নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোঃ দেলোয়ার হোসেন তুহিন
রাত প্রায় ১১.৪৫ মিনিট, সুমন তার ভাইয়ের সাথে রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাটছে, অন্ধকার রাস্তা কোথাও কোন মানুষ নেই, মাঝে মাঝে দুই-একজন দেখা গেলেও তারা নীড়ে ফেরায় ব্যস্ত, সুমন ভাবছে প্রতিদিনই ভাইয়ের সাথে কোন না কোন কারন বশত ঝাগড়া বাধেই। না এভাবে চলা যায় না।জীবনে কিছু একটা না করলেই নয়। ভাইয়ে সাথে প্রতিদিন ঝগড়া করিতে তার আর ভাল লাগে না। আর ভাই বকবে না কেন, পড়াশুনা শেষ করে দুই বছরেও একটা সামান্য চাকরি যোগাড় করতে পারলো না সুমন। দেশে চাকরীর বড়ই অভাব। একদিকে জাতি শিক্ষিত হচ্ছে অন্য দিকে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, বেশি পড়াশুনা করায় দিনমজুরী বা রিক্সাও চালাতে পারছে না। এই দেশে থেকে কিছুই করা সম্ভব না, এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মানুষের মত কিছু একটার সাথে ধাক্কা লাগে সুমনের, পাশে ফিরে দেখে একটি অপরূপা সুন্দরী মেয়ে তার ধাক্কা লেগে মাঠিতে পড়ে গেছে, হাত ধরে তুলতে চাইবে ভাবছে কিন্তু অপরিচিত তাই না হাত বাড়িয়ে না দিয়েই বললো...
-সরি সরি দেখতে পাইনি,
-না ঠিক আছে..
-আপনি কি ব্যথা পেয়েছেন?
-না ব্যথা পাই নি...
মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটির চোঁখে জল, তাই সে আবারও বললো..
-আমি আসলেই সরি দেখতে পাই নি, ব্যথা পেয়েছেন মনে হচ্ছে সরি সরি...
-না ঠিক আছে আপনি যান,
-কিন্তু আপনার চোঁখে জল?
-তাতে আপনার কি? আপনি আপনার কাজে যান...
সুমন কথা না বাড়িয়ে পেছন ফিরে চলে যাচ্ছিল, একটু এগিয়ে গিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি সেই জায়গাই দাড়িয়ে আছে এবং চোঁখের জল মুছার বৃথা চেষ্টা করছে, সুমন আবারও এগিয়ে যায় মেয়েটির কাছে ..
-আপনার কি কোন সমস্যা? কাঁদছেন কেন?
-কোন সমস্যা নেই আপনি যান,
-আরে আজব তো, সমস্যা কি? কাঁধছেন কেন?
-কিছু না আপনি যান..
আচ্ছা কি হয়েছে বলেন প্লিজ আপনি কি ব্যথা পেয়েছেন?
-না..
-তাহলে??
-আপনি কে? আপনাকে কেন বলবো?
-আমি সুমন, এই শহরেই থাকি, চিন্তা কইরেন না আমি খুব একটা খারাপ মানুষ না। এখন বলেন কাঁধছেনই কেন?
-আমি অনু শহরে এসছি দুপুরে গ্রাম থেকে আমার মাকে নিয়ে..
-হুম তো কাঁদছেন কেন?
-আজ সকালে একটা ক্ষেপাটে ষাড় কোথা থেকে ছুটে আসে মায়ের দিকে মা তখন আমাদের উঠানে দাড়িয়ে ছিল, মিনিটের মধ্যেই ডুস মেরে চলে যায়, আমি দেখেই মাকে গ্রামের হাসপাতালে নিয়ে যাই তারা ব্যান্ডেজ করে দিয়েই বলে শহরে নিয়ে যেতে এরপর এম্বুলেন্সে ঠিক করেই এখানে নিয়ে আসে একটি হাসপাতালে ভর্তি করি, সেখানে ডাক্তার দেখে বললো প্রচুর রক্তক্ষরন হয়েছে, রক্ত লাগবে যতদ্রুত সম্ভব হয়, সেই দুপুর থেকেই শহরের বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক গুলোতে ঘুরছি কোথাও রক্ত পাই নি। এদিকে মায়ের অবস্থা রক্তের অভাবে আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। রক্ত না পেলে মাকে বাঁচানো যাবে না।
-রক্তের গ্রুপ কি আপনার মায়ের?
-এবি নেগেটিভ।
-আচ্ছা আমি যদি রক্তের ব্যবস্থা করে দেই তাহলে কি আপনার কোন সমস্যা হবে?
-সমস্যা হবে কেন, কিন্তু আপনি কিভাবে ব্যবস্থা করবেন।
-আসলে আমার রক্তের গ্রুপ এবি নেগেটিভ। চলুন আমি যাবো ব্লাড দিতে।
-সত্যি, কিন্তু আপনার শরির দেখে তো মনে হচ্ছে না আপনি রক্ত দিতে পারবেন, প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই শুকনা মনে হচ্ছে আপনাকে।
-জ্বি কি যে বলেন, আমি রক্তদানের যোগ্যতা সম্পূর্ণ আর সুখবর হচ্ছে আমার এইডস নেই।
-সরি, আপনাকে দেখে মনে হয় না তাই বললাম প্লিজ মনে কিছু নিয়েন না।
-না না ঠিক আছে এখন চলুন।
-হুম চলুন...
লেখা- DH Tuhin
(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
©somewhere in net ltd.