নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারন, পরিশ্রমী এবং ন্যায় পরায়ণ। কখনো কাউকে উপকার করতে না পারলেও ইচ্ছাকৃত কোন প্রকার ক্ষতি করিনা কখনো।

ফকির মোঃ রবিউল হাসান

দেশ ও দশের মঙ্গল কামনাই আমার কাম্য। -রবি

ফকির মোঃ রবিউল হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘নকশি কাঁথার মাঠ’ এর নায়ক ‘রুপাই’ এর জীবনগাঁথাঃ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৩০

বিখ্যাত ‘নকশি কাঁথার মাঠ’ এর নায়ক ‘রুপাই’ এর জীবনগাঁথাঃ
পল্লী কবি ১৯২৯ সালে নকশী কাঁথার মাঠ কাব্য গ্রন্থটি রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যের অর এই কাব্যগ্রন্থ লিখতে কবি ময়মনসিংহে প্রায়ই আসা যাওয়া করতেন। সেখানেই এক সাহসী যুবক রুপা মিয়ার দেখা পান। যার অসীম সাহস আর গায়ের শক্তির কাছে অন্য কেউ ভয়ে আসতো না।
সে রুপা মিয়াকে নিয়েই কবির অমর সৃস্টি নকশী কাঁথার মাঠ।
এই কাব্যগ্রন্থের রূপাই চরিত্রটি জসীমউদ্দীন রূপায়ন করেছিলেন বাস্তবের একজন ব্যক্তিকে উপজীব্য করে, যার প্রকৃত নাম রূপা। রূপার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শিলাসী গ্রামে৷ বাস্তবের রূপাও কাব্যের রূপাইয়ের মতো বলবান বীর ছিলেন, ছিলেন সেরা লাঠিয়াল। কৃষিজীবী শহর আলীর ৭ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে রূপার অবস্থান তৃতীয়৷ আর রূপার রয়েছেন ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে। ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের কথায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের লোকজ সঙ্গীত সংগ্রহ করতে জসীমউদ্দীন গফরগাঁওয়ে এসেছিলেন৷ সেখানে এসেই কবি তার সাহিত্যচর্চার অন্যতম সঙ্গী খ্যাতনামা সাহিত্যিক মৌলভী শেখ আবদুল জব্বারের বনগাঁও গ্রামের বাড়িতে ওঠেন৷ এখানে অবস্থানকালে বনগাঁও গ্রামে জমির ধান কাটা নিয়ে একদিন বড় ধরণের এক দাঙ্গা (স্থানীয় ভাষায় কাইজ্জা) হয়৷ সেই দাঙ্গায় গফরগাঁওয়ের লাঠিয়াল দলের নেতৃত্ব দেন শিলাসী গ্রামের কৃষ্ণবর্ণের হালকা-পাতলা ছোটখাটো গড়নের যুবক রূপা৷ পল্লীকবি সেই দাঙ্গা দেখেন; দেখেন গ্রামাঞ্চলে জমি দখলের এক নারকীয় দৃশ্য৷ লাঠিয়াল দলের নেতৃত্বদানকারী রূপার তেজোদীপ্ত এক ভয়ঙ্কর বীরত্ব৷ ওই দাঙ্গাই কবির মনে রেখাপাত করে৷ নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যের মূল উপজীব্য হয়ে ওঠে সেই দাঙ্গার ঘটনা৷ সেসময় এই রূপাকে মানুষ ‘রূপা গুণ্ডা’ বলেই জানতেন৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর একবার তিনি ইউপি ‘সদস্য’ নির্বাচিত হন৷ অবিভক্ত ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় তিনি সরাসরি দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়েছিলেন, আর তখন গফরগাঁও বাজারে ১১ জন মারা গেলে তাকে এ ঘটনায় দুই দফায় ১৫ মাস কারাভোগ করতে হয়।
এই নদীর ঘাটেই হতো সেই কাইজ্জা।
গফরগাঁও বাজারের কাইয়ুম মার্কেটে একটি স্টলে আড্ডা দিতেন জসীমউদ্দীন, সেখানে বসেই রূপাই সম্পর্কে খোঁজখবর নেন তিনি৷ সেই স্টলেই কবির সঙ্গে রূপার পরিচয় হয় এবং রূপা তাঁর নিজের সম্পর্কে জানান জসীমউদ্দীনকে, যা উপজীব্য করে কবি পরে কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেছিলেন।
কাব্যে, রূপাইয়ের বিপরীতে সাজু নামক যে নারী চরিত্র ছিল, তিনিও বাস্তবের এক ব্যক্তিত্ব, নাম ছিল ললীতা, রূপা ললীতাকে ভালোবাসতেন। ললীতা ছিলেন রূপার প্রতিবেশী গ্রাম মশাখালী’র বাসিন্দা। ললীতা ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে মারা যান।
রুপাইকে নিয়ে জসীমউদ্দীনের লেখা কবিতা
“রুপাই”
—-জসীমউদ্দীন
এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথারচুল-
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল?
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।
জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দুখান সরু।
গা-খানি তার শাঙন মাসের যেমন তমাল তরু।
বাদল-ধোয়া মেঘে কে গো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলী মেয়ে পিছলে পড়ে ছড়িয়ে আলোরখেল।
কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোনো চাষী
মুখে তাহার ছড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি।
কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,
কালো দতের কালি দিয়েই কেতাব কোরাণ লেখি।
জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভূবনময় ;
চাষীদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়।
সোনায় যে জন সোনা বানায়, কিসের গরব তার?
রঙ পেলে ভাই গড়তে পারি রামধণুকের হার।
সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনার মুখ-
কালো-বরণ চাষীর ছেলে জুড়ায় যেন বুক।

২০০৮ সালের ২২ এপ্রিল শিলাসী গ্রামের নিজ বাড়িতে বার্ধক্যের কাছে পরাজিত হয়ে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান নকশী কাথার কালো মানিক রূপা। বসুন্ধরার কাছে রেখে যান নকশী কাথার মাঠ।

এই এক গাঁও, ওই এক গাঁও- মধ্যে ধুধু মাঠ
ধান কাউনের লিখন লিখি করছে নিতুই পাঠ
এখান থেকে পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের অমর কাব্যগ্রন্থ নকশি কাঁথার মাঠ। তারপর এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল কৃঞ্চবর্ন গড়ণ ‘রূপার সঙ্গে অজপাড়াগাঁয়ের চাষীর মেয়ে সাজুর পরিচয় প্রনয় থেকে পরিনয়ের বর্ণনা। কবির সেই ভয়াবহ কাইজ্যার কথা, বন গেঁয়োরা ধান কেটে নেয় থাকতে মোরা গফর-গাঁয়ে, এই কথা শুনার আগে মরিনি ক্যান গোরের ছাইয়ে? আর তখন ‘আলী আলী হাকল রূপাই’ হুংকারে তার গগন ফাঁটে। সেই কাইজ্যাতে গফরগাঁয়ের রূপার দলের হাতে বহু লোক হতাহত হয়। ফেরারী হয় রূপা।
ইহলোকে রূপাইয়ের সঙ্গে সাজুর এই ছিল শেষ দেখা। সাজু আর কী করবে, সেই প্রথম দেখা ও বৃষ্টির জন্য কুলা নামানোর দিনের দৃষ্টি বিনিময় থেকে শুরু করে তাদের জীবনের সব কথাকে এমনকি যে রাতে রূপাই জন্মের মতো চলে গেল, এসব অতীত স্মৃতি কাঁথার ওপর ফুটিয়ে তুলতে লাগলো সুঁই-সুতা দিয়ে। যেদিন সেই কাঁথা বোনা শেষ হয়ে গেলো, সাজু তার মায়ের কাছে দিয়ে বললো, ‘মা, আমার মরণের পরে যেখানে কবর দেওয়া হবে, সেই কবরের ওপরে যেন এই নকশী কাঁথাখানা বিছিয়ে দেওয়া হয়। আর যদি কোনোদিন রূপাই এসে আমার খোঁজ করে, তাকে বোলো, তোমার আশায় সাজু ওই কবরের নিচে আছে।’
বহুদিন পরে গাঁয়ের কৃষকেরা গভীর রাতে বেদনার্ত এক বাঁশির সুর শুনতে পায়, আর ভোরে সবাই এসে দেখে, সাজুর কবরের পাশে এক ভিনদেশি লোক মরে পড়ে আছে। কবি জসীমউদ্দীন এই আখ্যানের একেবারে শেষ পর্বে এর করুণ বেদনাকে প্রকাশ করতে লিখেছেন:
“আজো এই গাঁও অঝোরে চাহিয়া ওই গাঁওটির পানে
নীরবে বসিয়া কোন্ কথা যেন কহিতেছে কানে কানে।
এই হলো নকশী কাথার মাঠের পটভূমি।”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.