নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি

শুদ্ধ হোক তোমার মন,ইতিবাচক হোক তোমার দৃষ্টিভঙ্গি,প্রকাশ হোক তোমার কর্মে,চেতনায় ও মননে ।

রাসেল মাহমুদ মাসুম

আমি খুব সাধারণ একটি মানুষ।

রাসেল মাহমুদ মাসুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই সব মারাত্মক প্রবণতা

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৩৮

সারওয়ার চৌধুরী: সেই ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের সময় থেকেই উপমহাদেশের রাজনীতির ভেতরে ব্যক্তিপূজা আর বিপরীত দিকে ব্যক্তিঘৃণা প্রখর প্রভাব রেখে আসছে। দুই তরফে ‘সততা’ বা ‘আদর্শ’ যেন মুখ্য নয়, মুখ্য হলো dominant tendency পরস্পরের বিরুদ্ধে। এই দুই প্রবণতা এখন পর্যন্ত উপমহাদেশে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়তে পারেনি সামগ্রিকভাবে। অনেকের কাছে কোন নেতা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একেবারে পূজনীয়, আর বিপরীত দিক থেকে ওই একই ব্যক্তি চরম ঘৃণার পাত্র অধিকাংশের কাছে। অল্পসংখ্যক ‘বুদ্ধিমান’ যারা উভয় তরফে, তারা পূজা বা ঘৃণা প্রবণতার বাইরে কিন্তু দলীয় সুবিধা বা চাপের কারণে চুপ থাকেন।

দুই ধরনের ‘চরম’। পক্ষে চরম আর বিপক্ষে চরম। এই দুই ‘চরম’ ভূমিকা নেয়ার প্রবণতা দেখা যায় বিরোধে লিপ্ত মানুষগুলোকে বংশ পরম্পরায় অনেকাংশে অন্ধতা দিয়েছে। আর অন্ধতার কারণে ঢালাওভাবে গ্রহণ আর বাতিল প্রতিপক্ষকে। একেবারে স্বরধ্বনি ও অ্যাকশন এমন যে, পক্ষে থাকলে বাঁচতে পারবে, নইলে মরণ- বাঁচবার অধিকার নেই। ফলে হত্যাকাণ্ডের ধারা বহমান। রাজনীতি খেলার সৌন্দর্য এই অঞ্চলে এক ফোটাও নেই। মানুষগুলোর মারাত্মক প্রবণতার কারণে হত্যা-উচ্ছেদ-নির্মূল-ফাঁসি চাই-জবাই করো ইত্যাদি প্রতিপক্ষের কপালে জোটে। পূজনীয় নেতৃত্ব এবং ঘৃণার পাত্র নেতৃত্ব- একই ব্যক্তি বিশেষও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই দুই চরম প্রবণতা মেনে নিয়েই নিজেদের ইতিহাস রচনার স্বপ্নে বিভোর হয়। পক্ষের লোকদের লালন অন্ধভাবে এবং বিপক্ষের লোকদের দমন-পীড়ন-উৎপাটন অন্ধভাবে করতে দ্বিধা বোধ করে না।

খেয়াল করার বিষয় এই যে, ‘শিক্ষিত’ ‘অশিক্ষিত’ ‘গরিব’ ‘ধনী’ ‘ধার্মিক’ ‘ধর্মবিরোধী’ ‘নাস্তিক’ ‘আস্তিক’ এসব পরিচয় যাদের আছে, তাদের অনেকে রাজনীতির অঙ্গনে দেখা যায় ব্যক্তিপূজা ও ব্যক্তিঘৃণা চর্চা করেন বেশ। এই চর্চার অন্তর্নিহিত ভাব যদিও নিজ নিজ সুবিধা উদ্ধার। সুবিধা সবাই চায়। শুধু মাত্রাতিরিক্ত হলেই সেটা অন্য রঙ ধরে। সে রঙটাই ক্ষতিকর। এই রঙে থাকা বিদঘুটে প্রবণতা একাত্তর পরবর্তী রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। বর্তমান পটভূমিতে, ১৮ দলের নেতারা বলেন, নানাভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, চৌদ্দ দল দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। চৌদ্দ দল একই কথা পাল্টা ছাড়েন তাদের ওপর। এমতাবস্থায় তারা কেউ দেশের মঙ্গল চায় না- এই চিন্তা এই দেশেরই অনেক মানুষের। কারণ, বড় দলগুলো ক্ষমতায় গিয়ে কিভাবে জনগণের সম্পদ লুট করেছে তার যথেষ্ট প্রমাণ ইতিমধ্যে মিলেছে।

‘ওলামা’ বিভাজন

বাংলাদেশের সমাজ জীবনে ইসলাম ধর্মের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ফলে রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য না-হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির [এই রাজনীতি ডমিনেটিং ফোর্স থাকার অর্থ মোতাবেক] প্রখর চেতনা জনমনে ক্রিয়াশীল। নামাজ রোজা পালন করে না নিয়মিত কিন্তু আল্লাহ খোদার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে গর্জে উঠবেই। আবার এই ধর্মের আলেমদের মধ্যে আক্বাইদ ইত্যাদি নিয়ে বিভাজনের কারণে নিজেদের মধ্যেও সাপ নেউল সম্পর্ক বিদ্যমান যুগ যুগ ধরে। দেশে আছে আওয়ামী লীগের ‘ওলামা’, বিএনপ্থির ‘ওলামা’, জামায়াতের ‘ওলামা’, জাতীয় পার্টির ‘ওলামা’, আলিয়া মাদরাসার ওলামা, কওমী মাদরাসার ওলামা ইত্যাদি। এসব বিভাজনের পেছনে ব্যক্তিস্বার্থ গোষ্ঠীস্বার্থ থাকবার সম্ভাবনা উডিয়ে দেয়া যায় না। সমপ্রতি কিছু ‘আলেম’ কর্তৃক অন্য ‘আলেম’ গোষ্ঠীকে বিস্ময়করভাবে নাস্তিকও বলা হচ্ছে। সন্দেহ নেই এটাও মারাত্মক প্রবণতা। বিদ্বেষ ছড়ায় যেসব ‘আলেম’, তাদের সাধারণ মানুষ ঠিকই বুঝে ফেলতে পারে।

মাহমুদুর রহমান

‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তার কঠোর সমালোচকগণও বলেছেন, এভাবে মত প্রকাশে বাধা দেয়া মেনে নেয়া যায় না। ব্যারিস্টার রফিকুল হক, এ জে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব হোসেন, আসিফ নজরুল। এই চারজন আইন বিশেষজ্ঞ বলেছেন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার সংবিধান পরিপন্থি এবং তারা বলেছেন, তাকে রিমান্ডে নেয়া আইনবিরোধী। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা সংবিধানের ৩৯ ধারার পরিপন্থি।

এই চার আইন বিশেষজ্ঞ মিথ্যে বলছেন কি? যদি মিথ্যা না বলেন, তাহলে সরকার এই কাজটি কেন করলো তার অর্থ পরিষ্কার। সরকার কর্তৃক অমন প্রকাশ্য আইন লঙ্ঘন বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় কি? চায় না। এই চার আইন বিশেষজ্ঞ তো ভালভাবেই জানেন ‘সাইবার অপরাধ’ কাকে বলে এবং ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ কাকে বলে। তাই তারা জানাচ্ছেন, জাতিকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন। সরকারের এই আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা জাতির জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর।

আইনের পক্ষপাতদু্‌ষ্ট ব্যবহার

আইন আর আইন, নতুন আইন পুরান আইন, চট করে সুবিধা পাওয়ার জন্য সংশোধিত আইন। আইন দিয়ে সন্ত্রাস [জুডিশিয়েল টেররিজম]। আইন দিয়ে সুবিধা আদায়। আইন দিয়ে হুমকি। আইনের তলায় বাক স্বাধীনতা হরণ। পক্ষপাতদু্‌ষ্ট আইনের ব্যবহার। অপক্ষপাতদুষ্ট থাকবার জন্য সেই যে Justice Is Blind কোথায়? এখন তো পক্ষপাতদুষ্টতার ব্লাইন্ডনেস। আদালতের নিজের চোখ, যে চোখ সম্মানিত, যে চোখ অধিকার রক্ষার প্রহরী সে চোখ কই? দেশের আইনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করবার অধিকার কে দিল ক্ষমতাসীনদের? একেই বলে কি-না অভিশপ্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা!

বিভ্রান্তির স্তূপ

স্বাধীনতার পর এই সময়ে বোধ হয় সবচেয়ে বেশি তথ্য বিভ্রান্তি, জ্ঞান বিভ্রান্তি, শত্রু বিভ্রান্তি, মিত্র বিভ্রান্তি এবং খাঁটি মিথ্যাচারের কবলে পড়েছে বাংলাদেশের মানুষ। চতুর্দিকে বিভ্রান্তির স্তূপ! সকল পক্ষের গুরুগণ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন ঢালাওভাবে না-বলে বরং বলা ঠিক বোধ হয়, সকল পক্ষের কিছু লোক নিজেদের মতলবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ‘আলেম’গণের তরফ থেকেও নানা প্রকার বিভ্রান্তি আসছে। বড় ‘আলেম’ ছোট ‘আলেম’ ফ্যাসাদি ‘আলেম’ বুঝবার জন্য যতোটা দ্বীনি শিক্ষা থাকা দরকার, বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমানের সে শিক্ষাটুকুও নেই। প্রকৃত দ্বীনি আলেম বিভ্রান্তির জাল রচনা করেন না। যাদের এই বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রবণতা রয়েছে, তারা খুব বেশি দূর যেতে পারবেন না, অতীতেও এমন নজির আছে।

লেবেল লাগানোর প্রবণতা

কোন মানুষকেই তার কোন কথা বা কোন কাজের কারণে ঢালাওভাবে ব্যক্তিটার ওপর লেবেল লাগিয়ে অপাংক্তেয় করে ফেলা ঠিক না মনে করি। মনে হয়, মানুষ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় নানা পর্যায় অতিক্রম করে জীবনের। সে নিজেও তার কিছু ‘ভুল’ দেখতে পায়। কোন ইজম মানুষকে ধরে রাখে না, মানুষ কখনও কখনও কোন ইজমের ছায়ায় যায় আবার বেরিয়েও আসতে পারে যদি লোকটির মধ্যে অনুসন্ধিৎসা থাকে, কূপমন্ডুক/টিপিক্যাল আদম সন্তান না-হয়। ঢালাও অভিযোগ তোলার আগে নিজের সাথে বোঝাপড়া করা দরকার। এই প্রবণতা বাংলাদেশের যথেষ্ট ক্ষতি করে আসছে। নির্বিচারে ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ ‘রাজাকার’ এবং ঢালাওভাবে ‘নাস্তিক’ ‘ধর্মবিদ্বেষী’ লেবেল লাগানো হচ্ছে। অসত্য নয়, বাংলাদেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলের মধ্যে লাখ লাখ ‘ভাল মানুষ’ আছে। আওয়ামী লীগ মানেই একেবারে নষ্ট না, বিএনপি মানেই একেবারে অপাংক্তেয় না, জামায়াত-শিবির মানেই একেবারে নির্মূল করবার প্রসঙ্গ না। অমুক দল একেবারে বরবাদ আর তমুক দল একেবারে ফেরেশতা, এসব কথা সকলের জন্য বরবাদি নিয়ে আসে।

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা নিয়ে

‘শাহবাগ উন্মোচন’র পর বিস্ময়কর ‘মতিঝিল উন্মোচন’ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক ‘মতিঝিল উন্মোচন’ অধিক ওজনসম্পন্ন গণ্য হওয়ার একটি প্রধান কারণ প্রবল প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বিশাল মহাসমাবেশ তারা করেছেন। তাদের তের দফা দাবি নিয়ে দেশের মাথাওয়ালা মানুষদের মধ্যে সারগর্ভ আলোচনা হতে পারে। ইসলামের ইতিহাস ঘেঁটে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা সঠিক তা প্রয়োগ করা যেতে পারে। হেফাজতের আলেমদের কোনো ভুল সুন্দরভাবে উত্থাপন করা যায়। তারাও তো ভুলের ঊর্ধ্বে নন। ইতিমধ্যে টক শো-তে এসে হেফাজতের আলেমগণ জানিয়েছেন তারা কি কারণে শাহবাগের ‘গণজাগরণ মঞ্চ’র বিরোধিতা করছেন। তাদের কথা অযৌক্তিক নয়। তারা বলেছেন, ব্লগে যারা ইসলাম বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন, সরকার এবং ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ তাদের ছায়া বা আশ্রয় বা ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে বিবেচনা করছেন বলেই তারা সরকার ও ‘গণজাগরণ মঞ্চ’র বিরোধিতা করছেন এবং শাস্তি দাবি করছেন।

হেফাজতের তের দফা নিয়ে ইতিমধ্যে কেউ কেউ নানা প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন যুক্তি দেখিয়েছেন। ‘মধ্যযুগীয়’ লেবেলও লাগিয়েছেন। যারা প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, তাদের মধ্যে আবার দুই পক্ষ। এক পক্ষ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জামায়াত-শিবির এবং হেফাজতে ইসলাম বিরোধী অবস্থানের পক্ষে কিছুটা সরাসরি আর কিছুটা অপ্রত্যক্ষভাবে মত প্রকাশ করেছেন। আরেক পক্ষ শাহবাগ পক্ষ এবং হেফাজত পক্ষ উভয় তরফ থেকে একই ধরণের তীব্র বিনাশি প্রবণতা আসছে বলে জানিয়েছেন। উভয় তরফের ভাল-মন্দ নিয়ে যারা ভাবছেন, তার একটা শান্তির উপায় বের করতে চাচ্ছেন বলা যায়। কিন্তু ঘুরে-ফিরে প্রধান বিরোধের একটা পক্ষে থাকবার প্রবণতা লালন করছেন, তারা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ক্ষতিকর প্রবণতা লালন করছেন। উল্লেখ্য, এই প্রসঙ্গে এ-ও উঠে আসছে যে হুট করে ইসলামী আচরণবিধিকে ‘মধ্যযুগীয়’ বলাও এক ধরনের অমূলক ভয়। তারা দেখাচ্ছেন ইসলামের ইতিহাসে সভ্যতার স্বর্ণযুগও আছে। এই প্রেক্ষিতে মূল ব্যাপারটা হলো, ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলার আগে বক্তার নিজেকেই জিগ্যেস করা উচিত তিনি ইসলাম কতটুকু গভীরভাবে জানেন, না-জানার দায়টা তার নিজের। না-জেনে কোন ধর্মের ওপর মিথ্যা আরোপের প্রবণতা মারাত্মক ক্ষতিকর সমাজের জন্য দেশের জন্য।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.