নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা বলি..... বর্তমানের- কথা বলি ভবিষ্যতের.......

মাই নেম ইজ রেজাউল ইসলাম। এন্ড আই অ্যাম নট এ রাজাকার !!!

মোঃ রেজাউল ইসলাম

আমি নতুন সর্বদা----

মোঃ রেজাউল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

এত সুখ, সইব কেমন করে......... a tribute to নিলুফার ইয়াসমিন

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫২

"এত সুখ, সইব কেমন করে.........

বুঝি কান্নাই লেখা ছিল ভাগ্যে আমার, সুখেও কান্না পায় দু চোখ জুরে.........''



আচ্ছা এই গানটার কথা আপনার মনে আছে?

হৃদয় বিদীর্ণ করে দেয়া এই গানের শিল্পী ছিলেন নিলুফার ইয়াসমিন।





বাংলা গানের এত অতি প্রিয় আর পরিচিত নাম নিলুফার ইয়াসমিন। অথচ তার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য ইন্টারনেটে পেলাম না। বাংলাদেশের টেলিভিশন মিডিয়াতেও আর তাকে দেখি না। আমরা অনেকেই তাকে ভুলতে বসেছি। অথচ কি অসাধারন সব বাংলা গান তিনি উপহার দিয়েছেন। নজরুল গীতি তার কণ্ঠে কি অসাধারনই না লাগে।



নিলুফার ইয়াসমিন কে নিয়ে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে একটা facebook page খুলেছি। আপনারা লাইক দিয়ে এবং শেয়ার করে এই মহান শিল্পীকে আবারও বাঁচিয়ে তুলতে পারেন।



ফেসবুক পেজের লিঙ্কঃhttps://www.facebook.com/pages/Nilufar-Yasmin-Singer-নিলুফার-ইয়াসমিন/1414132165533952?sk=info



------------------------------------------



শিল্পীর পরিচয়



নীলুফার ইয়াসমীন- বাংলা গানের বরেণ্য শিল্পী৷ ভাল গাইতেন বটেই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ভক্তি৷ তাঁর অপার ভক্তি ছিল সংগীতের প্রতি, শিক্ষকের প্রতি, শ্রোতার প্রতিও৷ একনিষ্ঠ শিল্পী বলতে যা বোঝায়, নীলুফার ছিলেন তা-ই৷ অনেক হল্লায় সৃজনশীলবাংলা গান যখন ভেসে যাচ্ছিল, তখন গুটিকয় শিল্পী ভালোবাসা দিয়ে উজ্জীবিত করেছন আমাদের নিজস্ব গীতি, নিঃসন্দেহে নীলুফার ইয়াসমীন তাঁদের অন্যতম৷



ঊইকিপিডিয়া লিঙ্কঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Nilufar_Yasmin



নানা মুর্শিদাবাদের এস্টেটের এ্যাডভোকেট এবং বেগম জয়তুননেছার সন্তান বেগম মৌলুদা খাতুনের বেড়ে উঠা সঙ্গীত পরিমন্ডলে৷ সরকারি বড় কর্মকর্তা মৌলুদা খাতুনের মামার সাথে পরিচয় হয় তখনকার দিনের আইসিএস ক্যাডার (সিভিল সার্ভিস অফিসার) লুত্ফর রহমানের৷ লুত্ফর রহমান ও মৌলুদা খাতুনের বিয়ে হয় ১৯৬৮ সালের ২৬ শে এপ্রিল৷ ১৯৪৮ সনের ১৬ই ফেব্রুয়ারি কলকাতার ১৩০/অ পার্ক স্ট্রিটের দোতলায় পাঁচ বোনদের মধ্যে চতুর্থ জনের আগমন৷ তত্কালীন গোঁড়া সমাজে বারবার কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার যন্ত্রণা সচরাচর বইতে হতো মাকে৷ সেই ঘূণেধরা সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে লুত্ফর রহমান কোলে তুলে নিলেন নীলা অর্থাৎ নীলুফার ইয়াসমীনকে৷



ইউটিউবে নিলুফারের অনেকগুলো গান পাবেন একসাথে। লিঙ্কঃ http://www.youtube.com/watch?v=VJu6h9SyPlk&list=PL8487D5A7ED66022E



নীলুফার ইয়াসমীনের পিতা ছিলেন অবিভক্ত বাংলার একজন সিভিল সার্ভিস অফিসার৷ সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল প্রবল৷ পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি গান গাইতেন৷ আর নীলুফার ইয়াসমীনের মা হারমোনিয়াম বাজাতেন৷ পিতার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার মুকুন্দপুর গ্রামে৷ মুকুন্দপুরের 'পন্ডিত বাড়ি' বললে ঐতিহ্যবাহী এ পরিবারটিকে সবাই চেনেন৷ বহু আগে থেকেই এবাড়ির লোকজন শিক্ষা-দীক্ষায় ছিল অগ্রগামী৷ নীলুফারের মা মুর্শিদাবাদের স্বনামধন্য ওস্তাদ কাদের বখশের শিষ্য ছিলেন৷ তিনি ভালো গান গাওয়া ছাড়াও ভালো হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন৷

কখনওবা মুর্শিদাবাদ, কখনওবা রাজশাহী কিংবা ঢাকায় থাকলেও নীলুফার কখনো সুরের পথ থেকে বিচ্যুত হননি৷ মায়ের কাছে সঙ্গীতে হাতেখড়ি৷ বাসায় গ্রামোফোন রেকর্ড প্লেয়ার ছিল৷ পিতা নতুন নতুন রেকর্ড কিনে আনতেন আর বোনেরা সবাই মিলে সে সব রেকর্ডের গান বারবার বাজিয়ে শুনে শিখে ফেলতেন৷ আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা, কমলাঝরিয়া, হরিমতী, কে মল্লিক, জ্ঞান গোস্বামী, শচীনদেব বর্মণ, মৃণালকান্তি ঘোষ,কমল দাশগুপ্ত, আব্বাসউদ্দীনসহ আরো বিখ্যাত সব শিল্পীদের গাওয়া রেকর্ড থেকে তাঁর মা গান তুলে গাইতেন এবং তাঁর গাওয়া থেকেই নীলুফার গান শিখে ফেলতেন৷ তাঁর মা-ই তাঁকে বলতেন যে এ-সব গানগুলির রচয়িতা কাজী নজরুল ইসলাম৷ তখন থেকেই নজরুল-সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আকর্ষণ দূর্বার, যা আমৃত্যু জাগ্রত ছিল৷



চার বছর বয়সে একবার কাউকে কিছু না বলে ছোট্ট নীলু পার্কস্ট্রিটের দোতলা থেকেনেমে সোজা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন৷ রিক্সা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বাবা লুত্ফর রহমান রাস্তা থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া নীলুফার কে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন৷ সেই সময় বাবা যদি নীলুফারকে উদ্ধার করে না আনতেন, তবে আজকে হয়তো শুদ্ধ সঙ্গীতাঙ্গনের পূর্ণতা অনেকাংশেই সম্ভব হতো না৷



সংগীত শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায়ও তাঁর ছিলো সমান মনোযোগ৷ তিনি আদমজী কটন মিলস্ স্কুল, বাংলাবাজার গার্লস স্কুল, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ ও সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এ অধ্যয়ন করেন৷ নীলুফার ইয়াসমীন ১৯৬৩ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৬৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে বি এ (অনার্স)এবং ১৯৭০ সালে ২য় শ্রেনীতে প্রথম হয়ে এম এ পাশ করেন৷



পাঁচ বোনের মধ্যে নীলুফার ইয়াসমীন ছিলেন চতুর্থ। তাঁদের কোন ভাই নেই৷ বড় বোন ফরিদা ইয়াসমীন ও মেজো বোন ফওজিয়া খান প্রতিষ্ঠিত সংগীত শিল্পী৷ সেজো বোন শিক্ষা বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী নাজমা ইয়াসমীন হক সংগীতের চর্চা না-করলেওএকজন ভালো শ্রোতা ও বোদ্ধা৷ তিনি ধানমন্ডি রেডিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ (ইংলিশ মিডিয়াম)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক৷ ছোট বোন সাবিনা ইয়াসমীন প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী৷



প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও অভিনেতা খান আতাউর রহমানের সঙ্গে ১৯৬৯ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন৷ একমাত্র পুত্র আগুন বর্তমান প্রজন্মের একজন প্রতিষ্ঠিত কন্ঠশিল্পী৷



নারায়ণগঞ্জের দুর্গাদাস-এর কাছে বড় বোনেরা গান শিখতেন, নীলুফার তাঁদের পাশে বসে থাকতেন৷ দুর্গা দাস বাংলাদেশ বেতারের ঢাকা কেন্দ্রে সেতার (উচ্চঙ্গ-সংগীত) বাজাতেন৷ মূলতঃ তাঁর উচ্চাঙ্গ সংগীত শেখা শুরু হয়ওস্তাদ পি সি গোমেজ এর কাছে ১৯৬৪ সালে৷ একাধারে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শেখেন৷ তারপর উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁ-র সুযোগ্যা ছাত্রী মীরা ব্যানার্জীর কাছে তালিম নেন৷ এরপর প্রখ্যাত সারেঙ্গী বাদক ওস্তাদ সগীরউদ্দীন খাঁ ওমুরশিদাবাদের স্বনামধন্য ওস্তাদ এ দাউদ সাহেব ও প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দীর্ঘকাল তালিম গ্রহণ করেন৷ তিনি নজরুল-সংগীতের প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছেন স্বরলিপিগ্রন্থ থেকে৷ স্বরলিপি অনুসরণ করেই প্রথম দিকে বেতার-টেলিভিশনে নজরুল-সঙ্গীত গেয়েছেন৷ এ প্রসঙ্গে বলা দরকার যে, ওস্তাদ পি সি গোমেজ তাঁকেপ্রথমদিকে কোনো রাগের বন্দিশ শিখিয়ে তার স্বরলিপি লিখে দিতেন৷ এমনিভাবে স্বরলিপির নিয়ম অনুসরণ করতে করতে এক সময় তিনি দেখলেন স্বরলিপি থেকে যে- কোনগান সহজেই ওঠানো যায়৷ পরবর্তীতে তিনি প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী, নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপিকার ও বিশেষজ্ঞ শেখ লুত্ফর রহমান ও সুধীন দাশ-এর কাছে নজরুল-সঙ্গীত শিখেছেন৷ নীলুফার ইয়াসমীন বাংলাদেশ বেতারের ছোটদের অনুষ্ঠান খেলাঘরের মাধ্যমে শিল্পী জীবনের শুরু করেন৷ পরবর্তীতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের শুরু থেকে অংশগ্রহণ করে আমৃত্যু একজন নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান গেয়েছেন৷ নীলুফার ইয়াসমীন উচ্চাঙ্গ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, টপ্পা, ঠুমরি, কীর্তন, রাগপ্রধান, আধুনিক গান- মোট কথা গানের ভুবনের প্রায় সবগুলো শাখাতেই অবাধ বিচরণ করতেন৷ রাগ প্রধান গানে অসাধারণ দখল থাকলেও, নীলুফার ইয়াসমীন নজরুল-সঙ্গীত শিল্পী হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন৷



নীলুফার ইয়াসমীন শ্রোতার আসর প্রযোজিত ও খান আতাউর রহমান পরিচালিত 'বেলা শেষের রাগিনী' -তে 'আবার ভালবাসার সাধ জাগে' শিরোনামের নজরুল-সংগীতটি রেকর্ড করেন৷ বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রম থেকে 'এ কোন সোনার গাঁয়' রেকর্ডে একটি ও নজরুল ইন্সটিটিউট প্রকাশিত 'পাষাণের ভাঙালে ঘুম' ও 'বাজলো কি রে ভোরের সানাই' রেকর্ড দুটিতে দু'টি নজরুল-সংগীত গেযেছেন৷ এছাড়াও তাঁর কন্ঠে নজরুল-সংগীত, কীর্তন ও পুরোনো দিনের গানের বেশ কয়েকটি অডিও ক্যাসেট ও সিডি বেরিয়েছে৷ পুরোনো দিনের গানের গীতিকাররা হলেন চন্ডীদাস, জ্ঞানদাস, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল ও নজরুল৷



শিল্পী হিসেবে নীলুফার ইয়াসমীনের জনপ্রিয়তা শুধু দেশের গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বিদেশেও ছিল ব্যাপক। ১৯৮৪ সালে কলকাতার 'অগ্নিবীণা'-র আমন্ত্রণে ঢাকাস্থ নজরুল একাডেমীর সাংস্কৃতিক দলের সংগে কলকাতা গমন করেন৷ বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের আমন্ত্রণে দিল্লি ও কলকাতায় সংগীত পরিবেশন করেন৷ এ-ছাড়াও তিনি পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, পাকিস্তান ভ্রমণ করেন এবং সংগীত পরিবেশন করে প্রচুর প্রশংসা অর্জন করেন৷



নীলুফার ইয়াসমীন বেশ কয়েকটি ছায়াছবিতে কন্ঠ দিয়েছেন৷ যেমন- শুভদা, অরুণ-বরুন-কিরণমালা, জোয়ার ভাটা, আবার তোরা মানুষ হ, সুজন সখী , যে আগুনে পুড়ি, জীবন-তৃষ্ণা , জলছবি ইত্যাদি৷



১৯৯৫ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের নজরুল সংগীত বিষয়ের প্রভাষক হিসাবে আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন৷ শিল্পী নীলুফার ইয়াসমীন ছিলেন ব্যবহারে বিনম্র ও চাল-চলনে অতিশয় শালীন৷ অহঙ্কারের লেশমাত্র তাঁর ছিল না৷ ঈর্ষা, বিদ্বেষ, প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি সবার প্রিয় হওয়ার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন৷



আগুন জ্বলেরে, জীবন সেতো পদ্ম পাতার শিশির বিন্দু, তোমাকে পাবার আগে জ্বলে জ্বলে বুঝতাম, এক বরষার বৃষ্টিতে ভিজে, এতো সুখ সইবো কেমন করে, পথের শেষে অবশেষে বন্ধু তুমি, যদি আপনার লয়ে এ মাধুরী, এতো কান্নাই লিখা ছিলো ভাগ্যে আমার, যে মায়েরে মা বলে কেউ ডাকে না... ষাট/সত্তর দশকের পুরোটা সময় এমনি আরো অজস্র শ্রোতানন্দিত গানে যাঁর কন্ঠ মাধুর্য সম্মোহিত করে রাখতো তিনি হলেন আমাদের বাংলা সংগীতের এক গুনী কন্ঠশিল্পী নীলুফর ইয়াসমীন৷ সুদীর্ঘ শিল্পী জীবনে তিনি 'সুজন সুখী'' চলচ্চিত্রে কন্ঠপ্রদানের জন্য ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থার পুরস্কার, 'শুভদা' চলচ্চিত্রে কন্ঠপ্রদানের জন্য ১৯৮৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থার পুরস্কার, সংগীত বিষয়ে অনন্য অবদানের জন্য ২০০৪ সালে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় "একুশে পদক'' এবং নজরুল সংগীতে তাঁর অবদানের জন্য ১৪১০ বাংলা সালে "নজরুল পদক'' সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন৷



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগে নজরুল সংগীত বিষয়ে তাঁর অবদানের কথা চিরস্বরণীয় করে রাখতে সম্প্রতি তাঁর নামে নাট্যকলা ওসঙ্গীত বিভাগে পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে৷



অসাধারণ সংগীত-প্রতিভার অধিকারী নীলুফার ইয়াসমীনের তুলনা শুধুই নীলুফার ইয়াসমীন৷ বিনয়ী, নম্র, মিষ্টভাষিনী, নিরহংকার নীলুফারের মতো ব্যতিক্রমধর্মী শিল্পী বাংলা গানে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।৷ শুধু নজরুল সংগীতই নয়, বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ বাংলা গানের বিভিন্ন ধারায় নীলুফারের সাবলীল বিচরণ ছিল সত্যিই বিস্ময়কর৷



দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্তের গানগুলিও সে সমান আগ্রহে সমান পারদর্শিতায় গাইতেন৷



অসাধারণ ছিল ওর মনের জোর৷ মৃত্যু যে এত কাছে, নীলা সেটা বিশ্বাসই করতো না৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগের চাকরিটি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিল৷ কিন্তু প্রথম দিকে এই চাকরিটি নিয়ে একটি মহল কাগজে লেখালেখি শুরু করেছিল এই বলে যে, নীলুফার ইয়াসমীন সাধারণ এম এ ডিগ্রি প্রাপ্ত হয়ে কী করে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংগীত বিভাগে চাকরি পেলেন, যেখানে বিশ্ব ভারতীর সংগীতে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রাপ্তদের সুযোগ হলো না৷ যারা এই সমালোচনা করেছিল, সেই মহাপন্ডিতরা জানতো না নীলুফার ইয়াসমীনের প্রতিভার কাছে পোষাকি এম এ ডিগ্রি কত তুচ্ছ!

সে-কথাই বলেছিলেন নজরুল সংগীতের প্রধান পুরুষ প্রয়াত মহান শিল্পী ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্র৷

....নীলা একদিন এসে আমাকে বলল যেহেতু ওর মিউজিকে মাস্টার্স ডিগ্রী নেই এবং নজরুল সংগীতের কোনো বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিত্বের সার্টিফিকেটও নেই, সে কারণে হয়তো তাঁর খণ্ডকালীন চাকরিটি স্থায়ী হবে না বরং চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ আমি লোক মারফত প্রয়াত ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্র মহাশয়ের কাছে নীলার গাওয়া দুই খানা ক্যাসেট পাঠিয়ে দিয়েছিলাম৷ মাস খানেক পরে কোন অনুষ্ঠানে ধীরেন বাবু ঢাকায় এলে নীলাকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, নীলার পরিচয় পেয়ে আবেগে উচ্ছ্বাসে আপ্লুত ওই মহান শিল্পী আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, একে আমি কী সার্টিফিকেট দেব, ওর প্রতিভা তো সার্টিফিকেট দিয়ে মাপা যাবে না৷



সুধীন দাশের কথায়:

জীবদ্দশায় অসুস্থতার এক পর্যায়ে নীলা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে যেতে পারতো না, তখন ওই চাকরিটির জন্য কিছু প্রার্থীর চেষ্টা-তদবির শুরু হয়েছিল৷ নীলা বিমর্ষ কন্ঠে আমাকে বলেছিল, তাঁর প্রিয় চাকরিটি অনিয়মিত উপস্থিতির সুযোগে অন্য কেউ নিয়ে নেবে৷ সেদিন আমি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলাম, যতদিন সুস্থ না হবে, ততদিন আমি তাঁর ক্লাস চালাবো৷ ক্লাস আমি ঠিকই চালিয়েছিলাম-কিন্তু নীলা তো সুস্থ হয়ে ওর ক্লাসে ফিরে এসে আমাকে অব্যাহতি না দিয়ে নিজেই চির অব্যাহতি নিয়ে কোথায় হারিয়ে গেল! ভাগ্যোর কি নির্মম পরিহাস! আজ জীবন সায়াহ্নে বসে আমি প্রাণপ্রিয় ছোটবোন নীলার স্মৃতিচারণ করছি, অথচ এর উল্টোটাই তো হওয়া স্বাভাবিক ছিল৷





নীলুফার ইয়াসমীন উচ্চাঙ্গ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, টপ্পা, ঠুমরি, কীর্তন, রাগপ্রধান, আধুনিক গান, মোট কথা গানের ভুবনের প্রায় সবগুলো শাখাতেই অবাধ বিচরণ করতেন৷ রাগপ্রধান গানে অসাধারণ দখল থাকলেও নীলুফার ইয়াসমীন নজরুল-সংগীত শিল্পী হিসেবে বেশি পরিচিত৷ উচ্চাঙ্গ সংগীতের উপর আরো ব্যাপক সাধনায় নজরুল, অতুল, ডিএল রায় রজনীকান্ত, আধুনিক, লোকজ, কীর্তনসহ নানামুখী সংগীতে আমাদের ঋদ্ধ করেছেন তিনি।



বাংলা গানের মহান এই শিল্পী ২০০৩ সালের ১০ মার্চ ঢাকাস্থ বারডেম হাসপাতালে দেহত্যাগ করেন। বাংলা গানের এই অপূরণীয় ক্ষতি বোধকরি অনেকদিন পূরণ হবে না।

সুত্র- বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৩

তূর্য হাসান বলেছেন: খুব সুন্দর পোস্ট। এটা সিরিজ আকারে লিখলে খুব খুশি হবো। অনেক ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.