নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম ,জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয় ।

রুপ নারানের কুলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগত স্বপ্ন নয়।

আদম_

হিজলের, তাল, বুনোঘাস, গুল্মলতার ঝোপে, কাশবন, বাশঝাড়, ভরা ভাদরের নদীকূলে। ফেলে এসেছি শৈশব আনমনে কোনো এক কালে হারিয়ে ফেলেছি গোধুলি লগ্ন মঙ্গল ধুপে। রাতজাগা চোখে, জোনাকির আলো, কদমের ঘ্রাণ সবকিছু পলাতক সময়ের স্রোতে।

আদম_ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ গুড ডে অব আদম

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:২০

ভাই ওসমানি মিলনায়তনটা কোন দিকে?

এই প্রশ্নের জবাবে পান-দোকানি কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর না সূচক মাথা নাড়লেন। মানে উনি ইহজনমে এই জায়গার নাম শুনেন নাই।



আশ্চর্য প্রেসক্লাবের সামনে দোকান অথচ ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তন চিনেনা। এইগুলারে ঢাকা আসার পারমিশন দিছে কে তা খোজ করা দরকার।



এরপর পাকড়াও করলাম কেতাদুরস্ত এক ভদ্রলোককে।



উনি একবার এদিক তাকান তো আরেকবার ওদিক। আমিও বুঝে গেলাম কি উত্তর পেতে যাচ্ছি। এখনি হয়তো দাত কেলিয়ে বলবেন “না ভাই চিনিনা”। আমাকে অবাক করে দিয়ে মতস্য ভবনের দিকে দেখিয়ে বললেন “এদিকে হতে পারে”। ওই বেটা, “হতে পারে” আবার কি! পরিস্কার করে বল চিনিনা। নাহ বাংগাল কোন দিন মানুষ হবেনা। পরিস্কার ভাবে “না” বলতে পারাটা একটি বিশেষ গুণ। যে গুণটি আমার নিজেরও নাই। তবে চেষ্টা করছি গুণটি আয়ত্ত করার।



আমারই ভুল হয়েছে, পরিস্কার ভাবে জেনে আসা উচিত ছিলো মিলনায়তনটা ঠিক কোথায় অবস্থিত। গুগলের সাহায্যও নিতে পারতাম। যার কাছ শুনে এসেছি সে বলেছিলো সচিবালয়ের আশেপাশেই ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তন। আমি দাড়িয়ে আছি সচিবালয়ের পিছনের দিকটায় অথচ ওটা সচিবালয়ের সামনের দিকটায় অবস্থিত। আমিও আবুল কম না, এত দিন ধরে ঢাকায় আছি, চিনি শুধু সংসদ ভবন আর চন্দ্রিমা উদ্যান। আমাকেও যে ঢাকা আসার পারমিশন কে দিল তাই ভাবছিলাম।



অবশেষে পুলিশের সহায়তায় সন্ধান মিলল।



ওসমানির প্রবেশদ্বার খুব সুন্দর করে সাজানো। পত পত করে রং-বেরং এর পতাকা উড়ছে। বড় বড় করে লেখা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ২০১৩। আয়োজনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পুলিশ-বিডিআর-সেনা বাহিনীর সদস্যদের কর্মব্যস্ততায় মুখরিত সারা এলাকা।

আহ! স্বাধীনতা! চার-পাচ অক্ষরের ছোট একটা শদ্ব। কি মধুর! কি বিশাল! কত আকাংখিত; যার বিনিময়ে জীবন দেয়াটা কোন ব্যাপারই না। স্বাধীনতা আমরা ভিক্ষা করে আনিনি। অর্জন করেছি। জানের দামে অর্জন করা আমাদের পবিত্র স্বাধীনতা।



আজ আটজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই পুরস্কার দেয়া হবে। এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাকে-চক্রে আমিও এই অনুষ্ঠানের একজন আমন্ত্রিত অতিথি। একেই বলে ভাগ্যের ফের। ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডানো।



১৯৭৭ সাল থেকে এই পুরস্কার দেয়া হয়ে আসছে। ২০০৩ সালে মাত্র দুজন ব্যক্তি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (মরণোত্তর) ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (মরণোত্তর)।



১৯৭৭ সালে ১০ জন ব্যক্তি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন- নামের তালিকায় সবার উপরের দিকে আছেন বাংলার নয়নের মনি, বঙ্গের অবিসংবাদিত রত্ন, মজলুম জননেতা, গরীবের বন্ধু, ভাসান চরের মাওলানা- মরহুম জ্বনাব মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।

আমি একটা অতিরিক্ত ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছি। কর্মরত সিপাহী-কনস্টেবলদের থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে। হাজার হলেও একটা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি বলে কথা । ইনভাইটেশন কার্ডটাকে একটু কায়দা করে ধরেছি যাতে সবাই দেখতে পারে ; ভাবখানা যেন এমন “দেখ বেটারা আমি কে” । নিজেকে ভি-আই-পি প্রমাণের প্রাণান্তকর চেষ্টার মধ্যে এক কলস পানি ঢেলে এক বিডিআর সদস্য আমাকে জিঞ্জাসা করলো “বাই অনুষ্ঠান কখন শুরু হপে”। হাদারামটার কত্ত বড় সাহস। আমিও কমনা। দাড়া ভি-আই-পির সাথে কথা বলার মজা দেখাচ্ছি। পাক্কা ছয় সেকেন্ড পর অন্য দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম- “১০ টায়”। বিডিআর সদস্যটি বললো এই অনুষ্ঠানতো বিটিভি সরাসরি দেখাবে। আরে এই খবরতো জানতামনা! বাড়িতে খবরটা জানাতে হয়। তবে আমাকে এখন মাপা-হাসি হাসতে হবে, মেপে হাটতে হবে, মেপে কথা বলতে হবে (ভিআইপিদের মত)। আমার জীবনের সমস্ত অভিনয় প্রতিভা ঢেলে আশ্চর্য হওয়া থেকে বিরত থাকলাম। খুব ধীরে সুস্থে হেটে একটু দুরে গেলাম; সত্যি বলতে কি আমি জীবনে কখনো এমন ভাবে হাটিনি (বাপরে ভি-আই-পি হওয়ার অনেক যন্ত্রনা)। ফোনে চিতকার করে বলতে লাগলাম “ওই বিটিবি খুইলা বইসা থাক; আমারে দেখাবে”। ওমা! পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি অতি-সুর্দশনা একটা মেয়ে দাড়ানো। নিশ্চয় আমার ফোনালাপ শুনে ফেলেছে। ভি-আই-পি হবার বাসনায় আবারো এক কলস পানি ঢালার শদ্ব। পরে দেখলাম ওই মেয়েটি শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য ইশারায় সংবাদ পাঠ করে।



এক এক করে সবাই আসতে শুরু করেছে। প্রথমেই এলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গায়ে সেই চির পরিচিত সাদা শার্ট। এক মহিলার সাথে উচ্চ-স্বরে কথা বলছেন। এলেন মখা আলমগীর।টিভিতে সবসময় যে ঢ্রেসটা দেখা যায় সেটাই পড়া। এসে চুপচাপ বসে রইলেন। কেউ তার সাথে তেমন কথা-টথা বললনা। তারপর এলেন দিপু আপা, পড়নে টিভিতে সবসময় যে ঢ্রেসটা দেখা যায় সেটাই। ওনার সাথেই দেখলাম লোকজন একটু বেশি কথা বলল। ঘটনাকি! সবার কি একটা করে জামা-কাপড় নাকি। প্রায় ঝড়ের বেগে মিলনায়তনে ঢুকলেন আবদুল মুহিত। ঢুকেই টুপ করে এক জায়গা বসে পড়লেন। মন্ত্রীদের কারও সাথেই কারও খুব একটা মেলামেশা চোখে পড়লনা। সবাই সবার সাথে একটা দুরত্ব বজায় রাখলেন।কেমন যেন একটা ছাড়া ছাড়া ভাব। মনেই হলোনা তারা সবাই মিলে একটা টিম। হয়তো ভি-আই-পিদের এটাই নিয়ম।

আমার আসনের ওপরের সারিতে ঠিক আমার ঘাড় বরাবর খুব সুন্দরী একটা মেয়ে বসা। আমি ঘাড়ের ব্যায়াম করার ছলে বারবার তার দিকে তাকাচ্ছিলাম। ভাবখানা এমন যে, আমার ঘাড় ব্যাথা করছে তাই ঘাড় ঘুরাচ্ছি, আপনাকে দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। তার ঠিক পাশ্বে বাদর মুখো একটা মেয়ে। বাদর মুখোটা চুরি করে ভিতরে মোবাইল ফোন এনেছে। উচ্চ-স্বরে ফোনে কথা বলছে। মাঝে-মাঝে ফোনের রিংটোনে বেজে উঠছে -বিরক্তিকর অবস্থা। আইন ভঙ্গ করা বাংগালদের স্বভাব। প্রধানমন্ত্রী ঢোকার সাথে সাথে বাদরমুখোটা বলে উঠল “ লা ইলাহা ইল্লা আনতা ছোবহানাকা…………”। কিসের মধ্যে কি, পানতা ভাতে ঘি।

সুন্দর সাবলীলভাবে অনুষ্ঠান শেষ হলো। আমাদের বলা হলো তিনতলায় যান, সেখানে কিঞ্চিত জলযোগের ব্যবস্থা আছে। আবার হুড়োহুড়ি। নিজের প্যাকেটটা বগলদাবা করে, মনে মনে ভাবলাম আরেকটা প্যাকেট মেরে দেই। সব জায়গায় বরাবরই তাই করে আসছি। কিন্তু এবার বাদ সাধলেন বিবেক মহাশয়, বললেন “দেখ আদম, তুই কিন্তু আইজকা রাষ্ট্রিয় অতিথি, প্লিজ বাপ, আইজ অন্তত এই কাম করিসনা”। নাহ বিবেক শালায় মাঝে মাঝে খুব যন্ত্রনা দেয়।

“যে জাতি গুণের কদর করেনা, সেখানে কখনও গুণী জম্নায়না” । গুণী মানুষ চিরকালই থাকে, প্রয়োজন তাদের জম্ন দেয়া। দায়িত্বটা আমাদের সবার। গুণী মানুষদের এই কদর করার ইতিহাসের একজন সাক্ষী হতে পেরে আমি গর্বিত।





মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৩১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: “দেখ আদম, তুই কিন্তু আইজকা রাষ্ট্রিয় অতিথি, প্লিজ বাপ, আইজ অন্তত এই কাম করিসনা”। নাহ বিবেক শালায় মাঝে মাঝে খুব যন্ত্রনা দেয়।

সবার বিবেকটা যদি টাইম মত যন্ত্রনা দিত!!!! ;)

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫

আদম_ বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার। বিবেক মরে যায়নি এখনো্। হয়তো তাই মাঝে মাঝে ঝামেলা করে। ভালো থাকবেন।
ভৃগু মানে কি?
ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০৫

সঞ্জয়ওঝা বলেছেন: আপনিতো ভয়ানক ভি.আই.পি.

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:২৯

আদম_ বলেছেন: খেপাইতাছুইন।

৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৮:২৮

আদম_ বলেছেন: শুভ নববর্ষ

৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৮:৪৬

লাবনী আক্তার বলেছেন: “দেখ আদম, তুই কিন্তু আইজকা রাষ্ট্রিয় অতিথি, প্লিজ বাপ, আইজ অন্তত এই কাম করিসনা”।

=p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~


হাসতেই আছি রাষ্ট্রিয় অতিথি! ;) ;) :P :P

১৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:১১

আদম_ বলেছেন: হাসো ; আরও হেসে হেসে ভেসে যাও তুমি।
কাদো ; আরও কেদে কেদে হালকা হও তুমি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.