নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি

শুদ্ধ হোক তোমার মন,ইতিবাচক হোক তোমার দৃষ্টিভঙ্গি,প্রকাশ হোক তোমার কর্মে,চেতনায় ও মননে ।

রাসেল মাহমুদ মাসুম

আমি খুব সাধারণ একটি মানুষ।

রাসেল মাহমুদ মাসুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাচন কি বিএনপি ছাড়া !

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৮

সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রকাশিত ফোনালাপে প্রমাণিত হয়েছে নিজ নিজ অবস্থানে অনড় দুই নেত্রী। সর্বশেষ সংশোধিত সংবিধানের আওতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন করতে শেখ হাসিনা সংকল্পবদ্ধ। তার যুক্তি, অনির্বাচিত কারও হাতে ক্ষমতা দিয়ে, নির্বাচিত সরকার চাওয়া আর নয়। গণতান্ত্রিক যাত্রাপথকে সুগম করতে তিনি বদ্ধপরিকর। সংবিধানকে উপেক্ষা করার মানুষ তিনি নন। যে কোনো মূল্যে সংবিধানকে মেনেই নির্বাচন করতে চান। পৃথিবীর আর দশটা গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার থাকে, সেই আদলে এগুতে চান তিনি। অন্যদিকে, বেগম জিয়ার ঘোষণা, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচনে গেলে, সেই সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে, এমন ব্যবস্থা আনা হোক, যাতে নির্দলীয় চরিত্রের নির্বাচনকালীন সরকার থাকে। কোনো অবস্থাতেই শেখ হাসিনা এমনকি স্পিকার অথবা প্রেসিডেন্ট যাদের দলীয় পরিচয় সুস্পষ্ট, তাদের অধীনে তিনি নির্বাচনে যেতে আগ্রহী নন। প্রয়োজনে তিনি এরকম নির্বাচন প্রতিহত করতে প্রস্তুত। তবুও, তার ভাষায়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন না।

তাহলে এখন কী হবে?

নির্ধারিত সময়ে কি নির্বাচন হবে?

প্রধানমন্ত্রীর সংবিধান সূত্র মানলে, অবশ্যই হবে।

যথাসময়ে, প্রয়োজনে বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন হবে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড দেখলে বোঝা যায়, দ্রুতই তারা সরকারের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে তৎপর হবেন। অচিরেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হবে।

অন্যদিকে, যারা সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন চান, তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, শেষ পর্যন্ত এই একক নির্বাচন বানচাল হবে। সহিংসতা আর সংঘাত বহাল থাকলে এরকম পরিস্থিতিতে দেশে জরুরি অবস্থা আসতে পারে। ১/১১ এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। নির্বাচন সুদূরপরাহত হয়ে উঠতে পারে।

কেউ কেউ বলেন, দুই নেত্রীর পরস্পর বৈরিতা যাই থাক না কেন, তারা দুজনেই ১/১১ এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে চান। শেষ সময়ে তাদের সমঝোতা হবেই। এবং সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তাহলে চোখের সামনে তিনটি সম্ভাবনা সুস্পষ্ট।

এক. বিএনপিকে ছাড়াই আওয়ামী লীগের ভাষায় সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন।

দুই. নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়া। জরুরি অবস্থা জারি। ১/১১ আদলের সরকারের ক্ষমতায় আসা।

তিন. দুই দলের সমঝোতায় একটি নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান।



২.

এই তিন ফর্মুলার কোনটির সম্ভাবনা বেশি?

আপাতদৃষ্টিতে ফর্মুলা ওয়ান এগিয়ে আছে। শেখ হাসিনা এবং তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি যেসব ভাষ্য দিচ্ছেন, তাতে সুস্পষ্ট মাতা-পুত্রের প্ল্যান হচ্ছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন। প্রয়োজনে ছাড় দিয়ে সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই সর্বদলীয় ক্যাবিনেটে ১৪ দলের শরিকদের উপস্থিতি থাকবে। এর বাইরে জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রতিনিধি থাকতে পারে। টেকনোক্র্যাট কোটায় আওয়ামী মনোভাবাপন্ন দু’একজন সুশীলকে দেখা যেতে পারে।

কিন্তু কেন এই ফর্মুলা ওয়ান প্রীতি?

এক. শেখ হাসিনা এ যাবৎ যেসব নির্বাচনপূর্ব জরিপ হাতে পেয়েছেন তাতে তিনি নিশ্চিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদলে একটি অদলীয় সরকারের হাতে নির্বাচন ছাড়লে, প্রশাসন ন্যূনতম নিরপেক্ষ থাকলে, আওয়ামী লীগের পরাজয় সুনিশ্চিত। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার সকল রিপোর্টার ফলাফলেই এ চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক, প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের জরিপেও সেই চিত্র দেখা গেছে। কাজেই জেনেবুঝে, বিএনপির হাতে ক্ষমতা দিতে তিনি আগ্রহী নন। ২০০৬ সালে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নির্বাচন নিয়ে যেরকম মনোভাব পোষণ করতেন। শেখ হাসিনা তার পুনরাবৃত্তি করছেন মাত্র।

দুই. সংবিধান সমুন্নত রাখা। আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করেছে। বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে বিচারকবৃন্দ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। কেননা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের যে বেসিক স্ট্রাকচার তার পরিপন্থী। যদিও, তিনি নবম ও দশম সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে জাতীয় সংসদ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা নবম ও দশম সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই করতে চান। যে অনুযায়ী পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে। কাজেই, সংবিধানকে অমান্য করার কোনো উপায় নেই।

তিন. আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাব। শেখ হাসিনাকে ভারত রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়। কেননা, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে, ভারতের নিরাপত্তাজনিত স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। বাংলাদেশের মাটিতে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দেন না শেখ হাসিনা। উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনা যে শক্ত ভূমিকা রেখেছেন তা ভারতকে সন্তুষ্ট করেছে। তাই ভারতীয় সেনা ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং কূটনীতিক নীতিনির্ধারকরা চান, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনা থাকুক। এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে হরদম সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অসাংবিধানিকভাবে কেউ যদি উৎখাত করতে চায়, শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াবে ভারত। ভারতের এই মিত্রতার শক্তি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে।

চার. শেখ হাসিনা মনে করেন, তারা উন্নয়নের যে ধারা শুরু করেছেন, তা অব্যাহত রাখতে হলে তাদের ক্ষমতায় থাকা দরকার। সুতরাং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে, তাতে বিএনপি না এলেও ক্ষতি নেই। সেই সরকার আগামী ২/৩ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারলে উন্নয়নের ধারা এমন পর্যায়ে যাবে, যাতে মানুষ সন্তুষ্ট হবে এবং আওয়ামী লীগকেই চাইবে।

পাঁচ. শেখ হাসিনার ধারণা, বিএনপির আন্দোলনের শক্তি নেই। জামায়াতকে মাঝে নিয়ে ছোটখাটো সন্ত্রাস চালালেও নির্বাচন প্রতিহত করার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা বিএনপির নেই। প্রশাসনকে শেখ হাসিনাবিরোধী করার জায়গাতেও নেই বিএনপি। কাজেই দু’চারটে হরতাল, অবরোধ দিলেও শেষ অবধি নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না বিএনপি।

ছয়. নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন দৃশ্যমান এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি, যা শেখ হাসিনার ভাবনার বিপরীতে যায়। অন্যদিকে, প্রয়োজনে বিএনপিকে ভেঙে বা বিএনপি থেকে লোক ভাগিয়ে এনে নির্বাচনে যাতে অংশ নেয়া যায়, সেজন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধিত হয়েছে। সুতরাং, আওয়ামীভাবাপন্ন নির্বাচন কমিশন সক্রিয় থাকলে, বিরোধী দলের পক্ষে সুবিধে করা সম্ভব নয়।

সে কারণেই পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় না ঘটলে, শেখ হাসিনা বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনের পথে হাঁটছেন।

সৌজন্যে - শুভ কিবরিয়া

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.