয়ে আমি সন্তুষ্ট।বাংলাদেশে সুঝোগ সুবিধা বাড়ানো দরকার বয়স্ক লোকদের জন্য।
৫| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৪৮
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
বিদেশে সিনিয়র সিটিজেন মানে সম্মানিত একজন নাগরিক।
আমাদের দেশে তাঁরা বোঝা কেন?
৬| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
জয়বাংলা!!!!!!!!!!
৭| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৩
বিজন রয় বলেছেন: এত লেখেন কখন?
৮| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ২:৫৩
শোভন শামস বলেছেন: সুন্দর জীবনের গল্প। লিখে যান, ভাল লেগেছে।
৯| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৬
সামরিন হক বলেছেন: ভালো লাগলো
১০| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৫
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
খুব ভালো।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
আপনি একজন বাংগালী সিনিয়র সিটিজেনের জীবনকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন; মনে আছে, আপনি কত ভালোভাবে রবী ঠাকুরকে নিয়ে লিখতেন?