![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগের কথা। মঙ্গলীয় বর্বর জাতির হামলা আর লুটপাটে অস্থির হয়ে যেত চীনের বাসিন্দারা। বর্বর এ জাতি নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে অবলীলায় বল্লম, তীর-ধনুকসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়ত চীনে। দুর্ধর্ষ এ জাতির নাম ছিল হুন। হুন নামে অসভ্য দসু্য জাতির আক্রমণের হাত থেকে বঁাচতে সীমানায় পাহারা বসিয়েও ফল পাওয়া যাচ্ছে না দেখে একটি বিশাল সীমানা প্রাচীর তৈরি করার সদ্ধিান্ত নেন চীনের প্রথম সম্রাট শি হুয়াং। হুন জাতির দেৌরাত্ম্য ঠেকানোর জন্য শুরু হয়ে গেল প্রাচীর বানানো। পাথর, ইট, মাটি ও কাঠ দিয়ে শুরু হয় এর নির্মাণকাজ। দেখতে-দেখতে তৈরি হয়ে যায় ৮ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার লম্বা একটি সীমানা বষ্টেনী। এ কথাই এত দিন জানা ছিল সবার। সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, এই প্রাচীর আসলে ২১ হাজার কিলোমিটার লম্বা। বিস্ময় বনে যেতেই হয় এত বড় প্রাচীর দেখে। কারণ চীনের মহাপ্রাচীর মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য।
প্রাচীর তৈরির খঁুটিনাটি : এই বিশাল প্রাচীর তৈরি হতে প্রায় হাজার বছর লেগে যায়। একটু করে কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন চীনা শাসকরা। রাজধানী বেইজিং থেকে প্রায় ৫১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ মহাপ্রাচীর। পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে অঁাকা-বঁাকা নদীর মতো এ প্রাচীর বুক দিয়ে আগলে রেখেছে চীনকে। সমতল ভূমি থেকে প্রাচীরের উচ্চতা হবে ৫ থেকে ৮ মিটার। ২৫ ফুট চওড়া এই প্রাচীরের ওপর দিয়ে একসঙ্গে ৬ অশ্বারোহী পাশাপাশি ছুটে চলে যেতে পারেন। প্রাচীরের প্রতি আধা কিলোমিটার অন্তর রয়েছে পাহারা চাহনি। এ রকম প্রায় ১ হাজার ২০০ পাহারা টাওয়ার ছিল। সেখান থেকে সীমানার বাইরে চোখ রাখতেন প্রহরীরা। আশঙ্কাজনক কিছু দেখলে আগুন জ্বালিয়ে সংকেত দিতেন অন্য প্রহরীদের। এভাবে একসঙ্গে প্রাচীরের ওপর পাহারায় থাকা প্রহরীরা সতর্কভাবে জেনে যেতেন শত্রুর অবস্থান। এ পদ্ধতিতে ধীরে-ধীরে শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করতেন দেশকে। সেই সীমানা রক্ষাকবচ আজ পৃথিবীর আশ্চর্যতম বস্তুর একটি। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। চীনের মহাপ্রাচীরখ্যাত এই সীমানা দেখতে প্রতি বছর দেশটিতে ভিড় করেন কয়েক লাখ মানুষ।
তৈরির ইতিহাস : খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে ১৬০০ শতক পর্যন্ত চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষার জন্য অনেক প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল। সেই প্রাচীরগুলোর সমষ্টিগত ফল আজকের প্রাচীর। তবে কাজ শুরু হয় ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে। চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াংয়ের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই সবচেয়ে বিখ্যাত। তবে এখন যে প্রাচীর টিকে আছে, এতে শির আমলের খুব কম অংশই বাকি আছে। বর্তমান প্রাচীরটি মিং রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হয়। নিজের সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য দীর্ঘ করে নির্মাণ করেছিলেন তিনি। এটি চীনের প্রাকৃতিক বাধাগুলো ছাড়াও অন্যান্য অঞ্চল পাহারা দেওয়ার কাজে ছিল প্রথম স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। এরপর সময়-সময় চলেছে প্রাচীরের পরিবর্ধন, পরিবর্তন, সম্প্রসারণ, পুনর্নির্মাণের কাজ। প্রাচীরের সীমানা শুরু হয়েছে সাংহাই পাস থেকে, শেষ হয়েছে লোপনুর নামক স্থানে।
পর্যটকদের আকর্ষণ বিন্দু : এই প্রাচীর ঘিরে পর্যটকদের আগ্রহের শেষ নেই। প্রতিদিন প্রায় ১৫ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়। কত শ্রমিক এর পেছনে অবদান রেখেছিলেন, এর ইয়ত্তা নেই। তবে এ প্রাচীর নির্মাণকাজ ছিল দারুণ ব্যয়বহুল। এ অর্থ ব্যয়ের বিরোধিতা করেছিলেন চীনের কমিউনিস্টের প্রবক্তা মাও সে তুুং। কিন্তু এ প্রাচীরই আজ চীনের রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ। চীনের এ প্রাচীর দেখতে প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার মানুষ আসে। তবে বন্ধের দিন মানুষের ঢল নামে। বিদেশিদের চেয়ে চীনের জনগণ প্রাচীর দেখতে আসে বেশি। কারণ এটি চীনের একটি জাতীয় পার্ক। প্রাচীরের টিকিট বিক্রির টাকায় চীন সরকারের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। এ প্রাচীর এখন চীনের জাতীয় গর্বের প্রতীক। বিশ্ব সভ্যতার একটি অমূল্য সম্পদ। এ প্রাচীর চীনের সীমান্তবর্তী ৫টি প্রদেশকে এক করেছে। বেইজিং শহরের পাশ ঘঁেষে রয়েছে একটি গেট। এ গেট দিয়েই সবচেয়ে বেশি লোক প্রাচীর দেখতে যায়। প্রাচীর ঘিরে কিছুটা দূরে-দূরে রয়েছে মনোরম রেস্টুরেন্ট ও শপিংমল। প্রাচীর ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য রয়েছে গাইড।
এখন চীনের প্রাচীরের অবস্থা বেশকিছু জায়গায় নাজুক হয়ে পড়েছে। কয়েকটি অংশে পাথর ও মাটি খসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বেশকিছু অংশ ইতোমধ্যে ধ্বংসও হয়ে গেছে। পর্যটনকেন্দ্রের কিছু অংশ পুনর্নির্মাণ করা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো থেকে বাড়ি এবং রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করা হয়। এ কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই বিশ্ব ঐতিহ্য।
©somewhere in net ltd.