নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের নব্য ধনিক শ্রেণীর বিদেশে নিরাপদ সেকেন্ড হোম বনাম আমাদের মহা কাঙ্খিত রেমিট্যান্স।।

২৬ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৯

সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশীরা কাজ করেন তারা অত্যন্ত পরিশ্রম করে, নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে, মাথার ঘাম পায়ে ঝড়িয়ে, নিকট আত্মীয়দের মুখে একটু হাসি ফোটাতে দেশে টাকা পাঠান। যাকে আমরা অর্থনীতির ভাষায় বলি রেমিট্যান্স। বাংলাদেশে এখন বৈদিশিক মুদ্রা থেকে আসা এই রেসিট্যান্স-ই প্রধান বৈদেশিক খাত থেকে আয়। যা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার প্রধান ও অন্যতম কারিগর। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে এক শ্রেণীর তথকথিত ধনিক শ্রেণী, মূলত শাসক শ্রেণীর বংশধর, বা পোষ্য, বা স্বজন, বা আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়, ভাইবোন-ভাগ্নে, মামা-খালারা বাংলাদেশ থেকে অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করেন। বিদেশে তারা নিরাপদ সেকেন্ড হোম গড়ে তোলেন। যাতে দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর যদি অর্থ লুটের কারণে বা অনিয়মের কারণে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়, তখন আরমসে সেই সেকেন্ড হোমে কেটে পড়া যায়। সেকেন্ড হোম তাই এক ধরনের নিরাপদ ও অর্থ পাচারের এক আধুনিক কৌশল। বাংলাদেশ থেকে সারা বছর কত হাজার কোটি টাকা এই সেকেন্ড হোমে পাচার হয় তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে আমেরিকার ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক এর এক হিসেব অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে অন্তঃত এক লাখ ৯৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশে রেমট্যান্স কত আসলো?

১৯০ বছর বৃটিশরা এদেশ শাসন করেছে। ওই ১৯০ বছর এদেশের সকল সম্পদ লুন্ঠন করে তারা বৃটেনে পাঠিয়েছে। তারপর ২৪ বছর পাকিস্তানীরা এদেশ শাসন করেছে। ওই ২৪ বছর তারা এদেশের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করেছে। আর গত ৪২ বছর ধরে বাংলাদেশ স্বাধীন। কিন্তু বিদেশে সম্পদ পাচার কিন্তু বন্ধ হয় নি। কারা বাংলাদেশ থেকে বাইরে সম্পদ পাচার করছে? সোজা কথায় এর জবাব হল গত ৪২ বছরে তৈরি হওয়া একটি নব্য ধনিক শ্রেণী। এই নব্য ধনিক শ্রেণীর চরিত্রও সেই বৃটিশ শাসক, পাকিস্তানি শাসকদের মত। তারা কারা?

গত ৪২ বছরে বাংলাদেশের এমপি-মন্ত্রী'র ভাই ব্রাদার, আত্মীয়-স্বজন, তাদের স্বজনপ্রীতির জোরে অর্থ লুট করা একটি লুটেরা শ্রেণী। এরা হাল আমলের হলমার্ক-ডেসটিনি-রানা প্লাজার মালিকদের মতো একশ্রেণীর মালিক। যারা দেশের সম্পদ কোনো না কোনো ভাবে লুট করেছে। সেই লুটে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা করেছে এই ৪২ বছরের শাসকদের কেউ না কেউ। সেই দলে বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে শেখ হাসিনা যেমন আছেন, মেজর জিয়া থেকে খালেদা জিয়া যেমন আছেন, তেমনি আছেন জেনারেল এরশাদ-জেনারেল মঈন গংরা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত এই ৪২ বছরে যারাই দেশ শাসন করেছে তারাই এই লুটের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তাকারী। কখনো কখনো এরা আবার পার্সেন্টেজ ব্যবসা করেছে। কখনো ৫ পারসেন্ট কখনো ১০ পারসেন্ট বা কখনো ১৫ পারসেন্ট। তার মানে এই ৪২ বছরে যারা দেশ শাসন করেছে তাদের মধ্যেও বিদেশে দেশি সম্পদ পাচার করার একটি চক্র সব সময় সক্রিয় ছিল। সেই চক্রটি এখনো হাল-আমলের হলমার্ক-ডেসটিনি-রানা প্লাজার মালিকদের মতো সক্রিয় রয়েছে।

রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধার নামে এরা ৪২ বছর ধরে দেশের সম্পদ বাইরে পাচার করেছে এবং এখনো করছে। তারা কারা? আমরা সবাই তা আন্দাজ করতে পারি।

বাংলাদেশের যারা কৃষক, যারা শ্রমিক, যারা গরিব মানুষ, তারা দেশে থাকলেও পরিশ্রমই তাদের একমাত্র মাধ্যম। পরিশ্রম করলে দু'বেলা খাওয়া জোটে। পরিশ্রম না করলে না খেয়ে থাকার নিয়ম। এই শ্রেণীর পরিবার থেকে মেধাবী কোনো ছেলে বা মেয়ে দেশের বাইরে যাবার সুযোগ পেলে সেখান থেকে সে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। এই শ্রেণীর পরিবার থেকে যারা বাইরে শ্রমিক হিসেবে গেছে তারা দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। কেন পাঠাচ্ছে? কারণ, তারা সবার উপরে দেশ ও নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ভালোবাসে। নিজের হাজার পরিশ্রমের বিনিময়ে এরা দেশের হাড্ডিসার মানুষগুলোর মুখে একটু হাসি ফোটাতে চায়। এরাই দেশের অর্থনীতিকে দেশে থাকলেও বা বিদেশে গেলেও সচল রাখছে। বিপরীতে, লুটেরাদের শ্রেণী, দালালি, কালোবাজারী, দুর্নীতি বা অবৈধ উপায়ে টাকা কামিয়ে বিদেশে পাচার করছে। সেখানে নিজেদের পরিবার ছেলেমেয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সেখানে ব্যাংকে টাকা জমা রাখছে। সেখানকার ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ছেলেমেয়েরা সেশনজট মুক্ত পরিবেশে ভালো লেখাপড়া শিখছে। আর লুটেরার যিনি চালক তিনি বাংলাদেশে বসে এসব করছেন, বা তার মনোনীত বা পোষ্য ক্যাডাররা ফাই ফরমায়েস খাটছেন। খুন, গুম, চাঁদাবাজি, টেন্ডাবাজি, দখল, নদী ভরাট, খাল ভরাট, খাস জমি দখল, মার্কেট দখল, সরকারি সম্পদ দখল, দুর্নীতি, ঘুষ ইত্যাদি করে এরা অর্থ বানাচ্ছে। এদের সহযোগিতা করছে আমাদের স্বাধীন দেশের নতুন শাসকরা। বঙ্গবন্ধু থেকে বর্তমান সময়ের শেখ হাসিনা পর্যন্ত (১৯৭১ থেকে ২০১৩) সকল শাসকদের থেকেই এই সব লুটেরা সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। এখনো পাচ্ছে। সেই দলে মোটা দাগে যদি আপনি সজিব ওয়াজেদ জয়, বা পুতুলের নাম বলেন, বলতে পারেন। সেই দলে আপনি যদি তারেক জিয়া বা কোকো'র নাম বলেন বলতে পারেন। এরা কেউ সেই তালিকার বাইরে নন। সুযোগ সুবিধা সবাই নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন।

আপনি লন্ডনে গেলে নব্য এই বাংলাদেশী ধনিক শ্যেনীর খোঁজ পাবেন। আপনি কানাডা গেলে এই শ্রেণীর খোঁজ পাবেন। আপনি আমেরিকা গেলে নব্য এই ধনিক শ্রেণীর খোঁজ পাবেন। আপনি অস্ট্রেলিয়া গেলে এই শ্রেণীর খোঁজ পাবেন। আপনি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দুবাই, আবুধাবি, সুইডেন, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড গেলেও এই নব্য বাংলাদেশী ধনিক শ্রেণীর সন্ধান পাবেন। এরা সেখানে নিরাপদ সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে। পরিবার ছেলেমেয়ে সেখানে থাকে। পরিবার প্রধান নিজ দল ক্ষমতাসীন থাকলে বাংলাদেশে অবস্থান করেন। নিজ দল বিরোধী দলে থাকলে ক্যাডারদের বা অনুগত বাহিনীর উপর সবকিছুর দায়িত্ব দিয়ে তিনিও পরিবারের সঙ্গে তখন সেকেন্ড হোমে নিরাপদে থাকেন।

কানাডায় আপনি মাত্র দেড় লাখ কানাডিয় ডলার দিলেই পাচ্ছেন বিনিয়োগ কোঠায় নিরাপদ সেকেন্ড হোম। বাংলাদেশী টাকায় যা মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ টাকার মতো। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, সুইডেন, বৃটেন, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি বহু দেশে এসব লুটেরা অনায়াসে একটি সেকেন্ড হোম বানিয়ে রেখেছেন বা রাখছেন অথবা বানানো পথে রয়েছেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল হলেই এরা নিরাপদ সেকেন্ড হোমে পাড়ি জমাচ্ছেন। কারা এদের সুযোগ করে দিচ্ছেন? সহজ সরল জবাব- হাসিনা-খালেদা গং।

মালয়েশীয় সরকার ২০০২ সাল থেকে ‘সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচি চালু করার পর ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে এক হাজার ৮৬২ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় নাগরিকত্ব কিনেছেন (সূত্র: ডেইলি স্টার, ২৭ এপ্রিল, ২০১২)। আর সেই হিসেবে তাঁরা (১৮৬২ জন নব্য ধনিক) প্রায় দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা মালয়েশিয়ায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ কারা কিভাবে বিক্রি করছে এটা মনে হয় সবার কাছেই এখন পরিষ্কার। দেশ থেকে যারা বা যাদের অনুসারী বা দোষর বিদেশে সম্পদ পাচার করছে তারাই সেই দলের লোক। এদের পরিচয় নব্য ধনিক শ্রেণী। এদের কারা তৈরি করলো? বিগত ৪২ বছরের আমাদের শাসকরাই এদের হাতে ধরে তৈরি করেছে। এরা বিদেশে সফরে গেলে তারা মেজবান খাওয়ান। উপহার সামগ্রি দেন। আরো কত কি!!!

দুঃখের বিষয় হল, আমাদের রেমিট্যান্সের হিসাব থাকলেও বিদেশে এই নব্য বাংলাদেশী ধনিক শ্রেণীদের পাচার করা টাকার কোনো সঠিক হিসেব নেই। তবে সেটি যে কথিত রেমিট্যান্সের চেয়ে কয়েক হাজার গুন বড় তা আন্দাজ করতে রাতের ঘুম হারাম করতে হয় না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪

মেহেদী হাসান ভূঁঞা বলেছেন: এই শাষক গোষ্টি কখনো এই দেশটাকে ভালবাসে না।তারা শুধু তাদের স্বার্থের জন্য এই দেশেটাকে ব্যবহার করে। হায়রে অভাগা দেশ............

২| ২৬ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:০২

শ্রাবণধারা বলেছেন: খুব গুরুত্বের দাবি রাখে এমন বিষয় নিয়ে একটা ভাল লেখা।

"এরা সেখানে নিরাপদ সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে। পরিবার ছেলেমেয়ে সেখানে থাকে। পরিবার প্রধান নিজ দল ক্ষমতাসীন থাকলে বাংলাদেশে অবস্থান করেন। নিজ দল বিরোধী দলে থাকলে ক্যাডারদের বা অনুগত বাহিনীর উপর সবকিছুর দায়িত্ব দিয়ে তিনিও পরিবারের সঙ্গে তখন সেকেন্ড হোমে নিরাপদে থাকেন।" খুব সত্যি কথা বলেছেন।

জনগন যতদিননা এদের ধরে ধরে গনপিটুনি দেয় ততদিন হয়ত এটা চলতেই থাকবে...।

৩| ২৬ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এবারের সংগ্রাম এই নব্য শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম।

এবারের সংগ্রাম আমজনতার প্রকৃত মুক্তির সংগ্রাম।

এই সংগ্রামেরই নেতৃত্বের অপেক্ষায় বাংলাদেশ।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.