নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/
ডিসেম্বর, ২০০৯
যখন বাসায় ফিরলাম ততক্ষণে দিনের আলো মরে ভুত। আজকে আমার কোন কাজই হয় নি। ক্লান্তি চেপে ধরেছে। ছোট্ট একটা কাজ হলেও কিছুটা তৃপ্তি পেতাম। মন অতৃপ্তিতে ছেয়ে আছে। এক আধটা দিন বোধহয় এমন যায়। অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়। “শুকনো সাগর খটখট” দিবস পালন করেছি আজকে। কিন্তু বেশিক্ষণ মনমরা হয়ে থাকা আমার স্বভাবে নেই। লেখালেখি করলে মন ভাল হয়ে যেতে পারে। তাই কম্পিউটার খুলে বসা।
আমার লেখালেখির ব্যাপারটা আমার মা জানে না। জানলে বিপদ। মাঝবয়সী কোনো মৌলানার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে পারে। তখন আমি পাকাপোক্তভাবে গৃহবন্দী হয়ে যাব। সারাদিন ঘরে বসে বালিশের ওয়াড় সেলাই করব। আর মাঝে মাঝে নিনজা বোরখা পরে পাশের বাসার ভাবীর কাছে গল্প করতে যাব। লেখালেখি করতে দেখলে দর্জাল শাশুড়ি মুখ ঝামটা দিয়ে বলবে, “মেয়েছেলের আবার কিয়ের লিখাপড়া? যাও গিয়ে ভাত চড়াও, আমার ছাওয়াল চলি আসতিছে মাদ্রাসা থিকে। এইমাত্র মুমাইল করে কলো।” আমি মন খারাপ করে নাজিরশাইল চাউলের ভাত রানতে রওনা দিব রান্নাঘরের দিকে। এই গ্রীক ট্র্যাজেডি ঘটতে দেয়া যাবে না। যেকারণে মাকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে।
মায়ের চাপাচাপিতে পড়ে যেতে হয়েছিল এক মিটিঙে। মহিলা বিজ্ঞানীদের সভা। একপর্যায়ে সভাপতি আমাকে দাঁড় করিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কয়েক সেকেন্ড পর আবিষ্কার করলাম আমি তাদের সমিতিতে আজীবন সদস্য হবার প্রশ্নে বাম দিকে মাথা কাত করে সায় দিয়ে দিয়েছি। আমাকে সে হিসাবে নাকি মাঝে মাঝে দু-চারটা বিজ্ঞান বক্তৃতাও দিতে হবে। জীন বিজ্ঞানীরা নাকি মানষের আয়ু দেড়শ বছর করে দিচ্ছে। এই বিষয়টা জানতে তাদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেল। পরিচয়ের পালা শেষ হতে বসে পড়লাম। খুব ক্লান্ত লাগছে। বক্তৃতা এখন আর কানে ঢুকছে না তেমন। ক্লান্তি পঞ্চইন্দ্রিয়ের এক এক জনকে ধরে তার ক্ষমতা খর্ব করে দিচ্ছে। একটা দুটো শব্দ ভুল করে কানে বাড়ি খাচ্ছে। চোখ ঢুলুঢুলু করছে। মুখা হা করে ঘুমিয়ে পড়তে পারি। তাই একটু গা ঝাড়া দিয়ে নড়েচড়ে বসলাম। ঘড়ির দিকে পাঁচ মিনিট তাকিয়ে থাকার পর পাঁচটা পঁয়ত্রিশ থেকে পাঁচটা ছত্রিশ বাজল। আজব! সময় কি থমকে গেল নাকি?
বসে থেকে থেকে আমি জীবন্ত মমি হয়ে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে মিটিঙ শেষ হল। খাবারের একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয়া হল। সবাই খাচ্ছে। আমি হাত-পা গুটিয়ে রাখলে খারাপ দেখায়। অনিচ্ছায় তাকালাম প্যাকেটের ভেতর। রস জবজবে জিলাপী আমি পছন্দ করি না। আপেলটা আধোয়া হবার সম্ভাবনা বেশি। তবে সমুচা খাওয়া যেতে পারে। ভুল করলাম সেখানেই। এক কোণা মুখে নিয়ে টান দিতেই সমুচাটা রাবারের মতো লম্বা হতে থাকল। পানি দিয়ে কোনো রকম গিললাম আর কি। এরপর একটা হাইব্রিড পানীয় আসল। অর্ধেকটা সময় মনে হল এটা চা আর বাকিটা সময়ে ভাবলাম কফিও হতে পারে। কিংবা হতে পারে পঞ্চইন্দ্রিয়ের আরেকটা ইন্দ্রিয় ইন্তেকাল করেছে।
গাড়িতে ওঠার সময়ে মনে হল পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় উঠছি। পঙ্খিরাজ আমাকে স্বর্গে পৌঁছে দেবে। নিজের বাসাকে বেহেশত মনে হচ্ছে রীতিমত। “হোম, স্যুইট হোম” কথাটা যে বলেছিল, তার উপলব্ধি তো অসাধারণ! আজকে কি আর কোন কাজ করা হয়ে উঠবে? বুঝতে পারছি না। করা দরকার। আখন্দ স্যার একটা কাজ দিয়েছেন। সেটা বৃহস্পতিবারের আগে করে তাঁকে দেখানো দরকার। উনি আমার থিসিসের সুপারভাইজার। ওনাকে ঘোরানো উচিত হবে না। দেখি কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে। আপাতত কাজের কাজ যেটা হয়েছে, তা হল দেহের অবসাদ না কাটালেও আমার মন ভাল হয়ে গেছে পুরোপুরি। খুশিখুশি লাগছে। একটা গান শুনে ফেললে খারাপ হয় না। বারো আনা খুশির সাথে চার আনা গান, সমান সমান ষোল আনা সুখ।
২৭ শে জুন, ২০১৮ ভোর ৫:০৬
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: পুরানো লেখা মন দিয়ে পড়েছেন, তাই ধন্যবাদ। বর্তমানে দিনপঞ্জি আর লেখা হয় না। হলে অবশ্যই এখানে তুলে দেবো।
২| ২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ৩:৫৯
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: আপনার দিনপঞ্জি পড়লাম, ভাল লেগেছে।
২৭ শে জুন, ২০১৮ ভোর ৫:০৬
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: নেক ধন্যবাদ!
৩| ২৬ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৯:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: লেখালেখি করলে মা কেন মাঝবয়সী মাওলার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে ??? হা হা হা হে হে হে---
২৭ শে জুন, ২০১৮ ভোর ৫:০৮
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আশংকা প্রকট ছিল বলেই উল্লেখ করা..।
৪| ২৬ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:০৪
কাইকর বলেছেন: ভালই.. পড়ে ফেললাম আপনার দিনলিপি
২৭ শে জুন, ২০১৮ ভোর ৫:০৯
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ২:২৭
চঞ্চল হরিণী বলেছেন: প্রায় নয় বছর আগের দিনপঞ্জি, পড়তে ভালোই লাগলো। বর্তমানের দিনপঞ্জি পড়ার আগ্রহ হচ্ছে।