নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের পরপরই আমরা একটা বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলাম। জেনারেটরে সবসময় দুই ক্যামেরার দুইটা ব্যাটারি চার্জ হচ্ছিলো। শুটিংয়ের মাঝখানে ব্যাটারির চার্জ শেষ। মোস্তাফিজ গেল জেনারেটরের কাছে। জেনারেটরে যে ব্যাটারি চার্জ হচ্ছিলো, সেটি নিয়ে আসবে আর ক্যামেরায় যে ব্যাটারির চার্জ মাত্র শেষ হলো, সেটি আবার চার্জে বসাবে। কিন্তু মোস্তাফিজ একটি বড় দুঃসংবাদ নিয়ে ফিরলো!
জেনারেটরে বসানো দুইটা ব্যাটারি এবং দুইটা চার্জার শটসার্কিট হয়ে জ্বলে গেছে! আমরা নলীনিদার বাড়িতে তখন শুটিং করছিলাম। জেনারেটর রাখা ছিল আমার বন্ধু স্বপন পালের বাড়িতে। স্বপনের বউ বাসন্তিকে আমি স্পেশালি বলে রেখেছিলাম জেনারেটর পাহারা দিতে। যাতে কেউ ব্যাটারি না ধরে। কিন্তু মোস্তাফিজ যে দুঃসংবাদ নিয়ে ফিরলো, এখন আমাদের সামনে কী করনীয়?
তিনটা ক্যামেরার দুইটার চার্জ শেষ। ওই দুই ক্যামেরার বাড়তি দুইটা ব্যাটারিও শটসার্কিটে পুড়ে গেছে। ওই দুই ক্যামেরার অন্য দুইটা ব্যাটারি চার্জে বসানোর কোনো উপায় নাই। কারণ চার্জার দুইটাও পুড়ে গেছে। শুটিং মোটামুটি ওখানেই বন্ধ হবার উপক্রম। শুধু শুটিং বললে ভুল হবে, আসলে সিনেমা বানানোর পুরো ব্যাপারটাই তখন শেষ হবার পথে!
আমার মাথায় তখন কোনো কাজ করছিল না। আমি ঠাণ্ডা মাথায় এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কিছু উপায় ভাবলাম। একটা চার্জার আর একটা ব্যাটারিসহ মোস্তাফিজকে পাঠালাম তারাবুনিয়া বাজারে। সেখানে ইলেকট্রিসিটি আছে। যদি চার্জার কাজ করে তাহলে ব্যাটারি চার্জ দিতে পারবে। পাশাপাশি বাজারে কোনো ইলেকট্রিশিয়ান যদি এর কোনো সুরাহা করতে পারে, তো একটা উপায় বের হবে। মোস্তাফিজের সাথে চিন্ময়কে পাঠালাম বাজারের কিছু ছবি তোলার জন্য।
আর পুড়ে যাওয়া অন্য ব্যাটারি আর চার্জারসহ প্রণবকে পাঠালাম দীঘিরজান বাজারে। সেখানে আমার বন্ধু গৌতমের রেডিও-টেলিভিশন মেরামত করার দোকান আছে। গৌতম যদি কোনো বুদ্ধি বের করে কিছু করতে পারে, সেই আশায়। গৌতমকে ফোন দিয়ে পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করলাম। গৌতম জানালো, ক্যামেরার ব্যাটারি নিয়ে কখনো তো কাজ করিনি। তুমি পাঠাও, একটা চেষ্টা করে দেখি।
কার্যত আমাদের শুটিং ওখানেই মাঠে মারা গেছে। কিন্তু নিজেকে প্রস্তুত রাখার জন্য আমি তখন শুটিং বন্ধ করিনি। সেলিমকে ডেকে বললাম, কী করবি? সেলিম বললো, ভাই নতুন চার্জার আর নতুন ব্যাটারি না পাওয়া পর্যন্ত শুটিং চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ আমাদের মেইন দুইটা ক্যামেরা তখন অলস হয়ে গেছে।
আমি সেলিমকে একটা ধমক দিয়ে বললাম, শুটিং বন্ধ করা যাবে না। তৃতীয় যে ক্যামেরাটি আছে, ওটার চার্জ যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ আমি শুটিং চালিয়ে যেতে চাই। আর তুই রেডি হ। এবার তুই ক্যারেক্টার করবি! সেলিম জানতে চাইলো, ভাই আমার আবার কীসের ক্যারেক্টার? জবাবে বললাম, তোর একটা ক্যারেক্টার করা লাগবে। ওইটা এখনো স্ক্রিপ্টে নাই। আমার মাথায় আছে। তুই চেয়ারম্যানের ক্যারেক্টার করবি। এই চেয়ারম্যান বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। গ্রামের সবার খুব প্রিয় চেয়ারম্যান। সেলিম বললো, ভাই আমারে দিয়ে হবে না। আমি বললাম, তোরে দিয়াই হবে। তুই আগে রেডি হ!
গোটা ইউনিট তখন ফাঁকা। সেলিমকে বললাম, গরমে তুই মাত্র গোসল করে বাড়িতে ডুকেছিস। ঠিক এই সময়ে একটা ছেলে এসে তোরে ডাক দেয়। গ্রামের ছেলেটির সাথে ঢাকা থেকে আগত চৌধুরী সাহেব (ফয়সল)। ঘরে না ঢুকে তোরা ঘরের সিড়িতে বসে কিছু কথা বলবি। মোটামুটি এই হলো সিকোয়েন্স। চৌধুরী সাহেব তোর কাছে নিতাই-পারু'র ব্যাপারে কিছু বিষয় জানতে চাইবে!
সেলিম ব্যাপারটা ঠিক মনপুত না হওয়ায় আমাকে এক ধরনের বুঝ দেওয়ার জন্য রেডি হলো। প্যান্টের উপর লুঙ্গি পরলো। খালি গা। ভেজা চুল হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে ঘর থেকে বের হলো। জাহিদ আর আমি মিলে ওই সিকোয়েন্স শুট করলাম। কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া সিকোয়েন্স শেষ করে আমরা তালভিটায় চলে গেলাম। উদ্দেশ্য সূর্যাস্ত শুট করা। আর লালু-ভুলুকে নিয়ে একটা সিকোয়েন্স যদি করা যায়।
তালভিটায় যাবার পথে আমি গোপালগঞ্জে থাকা ছোট ভাই জাকিরকে ফোন করলাম। জাকিরকে বললাম, আমাদের দুইটা ব্যাটারি আর দুইটা চার্জার শটসার্কিটে পুড়ে গেছে। ওখানে কোনো ক্যামেরার দোকান পেলে দুইটা চার্জার আর দুইটা ব্যাটারি পাঠিয়ে দে। আমি ক্যামেরার মডেল এসএমএস করে দিচ্ছি। জাকির বললো, গোপালগঞ্জে কোনো ক্যামরার দোকান নাই। বললাম, তাহলে কোনো ব্যাটারির দোকানে গিয়ে ওদের বল যে, ক্যামেরা চালানোর মত কোনো বিকল্প ব্যাটারি ওরা দিতে পারবে কিনা? নইলে আমার শুটিং বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাতেই আমাদের টিম ঢাকা ফেরত যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই। জাকির বললো, আচ্ছা আমি ব্যাটারির দোকানে গিয়ে জানাচ্ছি।
ইতোমধ্যে মোস্তাফিজ ফোন করে জানালো, ব্যাটারি এবং চার্জার দুটোই পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এটা আর কোথাও ঠিক করার উপায় নাই। আর এখানে ক্যামেরার ব্যাটারি চার্জ করার কোনো উপায় নাই। কারণ চার্জার ছাড়া চার্জ করার কোনো উপায় নাই। কিছুক্ষণ পর প্রণব ফোন করে জানালো, না ভাই ব্যাটারি এবং চার্জার দুটোই পুরোপুরি পুড়ে গেছে। নতুন কেনা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নাই।
লালু-ভুলকে দিয়ে সূর্যাস্তের শট নিতে নিতে সূর্য ডুবে গেল। আর আমার তখন মনে হচ্ছিলো, আমার সিনেমা বানানোর কাজও হয়তো এখানেই শেষ হয়ে গেল। মোস্তাফিজ আর প্রণবকে ফেরত আসতে বললাম। মনের মধ্যে খুব ক্ষীণ একটা আশা তখনো কাজ করছিল। যদি জাকির গোপালগঞ্জ থেকে কোনো ব্যাটারি পাঠাতে পারে, হয়তো একটা শেষ চেষ্টা করতে পারবো।
আমরা একে একে সবাই সুনীলের দোকানের সামনে একত্রিত হলাম। জাকির ফোন করে জানালো, বারো ভোল্টের একটা ব্যাটারি আর কিছু তার দিয়ে একজনকে মটর সাইকেলে পাঠাচ্ছি। যদি ব্যাটারিতে কাজ হয় তো করলা। আর না হইলে ওই মটর সাইকেলে যেন ব্যাটারি ফেরত দিয়ে দেই। ব্যাটারি কাজ করলে ডেইলি পাঁচশো টাকা ভাড়া। আর মটর সাইকেল ভাড়া দেবা এক হাজার টাকা।
আমার মাথায় তখন কোনো কাজ করছিল না। এই মনে হয় সিনেমা বানানোর সব স্বপ্ন এখানেই মাটি হয়ে যাচ্ছে। আমরা সুনীলের দোকানের সামনে ব্যাটারির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। এমদাদ ভাইকে ডেকে বললাম, ব্রোজেনকে একটু ডাকো। সকালে ব্রোজেন ঘরামী আমার সাথে দেখা করতে আসছিলো। তখন ব্রোজেনকে আমি একটা কাজ দিয়েছিলাম। ব্রোজেনের বাঁশঝাড়ে একটানা লম্বা মুলি বাঁশ আছে। আড়াই হাত লম্বা সাইজ করে ত্রিশ-চল্লিশটা বাঁশের লাঠি বানাতে বলেছিলাম। ব্রোজেন জানতে চাইছিল, লাঠি দিয়ে কী করবা?
ব্রোজেনকে বলেছিলাম, ঠিক লাঠি না। আবার প্রয়োজনে লাঠির কাজও করা যাবে। তুই বাঁশের একমাথা ছয় ইঞ্চি মত মাঝখান দিয়ে ডাবল ফেড়ে রাখবি। ওই ফাড়া মাথায় ডানোর কৌটা ঢুকবে। মশাল বানাবো। আর সব সাইজ করে এগুলো সুনীলের বাড়িতে রাখবি। ব্রোজেন ওর দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছিলো। ভিড় ঠেলে ব্রোজেন এসে বললো, তোমার সেই লাঠি তো রেডি। বললাম সুনীলের উঠানে নিয়া আয়।
ববিকে বললাম, তুই ব্রোজেনকে নিয়ে বাঁশের মাথায় ডানোর কৌটা ঢুকিয়ে মশাল রেডি কর। যদি ব্যাটারি পাই আর কাজ করা যায়, তাহলে আমরা আবার শুটিং শুরু করবো। তখন টিমের সবাই এমনিতেই অলস বসেছিল। সুনীলকে জিজ্ঞেস করলাম, ডানোর কৌটা কই রাখছো? সুনীল ডানোর কৌ্টা দিল। জিজ্ঞেস করলাম, কেরোসিন রাখছিলা? বললো, কেরোসিন তো আছে। আগে দ্যাখ তোর ক্যামেরা তাজা হয় কিনা। তারপর দেবানি।
সুনীলকে বললাম, আর মশালের নাসা কোই? সুনীল বললো, তুই মাথা গরম করিস না। সব আছে। বললাম, সব ওদের কাছে দে। যদি ব্যাটারিতে কাজ করে তো আমরা আবার শুটিং শুরু করবো। এরমধ্যে ওরা মশালগুলো রেডি করুক। মোটামুটি টিমের প্রায় সবাই ববি আর ব্রোজেনের সাথে মশাল বানানোর কাজে লেগে গেল।
রাত দশটা নাগাদ বারো ভোল্টের ব্যাটারি নিয়ে একজন গোপালগঞ্জ থেকে আসলো। মোস্তাফিজ বললো, ভাই একটা ভয়ের কারণ আছে। ক্যামেরার পেছনে যেখানে ব্যাটারি থাকে, সেখানে তার দিয়ে এই বারো ভোল্টের ব্যাটারি কানেকশন দিতে হবে। কিন্তু কোনো কারণে যদি শটসার্কিট হয়, তাহলে ক্যামেরা জ্বলে যাবে। এখন এই রিক্স আমরা নেব কীনা, এটাই মোস্তাফিজের প্রশ্ন!
আমি সেলিমকে ডাকলাম। বললাম, মোস্তাফিজের কাছে জিজ্ঞেস কর, যে ক্যামেরার দাম কত? যদি এই ব্যাটারি লাগাতে গিয়ে ক্যামেরা জ্বলে যায়, তাহলে সিনেমা বানানো এখানেই শেষ! আমি ঢাকায় ফিরে ক্যামেরার টাকা দিয়ে দেব। চার্জার আর ব্যাটারি তো এমনিতেই কিনে দিতে হবে। আর যদি ক্যামেরা না জ্বলে, তাহলে আমরা শুটিং কনটিনিউ করবো। আমি এই রিক্সটা ঠাণ্ডা মাথায়ই নিতে চাই। যা হবে এখনই হয়ে যাওয়া ভালো!
মোস্তাফিজ এর মধ্যে ক্যামেরা হাউজে কথা বললো। জানার বিষয় হলো যদি কোনো কারণে ক্যামেরা নষ্ট হয়, তাহলে আমাকে কত টাকা জরিমানা দিতে হবে? মোস্তাফিজ ফোনে শুনে বললো, ভাই ক্যামেরার বয়স এক বছর। সাড়ে বারো লাখ টাকার ক্যামেরা। এখন যদি আমরা এই ক্যামেরা নষ্ট করি, তাহলে পুরাটাই দিতে হবে। আমি বললাম, ফোনটা আমাকে দাও! সেলিম বললো, ভাই আপনি চুপ থাকেন, আমি কথা বলি।
সেলিম কথা বলে একটা রেজাল্ট বের করলো। ক্যামেরা যেহেতু এক বছর ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এখন আর এই ক্যামেরার দাম সাড়ে বারো লাখ টাকা হবে না। অর্ধেক হওয়ার কথা। কিন্তু ক্যামেরা হাউজের সাথে সেলিমের কথা যেখানে শেষ হলো, তার সানেনাযুল হলো, যদি আমরা ক্যামেরা নষ্ট করি তাহলে নগদ সাড়ে সাত লাখ টাকা গুণতে হবে।
সেলিম আমাকে বারবার অনুরোধ করে বোঝানোর চেষ্টা করলো, ভাই মাথা ঠাণ্ডা করেন। চলেন আমরা ঢাকা যাই। নতুন করে আবার ব্যাটারি আর চার্জার নিয়ে পরে আবার শুটিং করতে আসবো। বারো ভোল্টের এই ব্যাটারি নিয়ে এই রিক্স নেওয়াটা মোটেও ঠিক হবে না। আমি বললাম, তুই সকল আর্টিস্ট রেডি কর। এই সিদ্ধান্ত নেবো আমি। মোস্তাফিজ অনুরোধ করলো, ভাই মাথা ঠাণ্ডা করেন। এই রিক্স নেওয়া ঠিক হবে না। মোটামুটি আমার টিমের সকলের একটাই অনুরোধ, এমন রিক্স নেওয়া ঠিক হবে না।
আমি বললাম, ঠিক আছে, আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দাও। আমি নিরিবিলি একা একটা সিগারেট খাবো। তারপর এসে বলবো কী করবো? পাঁচ মিনিট পর ফয়সল আর ইকতার আমার কাছে আসো! আমি সুনীলকে ডেকে বললাম আমার সাথে আয়। টিমের অনেকে আমার পিছু নিতে চাইলো। আমি বললাম, কাউরে না ডাকলে যেন কেউ আমার কাছে না আসে।
জীবনে এই প্রথম একটা কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি আমি তখন। যদি এই বারো ভোল্টের ব্যাটারি ক্যামেরার সাথে অ্যাডজাস্ট না হয়, তাহলে ক্যামেরা অন করার সাথে সাথে ক্যামেরাটা জ্বলে যাবে। আর আমাকে গুণতে হবে নগদ সাড়ে সাত লাখ টাকা। সুনীলকে বললাম, শোন জীবনে জানা মতে কোনো পাপ কাজ তো করি নাই। ক্যামেরাটা যদি এখন জ্বলে যায় তাহলে ক্যামেরার জরিমানা দিয়ে সিনেমা বানানোর শখ এখানেই শেষ করবো। আর যদি ক্যামেরা টিকে যায় তাহলে কাজ চালিয়ে যাবো। এই রিক্সটা আমি নিতে চাই।
সুনীল পুরো ঘটনা বোঝার চেষ্টা করলো। আমাকে বলতে লাগলো, এই রিক্স নেওয়াটা ঠিক হবে না। একটা সিগারেট শেষ করে পরের সিগারেট জ্বালিয়ে আমি ফয়সল, ইকতার আর সেলিমকে ডাকলাম। ওদের বললাম, আমি এই রিক্সটা নিতে চাই। হয় সিনেমা হবে না হয় এখানেই কাজ শেষ হবে। তোমরা আর কেউ বাঁধা দিও না। এই রিক্সটা আমি নিতে চাই। মোস্তাফিজকে ডেকে বললাম, তুমি ব্যাটারির সাথে ক্যামেরার সংযোগ লাগাও। যা হবার হবে। আর সেটা এখনই হয়ে যাক!
----------------------চলবে------------------------
১৫ জুলাই ২০১৯
©somewhere in net ltd.