নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাট প্রায় চুকিয়ে এনেছি। আর কটা দিন পরই মুক্তি। মনের ভেতর তাই সারাক্ষন একটা আনন্দের ডুগডুগি ডুগডুগ করে বেজে চলছে। এমনই এক সন্ধ্যা। শেষ বিকাল পর্যন্ত ক্লাস করে প্রায় ছয়টার দিকে বাসায় ফিরেছি। ক্ষিদে লেগেছে মারাত্মক। কিন্তু কিছু করার নাই আপাতত। জান বাঁচানো ফরয। তাই কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছি নিজের রুমে। কাচুমাচুর হেতু নানি। সে বিপুল বিক্রমে থালা বাটি যা আছে ধারুম ধুরুম শব্দে টেবিলে রাখছে বা ফেলে দিচ্ছে। রান্নাঘরের সিংকটা স্টেইনলেস স্টিলের। তাতে তার বিরাট সুবিধা হয়েছে। কিছু কড়াই, সসপ্যান, খুন্তি, চামচ উঁচু থেকে ছেড়ে দিচ্ছে আর সেগুলোর বিকট ঝনঝন শব্দে পুরো বাসা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ঝাঁসীর রাণী লক্ষী বাঈয়েরও বোধহয় এত তেজ় ছিল না।
নানির রাগারাগির কারণ কি হতে পারে? এক, সকালে আমি তার চোখে ওষুধ দিতে ভুলে গেছি। দুই, ওনার নারকেল তেলের স্টক শেষ হয়ে গেছে। এই মাসে মা আর আমি মাসের বাজার করার সময় পাই নি। দুইজনই দৌড়ের উপর। আর তিন, নাজমা বুয়া আসতে দেরি করছে। নাজমা বুয়া নানির প্রিয় ব্যক্তিত্যদের একজন। তার সাথে দুনিয়ার গল্প চলে। এই মুহূর্তে আমি যা করতে পারি তা হল একটা একটা কারণ ধরে এগোনো এবং সমস্যাগুলো আমার আয়ত্তের ভেতর পড়লে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা। তিন নাম্বার থেকে শুরু করা যেতে পারে। নাজমা বুয়াকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় আনতে হবে। বাটি চালান বিদ্যা জানা থাকলে ভালো হত। বুয়া এই মুহূর্তে পাড়ার কোন বিল্ডিংয়ের কত নাম্বার ফ্ল্যাটে আছে জানতে পারলে ধরে নিয়ে আসা যেত। বাটি চালান জানা নাই। সুতরাং নাজমা বুয়া বিষয়ক সমস্যার সমাধান আমাকে দিয়ে হবে না। একটা কাজ কমে গেল, ভাবতেই ভালো লাগে। দ্বিতীয় সমস্যার নাম নারকেল তেল। একটু আগে ফিরেছি ইউনিভার্সিটি থেকে। ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত। একজন ক্ষুধার্ত মানবতার পক্ষে পাড়া থেকে বের হয়ে অনেকখানি হেঁটে পাড়ার দোকান থেকে তেল কিনে আনা সম্ভব না। তাছাড়া আমার কাছে কোনো টাকাও নাই। শেষ পাঁচ টাকা দিয়ে ক্লাসের পর চানাচুর খেয়ে ফেলা হয়েছে। বাকি থাকে চোখের ওষুধ। নানির চোখে ড্রপ দিতে হলে আমাকে চেয়ার থেকে উঠে বারান্দা পেড়িয়ে খাবার ঘর থেকে ডানে টার্ন নিয়ে দু-তিন পা হাঁটতে হবে। দশ সেকেন্ডের মাথায় পৌঁছে যাব নানির ঘরে। বাসাটা বাড়াবাড়ি রকমের বড়। কিন্তু বাকি দুইটা কাজের তুলনায় এই কাজটা সহজ বলা যায়। একেবারে ডাল-ভাত।
নানির চোখে ড্রপ দেয়া হয়ে গেছে। আর নাজমা বুয়াও চলে এসেছে এই মাত্র। আকাশ থেকে যাদুর পরী নামলেও এত খুশি হতাম না যতটা হলাম নাজমা বুয়ার গুল খাওয়া খয়েরী দাঁতের একগাল হাসি দেখে। নানির মেজাজ সহনীয় পর্যায় নেমে এসেছে। কিন্তু ক্ষিদায় তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা। মা বাসায় আসার আগে কিছু একটা পেটে চালান দিতে হবে। মা সকাল থেকে ইউনিভার্সিটিতে। সকালে ক্লাস, প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষা। বিকালে ডীনের অফিসে আর সিনেট ভবনে মিটিং। তাকে গাড়ি দিয়ে সিনেট বিল্ডিংয়ে পৌঁছে দেবার কথা। কিন্তু কামরুল ডীন অফিসের সামনে গাড়ি না রেখে আমার ডিপার্টমেন্টের সামনে গাড়ি রেখে ঘুমাচ্ছিল তার ভেতর। তাকে পইপই করে বলার পরও সে এটা করেছে। নির্বুদ্ধিতা আর ভুলে যাবার অসাধারণ ক্ষমতার জন্যে কামরুলের মেডেল পাওয়া উচিত। গাড়ি না পেয়ে মা নিশ্চয়ই রিকশায় করে গেছে। বাসায় ফিরে মেজাজ তিরিক্ষ হয়ে থাকার জন্যে এই একটা কারণই যথেষ্ট। তার উপর সারাদিন তার সাথে যোগাযোগ হয় নি। সে তার মোবাইল ফেলে গেছে। মোবাইল তার সাথে থাকলেও লাভ হত না। কীপ্যাড লক করা থাকে না বলে চাপ লেগে প্রায়ই তার মোবাইল অফ হয়ে যায়। অনেক বার শেখানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ মোবাইল অন করার ব্যাপারে সাফল্য আসে নি। আমার ধারণা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির আমার অজ্ঞতার জন্যে মা দায়ী। উত্তরাধিকারসূত্রে অজ্ঞতাটা আমার ভেতরে চলে এসেছে। সমস্যাটা মাইটোকন্ড্রিয়াল জীনে ঘটে থাকলে সমূহ বিপদ। আমার মেয়েও যন্ত্রপাতি বিষয়ে আমার মত আকাট মূর্খ হবে। একমাত্র ‘বুদ্ধিমান কাছিম’ গোছের পিতার জ্ঞানী জ্ঞানী জিনগুলোই তাকে বাঁচাতে পারে। কিন্তু তার বাবা তো একজন ধান্দাবাজ চাউলের আড়তদারও হতে পারে। বেয়াল্লিশ টাকার মিনিকেট পঞ্চাশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে তেলতেলে হাসি নিয়ে ঘরে ফিরবে। কে জানে?!
আমার মনে হয় খিদা বেশি লেগেছে। চিন্তা খাপছাড়া হয়ে যাচ্ছে। খাদ্য অন্বষণে বেরোনো দরকার। নইলে কীবোর্ডের বাটনগুলো খেয়ে ফেলতে পারি। রান্নাঘর থেকে নানির হাতের কোড়ানো নারকেল দিয়ে রাধা সুস্বাদু চিংড়ির মালাইকারির সুবাস ভেসে আসছে। সুবাসের চোটে মনটা বড় উচাটন আর উদাস লাগছে। আর তো নিজেকে ধরে রাখা যাচ্ছে না। দেখা যাক আজকে ঝাঁসীর রাণীকে পটিয়ে দুটা ভালো-মন্দ বাগানো যায় কি না। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ম ম ঘ্রাণটা ভেদ করে আমি প্রায় উড়ে উড়ে চিংড়ির মালাইকারির ঠিকানা বরাবর ভেসে যেতে থাকলাম।
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:৫০
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ ভালো লেগেছে জেনে। না, রাজশাহীতে থিসিসের কাজে একবার যেতে হয়েছিল। দারুন ক্যাম্পাসটা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।
২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: প্রতিটি ধর্মেরই উদ্দেশ্য হলো মৃত্যুর পরবর্তী বিভিষীকার ভয় দেখানো, কারণ কি?
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:৫২
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: এর উত্তর জানতে হলে নামতা হবে কাঁচাবাজারে। জানতে হবে পটলের চেয়ে বেলেম্বুর দাম বেশি কেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:০০
মলাসইলমুইনা বলেছেন: যাক বাঁচা গেল, নয় বছর যখন যখন বেঁচেছে তখন আশাকরা যায় কি বোর্ড আর ক্ষুধার স্বীকার হয়ে পেটের ভেতর চালান হবে না I লেখাটা ভালো হয়েছে আর ভালো লেগেছে I আপনি কি কখনো রেকজশাহী ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে থাকতেন নাকি ? আপনার কোনো লেখায় মনে হয় রাজশাহী ইউনিভার্সিটির কথা পড়েছিলাম ?