নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্জন বিকেল

রিপন ঘোষ

যেতে চাই বহুদুর

রিপন ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘন্টু মামা (পর্ব-৫)

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১১

গড়ের মাঠ বলতে যা বুঝায় আমাদের পকেট এখন ঠিক তাই। বাসায় ফেরার ভাড়া পর্যন্ত পকেটে নেই। রাগে আমার গা রি রি করছে। ঘন্টু মামাকে পেছনে ফেলে আমি আগে আগে হাঁটছি। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ঘন্টু মামার সাথে এখনও একটা কথা বলিনি। চুপচাপ অনেকটা হাঁটার পর ঘন্টু মামা আমার প্রায় কাছাকাছি এসে বললেন, তুই কী মৌনব্রত পালন করছিস নাকি?

আমি কোনরকম উত্তর দিলাম না। ঘন্টু মামা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমাকে বললেন, রাগ করিস না মুন্না। বললাম তো বাসায় ফিরে তোর টাকা দিয়ে দেব। আচ্ছা পাঁচশর সাথে আরো পঞ্চাশ টাকা বাড়িয়ে দেব। এবার খুশী তো?

আমি চোখ বড় করে ঘন্টু মামার দিকে তাঁকালাম। ঘন্টু মামা দুষ্টুমির হাসি হেসে বললেন, মনে করিস না আবার তোকে ঘুষ দিচ্ছি :P

এবার আমি ঘন্টু মামার দিকে ফিরে বললাম, তোমার শরীর আসলে কীসের চামড়া দিয়ে তৈরী? এই অল্প সময়ের মধ্যে দুই-দুইবার অপমানিত হয়েও তোমার কোন ভাবান্তর নেই!

আমার কথা শুনে ঘন্টু মামা এমন হো হো করে হেসে উঠলেন যে পাশ দিয়ে যাওয়া কয়েকজন পথচারীও আমাদের দিকে তাঁকাতে বাধ্য হলো। এক গাল হেসে নিয়ে ঘন্টু মামা আমাকে বললেন, বুঝলি! জন্মের সময় আমার গায়ে মানুষের চামড়াই ছিল। তবে হলো কী, আমার মা মানে তোর দিদা একজন দিব্যদৃষ্টি সম্পন্ন মহিলা। আমার জন্মের পরপরই তিনি বুঝে নিয়েছিলেন তার এই ছেলের লজ্জা-শরম-অপমানবোধ একটু কম হবে, তাই তিনি বুদ্ধি করে তখনই আমার গায়ে একটা গন্ডারের চামড়া সেলাই করে দিয়েছিলেন। সেই থেকে এই সব লজ্জ্বা-শরম-অপমানবোধ আমার নেই বললেই চলে।

ঘন্টু মামার এহেন কথা শুনে আমার ভীষন হাসি পাচ্ছিলো। একটা লোক কী নির্দ্বিধায় বকে যাচ্ছে! আমি চেহারায় যথেষ্ট কাঠিন্য ফুটিয়ে বললাম, রাখো তোমার বাজে কথা। এখন বাসায় ফিরবো কী করে সেটা বলো?

ঘন্টু মামা বললেন, এ আর চিন্তা কী! পায়ে হেঁটেই ফিরে যাবো।

আমি বললাম, পাগল! এখান থেকে বাসা কতোদূর হিসেব আছে! আমি এতোদূর হেঁটে যেতে পারবোনা।

হঠাত করে ঘন্টু মামা পায়ে ভর দিয়ে রাস্তায় বসে পড়লেন। আমি আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার! বসে পড়লে যে?

ঘন্টু মামা তার নিজের কাঁধের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, হাঁটতে যখন পারবিনা তখন কী আর করা! তুই আমার কাঁধে চড়ে বস। আমি তোকে কাঁধে নিয়ে বাসায় ফিরবো।

আমি যারপরনাই বিষ্মিত হয়ে বললাম, পাগল হয়েছো। আচ্ছা কাইন্ডলী বলবে তোমার মাথায় এতো উদ্ভট চিন্তা আসে কীভাবে?

ঘন্টু মামা হেসে বলল, বুঝলি আমার এই মাথাটা হচ্ছে চিন্তা তৈরির কারখানা। উপস্থিত বুদ্ধিতে আমার জুড়ি মেলা ভার! ঐ যে ব্যাকরণের ভাষায় বলে না প্রত্যুতপন্নমতিতা!

আমি ব্যঙ্গ করে বললাম, প্রত্যুতপন্নমতি না ছাই! তোমার পাল্লায় যে পড়েছে তার অবস্থা একেবারে কেরোসিন হয়ে যাবে। এতো চেষ্টা করেও যে কেন তোমার সঙ্গ ছাড়তে পারিনা!

ঘন্টু মামা হেসে বলল, এটাই ঘনাচরণ সরকারের কারিশমা! একবার আমার সাথে যে সেঁটে গেছে সে আর আলগা হতে পারেনা।

ঘন্টু মামা কথা শেষ করার আগেই তার মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। মোবাইল স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে ঘন্টু মামার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। উৎফুল্ল হয়ে আমাকে বললেন, বলেছিলাম না যোগাযোগ ওকে করতেই হবে। ফোন রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে ভেসে এলো, ঘনাচরণ বাবু এখন ঠিক কোথায় আছেন?

ঘন্টু মামা বললেন, আপনার অফিস থেকে বেরিয়ে ডানদিকে দুই-আড়াইশো গজ এগুতে থাকুন। আমাদের পেয়ে যাবেন।

ওপর পাশ থেকে উত্তর এলো, একটু অপেক্ষা করুন, আমি আসছি।

কল কেটে দিতেই আমি ঈশারায় ঘন্টু মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, কে?

ঘন্টু মামা ভুবন জয়ের হাসি হেসে বললেন, মিস্টার বাঁধন এস চৌধুরী।

আমি বললাম, এই বাঁধন এস চৌধুরীটা আবার কে?

ঘন্টু মামা বললেন, এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি! এই একটু আগে যার অফিস থেকে এলাম।

আমি বিষ্মিত হয়ে বললাম, এখন আবার কী জন্য! একটু আগেই না দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলো!

ঘন্টু মামা বললেন, যতোই তাড়িয়ে দিক না কেন, উনি যে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন তা আমি জানতাম। সে জন্যেই তো সময় কাটানোর জন্যে ইচ্ছে না থাকাও সত্ত্বেও এতো প্লেট বিরিয়ানী খেলাম। এ সব ঘনাচরণ সরকারের কারিশমা!

আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম, হয়েছে হয়েছে আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবেনা। তোমার ব্যাপার-স্যাপার আমার ভালো ঠেকছে না। তুমি এই লোকটাকে শুধু শুধু এমন ব্ল্যাকমেইলিং করছো কেন?

ঘন্টু মামা রহস্যের হাসি হেসে বললেন, ধুর ধুর আমি কোন ব্ল্যাকমেইলিং করছি না। কেউ যদি নিজে থেকে ভয় পায় আমার কী করার আছে! আমি শুধু দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে একটু ফায়দা হাসিল করতে চাইছি মাত্র।

আমি বললাম, না না এটা মোটেও ঠিক না।

ঠিক তখন মার্সিডিজ বেঞ্জের একটি কালো গাড়ি আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। ঘন্টু মামা গাড়ির গ্লাসে নিজের চুলকে একটু ঠিক করে নিলেন। গাড়ি থেকে বাঁধন এস চৌধুরী বেরিয়ে এলেন। ঘন্টু মামা হেসে বললেন, আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

বাঁধন চৌধুরী প্রথমেই বললেন, এবার কীসে স্পন্সর দরকার? কতো দরকার ঝটপট বলে ফেলুন?

ঘন্টু মামা বিস্তারিত বলতেই বাঁধন চৌধুরী ঘন্টু মামাকে বললেন, আমার পি.এস আগামীকাল আপনার কাছে চেক পৌছে দেবে।

ঘন্টু মামা হ্যাঁ-সূচক মাথা নেড়ে বললেন, ঠিক আছে।

বাঁধন এস চৌধুরী গাড়িতে উঠতে যাবেন তখন ঘন্টু মামা বললেন, আপনার কাছে খুচরো দুশো টাকা হবে। আমার কাছে একটা এক হাজার টাকার নোট; কোথাও ভাংতি পাচ্ছিনা।

বাঁধন চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে নিজের ওয়ালেট চেক করে বললেন, স্যরি আমার কাছেও খুচরো টাকা নেই।

গাড়িটি চলে যেতেই ঘন্টু মামা বাঁধন এস চৌধুরীর চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগলেন। তারপর কী ভেবে আমাকে বললেন, আজকাল কী সব মোবাইল ব্যাংকিং-ট্যাংকিং বেরিয়েছে না? আমরা তো আমাদের মোবাইলে টাকা আনাতে পারি।

আমি বললাম, তা পারি। কিন্তু মোবাইলে আগে একাউন্ট খুলতে হয়। আমার কোন একাউন্ট নেই। তোমার থাকলে আনাতে পারো।

ঘন্টু মামা নিজের চুল টানতে টানতে বলল, আমার একাউন্ট আসবে কোত্থেকে! তুইও কি করিস! একটা একাউন্ট খুলে রাখতে পারিস না? তোর একাউন্ট থাকলে তো জয়াকে বলে কিছু টাকা আনতে পারতাম।

আমি বললাম, জয়াদি দেবে টাকা! জয়াদি সাফ বলে দিয়েছে তোমাকে আর কোন টাকা দেবেনা। তুমি আজ পর্যন্ত কতো টাকা ধার এনেছো মনে আছে? একটা টাকা ফেরত দিয়েছো?

ঘন্টু মামা বললেন, ধার করলেই ফেরত দিতে হবে এমন কোন কথা আছে নাকি? তাছাড়া জয়ার টাকা মানে তো আমার টাকা তাইনা?

আমি বললাম, এমনভাবে বলছো যেন তুমি নিজে রুজি করে ওর কাছে টাকা জমা রেখেছো!

ঘন্টু মামা চিন্তিত মুখে বললেন, “বাদ দে ও কথা। এখন কী করি বল তো। দুপুরে খেলে আমার শরীরে এমনিতেই আলসেমী চলে আসে। আর ভরদুপুরে এই রোদে এতো রাস্তা হেঁটে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।” কথা শেষ করেই ঘন্টু মামা একটা অটোকে ঈশারায় থামতে বললেন। আমরা দুজন অটোতে উঠে বসলাম কিন্তু এখনও জানিনা অটো ভাড়া কোত্থেকে আসবে!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫২

অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। :)

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৯

রিপন ঘোষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :)

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার গল্প। আমি সবকটি পর্বই পড়ছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.