![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রেস্টুরেন্টের ওয়েটার হা করে ঘন্টু মামার খাওয়া দেখছে। তার অবাক চাহনীতে এটা স্পষ্ট যে এরকম খাদক মানুষ সে আগে কখনো দেখেনি। অবশ্য আমার কাছে ব্যাপারটা একদম স্বাভাবিক কেননা নিয়মিত ঘন্টু মামার এমন ভুড়িভোজ দেখে আমি অভ্যস্ত।
ঘন্টু মামার শরীর এমন দশাসই কিছু না যে তার এতো খাবার খেতে হবে! এছাড়া তিনি এমন কোন পরিশ্রমী কাজও করেন না যাতে শরীর থেকে প্রচুর ক্যালরি ক্ষয় হয়! তাহলে এতো খাদ্যের চাহিদা তার আসে কোথা থেকে!
পাঁচ ফুট সাড়ে সাত ইঞ্চির ঘন্টু মামা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। মাত্র আধা ইঞ্চির জন্য পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি না হতে পারায় ঘন্টু মামাকে প্রায়ই আক্ষেপ করে বলতে শুনি, ভগবানটা বড় কিপটে! আধা ইঞ্চির জন্য কেউ কাউকে এভাবে আটকে রাখে!
ঘন্টু মামা শরীরের প্রতি কোনকালেই সচেতন ছিলেন না। জয়াদির সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর কয়েকদিন জিম করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু জিমের পরিশ্রম তার সহ্য হয়নি। একদিন একটা ভারী ডাম্বেল তুলতে গিয়ে কোমড়ের হাড়ে মোচড় খেয়ে সাতদিন বেড রেস্টে থাকতে হয়েছিল। সেই থেকে ঘন্টু মামা আর জিমের দিকে পা বাড়াননি।
ঘন্টু মামার গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। চুলগুলো কোকড়ানো। ইদানীং মাথার মাঝখানে চুল একটু হালকা হয়ে এসেছে। চুল হালকা হওয়ার লক্ষন দেখে আমরা তাঁকে প্রায়ই খেপাই। কিন্তু ঘন্টু মামা থুড়ি মেরে আমাদের উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আমার চৌদ্দগোষ্ঠীতে কারো টাক নেই। কাজেই তোরা যতোই নাচানাচি করিস না কেন আমার মাথায় টাক পড়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।
পাঁচ নম্বর প্লেট শেষ করে ঘন্টু মামা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ওয়েটারকে কাছে ডাকলেন। তারপর তাঁকে বললেন, কেউ খাওয়ার সময় তার দিকে এভাবে তাঁকিয়ে থাকতে নেই। শোন, আজ যদি আমার পেট ব্যাথা করে তাহলে কাল এসে কড়ায়-গন্ডায় শোধ তুলবো।
ওয়েটারকে খানিকটা অপ্রস্তুত দেখাচ্ছিল। সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে স্থির দাঁড়িয়ে রইলো। ঘন্টু মামা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুই দেখি এক প্লেটই শেষ করতে পারলিনা!
ঘন্টু মামা পাশ ফিরে দেখলেন ওয়েটার তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিনি বললেন, কি হে এখনও স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছো! যাও একটা কোক নিয়ে এসো। আর মনে করে বত্রিশ জর্দা দিয়ে একটা কড়া পান আনবে।
ওয়েটার কোকের বোতল আর পান ঘন্টু মামার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, আর কিছু লাগবে স্যার?
ঘন্টু মামা হাঁফ ছেড়ে বললেন, যাক বাবা! তুমি তাহলে কথাও বলতে পারো। আমি তো ভেবেছিলাম বোবা। এবার দয়া করে বিলটা নিয়ে এসো।
ওয়েটার বিল হাতে দিতেই ঘন্টু মামার চোখ কপালে উঠলো। তিনি আঁতকে উঠে বললেন, এ যে দেখি দিনে-দুপুরে ডাকাতি! এতো টাকা বিল কীভাবে হয়?
ওয়েটার বিনয়ী ভঙ্গিতে বললো, স্যার ছয়টা কাচ্চি বিরিয়ানী, দুই বোতল মিনারেল ওয়াটার, একটা হাফ লিটার কোক, একটা পান আর পনের শতাংশ ভ্যাট মিলিয়ে মোট সতেরশো সাত টাকা পঞ্চান্ন পয়সা।
ঘন্টু মামা রেগে গিয়ে বললেন, বললেই হলো! অন্য জায়গায় এর চেয়ে অনেক কম দামে খেতে পারতাম।
ওয়েটার মৃদু হেসে বললো, বেশী দূর যাওয়ার দরকার নেই স্যার। রাস্তার ওপাশে গেলেই এর চেয়ে অনেক কম দামে খাবার পাবেন।
ঘন্টু মামা বললেন, ইয়ার্কি মারছো? ডাক দাও তোমার মালিককে।
ওয়েটার মাথা চুলকে বলল, আমাদের মালিকের কী এই একটা বিজনেস! উনি অন্য জায়গায় ব্যস্ত আছেন। আপনি ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে পারেন।
ঘন্টু মামা উচ্চ স্বরেই বললেন, ডাক দাও তোমাদের ম্যানেজারকে।
ঘন্টু মামার উচ্চস্বরে কথা শুনে অন্যান্য টেবিলের মানুষগুলোও আমাদের দিকে বারবার তাঁকাচ্ছে। ঘন্টু মামার এহেন আচরণে আমার অস্বস্তি লাগছে। ওয়েটার চলে যেতে আমি ঘন্টু মামাকে বললাম, এখানে খাবারের এরকমই দাম। দেখছো না পুরো রেস্টুরেন্টে এসি লাগানো।
ঘন্টু মামা এবার আমার ওপর ক্ষেপে গেলেন। “এসি লাগানো তো কী হয়েছে? আমি কি ঠান্ডা হাওয়া খেতে এসেছি!”
খানিক পর ম্যানেজার এসে ঘন্টু মামাকে বললেন, আপনার সমস্যাটা কী জানতে পারি?
ঘন্টু মামা বললেন, সমস্যার শেষ আছে নাকি! আপনারা এখানে ব্যবসা করতে বসেছেন নাকি ডাকাতি করতে বসেছেন?
ম্যানেজার যথেষ্ট বিনয় করেই বললেন, দেখুন এখানে যারা খেতে আসে তারা খাবারের বেশী দাম জেনেই আসে। আমরা কাউকে জোর করে আসতে বলিনা। আপনার যতো বিল হয়েছে তা সব পরিশোধ করতে হবে। বিল পরিশোধ না করে যেতে দেওয়া হবেনা।
ঘন্টু মামার গলা একটু মিইয়ে আসলো। তার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছায়া দেখতে পেলাম। তিনি আর কথা না বাড়িয়ে ম্যানেজারকে বললেন, আপনি যান। আমি আসছি।
আমি এতোক্ষণ চুপচাপ ঘন্টু মামার কান্ড-কারখানা দেখছিলাম। ম্যানেজার চলে যেতেই ঘন্টু মামা আমাকে বললেন, সব টাকা না দিলে শালারা ছাড়বে বলে মনে হয়না! কিন্তু এখন কি করি?
আমি বললাম, কী আর করবে? বিল পরিশোধ করবে।
ঘন্টু মামা বললেন, আমার কাছে বারোশো টাকার মতো। বাকি টাকা পাবো কোথায়! তোর কাছে কিছু টাকা ধার হবে?
আমি বললাম, আমার কাছে পাঁচশো টাকা আছে। বাবা পুরো সপ্তাহের মধ্যে আর একটি টাকাও দেবেনা। আমি এই টাকা দিতে পারবোনা।
ঘন্টু মামা মিনতির সুরে বললেন, এমন করিস না মুন্না। এই বিপদে এমন করতে নেই। আমি বাসায় গিয়ে তোর টাকা ফেরত দিয়ে দেবো। তাছাড়া খাবার তো আমি একা খাইনি। তুই ও তো খেয়েছিস তাইনা?
আমি পকেট থেকে টাকা বের করতে করতে বললাম, আমি খেয়েছি বটে। তবে রাক্ষসের মতো পাঁচ প্লেট খাইনি। এই নাও টাকা। বাসায় গিয়ে আমার টাকা যেন ঠিকঠাক ফেরত পাই।
শেষপর্যন্ত সাত টাকা পঞ্চান্ন পয়সা কম বিল দিয়ে আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলাম। এসির ঠান্ডা বাতাস থেকে গরমে বের হয়েও বড্ড আরাম লাগছিল। বাব্বা! খেতে ঢুকেছিলাম না যুদ্ধ করতে ঢুকেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ঘন্টু মামার শুভ বুদ্ধির উদয় না ঘটলে আজ নিশ্চিত গনধোলাই খেয়ে ফিরতে হতো। না ঘন্টু মামার সঙ্গ আমাকে ছাড়তেই হবে। তা না হলে কবে কোথায় কোন বিপদে যে পড়বো!
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১৬
রিপন ঘোষ বলেছেন: ধন্যবাদ ঘন্টু মামার সাথে থাকার জন্য।
২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৯
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: পরের পর্ব কবে পাচ্ছি?
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪১
তাশমিন নূর বলেছেন: Good to read. Your writing style is fluent. It should be continued.