নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

থমথমে রাত,- আমার পাশে বসল অতিথি-- বললে,-আমি অতীত খুধা,তোমার অতীত স্মৃতি!

সময়ের সমুদ্রের পার--- কালকের ভোর আর আজকের এই অন্ধকার

রাজীব হোসাইন সরকার

বাইরে হিমের হাওয়া হেমন্তের রাত; দরজায় জানালায় অবিরাম রাতের আঘাত।।

রাজীব হোসাইন সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত!!!

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪১

‘আপনে পিশাপ করেছেন?’

‘উঁউঁউঁউঁউঁ’

‘গুড, পায়খানা করেছেন?

‘উঁউঁউঁউঁউঁ’

‘গুড! বমি করেছেন?

‘উঁউঁউঁউঁউঁ’



‘ফাইন। হাত পা সরসর করছে?

‘উঁউঁউঁউঁউঁ’

‘বাহ গুড গুড। বাঁশলি হয়েছে? ।’

‘উঁউঁউঁউঁউঁউঁউঁউঁউঁ।’



‘ঐ খাদেম। মেডিসিন ইউনিট থ্রী, ইউনিট থ্রী।’



খাদেম নামক দেশী শুটকীর মতো লোকটা ছুটে আসল। আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ট্রলিতে করে রোগীকে নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডের পথে তুফানের মতো ছুটতে শুরু করল। আমাদের পেছনে আরো কয়েকটা ট্রলি এভাবেই ছুটে চলছে।



এতক্ষন গম্ভীর হয়ে যে ভদ্রলোক রোগীর রোগের ইতিহাস নিলেন, তিনি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী। ব্যাথায় অজ্ঞান রোগীর ডায়াগনোসিস দক্ষ হাতে করে ফেলছেন। রোগীর উত্তর করা লাগছে না। শুধু উঁউঁউঁউঁউঁ করলেই বুঝে ফেলছেন কোন ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হবে। সাত বছর ইমার্জেন্সীতে কাজ করে তিনি ডাক্তারী শিখেছেন। ছোটখাটো এফ,সি,পি,এস ডিগ্রী তার আঙ্গুলের ডগায় ছলকা ছলকি করে।

জরুরী বিভাগের দায়িত্বশীল ডাক্তার পরম বিশ্বাসে অথবা চরম লজ্জায় রোগীর ডায়াগনোসিসের দায়িত্ব কর্মচারীটির হাতে তুলে দিয়েছেন। কর্মচারীর সাত বছরের অভিজ্ঞতার কাছে তার মেডিকেলের সমস্ত বিদ্যাকে সন্দেহযুক্ত মনে হয়েছে। বিষয়টা মন্দ না। দায়িত্বশীল ডাক্তার হয়তোবা চিপা গলির ভেতরের রুম থেকে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে রোগীর মনের কথা শুনে নিয়েছেন। নিজের দায়িত্বের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করে তিনি নিজের রুম থেকে বের হচ্ছেন না।

কর্মচারীর ডাক্তারী জ্ঞানের বহর আর ডাক্তারের টেলিপ্যাথির মারাত্মক কৌশল দেখে আমি মুগ্ধ হলাম। চরম পুলকিত হলাম।



খাদেমকে লক্ষ্য করে আমিও ট্রলির পেছনে পেছনে ছুটতে লাগলাম। উল্টো দিক থেকে একটা ট্রলি আসছে। একজন অতি রুপবতী হিন্দু মহিলা উদ্ভ্রান্তের মতো কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসছেন। পেছনে পেছনে দেব শিশুর মতো দুইজন বাচ্চা ছেলে হাউমাউ করে মায়ের পেছনে ছুটছে। তাদের সামনে ধীর গতিতে চলমান ট্রলিতে তার স্বামীর মৃতদেহ। আমার রোগীর আগে এই মৃত মানুষটিকে জীবিত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল। ভর্তি হয়েছিল দায়িত্বশীল ডাক্তারের টেলিপ্যাথির মাধ্যমে আর কর্মচারীর পিশাপ-পায়খানা-বমির ডায়াগনোসিসে।



আমি থেমে গেলাম। একজন বয়স্ক লোক সবাইকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছিল। জিজ্ঞাসা করলাম,

‘কাকু, কি হয়েছে?



ভদ্রলোক আমার দিকে তাকালেন। আমার চেহারায় নাকি একটু হিন্দুয়ানী ভাব আছে। এই বিষয়টা তাকে সহজ করে দিতে সাহায্য করতে পারে। তিনি আমার কাধে হাত রেখে বললেন,

‘কিছু হয় নি বেটা। আমার ছেলেটার হার্ট এটাক হয়েছিল। মেডিসিনে ভর্তি না করে কার্ডিওলজীতে ভর্তি করলে কিছু একটা হতো।’



আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম লোকটার মুখে হাসি অথচ চোঁখে জলের বান ডেকেছে। আমার মতো সম্পুর্ন অপরিচিত একজন ছেলেকে জড়িয়ে তিনি ফুঁপিয়ে কেদে উঠলেন।



শোক অদ্ভুত জিনিস। ছোয়াচে রোগের মতো। জনে জনে বিদ্যুতের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তাদের শোক আমার মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। আমার চোখ দিয়েও জল ঝরতে শুরু করল। সম্পুর্ন অপরিচিত একটা মানুষকে বোকার মতো জড়িয়ে ধরলাম। পরম মমতায় বয়স্ক লোকটির গায়ে আমার দুইটা হাত জড়িয়ে গেল।



অদ্ভুত আর হাস্যকর একটা বিষয়। একটা রোগী মরে গেলেন শুধুমাত্র ভুল ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার জন্য।



তাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিছু হয় নি। মহাকালের ঘড়ির কাটা এক সেকেন্ড থামে নি। বৃদ্ধলোকটি তার ছেলেকে হারিয়েছে। অতি রুপবতী মহিলাটি তার একমাত্র সম্বলটা হারিয়েছে। এই অভাগা পরিবারটিতে হয়তো কয়েকদিন সন্ধ্যা প্রদীপ বেশীই জ্বালাবে। ধূপ পুড়িয়ে চোখের জলকে মিথ্যা অজুহাতে লুকিয়ে ফেলবে। তার দেব শিশুর মতো ছেলে দুটি স্কুলের রেজিস্টারে বাবার নামের আগে ছোট্ট করে লিখে রাখবে ‘মৃত’।



[আমি আমার একটা কলামে লিখেছিলাম,

‘সৃষ্টিকর্তা তার সবচাইতে প্রিয় বান্দাদের বসিয়ে রেখেছেন হাসপাতালে। তাদের কাজ হলো মানব যন্ত্র মেরামত করা। এই যন্ত্র সৃষ্টিকর্তা বানিয়েছেন অতঃপর সমগ্র জীবনের জন্য মেরামতের দায়িত্ব দিয়েছেন এই প্রিয় বান্দাদের।

ডাক্তার তোমার পরিচয় জানলে?

কেন এতো সহজে ভুলে যাও?]



পাদটিকাঃ মেডিকেল লাইফে আমি অসম্ভব কিছু মেধাবী বন্ধুকে পেয়েছি। পরীক্ষার সময় আমরা একই সাথে ফরম ফিলাপ করি। আমি দ্রুত গোটা গোটা হাতে আমার বাবার নাম লিখে তাদের ফরমের দিকে তাকাই। ঈগল চক্ষুতে তাকিয়ে থাকি তাদের কলমের পিনের দিকে। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি তাদের হাত কেঁপে যাচ্ছে। কি অসম্ভব কান্না চেপেই না তারা তাদের বাবার নামের আগে লিখে ফেলে ‘মৃত’।



বন্ধু,

আমার বাবা সুস্থ আছে। আমি শত চেষ্টা করেও জানতে পারব না কতটা কষ্ট পাস তোরা ঐ কথাটা লিখতে।

শুধু মনে রাখিস, তোর অবহেলায় যেন না মরে অন্য কারো বাবা। মাথা তোর। ব্যাথাটাও তোর জানা আছে







>>>ফেসবুকে রাজীব হোসাইন সরকার(https://www.facebook.com/nillchokh)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯

অনন্ত জীবন বলেছেন: একজন ডাক্তারের কাছ থেকে এরকম আশার বাণী শুনে ভালো লাগল। দোয়া করি সকল ডাক্তারের মানবিকতা জেগে উঠুক।
ভাল থাকবেন অনন্ত জীবন।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫২

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ অনন্ত জীবন। :)

আমাদের নিজেদেরও কিছু ভুল আছে, আমাদের নিজেদের দায়িত্ব এটাকে শুধরে নেওয়া।

সাধারন মানুষের ভালোবাসা পেতে এই পথেই এগোতে হবে। :)

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৪

রাজীব দে সরকার বলেছেন:
ভালো লেখা
তবে ভুল ইন্টারপ্রেট করা লোকের অভাব হবেনা

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: ভালো লাগাতে পেরে ধন্য বোধ করছি :)

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৭

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
আপনারা দুজনই ডক্টর, আজব তো।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: কোন দুজন? :)

৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩

জনাব মাহাবুব বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল।

কারও বাবার নামের আগে যেন “মৃত” কথাটি লিখতে না হয় :( :( :(

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: :)
আপনার মনকে ছুয়ে যেতেত পেরে ধন্য :)

৫| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৪

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
আপনি আর রাজীব দে সরকার।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৯

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.