![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আকাশ ফঁুড়ে বেরিয়ে গেছে একটি নভোযান। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল পার হওয়ার পরই উত্তেজনায় ফেঠে পড়েছে বিজ্ঞানীরা। উল্লাসে একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে, আনন্দ অশ্রু মুছে চলছে। তার সঙ্গে কাজ করছে শঙ্কা। কেউ কেউ প্রচন্ড টেনশনে হাতের আঙ্গুল কামড়াতে শুরু করেছেন। জানেন না কেউ এতো দিনের পরিশ্রম সফল হবে কিনা। তবে লালগ্রহে নিজেদের অসি্তত্ব জানান দেওয়ার প্রথম এই পদক্ষেপে সেই দিনই ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। ঘটনাটি ১৯৬০ সালের। মার্স-১৬৬০ এ নামের পাঠানো এই মহাকাশ যান অবশ্য আকাশ পর্যন্ত যেতে পারে নি। তবে তা নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকনির্দেশনায় এটি পাঠানো হয়। এরপর একের পর এক নভোযান আকাশ ফঁুড়ে বেরিয়েছে। সফলতার অনেক কাছাকাছি মানুষ। লাল গ্রহ মঙ্গল যে আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। নতুন এই গ্রহটিকে হাতের মুঠোয় আনার স্বপ্নে বিভোর মানুষ একের পর এক অভিযান চালিয়েছে। শুরু থেকে এই পর্যন্ত এই অভিযানগুলোরই খন্ডাংশ
আতুড়কথন: মার্স-১৬৬০ এর মার্স-১৬৬০ বি এবং স্পুটনিক -২। কিন্তু সফল হয়নি, ধ্বংস হয়ে যায়। মার্স-১ নামের নভোযান ১৯৬২ সালে পাঠানো হয়। এই অভিযানটিকে সফল বলা যায়, কারণ মঙ্গলের ভূপৃষ্টে নামতে না পারলেও আমাদের অনেক তথ্য দিয়েছে তার চলার পথে। কিন্তু ১ লাখ ৯৩ হাজার কি. মি যাওয়ার পরই পৃথিবীর সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। হয়ত মহাকাশের কোনও কোনে এখনও সে ছুটে চলছে মানুষের বার্তা বাহক হয়ে। অথবা শেষ হয়ে গেছে জীবনপ্রদীপ মহাজাগতিক কিছুর ধাক্কায়। প্রথম মঙ্গলের ভূ-পৃষ্ঠে অবতরণ করে দুটি সোভিয়েত সন্ধানী যান, মার্স ২ এবং মার্স ৩। ১৯৭১ সালে উত্ক্ষেপিত এই দুটি যানই সোভিয়েত মার্স প্রোব প্রোগ্রামের অংশ ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, অবতরণের মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মাথায় দুটি নভোযানের সাথেই পৃথিবীর মিশন কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর কয়েক বছর পেরিয়ে যায়। নতুন করে শুরু করে নাসা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ১৯৭৬ সালে শুরু করে ভাইকিং প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামে দুটি অরবিটার এবং প্রতিটি অরবিটারের সাথে একটি করে ল্যান্ডার ছিল। দুটি ল্যান্ডারই ১৯৭৬ সালে মঙ্গলের ভূমিতে অবতরণ করে। ভাইকিং-১ প্রায় ৬ বছর এবং ভাইকিং- ২ সবমিলিয়ে তিন বছর কর্মক্ষম ছিল। নিয়ম করে পৃথিবীতে যোগাযোগও করত। ভাইকিং ল্যান্ডারগুলোর কল্যানেই প্রথম লাল গ্রহের রঙ্গিন ছবি আমরা দেখতে পাই। তারা মঙ্গলপৃষ্টের এতো নিখঁুত ও সুন্দর ছবি পাঠিয়েছিল যে তার কোনও কোনওটি এখনও ব্যবহার হয়। নাসার সফলতার পর সোভিয়েত বসে নেই। পাঠিয়েছে সন্ধানী যান ফোবোস-১ এবং ফোবোস-২। ১৯৯২ সালে মার্স অবজারভার অরবিটার ব্যর্থ হওয়ার পর নাসা ১৯৯৬ সালে মার্স গে্লাবাল সারভেয়ার প্রেরণ করে। শেষের অভিযানটি দারুণ সফল হয়। মহাকাশে প্রায় এক দশক একটানা কাজ করে সারভেয়ার। সারভেয়ার পাঠানোর এক মাস পরই নাসা সোজার্নার নামক একটি রোবোটিক যান পাঠায়। যা মঙ্গলের এরিস উপত্যকায় অবতরণ করে। এই অভিযান ছিল নাসার আরেকটি বড় ধরণের সাফল্য। এই অভিযানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। মঙ্গলের চমত্কার সব ছবি পাঠানোর জন্য সাধারণ মানুষ মঙ্গলের ব্যাপারে আরো বেশি জানার সুযোগ পায়।
একবিংশ শতকের অভিযান: একবিংশ শতাব্দি মঙ্গলের অভিযানের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বেশ কয়েকটি অভিযান সফল হয়েছে। সবচেয়ে বড় সফলতা এসেছে সম্প্রতি পাঠানো যান কিউরিসিটি থেকে। যা এখনও মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করছে। নাসার বিজ্ঞানীদের সূদীর্ঘ ১২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই রোভার যান কিউরিওসিটি। অভিযানটি শুরু হয় ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভারেল থেকে। এটির ছোট বড় সব মিলিয়ে ১৭ টি ক্যামেরা রয়েছে। পাথুরে মাটি খুঁড়ে দেখার জন্য রয়েছে শক্তিশালী ড্রিল মেশিন, রয়েছে পাথর চূর্ন বিচূর্ন করার মত শক্তিশালী লেজার রশ্মি। পৃথিবীতে সংকেত পাঠাতে রয়েছে আন্টিনা, রয়েছে রাসায়নিক গবেষনাগার, বিকিরন মাপার ডিটেক্টর। মঙ্গল পৃষ্ঠে এর গতি খুবই কম,সর্বোচ্চ ৪ সেন্টিমিটার/ সেকেন্ড। প্রায় আট মাস পর এটি ২০১২ সালের ৬ আগস্ট মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করে।
তবে একবিংশ শতকের মঙ্গল অভিযান শুরু হয় ২০০১ সালে মার্স অডিসির হাত ধরে। অডিসি হাইড্রোজেন সনাক্ত করেছে। ২০০৩ সালে ইউরোপীয় এস্পেস এজেন্সি (এসা) মার্স এক্সপ্রেস ক্রাফট উত্ক্ষেপণ করে। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি হারিয়ে যায়। ২০০৫ সালের ১২ই আগস্ট নাসা এই গ্রহের উদ্দেশ্যে মার্স রিকনিসন্স অরবিটার নামক একটি সন্ধানী যান উত্ক্ষেপণ করে।
ভবিষ্যত মঙ্গল ভাবনা: ভীনগ্রহে আছে নাকি মানুষের মতো কোনও প্রাণী। কিনবা মানুষের চেয়ে বুদ্ধিধর কোনও প্রাণের অসি্তত্ব। এ নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা চলছে। কিন্তু সত্য এখনও অধরা। আর এই প্রাণের অসি্তত্ব খঁুজে পাওয়াই এখন মানুষের মূল লক্ষ্য। কারণ, পৃথিবীর মতো মঙ্গলকে তারা বাসযোগ্য করে তুলতে চায়। তাই নাসার সঙেকেই সময় কাজ করছে রাশিয়া, চীনও। রাশিয়া এবং চীনের যেৌথ উদ্যোগে এক্সোমার্স নামক এই রোভার মঙ্গলপৃষ্ঠের ২ মিটার গভীর পর্যন্ত খনন করার ক্ষমতা রাখবে। এর মূল কাজ হবে মঙ্গলে জৈব অণু সন্ধান করা। আর বেশ কয়েকটি যান প্রস্তুত মঙ্গলের বায়ুস্তর ভেদ করার জন্য। ২০১৯ সালের মধ্যেই মঙ্গল নিয়ে প্রাথমিক অভিযান পর্ব শেষ করার ইচ্ছে আছে বিজ্ঞানীদের। আর এসা ২০৩০- ২০৩৫ সালের মধ্যে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর কথা ভাবছে। নাসাও ২০৩৭ সালের মধ্যে মঙ্গলে মানুষ প্রেরণের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। ভীনগ্রহের প্রাণী থাকলে, তাদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবে আর না থাকলে মঙ্গলের লাল গ্রাহই হবে আমাদের আরেক পৃথিবী।
©somewhere in net ltd.