নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুলশানের জঙ্গী হামলার ঘটনায় মিডিয়া জঙ্গীদের সহযোগী হিসাবে কাজ করেছে!!

০২ রা জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:১১

গতকাল রাতে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের হোলি আর্টিজান বেকারিতে সশস্ত্র জঙ্গী হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের মিডিয়া আবারো নতুন করে যে সংশয় সৃষ্টি করলো, সেটি এখনই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার নেবার সময় হয়েছে। প্রকারন্তরে বাংলাদেশের মিডিয়া গতকালকের ঘটনায় জঙ্গীদের সরাসরি সহযোগিতায় মেতে উঠেছিল। সেই মেতে ওঠার পেছনে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও ছিল, আবার নিজেদের আরটিপি রেট বাড়ানোর উদ্দেশ্যের পাশাপাশি, বিদেশী বুর্জোয়া মিডিয়ার কাছে ফুটেজ বিক্রি'র ব্যবসাও লুকিয়ে ছিল।

প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো জঙ্গীদের জন্য বাইরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোথায় কীভাবে অবস্থান তার একেবারে নিখুত বর্ণনা দিয়ে এমনভাবে সহযোগিতা করছিল যে, সাংবাদিকতার ন্যূনতম ইথিক্স এরা মোটেও পালন করেনি। হয় এরা আদৌ বুঝতেই পারেনি যে তাদের এই সরাসরি সম্প্রচার সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছে জঙ্গীদের, অথবা এরা ইচ্ছাকৃতভাবেই বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকে বাংলাদেশের জঙ্গীদের অবস্থা প্রমাণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল।

সেই সুযোগ নিয়ে সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা মেতে উঠেছিল বাংলাদেশে জঙ্গী রয়েছে সেই ঘোষণায়। বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিদেশী এসব সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়াগুলো'র কাছে ফুটেজ বিক্রি'র ব্যবসা করে, সেই ঘটনা মোটেও পুরনো নয়। গতকাল রাতেও কয়েকটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল ফুটেজ বিক্রি'র প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। ভালো করে খোঁজ নিলে তা বেরিয়ে আসবে!

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারি একটি স্প‌্যানিশ রেস্তোরা। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশীদের খুবই প্রিয় একটি রেস্ট্রুরেন্ট এটি। সশস্ত্র জঙ্গীরা রাত পৌনে নয়টায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে রেস্তোরায় থাকা সবাইকে জিম্মি করে। গুলশান নর্থ এভিনিউ থেকে ৭৯ নম্বর সড়কের একেবারে মাথায় গুলশান লেকের পাড়ে হোলি আর্টিজান বেকারির অবস্থান।

যার দক্ষিণ ও উত্তর পাশে নর্ডিক ক্লাব, ৭৯ নম্বর সড়কের শুরুতে রাশিয়ান অ্যাম্বাসি, তারপর কাতার অ্যাম্বাসি, কাতার অ্যাম্বাসির উল্টোপাশে ডাচ ক্লাব (নেদারল্যান্ড রিক্রিয়েশান সেন্টার), ডানপাশে ইরানি অ্যাম্বাসি, ঠিক পেছনের ৮৪ নম্বর সড়কের উত্তর পাশে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন ও দক্ষিণ পাশে জার্মান অ্যাম্বাসি, তারপর সৌদি অ্যাম্বাসি, তারপর পোল্যান্ড অ্যাম্বাসি। হোলি আর্টিজান বেকারির পূর্বপাশে গুলশান লেক। কিন্তু ৭৯ নম্বর সড়ক দিয়ে লেকের পাড়ে যাওয়া যায় না। ওটা অনেকটা কানা গলি। আবার উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ৭৫ নম্বর সড়ক দিয়ে সোজা উত্তর দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে গেলে সেখান থেকে লেকের পাড়ে যাওয়া যায়। অর্থ্যাৎ গুলশানের ঠিক যে জায়গায় হোলি আর্টিজান বেকারির অবস্থান, সেখানে যাওয়ার অনেক উপায় আছে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের পেছনে বারিধারা ডিওএইচএস যাবার মুখে পুলিশের চেক পয়েন্ট রয়েছে। আবার গুলশান লেকের ব্রিজের গোরায় বারিধারার জাতিসংঘ সড়কের সামনে পুলিশের চেক পয়েন্ট রয়েছে। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলশান লেকের পাড়ের রাস্তা দিয়ে অনায়াসে পুলিশের চেক পয়েন্ট এরিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে সক্ষম। আবার গুলশান মেইন রোড দিয়ে গুলশান নর্থ এভিনিউ ধরে ৭৯ নম্বর সড়ক দিয়েও পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া বিচিত্র কিছু না। কারণ ৯০ নম্বর সড়কের মুখ থেকে রিক্সায় করে পুলিশের নজরদারি এরিয়েও ওদিকে যাওয়া বিচিত্র কিছু না।

প্রতিটি অ্যাম্বাসির সামনে যে সকল পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন, সাধারণত তারা কেউ পথচারীদের চেক করেন না। কেবলমাত্র টহল পুলিশ ও পুলিশের চেক পয়েন্ট এরিয়ে ওই ঘটনাস্থলে জঙ্গীদের পৌঁছানোটা একেবারে তাই মামুলি ব্যাপার। আর জঙ্গীরা সেই সুযোগটি নিয়েছে। সাধারণত জঙ্গীরা কোথাও কোনো অপারেশান করার আগে ঘটনাস্থল ভালো করে বেশ কয়েকবার রেকি করে নেয়। আর গতকালকের ঘটনায় জঙ্গীরা কোনো ধরনের বাধা না পেরিয়ে রেস্তোরায় পৌঁছানোর মানে হলো তারা সফলভাবে সশস্ত্র অবস্থায় সেখানে পৌঁছাতে পেরেছিল।

যে চারজন জাপানিকে ওই রেস্তোরায় নামিয়ে দিয়ে বাইরে তাদের গাড়ির ড্রাইভার অপেক্ষা করছিলেন, তিনিই প্রথম জঙ্গীদের হামলার শিকারে পড়েন। কারণ জঙ্গীরা রেস্তোরায় ঢোকার মুহূর্তে গোলাগুলি করেছে। পাশের রাস্তার টহল পুলিশ ওই ড্রাইভারকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সেদিকে গেলে তারাও জঙ্গীদের হামলার শিকার হন। তারপর ঘটনাস্থলে যায় থানা পুলিশ।

ঘটনার শুরু রাত পৌনে নয়টায়। তারমানে ঘটনাস্থলে গুলশান থানার পুলিশের যেতে আরো পনের থেকে বিশ মিনিট লেগেছে। ততক্ষণে রেস্তোরার ভেতরে অবস্থিত সবাই জঙ্গীদের কাছে জিম্মি। প্রথম গোলাগুলির সময় রেস্তোরার বাইরে জাপানিদের ড্রাইভার গুলিবিদ্ধ হন। পরে পুলিশ যে ভুলটি করেছে, পুলিশ নরমাল ওয়েতে সেখানে গিয়ে অনেকটা নাটকে অভিনয় করার মত সবাইকে কাছে গিয়ে বলেছে যে, ভেতরে যারা আছেন বাইরে বেরিয়ে আসেন! জঙ্গীরা সেই সুযোগে বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করেছে। যে কারণে পুলিশের সেই দলের প্রায় সবাই আহত হয়েছেন। সেই দলের একেবারে সামনের দিকের সদস্য বনানী থানা'র ওসি সালাউদ্দিন ও ডিবি'র এসি রবিউল গুরুতর আহত হন। পরে ওনারা হাসাপাতালে মারা যান। পুলিশ আসলে ধারণাই করতে পারেনি যে জঙ্গীরা এতোটা সংগঠিত। শুরুতে পুলিশের ভুলটা সেখানেই হয়েছে।

এরপর ঘটনাস্থলে যথারীতি মিডিয়া হাজির হয়েছে। কোনো কোনো প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল দেখানো শুরু করেছে বাইরে কোথায় কীভাবে পুলিশ র্যাব অবস্থান নিয়েছে, পুলিশের কতজন আহত হয়েছে, কতজন নিহত হয়েছে ইতাদি। এসব ঘটনা জঙ্গীরা রেস্তোরার টেলিভিশনে দেখেছে। অথবা তাদের মোবাইল ফোনে দেখেছে। কারণ জঙ্গীদের সঙ্গে ইন্টারনেট কানেকশান ছিল। তারা ভেতর থেকে ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট পর্যন্ত করেছে!

র্যাবের মহাপরিচালক মিস্টার বেনজীর আহমেদ যখন মিডিয়ার কাছে অনুরোধ করলেন, তারপরেও কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল তা মানেনি। বরং তারা ঘটনাস্থলের নিখুত বর্ণনা দিচ্ছিল। কোথায় কীভাবে নিরাপত্তা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে, তারা কতোটা সাঁজোয়া, কতোটা সুসজ্জিত, এসব এরা বর্ণনা করেছে। যা একটি সফল অপারেশানের জন্য জঘন্য অপরাধ। কারণ এতে করে জঙ্গীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সব ধরনের কৌশল সম্পর্কে আগেই ধারণা পাচ্ছিল এসব মিডিয়ার কল্যাণে।

পুলিশের এখন খতিয়ে দেখা উচিত গতকাল রাতে কোন কোন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন, বিবিসি ও আল-জাজিরার কাছে সরাসরি সম্প্রচারের ফুটেজ বিক্রি করেছে! মিডিয়া এই ঘটনায় এভাবে ইনভলভ না হলে সেনাবাহিনী'র পরিচালিত অপারেশান থান্ডার বোল্ট আরো আগেই পরিচালনা করা সম্ভব হতো। এমন কী অপারেশানের আগে যখন মিডিয়ার লোকজনকে আরো দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তখনও এরা প্রচার করতে ছিল, গুলশান লেক দিয়ে নৌবাহিনী'র কমান্ডো টিম কীভাবে কোনদিকে যাচ্ছে!

এসব মিডিয়ার কার্যকলাপ মূলত জঙ্গীদের আলটিমেটলি হেলপ করেছে। মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্যের কারণে জঙ্গীদের যে এসকেপ করার আর কোনো সুযোগ নেই, এটা যখন ওরা বুঝতে পেরেছে, তখন ওরা খুন করতে মেতে উঠেছে! যে কারণে গতকালকের জঙ্গী হামলার ঘটনায় আমাদের মিডিয়া পরোক্ষভাবে জঙ্গীদের ভয়ংকরভাবে সহযোগিতা করেছে। যা সাংবাদিকতার কোনো ইথিক্সে পড়ে না।
সরকারের উচিত, যে সকল মিডিয়া নিরাপত্তা বাহিনীর অনুরোধ স্বত্ত্বেও এই অপকর্মটি কনটিনিউ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোন অনুষ্ঠান এরা লাইভ টেলিকাস্ট করতে পারবে, সেজন্য যথাযথ আইন প্রণয়ন করা। গতকালকের ঘটনায় বাংলাদেশের মিডিয়া সুস্পষ্টভাবে জঙ্গীদের সহযোগিতা করেছে। যার সকল ফুটেজ এবং নিউজ পুলিশ ইচ্ছে করলেই এখনো উদ্ধার করতে পারবে!

যে মিডিয়া আমাদের রাষ্ট্রের জন্য হুমকি, যে মিডিয়া রাষ্ট্রীয় অনুরোধ উপেক্ষা করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহযোগী হয়ে জঙ্গীদের সহযোগিতা করে, তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু সুস্পষ্ট। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো যারা বাংলাদেশে আইএস আছে অযুহাতে সহযোগিতার নামে ঢাকায় তাদের সৈন্য পাঠাতে একপায়ে খাঁড়া, তাদের পার্পাস সার্প করেছে আমাদের এসব তথাকথিত অশিক্ষিত মিডিয়া। এদের এখনই বিচারের আওতায় আনা উচিত। নইলে এরাই বাংলাদেশের জন্য মরণ ফাঁদ তৈরি করার জন্য অপেক্ষা করছে। এরা জঙ্গীদের কীভাবে সহযোগিতা করছে, নিজেরাই হয় জানে না নতুবা টাকার বিনিময়ে এরা এই এজেন্ডা নিয়েছে। ধিক বাংলাদেশের অশিক্ষিত মিডিয়ার হলুদ সাংবাদিকতা। ধিক জঙ্গীদের সহযোগীদের, শতধিক!!

..............................
২ জুলাই ২০১৬

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩০

অশ্রুকারিগর বলেছেন: অফটপিকে আমার একটা প্রশ্ন ছিল মাননীয় রেজা ঘটক এবং ব্লগ কতৃপক্ষের কাছে ' আপনি কি মডু নাকি ? আপনি পোস্ট দিলেই নির্বাচিত হয়ে যায়! এর আগেও দেখছি। জাস্ট জানার জন্যে জিজ্ঞেস করলাম।

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: মিডিয়ার ভূমিকা নেতিবাচক হলে সেটা দুঃখজনক।

৩| ০২ রা জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৫৫

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: ব্লাডি সোয়াইন, এইসব জার্নালিস্ট

৪| ০২ রা জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৪১

আবুল হায়াত রকি বলেছেন: কালকের ঘটনাথে সবাই বোঝতে পেরেছেন, এইসব মেইন-স্ট্রিম মিডিয়ার মানুষের কােছে সংবাদের এত অভাব যে যা শুনে সেটাই একটা ঘটনা বলে প্রচারণাতে ব্যস্ত। এদের থেকে সবাই দূরে থাকেন। আস্তে আস্তে সবার বোধদয় হচ্ছে। ভালো লক্ষণ।

৫| ০৩ রা জুলাই, ২০১৬ ভোর ৬:৫২

সুবল চন্দ্র বর্মন বলেছেন: একেই মনেহয় বলে, পাওয়ার অব মিডিয়া।

৬| ০৩ রা জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল বলছেন।
বাঙালির কৌতুহল বড় বেশি

৭| ০৩ রা জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:১৩

চিন্তিত নিরন্তর বলেছেন: আবেগি জাতি আমরা।

৮| ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:২০

আরিফ রুবেল বলেছেন: মিডিয়ার লাইভ টেলিকাস্ট নিয়ে তথ্য মন্ত্রনালয়ের কড়া দিক নির্দেশনা থাকা দরকার। স্কুপ আর এক্সক্লুসিভ দেখানোর নামে জাতীয় দূরযোগ পরিস্থিতিতে দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ গ্রহনযোগ্য না।

৯| ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৩

মাদিহা মৌ বলেছেন: মিডিয়ার ব্যাপারে সরকারের সত্যিই ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.