![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতি বছর এশিয়া-আফ্রিকা থেকে হাজার হাজার উদ্বাস্তু ইউরোপে আসে বড় বড় নেৌকা কিংবা জাহাজে চেপে। অবৈধ পথে এতো বিশাল জনগোষ্ঠি প্রথমেই এসে থামে ইতালিতে। সেখান থেকে আবারও বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে পাড়ি জমায় যে যার যার স্বপ্ন দেশে। আর এভাবে ইউরোপে ঢোকার প্রাথমিক প্রবেশমুখ ইতালির ল্যম্পেদুসা দ্বীপ। প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশের জন্য ভূমধ্যসাগর হয়ে এই দ্বীপে সাময়িক আশ্রয় নেয়। কিন্তু এই আশ্রয়দাতা দ্বীপটিই কখনও কখনও মৃতু্যউপত্যকার রুপ ধারণ করে। শত শত মানুষকে গিলে নেয় এক এক বার। ভূমধ্যসাগর পার হয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে আসা অনেকে পঁেৌছানোর আগেই প্রান হারায়। তাই মোটা দাগে Èইউরোপের টর্্যাজেডি' নামে আখ্যা পেয়েছে ইতালির ল্যম্পেদুসা। কিছুদিন আগেই ভয়াবহ কিছু দুর্ঘটনার জন্য আবারও ফোকাস লাইটের নিচে চলে আসে ল্যম্পেদুসা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা গোটা ইউরোপে একটা ইলেকট্রিক শকের মতো কাজ করেছে। গত সপ্তাহে ল্যম্পেদুসা দ্বীপের কাছে অভিবাসীদের নেৌকা ঢুবে নিহত হয় তিন শতাধিক মানুষ। আর মাত্র দুদিন আগেই মাল্টা ও ল্যম্পেদুসা মধ্যবর্তী স্থানে নিহত হয় শিশুসহ ৫৫ জন।
ল্যম্পেদুসায় কয়েকদিন আগেও সাগর থেকে লাশ তোলা হয়েছিল। ইউরোপের উঁচু উঁচু কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে সমবেদনা জ্ঞাপন করে এসেছেন৷ ল্যম্পেদুসা টর্্যাজেডি যে সেটা তারা জানেন। জেনেও চুপ করে থাকেন। কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে সমবেদনা জানানোই তাদের জন্য লাভজনক।
এখন উত্তাল ভূমধ্যসাগর। তাই কিছুদিন আগেও ঢুবে যাওয়া নেৌকা থেকে উদ্ধারকাজ বিরতি দিয়ে চলছিল। সাগরের পেটে চলে যায় প্রায় ৫শ যাত্রী। ট্রাজেডিটা হচ্ছে এই নেৌকাটির আলো দেখেছিল পাড়ে থাকা উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু দূর্ঘটনার পর নেৌকাটি থেকে কোনও রকম সংকেত না আসায় বুঝতে পারেনি তারা বিপদে পড়েছে। বেশির ভাগ মারা গেলেও কিছু বঁেচে গিয়েছিল ভাগ্যের কারণে। বঁেচে থাকাদের অনুভূতি আরও ভয়াবহ। কয়েকজন জানিয়েছে ছোট্ট একটা নেৌকায় প্রায় ১৮ জন মানুষ উঠেছিল। বেশিরভাগেই শরীরে ঢেউয়ের আঘাতে ক্ষতের চিহূ। সেই দিনই আরও দুটো নেৌকা নিরাপদে পার পেয়ে গেলেও এই নেৌকাটি পার পায়নি।
আর ইতালির ল্যম্পেদুসার পরতে পরতে আছে বেদনার গল্প। জনসন ওফোরে, ঘানার নাগরিক৷ ল্যম্পেদুসার সামপ্রতিক ট্যাজেডিতে জনসন তার ভাই মাতি ওফোরেকে হারিয়েছেন৷ জনসন নিজে বঁাচলেও তার ভাই বঁাচেনি। তিনি জানান, অক্টোবরে সাগর খুব উত্তাল থাকে, তবুও জোর করে অভিবাসী পাঠানো হয়। জনসনকে এখন জার্মানিতে কাজ খুঁজতে হবে, কাজ পেয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হবে৷ নয়ত মাতির তিন অনাথ ছেলেমেয়ের দেখা শোনা করবে কে?
নাইজিরিয়া থেকে আসা বশিরও বলে, ইউরোপ উদ্বাস্তুদের বাঁচানোর জন্য কিছুই করে না। যে কারণে ২০১১ সালের ২৭ মে তারিখটিকে বশির কোনোদিনই ভুলতে পারবেন না৷ লিবীয় সেনারা তাকে জোর করে ঠেলেঠুলে যে জাহাজটিতে তুলে দিয়েছিল, সে জাহাজটিও লাম্পেদুসার উপকূলেই ডুবে যায়৷ বশির প্রাণে বাঁচলেও, তার ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে বাঁচাতে পারেননি৷
বারবার বিতর্ক আসে এই কথাটি ঘিরেই যে কিভাবে এই প্রাণহানি বন্ধ করা যায়। গত ২০ বছরে ২৫ হাজার মানুষ মারা গেলেও এখনও এই প্রশ্ন ঘিরে বিতর্কই চলছে। সমাধান নেই। ২০০৯ সালের দিকের ঘটনা। সেই সময় লিবিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী যেত ইতালিতে। আর এভাবে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য তত্কালীন ইতালির সরকারপ্রধান সিলভিও বার্লসকোনির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন লিবিয়ার সাবেক প্রধান মুয়াম্মর গাদ্দাফি। গাদ্দাফির সঙ্গে অভিবাসী পাঠানো নিয়ে চুক্তিতে আসে দেশটি। ফলে এই অমানবিক পরিস্থিতি সামাল দিতে দু দেশই একসঙ্গে কাজ করেছে বিধায় সে কয়েক বছর দুর্ঘটনায় কম লোকের প্রাণহানি ঘটত। কিন্তু দু বছর পেরুতে না পেরুতে এই তথাকথিত চুক্তি ভেঙ্গে শুরু হয় আগের মতো অভিবাসীদের আনাগোনা। এগুলো দেখভালো করার কেউ নেই। কারণ, এভাবে অভিবাসীর মিছিল ঠেকাতে হলে প্রথমে সীমানে্ত চাই শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যা নেই ইতালির সীমানে্ত। তাছাড়া আর তার চেয়েও বড় কথা এভাবে অবৈধভাবে আসা অভিবাসীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে নারাজ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলো। তাই ঢুবে গেলে কেউ কেউ এসে সমবেদনা জানায়, এর বেশি কিছুই করে না। জাতিসংঘের মহাসচীব বান কি মুন বলেন, এভাবে অভিবাসীদের যাতায়াত যেহেতু বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই প্রয়োজন আরও নিরাপদ চ্যানেল আর অভিবাসী পারাপারে কঠোর নিয়ম। আর এভাবে অভিবাসীদের জীবন বিপন্ন করার জন্য চোরাকারবারী ও আদম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এর কিছুই হয়তো সোজা না। তাই এই ঘটনাগুলোকে ট্রাজেডি হিসেবে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না কতর্ৃপক্ষ। ভূমধ্যসাগর এখন অভিবাসীদের গণকরবে রুপ নিচ্ছে।
পোপ ফ্রান্সিসও এই দুর্ঘটনার জন্য লজ্জিত হয়েছে। কিন্তু কাউকেই দোষ দিতে পারছেন না, কি কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটছে।
©somewhere in net ltd.