নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার লেখা আপনাদের কথার সাথে মিলবেনা এটাই সত্য। কারন কেউতো একজন থাকা চাই যে আলাদা ভাবে দুনিয়াকে দেখবে। আপনি পজিটিভ ভাবে আমার লেখা পড়লে আপনাকে স্বাগতম। আর নেগেটিভ ভাবনা নিয়ে পড়লে আমার কিছু করার নাই। ভালো চিন্তা করুন। দেশ, জাতি, আর ধর্মকে ভালোবাসুন।

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন

মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রামীন রাজনীতির ইতিবৃত্ত

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০

গ্রামের রাজনীতি আগে যেমন ছিল তেমনি আছে। আর সেটা শহরের মতো না। সেখানে অনেক অন্যরকম একটা কাণ্ড কারখানা হয়। ইউ পি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য (মেম্বার),। সেখানে পার্থিগন মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে মা বোনের কাছে ভোট চায়। আর চায়ের দোকান ফ্রি করে রাখে কেউ কেউ। যাতে তার নামে সবাই চা পান করতে পারে। আর অনেকে তো জমি বিক্রি করে লেগে যায় চেয়ারম্যান হতে। ফ্রি বিড়ি দেয় সবাইকে। দোকানে দোকানে বাকির খাতা খোলে রাখে। পার্থির নামে সবাই বাকি খায়। আচ্ছা কয়টা কাহিণী বলি।

১)আমাদের গ্রামে একজন চেয়ারম্যান ছিল। তিনি শুনেছিলাম যে কোন এক সময় নামকরা চেয়ারম্যান ছিলো। ২,৩ বার চেয়ারম্যান হয়েছিল। এখন বয়স হয়েছে।তখন আমি গ্রামে থাকতাম। ক্লাস ওয়ানে পড়ি । এই চেয়ারম্যান এর নাম ছিলো কালা চেয়ারম্যান। তার মিছিলে সব সময় বেশি মানুষ হতো। তার নামে বিড়ি বিলি হতো। সব দোকানে তার নামেই চা খাওয়া হতো। অনেকে এই নির্বাচন এলে টাকার মালিক হয়ে যেতো ক্ষনিকের জন্য হলেও। কালা চেয়ারম্যান ইচ্ছা মতো টাকা খরচ করতো । তাই সবাই তার মিছিলে যেতো হয়তো।
গ্রামের মাঝে একটা প্রথা আছে। ১১,১২ টা ওয়ার্ড বা এলাকা নিয়ে একটা ইউনিয়ন হয়। আর প্রতি ওয়ার্ড এ ওয়ার্ড মেম্বার হয়।।তাই সবাই চায় তাদের নিজ এলাকার চেয়ারম্যান থাকুক। নিজ বাড়ির পাশে।
২) নিজ এলাকার চেয়ারম্যান বানাতে সবাই চায় নিজ বাড়ির পাশের কাউকে। তাই প্রতিবার ১০,১২জন চেয়ারম্যান পার্থি থাকতো। তারা ইচ্ছা মতো টাকা খরচ করতো। ভালো চেয়ারম্যান হলে তো খাওয়াবে কিনা তার গ্যারান্টি নাই। তাই এই সময় মানুষ ইচ্ছা মতো খেয়ে নিতো। তবে ভোট সেই পায়।
৩)ভোট তাকেই দিতো যে আসলে সবার দিল জয় করে নিতো।
৪) আমাদের এলাকার এক লোক চেয়ারম্যান পার্থি হয়েছিলো। তবে চেয়ারম্যান হতে পারেনি। গ্রামের নিয়ম হল চেয়ারম্যান হতে পারুক না পারুক সবাই সেই থেকে তাকে চেয়ারম্যান ডাকে।
৫)একজন মেম্বার পার্থি ছিলো সে কোনদিন জয়ী হয়নি। তাকে ভোট দিবে এমন লোক আছে বলে মনে হয়না। এমন কি লোকে বলে তার বউ ও তাকে ভোট দেয় কিনা সন্দেহ আছে। সে প্রতিবার এই আশায় পার্থি হয় যে সে জয়ী হবে। আর এই আশায় তার পিতার সব জমি বিক্রি করে দিয়েছে। এখন প্রায় গরীব অবস্থা। একটা দোকান দিয়েছিল।সেই দোকান ও লাভের মুখ দেখেনি। কারন নির্বাচনের সময় মানুষ বাকি খেয়ে সব শেষ।
৬)আপনি ভাবছেন গ্রামের মানুষ এমন কেন? ভাই গ্রাম না শহর না। আপনি মানুষকে ডেকে এনে ফ্রি খাওয়াবেন তো মানুষ তো খাবেই। গ্রাম হোক আর শহর । গ্রামের মানুষ তো এমনিতেই গরীব।
৭) আমার এক বন্ধু ছিলো। সে এই পার্থিদের কাছ থেকে বিড়ি, সিগারেট আনতো। এই বলে যে আপনার নামে মানুষকে দিবো। আর তা দোকানে বিক্রি করে দিতো। মজা করতো। সবাই মিলে সেই টাকা দিয়ে বনভোজন করা হতো। সব বন্ধুরা মিলে।
৮) এমন লোক ও থাকে যে দুই ভাই ই নির্বাচনের পার্থি হয়ে যায়। এই ভেবে কেউ তো একজন চেয়ারম্যান হবে।
৯) অনেক পার্থি নিজেরা ৩,৪টা পার্থি নির্বাচনে নামিয়ে দিতো।
১০)অনেকে জানতো তাকে ভোট কেউ দিবেনা। তাও কি বুঝে টাকা পানির মতো ফালাইতো আমি কোনদিন বুঝিনি।
হয়তো সেটা একটা জুয়া খেলার মতো।

১১) এক জনের মার্কা ছিলো মাটির হাড়ি । তো সে বাড়ি বাড়ি সবাইকে মাটির হাড়ি দিয়েছিলো ।

১২) আজ হয়তো সেই ইমেজ নাই। প্রতিক দল ঠিক করে দেয়।
তবে গ্রামের রাজনীতিকে বলা হয় রাজনীতির মা। (village politics is the mother of politics).
১৩)গ্রামের রাজনীতি দেখা যায় কেউ কারো বিরোধী নাই। মানে যতোদিন রাজনীতির মাঠে তখন বিরোধী। বাড়িতে গিয়ে দেখুন একজন আরেকজনের কোন কোন ভাবেই আত্মীয়, ভাই চাচা , ভাতিজা, মামা।
১৪) এখানে রাজনীতি হয় বাজার কেন্দ্রিক। ক্লাব কেন্দ্রিক।
১৫) নিজের বউকে পাঠিয়ে দেয় বাড়িতে। এলাকার বউদের, মাদের,বোনদের কাছে ভোট চাইতে।
১৬)দেখা যায় মহিলা পার্থি তারাই হয় যারা চেয়ারম্যান মেম্বার এর মেয়ে, না হয় বউ , বোন না হয়। এলাকার পরিচিত ঝগড়াটে আন্টি টাইপের মহিলা।

১৭) এলাকায় ঠিক ভোটের আগের দিন যে যতো বেশি উড়ন্ত খবর ছড়াতে পারবে জয় তার। যেমন উমুক ভাই জয়ী হল বলে। আর এউ খবর নিয়ে এলাকায় পৌছে দিতে পারলেই হয়।
১৮)মনে করুন একটা উদাহরণ আরকি ১২, টা কেন্দ্র। তো ভোটের দিন কেউ এসে বললো আরে ভাই উমুক কেন্দ্রতে দেখে এলাম। আনারস মার্কা হেব্বি ভোট পাইতেছে। যারাই ভোট দিয়ে বের হচ্ছে আমি সবাইকে জিজ্ঞাস করেছি। তারা সবাই আনারস মার্কাতে ভোট দিয়েছে। তো এই এলাকার ভোটার রা ভাবে আরে ওই এলাকার লোক ২হাজার। আমরা মাত্র ৪০০। আরে আমরা যারেই দেই পাস তো করবে না। তাই তাকেই দেয়া উচিত। ওই এলাকার লোক যাকে বেশি দিচ্ছে। এই ভাবে অনেকে ভোট পেতো।
মানে ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে।
১৯)গ্রামের রাজনীতি সম্পর্কে আরো তথ্য জেনে নিন, ধরুন আপনি বিদেশ থেকে এসেছেন, বা হঠাৎ কোন কারনে আপনার পকেটে খুব কাচা টাকা এসে গেছে। বা আপনি জুয়া খেলেন। আপনার কিছু বন্ধু আপনাকে বলবে। ভাই টাকা তো ভালোই উপার্জন করলা। আমরা চাই এইবার তুমি আমাদের এলাকার ইউ পি সদস্য (মেম্বার) হও। তুমি নির্বাচন কর। চিন্তা করোনা। আমরা তোমাকে ভোট দিবো। আর আপনাকে তেল মারতে মারতে গাছে উঠাবে। আপনার সব টাকা খরচ করাবে। ভালো মানুষের কাজ এটা নয়। কিছু তেলবাজ এই কাজ করবে। তখন ভালো মানুষ আপনাকে মানা করবে। তবু আপনার কাছে তাদের কথাই ভালো লাগবে। সবাই আপনাকে মেম্বার সাহেব বলে ডাকবে।
অতপর নির্বাচনের দিন ফলাফল, আপনি সম্মানের সাথে ৫টি ভোট পেয়েছেন।
২০) আমাদের এলাকায় একটা জিনিস আমি খুব ছোট থেকেই দেখে আসছি, এখানে পার্থিকে দেখা হয় না। দেখে তার দল। নিজ গুনে কম মানুষ ই চেয়ারম্যান হয়েছে। আবার একই দলের দুই জন হয়ে গেলে একটু ভোট ভাগ হয়ে যায়।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



গ্রামীণ রাজনীতির চমৎকার বিশ্লেষণ। সত্য বলেছেন। +++

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০২

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৪

ফেনা বলেছেন: দারুন উপস্থাপন। গ্রামে থাকতে আমি অনেক উপভোগ করেছি। খুব ভাল একটা ইমেজ ছিল। তবে এখন আর নাই সেই ইমেজ।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৯

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: জি। হতে পারে।




১৯)গ্রামের রাজনীতি সম্পর্কে আরো তথ্য জেনে নিন, ধরুন আপনি বিদেশ থেকে এসেছেন, বা হঠাৎ কোন কারনে আপনার পকেটে খুব কাচা টাকা এসে গেছে। বা আপনি জুয়া খেলেন। আপনার কিছু বন্ধু আপনাকে বলবে। ভাই টাকা তো ভালোই উপার্জন করলা। আমরা চাই এইবার তুমি আমাদের এলাকার ইউ পি সদস্য (মেম্বার) হও। তুমি নির্বাচন কর। চিন্তা করোনা। আমরা তোমাকে ভোট দিবো। আর আপনাকে তেল মারতে মারতে গাছে উঠাবে। আপনার সব টাকা খরচ করাবে। ভালো মানুষের কাজ এটা নয়। কিছু তেলবাজ এই কাজ করবে। তখন ভালো মানুষ আপনাকে মানা করবে। তবু আপনার কাছে তাদের কথাই ভালো লাগবে। সবাই আপনাকে মেম্বার সাহেব বলে ডাকবে।
অতপর নির্বাচনের দিন ফলাফল, আপনি সম্মানের সাথে ৫টি ভোট পেয়েছেন।
২০) আমাদের এলাকায় একটা জিনিস আমি খুব ছোট থেকেই দেখে আসছি, এখানে পার্থিকে দেখা হয় না। দেখে তার দল। নিজ গুনে কম মানুষ ই চেয়ারম্যান হয়েছে। আবার একই দলের দুই জন হয়ে গেলে একটু ভোট ভাগ হয়ে যায়।

৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০২

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: গ্রামের মানুষ তো এমনিতেই গরীব।
গ্রামের একজন রিক্সাওয়ালা শহরের একজন মধ্যবিত্ত ব্যাক্তি থেকেও ভালো আহার করে থাকেন।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৪

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: ভাই মধ্যবিত্ত লোক ওই নির্বাচনের বিড়ি খাইতে যায়না। যায় যারা তারা খুব অসহায়। আর তাদের ওই রিকশা টাও নাই

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৬

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: আর ওই বিড়ি আনতে যায় পোলাপান। মানে যারা হুদাই নিয়া আসবে আর টাকা উড়াবে। কোন স্কুল শিক্ষক বা সাধারণ লোক যায় কম। কারন আছে। বিপদ ও আছে। আপনি আজ একজনের মিছিলে যাবেন কাল যার কাছে যান নাই সে পাস করলে আপনাকে দেখে নিবে ।

৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রাম মানেই শান্তি।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৬

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: হুম। গ্রামে শান্তি এখনো আছে। তবে আজকাল ভূমি দস্যুদল সব কৃষি জমি দখল করে মিল /কারখানার কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। নদীতে মাছ নাই। পানি বিষাক্ত। ।

৫| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৫

আরোগ্য বলেছেন: রাজনৈতিক প্রার্থীদের ঘটনাগুলি ভালোই লাগল।

বিজনদার সেরা তালিকায় আপনার কবিতা আসায় অভিনন্দন জানাই।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৪

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: ধন্যবাদ।। ভালোবাসা রইলো।।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.