নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘটকপুরাণ-১

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৯

দিনোর মা'র পাঠশালায় ভর্তি হবার পর খুব দ্রুত একটা চালাকি শিখেছি। তালপাতার খাড়া পাতায় রোজ তিনবার স্বরবর্ণ আর তিনবার ব্যঞ্জনবর্ণ লিখে দেখানোর নিয়ম। কালি বানানোর নাম করে প্রথম দফায় একবার ফাঁকিবাজি করি বটে। কিন্তু এটা দিয়ে বেশি দিন কাটানো গেল না। দোয়াতে জল আনার নাম করে অকারণে পুকুরপারে আর কতক্ষণ কাটানো যায়! তারপর টুনির কলম দিয়ে দোয়াতে কালি মেশানোর নামে চলে আরেকটা চালাকি। ওটাও বেশি দিন ধোপে টিকলো না। দিদিমণি ভারি কড়া!

পাঠশালার কড়াকড়ি পড়াশোনায় তখন আমার মন বসে না। পাশের বাড়ি থেকে প্রায়ই হারমোনিয়ামের সুর ভেসে আসে। কে যেন দ্বরাজ গলায় গান গায়। দিদিমণিকে স্বরবর্ণ লেখা একবার দেখিয়ে পুকুরে তালের পাতা ধোয়ার নাম করে পালিয়ে সেই বাড়িতে উকি দিলাম। এ দেখি পাঠশালার চেয়ে বেশি মজার জিনিস। কোলের কাছে হারমোনিয়াম নিয়ে হেরে গলায় গান গাইছেন বিপদভঞ্জন দাদু।

উকি দিতেই দাদু কাছে টেনে নিয়ে বসালেন। দাদুর ঝাকড়া চুল। গলায় তুলশির মালা। খালি গা। পড়নে সাদা ধুতি। তার উপরে মাজায় গামছা বাধা। মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে একটার পর একটা গান করেন দাদু। আর আমি অবাক হয়ে শুনি। হারমোনিয়াম থেকে কীভাবে যে এত মধুর সুর বের হয়, ওটাই আমার কাছে তখন অবাক হবার বিষয়।

কিন্তু গান বেশিক্ষণ শোনা গেল না। বিপদভঞ্জন দাদু'র ছেলে বিনয় আমাদের সাথেই পড়ে। বিনয় জল খেতে এসে আমাকে দাদু'র পাশে দেখে চোখ বড় বড় করে শুধু তাকালো! বিনয় গিয়ে যদি দিদিমণি'র কাছে নালিশ ঠুকে, তাহলে এই ফাঁকিবাজিটাও মাঠে মারা যাবে। তাই চুপচাপ বিনয়ের পেছন পেছন আবারো পাঠশালায় ফেরত গেলাম।

এবার ব্যঞ্জনবর্ণ একবার লিখে দিদিমণিকে দেখিয়ে পুকুরঘাট হয়ে আবারো দাদু'র বারান্দায় উকি দিলাম। দেখি দাদু হারমোনিয়াম পাশে রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। কেবল পা দুটো তালে তালে দোল খাচ্ছে। অগত্যা বিনয়দের পুকুরে কী কী মাছ দেখা যায় কিছুক্ষণ সেই চেষ্টা করি। পাছে কেউ দেখে আবার দিদিমণিকে বলে দেয়, তাই পুকুরপারেও বেশিক্ষণ দাঁড়ানো গেল না।

পাখি দেখার নাম করে বাগানে ঘুরে ঘুরে বেশ ভালোই সময় কাটতে লাগলো। হঠাৎ দেখি একটা আম গাছের ডালে শুয়ে আছে কিরু। কিরুকে আমরা সবাই কিছুটা ভয় পাই। কারণ কিরু'র গায়ে অনেক শক্তি। তবে কিরু কাউকে মারপিট করে না। নানান কিসিমের ভেলকি দেখাতে পারে ও। কিরু আমাকে দেখে একটা ভ্যাংচি কাটলো। যার অর্থ কিছুক্ষণ কিরুর সাথে আড্ডা দেওয়া যাবে।

কিরুর হাতে কয়েকটা নারকেল পাতা। পাতা দিয়ে সে আপনমনে চড়কি বানাচ্ছে। আমাকে ইশারায় গাছে উঠতে বললো। পায়ের নিচে চেপে ধরা পাতাগুলো আমাকে ধরতে বললো। প‌্যান্টের পকেট থেকে ছুরি বের করে চড়কির পাতা কেটে সাইজ করলো। চড়কি বানানো হয়ে গেলে আমার হাত থেকে পাতাগুলো নিয়ে চড়কিটা আমার হাতে দিল।

ছুড়িটা আবার প‌্যান্টের পকেটে চালান করে চড়কি বানাতে লাগলো। আমাকে বললো- বড় বড় দুইটা খেজুরের কাঁটা নিয়া আয়। খেজুরের কাঁটা আনতে গিয়ে ঘটলো আরেক বিপত্তি। আমাদের পাঠশালায় আমাদের থেকে যারা একটু বড়, সেই বড়দের তিনজন মেয়ে কড়াই গাছের তলায় হিসি দিচ্ছিলো। ওদের কেউ একজন আমাকে দেখে ফেললো!

আমি না দেখার ভান করে কাঁটা এনে কিরুর পাশে বসি। কিরু একটা হাসি দিয়ে বললো- কী দেখলি? ইশরায় বললাম- ওরা। কিরুও ফিসফিস করে বললো- চুপ! ততক্ষণে কিরু আবার ছুরি বের করে চড়কির পাতা কেঁটে সাইজ করে বললো- দে! ছুরি পকেটে ঢুকিয়ে কাঁটা চড়কির পেটে ভরে বাতাসের দিকে ধরতেই ওটা ঘুরতে শুরু করলো।

কিরুর হাতে ঘুরতে থাকা চড়কিটা আমাকে দিল। আমার হাতে থাকা চড়কি আর কাঁটা নিয়ে কিরুও চড়কি ঘুরাতে লাগলো। কিরু আর আমি চড়কি ঘুরিয়ে পাল্লা দিচ্ছি। কথন যে বেলা গড়িয়ে ইশকুল ছুটির সময় হয়ে গেল, কিচ্ছু টের পাইনি। শুনতে পেলাম সবাই দলবেধে নামতা পড়ছে। তখন আর কিরুর সাথে বাগানে থাকা সম্ভব না। এক দৌড়ে সবার পেছনে গিয়ে নামতা পড়ায় যোগ দিলাম। এক অক্কে এক, দুই অক্কে দুই, তিন অক্কে তিন...

----------------চলবে--------------------

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:০৩

প্রেক্ষা বলেছেন: দাদুকে খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। দাদুর ছেলে যদি আপনার সাথে পড়ে তাইলে তো দাদু বেশ ইয়াং।

৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: গত একমাস ধরে ছোট ভাইয়ের ছেলে আরিশ চিৎকার করে স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ পড়ছে। আরিশের মা এসে প্রশ্ন করে বল স্বরবর্ণ কয়টি? ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি? আরিশ বলতে পারে না।

৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:৫৩

মা.হাসান বলেছেন: ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.