![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাইরে হিমের হাওয়া হেমন্তের রাত; দরজায় জানালায় অবিরাম রাতের আঘাত।।
মেডিকেল মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। বৈশাখী রেস্টুরেন্টের সামনে। পকেটের মাঝে ফোনটা কাঁপছে। শীতে আমিও কাঁপছি।
এখন ফোন তোলা যাবে না। যতক্ষন তুলবনা, ততক্ষন একটা আগ্রহ থাকবে। আগ্রহটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ হলে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাবে। তখন আর ফোন তুলতে ইচ্ছা করবে না। আগ্রহ আগ্রহ খেলা। ফোন তুললেই খেলা শেষ।
ফোন কাঁপছে তো কাঁপছেই। থামার নাম নেই। ওই পার্শ্বের খেলোয়াড় খেলে মজা পাচ্ছে। আর খেলা যাবেনা। বেশী খেললে খেলার মজা থাকে না। আমি এই মজা হারাতে চাইনা।
ফোন দিয়েছে এলার্ম ঘড়ি। ভয় লাগছে ফোন তুলতে। দ্রুত ভাবতে হবে কি করা যায়। মাথাও কাজ করছে না।
এলার্ম ঘড়ি হল আমার ছোট বোন। নাম মনি। যখন তখন ফোন করে আমাকে বিরক্ত করার জন্য বিশেষ পদবীটা দিয়েছি। ফোন দেবার সময়টা প্রতিদিন কাকতালিয় ভাবে এক। ঘড়ির কাটা ধরে। সকালে ঘুম যখন গাঢ় হতে থাকে তখন একবার। আরেকবার দিবে সন্ধ্যায়। যখন আমি রাস্তায় রাস্তায় হাঁটি। চক্রান্ত করেও হতে পারে। আমি যত বিরক্ত হয়,ও ততো বেশী শক্তি পায়। তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ না হলে তার রাতের ঘুম হবেনা। আমি নাকি তার ঘুমের ট্যাবলেট। সিডাক্সিন।
মনি সবকিছুই আগে ভাগে বুঝে ফেলে। জন্মের সময়ও আগেভাগে পৃথিবীতে এসেছে। আসার সময় একা আসেনি। আরও একটা ভয়াবহ জিনিস সাথে করে নিয়ে এসেছে।
ভয়াবহ জিনিসটা কান্না। ফোন না তুললে বিশাল কান্ড ঘটে যেতে পারে। বীরঙ্গনা সখিনার রনাজ্ঞীনি রূপ বড় ভয়ঙ্কর। শেষ পর্যন্ত ফোন তুললাম। ওপাশ থেকে রিনিঝিনি গলায় বলে উঠল,
-কিরে দাদা কি করিস?
-গাড়ী গুনছি।
-মানে?
-রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ী গুনছি। একঘণ্টায় একশত উনষাটটি গুনেছি। মিনিটে দুই দশমিক ছয় পাঁচটি করে। আমি অবশ্য তিনটি করে ধরে নিচ্ছি।
-কি বাঁকাবাঁকা কথা বলছিস। তুই কি কখনো সোজা হবি না?
-হ্যাঁ, হব তো। সোজা হব।
-কবে সোজা হবি?
-মরার পর।
-কি বলিসরে দাদা?
আমি বললাম,
-হ্যারে? জানিস না? সাপ সারাজীবন আঁকাবাঁকা থাকে, বাঁকা পথে চলে। মরার পর সোজা হয়ে পড়ে থাকে। আমিও মরার পর তেমনি ভাবে সোজা হয়ে পড়ে থাকব।
ওর কান্না এসে গেছে। প্রাণপণে চেষ্টা করছে আটকাতে। পারছেনা। আমাকে আর বুঝতে দেবেনা। এবার ওকে ফোন কেটে দিতে হবে।
ফোনটা কেটে গেল। বুঝতে পারলাম মনি চোখের জল আটকাতে পারে নি। এখন ঘরের দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষন কাঁদবে। সন্ধ্যার আগে দরজা খুলবেনা। দরজা খোলার পর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। এই পর্বটা না করে শান্তি পাবে না। তার সাথে থাকবে বাড়ীর কাজের লোক রহিম চাচা। তার কাজ হলো মাটির পাতিল জোগাড় করে। মনি সেটা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ভাঙ্গবে। এই খেলায় পাতিলটা হব আমি। আমাকে পিটিয়ে মারতে তার নাকি অনেক সুখসুখ লাগে।
মনি পাতিল ভাঙ্গবে। পাশে দাঁড়িয়ে রহিম চাচা হাততালি দিবে। আর বলবে,
-আমি হলি পাতিল না, তুমার ভাইকেই পিটিয়ে মারতাম।
রহিম চাচাকে আমার অনেক ভালো লাগে। উনি এই বিষয়টা জানেন না। ভালোবাসার কথা গোপন রাখার আলাদা একটা মজা আছে। সবাই এটা বুঝতে পারে না।
কিন্তু রহিম চাচা আমাকে দেখতে পারেন না। তার একটা অদ্ভুত রোগ আছে। কেরোসিন তেল খাওয়ার। মানুষ ঢকঢক করে পানি খায়। রহিম চাচা খায় কেরোসিন। খাওয়ার পর আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলে,
-খাইবানি রিজু ভাইজান। মধুর চাইতিও মিষ্টি।
-তাই নাকি চাচা? দিন আমিও খাই।
চেষ্টা করে দেখেছিলাম। মুখের কাছে আনতেই গন্ধে নাড়ী-ভূড়ী উল্টে আসে। মধুর চেয়ে মিষ্টি জিনিসটা খেতে পারলাম না। এরপর থেকেই রহিম চাচা আমাকে দেখতে পারেন না। মানুষ স্বজাতি ছাড়া সবাইকে পর মনে করে।
রহিম চাচা অবশ্য হাল ছাড়েননি। কিভাবে আমাকে খাওয়ানো যায় তার উপায় খুঁজছেন। দেখা হলেই বলেন,
-একবার খাইয়া দেখো, প্রতিদিন খাইতে চাইবা। ভাতের সাথে মেখে খাইতে চাইবা। মাইয়া মানুষ আর মদের নেশা, কেরোসিনের নেশার কাছে ফেল।
আমি মুগ্ধ হয়ে তার কেরোসিন খাওয়া দেখি। আমি দেখলে তার নাকি তার নেশা হয় না। নজর লেগে যায়। মানুষ কুকুরের সামনে খেতে পারে না। রহিম চাচা খায়না আমার সামনে। ব্যাপারটা বড় অদ্ভুত। এজন্য আমি বাড়ীতে গেলে আমার সামনে সে আসে না।
মা বলছে মনির মুখ থেকেও নাকি আজকাল কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টা ভয়াবহ। রহিম চাচাকে শীঘ্রই তাড়াতে হবে।
দ্বিতীয় পর্বের পর মনি বারবার মাকে বলবে,
-ওমা, বলনা, দাদা, দিনদিন ধনুস্টংকারের মতো বেঁকে যাচ্ছে কেন?
মা কিছু বলবে না। চুপচাপ মনির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তারপর চলে যাবে। দুই বছর থেকে এই নাটক বারবার পুনরাবৃতি হচ্ছে।
-পকেটের ফোন আবার কাঁপছে। আবার মনি ফোন দিয়েছে? না,এটা সম্ভব না। সে একবার কথা বলবে। দ্বিতীয়বার বলে কোন কিছুতেই তার বিশ্বাস নেই। তাহলে কি পুঠিয়ার জমিদার?
আমার ভবিষ্যত বানী ভুল প্রমানিত হল। ফোন দিয়েছে মা। ফোন তুললাম।
-কিরে, তুই আবার মনির সাথে লেগেছিস?
-আমি লাগিনি। ও লেগেছে। কেমন আছো মা?
-কেমন আছি জানার ইচ্ছাটা তাহলে এখনো মরেনি?
-মরবে বলে মনে হচ্ছে । প্রক্রিয়াজাতকরণ চলছে।
আমার রসিকতায় মার কিছু যায় আসে না। গায়েও মাখেনা। মা গুলো মানে হয় এমনিই হয়। শত ব্যাথায়ও কিছু হয় না। কচ্ছপের মতো। বেঁচে থাকে বছরের পর বছর। মা বলল,
-তমার বিয়ে। কালকে। তোকে বলা হয়নি। আসতেই হবে।
তমার বিয়ের বিষয়টা একটু অন্যরকম। আমি যেতে চাইনা। কারন, খালু তমাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে। আমি গেলে সে বিয়ে করবে না। না গেলেও মনে হচ্ছে করবেনা। জেদি মেয়ে। ভয়ানক জেদি। বাবার কাছ থেকে পেয়েছে।
খালু আমাকে বাঘের মতো ভয় পান। আমার জন্য তার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। তিনি ভাবছেন এবার বিয়ে হবে। তমাও নাকি তাই বলেছে। আমাকে নিয়ে খালুর আর ভয়ের কিছু নেই। ঠেলায় পড়লে বাঘেও ঘাস খায়। বাঘ এবার ঘাস খাবে না। চুপটি মেরে গিয়ে বিয়ে খাবে। সেজন্যই আমাকে নিমন্ত্রন করা হচ্ছে।
কিন্তু আমি বললাম,
-মা আমার তো অনেক কাজ। আমি যেতে পারব না।
-আমি জানতাম, তুই তাই বলবি। মনি বলছে, তুই নাকি বেঁকে যাচ্ছিস। তোর জন্য আমার খারাপ লাগছে না, মনির জন্য লাগছে।
খুট করে ফোনটা কেটে দিল মা।
বেঁকে যাবনা কেন? হুমায়ুন আহমেদ স্যার চলে যাবার আগে আমার মাথার মাঝে হিমুকে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন। মানুষ বস্তায় ধান ভরায়। উনি ভরিয়েছেন আমার মাথায়।
হিমুর ভবিষ্যতবানী করার ক্ষমতা ছিল। আমার নেই। অর্জন করার চেষ্টা করছি। খালি পায়ে রোদের মাঝে হাটার চেষ্টা করছি। মোটামুটি সফল। কিন্তু পায়ে ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে। হিমুরা পায়ে মলম মাখে না। আমি মাখছি। মানবিক দোষত্রুটি ছাড়া সম্পুর্ন মানুষ হওয়ার ট্রেনিং নিচ্ছি। হিমুর শিক্ষক ছিল তার বাবা। আমার কেউ নেই। তাই একা একা সব কিছুর মাঝে হিমুকে খুজছি। আগে তাকে দেখতে পেতাম না। এখন আবছা আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছে। হলুদ পাঞ্জাবী পরে আমার হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। পরনে জিন্সের প্যান্ট, ঘাড়ে চটের ব্যাগ। সে-নাকি হুমায়ুন স্যারের কাছে যেতে চায়। আমাকে পাঞ্জাবী আর ব্যাগ দিতে এসেছে। নিব কিনা বুঝতে পারছি না।
হয়তো নিতে হবে। চোখ মেলতে মেলতেই জীবন থেকে ২১ টা বছর কেটে গেল। শত চেষ্টা করেও জীবনের বাঁকা পথকে সোজা করতে পারলাম না।। আদিগন্ত বিস্তৃত বাঁকা পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমি। একা। কেউ নেই সাথে। কি দরকার সোজা পথের? আঁকাবাঁকা জীবিত সাপের মতো বাঁকা পথেই চলি না!!!!! (চলবে)
০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৪৭
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: সাথে আছেন তো?
২| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৩৭
প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: অসাধারণ। এক কথায় অসাধারণ।
খুব ভাল লাগছে।
যত সময় যাচ্ছে, তত মনে হচ্ছে, হুমায়ুন আহমেদ এর ইনভেনশন না, একটা ডিসকভারি। মানে আমাদের মাঝে ই হিমুরা ছিল, আছে এবং থাকবে। আমরা তাদের দেখতে পেতাম না, বা নিজের ভেতরের হিমুকে গুরুত্ব দিতাম না। হুমায়ুন আহমেদ সেখানেই ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে গেছেন।
পোস্ট এ +++++
০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫০
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: আপনার কমেন্টটা অসাধারণ।
মানুষের জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বদলে যেতে কিছু ছোঁয়া লাগে। হুমায়ূন স্যার সেই ছোয়া আমাকে দিয়ে গেছেন।
মাঝে মাঝে চিন্তা করি কি হবে এতো ছোট একটা জীবনে ৪০ বছর পড়ে। একটা প্রতিষ্টীত ডাক্তার হতে লাগে ৫৫ বছর। চাই না।
জীবনকে ছড়িয়ে দিতে চাই, চাই ছড়াতে.।
৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৭
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: সুন্দর লেখা
শুভকামনা
০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ২:০২
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: শুভ কামনার জন্য ধন্যবাদ পরিবেশ বন্ধু
৪| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১:০৩
নূর আদনান বলেছেন: দারুন লিখেছেন তো ভাল লাগল, চালিয়ে যান। পরের পর্বের অপেক্ষায়....
০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ২:০৩
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: আপনাদের ভালো লাগলে আমাকেও ভালো লাগে।
অবশ্যই পরের পর্ব এবং শীঘ্রই
৫| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:০১
মাক্স বলেছেন: চলুক!
০৩ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:০৯
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন:
তবে তাই হোক মাক্স
৬| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৫৮
মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: তাহলে একসাথে পুরাটা পড়মু
০৩ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:১০
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন:
পুরোটা পড়তে হলে তো মেলা দিন লাগবে
৭| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮
সপ্নাতুর আহসান বলেছেন: সুন্দর।
মেডিকেল মোড়
বৈশাখী রেস্টুরেন্ট
রংপুর??
০৩ রা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১০
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: নস্টালজিক কিছু আছে, আহসান ভাই?
৮| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৪
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: চালিয়ে যান....... লেখা ভাল লাগছে।
০৩ রা জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৮
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: আছেন তো!!! বর্ষন ভাই?
আমি লেখার বর্ষন করেই যাব :প
৯| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৫১
সিরাজ সাঁই বলেছেন: দারুন, প্লাস।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: প্লাস গৃহীত হইল
১০| ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০
মাহী ফ্লোরা বলেছেন: সত্যিই দারুন! আমি মাঝেমাঝেই পড়তে আসবো। জলদি জলদি লিখুন....
১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১৫
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: লেখা তো অনেক গাএই ষেষ হয়েছে কপি-পেস্ট দিয়ে দিচ্ছি
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৫৮
সোহাগ সকাল বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন! চলুক। সাথে আছি।
+