নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ দুপুর

চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ সেথা শির।

শ্রাবণ দুপুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৌলবাদ ও সাম্প্রতিক ভাবনা

২২ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩২

মৌলবাদ আমাদের এই প্রিয় আবাসভূমিতে রুক্ষ, নির্দয়, পৈশাচিক শেকড় গেড়ে চলেছে। আমাদের মতো পরম সহনশীল, উজ্জ্বল সংগ্রামী এবং উদার ধর্মভীরু একটি জাতি, একটি দেশ কিভাবে মৌলবাদের, জঙ্গিবাদের ভয়ঙ্কর থাবার শিকার হতে পারে ? এর জন্যে কি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ, জাতির বিবেক খ্যাত কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, গবেষণাকর্মী, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিককর্মী, সর্বোপরি প্রগতিশীল চিন্তার ধারক ও বাহক যুক্তিনির্ভর মুক্তমনা সকল বাংলাদেশী নাগরিক দায়ী নয় কি ? মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন, সার্বভৌম বিধ্বস্ত স্বদেশভূমে উগ্র রাজনৈতিক মতাদর্শে কিংবা অতি প্রতিক্রিয়াশীল ধ্যন-ধারনায় মোহবিস্ট হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র সকল সম্পর্কে যে বিদ্বেষের বিষ বাস্পের উৎগীরন শুরু হয়ে ছিল সাম্প্রতিক সময়ে তা মহা বিস্ফোরিত হয়ে প্রলয়ঙ্করী রূপ ধারণে উদ্যমী। পূর্ব প্রজন্মের প্রায় সকল বর্ণ, পেশা, বয়স, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল শ্রেণী থেকে শুরু করে নব্য তারুণ্য পেরুনো আধুনিক মানুষটি পর্যন্ত বিদ্বেষের প্রবল প্রলয়ে নির্বিকার। প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমুহ নিয়ে বিদ্বেষের বিষাক্ত অনল তাই কখনো চেতনার মিথ্যা প্রহসনে, কখনো প্রতিহিংসার অনন্ত জ্বলনে, কখনোবা সাম্প্রদায়িক কিংবা সংস্কৃতিক আগ্রাসনের কুহক ভীতিতে সদা আধুনিক মানুষটিরও মানসপট বিদ্বেষের রুদ্ধদ্বারে বন্দী হয় এবং কর্ম প্রয়োগে তা উন্মোচন হয়ে পরে।

আমাদের রাজনৈতিক সাম্যের মতাদর্শ ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারী প্রশাসক, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত দেশপ্রেম বিমুখ আমলাতন্ত্র, সন্ত্রাসবহুল ও মেধাশূন্য গন আকাঙ্ক্ষা বিরোধী গণতন্ত্র বিদ্বেষের দূষণ শরণে মৌলবাদকে লালন করেই যাচ্ছে। বিশ্বায়নের এই ফুটন্ত পৃথিবীতে প্রতিটি রাষ্ট্র তাদের নিজেস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ ও কর্মকৌশল প্রয়োগ প্রনয়ন করেই থাকে। সেই ক্ষেত্রে ভৌগলিক তিক্ততা থাকলেও জাতি, রাষ্ট্র, সম্প্রদায় নির্বিশেষে নিরপেক্ষতার বিশ্লেষণে বিবেচনা করা যৌক্তিক। হয়তো রাজনৈতিক, সামাজিক, সংস্কৃতিক অথবা কৌশলগত মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, দিনের পর দিন, যুগের পর যুগ পরিক্রমায় বিদ্বেষী মনোভাব সযত্নে লালন করে যেতে হবে। আমাদের প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রামে এমনকি গৌরবান্বিত মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমাজ, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র চরম বিরোধিতা করেছিলো এবং ক্ষেত্র বিশেষে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ মদদ জুগিয়েছিল অথবা সরাসরি যুদ্ধ চাপিয়ে মানবতাকে নির্মম ঘাতকের রক্ত লোলুপতার শিকার বানিয়েছিল, আমাদের মেধা সঞ্চারী পুস্পকানন বুদ্ধিজীবীদের নিষ্ঠুরভাবে বিনাশী উৎসবে মেতে জাতিকে মেধা শূন্য বিকলাঙ্গ বানাতে চেয়েছিল, তাদের ব্যতীত অন্য সকল ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমাজ, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র ভাবনায় চেতনা সংহারী বিদ্বেষ পুষে মুক্ত, উদার, যুক্তি বিরোধী পরিবেশ নির্মাণের যুক্তি দেখিনা। আমাদের ভ্রান্তিচারি রাজনৈতিক নেতৃত্ব সকল ও রক্ষণশীল, নৈতিকতা বিবর্জিত বুদ্ধিজীবী সুশীল সমাজ মহান মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে কিংবা সাম্প্রদায়িকতা, রক্ষণশীলতা আর সংস্কৃতিক আগ্রাসনের ধুয়া তুলে বিদ্বেষের যে বীজ বুনে যাচ্ছেন, তাই আজ ডালপালা মেলে মৌলবাদকে চেতনায় জায়গা করে দিচ্ছে। যেখানে মুক্ত চিন্তা বাঁধা প্রাপ্ত হয়, যুক্তিহীন অন্ধ চিন্তা প্রগার হয়ে বসে, মৌলবাদ সেখানেই তার হিংস্র থাবা মেলে বসে। যে দেশের সংখ্যাগুরু জনগন (কৃষক এবং শ্রমিক) সৃষ্টিশীলতা প্রবণ সুস্থ ভাবে মুক্ত চিন্তা ও বিচার-বিশ্লেষণের পরিবেশ সৃষ্টিতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেনা, সে দেশে জাতির মানসিক বিকাশ গঠনের সুস্ঠ পরিবেশ বিনির্মাণে আত্মপ্রত্যয়ী, নৈতিকতার যেকোনো নিরপেক্ষ মানদণ্ডে উত্তীর্ণ প্রখর দৃঢ়ত্বা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সুশীল সকল বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের নেতৃত্ব বহনের ভার এসে যায়। মুক্ত চিন্তা, স্বাধীন মত প্রকাশ, যুক্তি বিশ্লেষণধর্মী সমালোচনা আর গঠনমূলক বিরোধিতা একটি প্রজন্মের চিন্তা চেতনার উর্বর চারণভূমি হয়ে উঠে। সেখানে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ আস্তানা গাড়ার ন্যূনতম সুযোগ পায়না। কিন্তু আমাদের প্রগতিবাদী রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বুদ্ধিবিত্তিক নেতৃত্ববিন্দ যুক্তিপূর্ণ মুক্ত চিন্তার চারণভূমি নির্মাণে বরাবরই অসফল হয়ে রয়েছেন। যার ফলাফল এই জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ। এক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় আহমদ ছফার একটি আপেক্ষ স্মরণ করা যেতে পারে “আমাদের পণ্ডিত এবং পণ্ডিতব্যক্তিদের ভর্তুকি দিয়ে লালন পালন করতে হয়” (নিকট ও দূরের প্রসঙ্গ, পৃষ্ঠাঃ ১৮)।

সাম্প্রতিক সময়ের আরও একটি খবর “৫২ জন শিক্ষকের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা ৩ কোটি ৬৭ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা”(তথ্যসূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ- ০৮/০৩/২০১৫)। শিক্ষকতার মহান ব্রতে, নৈতিকতার পরাক্রমশালী নেতৃত্ব দানে ও গঠনে যে সন্মানি তাদের নেয়ার কথা তা উনারা নিয়েছেন অনৈতিকভাবে এবং নিজেদের অনৈতিক মেধা ও শ্রম কর্পোরেট বিশ্বে নির্লজ্জভাবে বিক্রি করে। এক্ষেত্রে স্মরণীয় যে, মাতৃভাষা বাংলার শিক্ষক এক্ষেত্রে প্রথম স্থান অধিকার করে আছেন (পাওনাঃ ৩৮ লক্ষ ১২ হাজার ২৪৪ টাকা)। দেশের মধ্যে মানসিক বিকাশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” এর মহান শিক্ষাগুরুরা যদি নৈতিকতার মানদণ্ডে পরাভূত হয়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি পশ্চাদগামী, স্বৈরাচারী ভাবাপন্ন আর প্রতিক্রিয়াশীল হয়, পেশাজীবী নেতৃত্ব যদি রাজনৈতিক শোষণের হাতিয়ার আর দুঃশাসনের ক্রিয়াকৌতুকে পরিনত হয়, মুক্তচিন্তা সেখানে যুক্তিহীনতার প্রবল নিকষ অন্ধকারে নিলীন হয়ে যায়। সেখানে জায়গা করে নেয় ভয়ঙ্কর জঙ্গিবাদী মৌলবাদ।

সংস্কৃতি ও সনাতন হিন্দুবাদির ঊষর ভূমিতে ভূপতি অশোকের সাথে সংঙ্করাচায্যের ধর্ম বিশ্বাসের অন্তরালে যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসের প্রবল সংঘাতে কোটি প্রানাঘাতে মুক্তচিন্তা, যুক্তিবোধ, নিরপেক্ষতা, গঠনমূলক বিরোধিতার পথ রুদ্ধ করে দেয়। এই সুযোগে সনাতনী হিন্দু জন্মভূমি মুসলিম রাজের করায়ত হয়ে যায়। মুসলমান সম্রাট আওরঙ্গজেবের চরম সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী মনোভাবে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়, মুক্তচিন্তার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে যায়। এই সুযোগে বনিকরাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাষ্ট্ররাজ হয়ে নিজ ভূমের তার সকল সন্তানকে পরবাসী বানিয়ে রেখে দেয়। সন্দেহ হয় স্বাধীন মত প্রকাশকে রুদ্ধ করে, পরম নেতৃত্ব নৈতিকতা বিবর্জিত হয়ে, দুঃশাসনের কর্কশ আস্ফালনে বিদ্বেষপূর্ণ চিন্তা চেতনার, যুক্তিহীন অন্ধকারের যে নিসর্গ আবাসভূমি বানিয়ে যাচ্ছি, ভয় হয় জঙ্গিবাদী মৌলবাদ না এই সুযোগে রাষ্ট্ররাজ দখল নিয়ে বসে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮

এম এম হোসাইন বলেছেন: ভাই, আপনাকে একটি সহজ প্রশ্ন করিঃ

বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈ্তিক, দুর্নীতি সহ সর্বস্থরে যে ভয়াবহ অবস্থা চলতেছে তার জন্য কি মৌলবাদিরা দায়ি নাকি গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামধারী ক্ষমতালোভী/দুনিয়ালোভী শাসকশ্রেনী ও তার পাদলেহীরা দায়ী?

২২ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৪

শ্রাবণ দুপুর বলেছেন: ভাই আপনি মনে হয় না পড়েই প্রশ্নটা করেছেন । যাই হোক,রাজনৈতিক, অর্থনৈ্তিক, দুর্নীতি সহ সর্বস্থরে যে ভয়াবহ অবস্থা চলতেছে তার জন্য কি মৌলবাদীদের দায়ি করি নাই। আমি শুধু বলেছি, গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, মুক্ত চিন্তার অভাব, যুক্তিহীন বিবেক সবকিছুই মৌলবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য দায়ী।

আমি বলেছি " এর জন্যে কি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ, জাতির বিবেক খ্যাত কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, গবেষণাকর্মী, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিককর্মী, সর্বোপরি প্রগতিশীল চিন্তার ধারক ও বাহক যুক্তিনির্ভর মুক্তমনা সকল বাংলাদেশী নাগরিক দায়ী নয় কি ?" সুতরাং দায়ভার কিন্তু আপনাকেও নিতে হবে। ধন্যবাদ।

২| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:০১

এম এম হোসাইন বলেছেন: আপনি ভাই নাকি আপু জানা নাই। তাই প্রথম শব্দটি ভাই/আপু হবে। :)

৩| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:১৯

জেন রসি বলেছেন: যৌক্তিক বিশ্লেষণ।

৪| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৪১

শ্রাবণধারা বলেছেন: এটা কি আপনার ভাবনা নাকি বক্তৃতা । লেখাটায় বেশ একটা ঝাঝালো বক্তৃতা টাইপ ব্যাপার আছে । তবে বেশ কঠিন বক্তৃতা, কঠিন সব শব্দের সমাহারে ।

" ভূপতি অশোকের সাথে সংঙ্করাচায্যের " এটা আবার কে? শংকরাচার্য ?

৫| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩

রাইসুল সাগর বলেছেন: বিশ্লেষন টা ভালো হইছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.